Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

প্রকৃত ইসলামে মসজিদের চিত্র ও বর্তমানের মসজিদ


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Real-eslamরাকীব আল হাসান:

‘মসজিদ’ একটি আরবি শব্দ যার উৎপত্তি ‘সেজদা’ থেকে। সেজদা বলতে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভূমিতে মাথা ঠেকানোকে বোঝানো হলেও এর অর্থ আরও ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে সেজদা হলো স্রষ্টার হুকুমসমূহের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের চিহ্ন। আল্লাহ যে বিধি-ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন, আইন-বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন সৃষ্টিকূল যদি তা মেনে নেয় তাহলে সেটাই হবে স্রষ্টাকে সেজদা করা। গাছ, নদী, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি সকল সৃষ্টিজগতই আল্লাহ তা’আলার বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করে যাচ্ছে- অর্থাৎ তারা সর্বদাই সেজদাবনত হয়ে আছে। ঠিক তেমনিভাবে মানবজাতির জন্য স্রষ্টা যে কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেই কাজ যখন মানবজাতি করবে তখনই কেবল তারা সেজদাবনত হিসেবে গণ্য হবে। সেই কাজ হলো আল্লাহর সত্যদীন দ্বারা পৃথিবীকে পরিচালনা করা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে স্থানটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের সর্বাধিক চর্চা ও পরিচর্যা করার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট তাই মসজিদ নামে আখ্যায়িত। মসজিদ আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আল্লাহ বলেন- মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে আহ্বান করো না (৭২ঃ১৮)। অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বের চর্চাকেন্দ্র মসজিদ। এখান থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের, সার্বভৌমত্বের যাবতীয় কর্মকাণ্ড মানুষ তাঁর খলিফা-প্রতিনিধি হিসাবে পরিচালিত করে থাকে।
মদিনায় হিজরতের পর রসুলাল্লাহ সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিলেন তা হলো একটি মসজিদ নির্মাণ। তাঁর মদিনা জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ড ছিল মসজিদকেন্দ্রিক। উম্মতে মোহাম্মদীর চরিত্র সৃষ্টির প্রশিক্ষণ পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ কায়েমের পাশাপাশি মসজিদে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক, সামরিক ও বিচারিক ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলো। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে মসজিদ যাবতীয় বিচার আচার নিষ্পত্তির কেন্দ্র অর্থাৎ বিচারালয়ে পরিণত হলো, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কেন্দ্রীয় কোষাগারে পরিণত হলো, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে পরামর্শ সভার স্থানে পরিণত হলো। রাজনৈতিক বিষয়াদির মধ্যে বিভিন্ন রাজা বাদশা ও গোত্রপতিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে দূত প্রেরণ ও বৈদেশিক দূতদের সাক্ষাৎকার প্রদান, তাদের থাকা খাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থাদি সম্পন্ন করার স্থান হিসাবে মসজিদ এক দূতাবাসে ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পরিণত হলো। আবার সামরিক বিষয়াদির আলোচনা, সিদ্ধান্ত, যুদ্ধ সামগ্রী-তলোয়ার, বল্লম, তীর, নেজা ইত্যাদির মজুদাগার হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। যতদিন প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিন মুসলিম জাতির জাতীয় কার্যাবলীর সাথে এভাবে মসজিদ ওতপ্রোতভাবে জাড়িয়ে ছিল।
অতঃপর কালের বিবর্তনে দীন নিয়ে অতিব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা, দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং জাতির নেতৃত্বের পথভ্রষ্টতার ফলে মসজিদ তার কার্যকরিতা হারাতে শুরু করে। জাতির ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু মসজিদ। অথচ আমাদের সমাজে অনৈক্য, ঝগড়া বিবাদের রেশ ধরে, অপরের জমি দখল করে বহু মসজিদ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানের মসজিদগুলির সঙ্গে প্রকৃত ইসলামের মসজিদসমূহের যে পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় তার কয়েকটি উল্লেখ করলাম।
১. মসজিদের প্রাণ: জাতির প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়, প্রাণপ্রাচুর্যপূণ কর্মমুখর মসিজদ বর্তমানে প্রাণহীন উপাসনালয়মাত্র, জাতীয় কর্মকাণ্ডের সাথে এর এখন কোনো সম্পর্ক নেই, এখন সেখানে নোটিশ ঝোলানো হয় ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম’।
২. প্রকৃত ইসলামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে যাকাত ফেতরা উসর ইত্যাদি জনগণের মাঝে মসজিদ থেকে বণ্টন করা হতো। আর আজ যাকাত ফেৎরা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম দান খয়রাত ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতাসহ মসজিদের নানাবিধ উন্নয়নের কথা বলে জনগণ থেকে অর্থ গ্রহণ করা হয়। এমনকি মসজিদের ইমাম সাহেব ও তার সহকারীরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, মাইকে করুণ সুরে ওয়াজ করে, হাত পেতে মসজিদের জন্য ভিক্ষা করেন।
৩. প্রকৃত ইসলামে মসজিদই ছিল রাষ্ট্রীয় বিচারালয়। অথচ এখন চুরির ভয়ে সেখানকার দরজা তালাবন্ধ করে রাখা হয়। নামাজের সময় নোংরা জুতাজোড়া সেজদার জায়গায় রাখতে হয়।
৪. মেহরাব: প্রকৃত ইসলামের যুগে মসজিদের মেহরাবে যুদ্ধ সরঞ্জাম- তীর, ধনুক, নেজা, বল্লম, তলোয়ার ইত্যাদি রাখা হত। আজও কেবলা নির্দেশক হিসাবে এবং পুরাতন ঐতিহ্য রক্ষার জন্য মেহরাব নির্মাণ করা হয়। কিন্তু উম্মতে মোহাম্মদীর সেই সংগ্রামী জীবনও নেই, যুদ্ধাস্ত্ররও কোনো প্রয়োজন হয় না। তাই আজ মেহরাবে রাখা হয় মসজিদের চাটাই, দেয়াশলাই, মোমবাতি আর ইমাম সাহেবের কফ- থুতু ফেলার পিকদানি।
৫. মসজিদের ইমাম: প্রকৃত ইসলামে প্রধান মসজিদের সালাতের ইমাম হতেন আল্লাহর তা’আলার সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী, যিনি জাতির ইমাম কর্তৃক নিয়োজিত। বর্তমানে একজন বেতনভুক্ত লোককে নিয়োগ দেওয়া হয় ইমামতি তথা নামাজ পড়ানোর জন্য, সেই কর্মচারীকেই ইমাম বলে ডাকা হয়। এই ধর্মজীবীরা প্রায়ই হাদিস বর্ণনা করেন, ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি। অথচ তাদের নিজেদের রুজি কেবল হারামই নয়, আল্লাহর ভাষায় দীনের কাজ করে পার্থিব বিনিময় গ্রহণকারী আগুন ছাড়া কিছুই খায় না (২ঃ১৭৪)।
৬. নারীদের অংশগ্রহণ: মহানবীর সময়ে মসজিদে নববীতে নারী পুরুষ একই সঙ্গে মহানবীর পেছনে সালাহ কায়েম করতেন। আজকের বিকৃত ইসলামের সমাজে মহিলাদের মসজিদে যাওয়াকে এতটাই নিরুৎসাহিত করা হয় যে কার্যত মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার নেই।
৭. খোতবা: প্রকৃত ইসলাম যখন ছিল তখন প্রতি শুক্রবার সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যাদি সম্পর্কে ও তার সমাধানমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে অবহিত করা হতো। বক্তব্য হতো জাতির জন্য দিক-নির্দেশনামূলক। বর্তমানে এসবের কোনো বালাই নেই। খোতবার বিষয়টি যেহেতু বাদ দেয়া যাচ্ছে না, তাই প্রতি শুক্রবার জুমা সালাতের পূর্বে বই দেখে অন্তত ৫০০ বছর পূর্বের তৈরি করা গতবাঁধা কিছু দোয়া কালাম পাঠ করা হয়, আরবী ভাষাভাষীরা এর কিছু বুঝে থাকতে পারলেও অনারব মুসুল্লিদের মধ্যে অধিকাংশই মর্মার্থ বুঝতে না পেরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ও ঝিমোতে থাকেন।
৮. মিনার ও আজান: সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর-এ ঘোষণার এক স্থাপত্য প্রতীক হচ্ছে সুউচ্চ মিনার। এ মিনার থেকে দৈনিক পাঁচবার আজানের মাধ্যমে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ঘোষণাও করা হয়। প্রকৃত ইসলামের সময়ে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় অঙ্গন সর্বত্র এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বাস্তবায়ন ছিল। আজও আযানে ‘আশহাদু আল্লাহ ইলাহা এল্লা আল্লাহ’ আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ-আইন বিধান দাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক নাই বলে সাক্ষ্য দেওয়া হয় কিন্তু বাস্তবে সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে। যারা আজানের এ ঘোষণা শুনে উত্তর দিচ্ছেন, সালাহ কায়েম করতে ছুটে আসছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহকে মাবুদ হিসাবে মেনে নিলেও পারিবারিক সামাজিক রাষ্ট্রীয় আইন কানুন অর্থনীতি দণ্ডবিধি ইত্যাদিতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানছেন না। এ সকল ক্ষেত্রে তারা মানুষের তৈরি বিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিরক এবং কুফরে আপাদমস্তক ডুবে আছেন। তাদের এই মারাত্মক ভুল ভাঙ্গিয়ে দেওয়ার জন্যই এই লেখা। এতে যদি তারা সংশোধিত না হন, ওপারে গিয়ে তারা অবশ্যই তাদের ভুল বুঝতে পারবেন। তখন কি শোধরানোর কোনো সুযোগ থাকবে?