Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/og/includes/iworks/class-iworks-opengraph.php on line 331

ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে সরব হোন


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

মোহাম্মদ আসাদ আলী
বিশ্ব-রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ম। ইউরোপ-আমেরিকার ভোটের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে ধর্মকে কেন্দ্র করে। এদিকে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ধর্মীয় উন্মাদনা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে অগ্নিগর্ভ। ভারতবর্ষে তো গত একশ’ বছর ধরেই ধর্ম নিয়ে চলছে অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তপাত। মুক্তিযুদ্ধ থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমাদের দেশেও ধর্মের অপব্যবহার কম হয়নি। বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ঘটনা ও সহিংসতার জন্ম দিয়ে সেগুলো ধর্মের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে অহরহ। আমরা যদি বিশ্বময় ধর্মকে ব্যবহার করে ঘটে চলা এইসব অনাচারের গোড়ায় যাই, সেখানে দেখব ধর্মের যাবতীয় অকল্যাণকর ব্যবহারের মূলে আছে একটি জিনিস- ‘স্বার্থ’। স্বার্থ হাসিলে ধর্মের এই ব্যবহারই ‘ধর্মব্যবসা’ যার বৈধতা না থাকার পরও অতীতে প্রত্যেক ধর্মেই ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণি জন্ম নিয়েছে এবং ধর্মকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগিয়েছে।
মানুষের শান্তি ও মুক্তির জন্য আল্লাহ যুগে যুগে দ্বীন প্রেরণ করেছেন, আর নবী-রসুলগণ সেই দ্বীন নিয়ে এসে বলেছেন, তারা সত্যদ্বীন প্রচারের কোনো ‘বিনিময়’ চান না। এর পুরষ্কার তারা কেবল আল্লাহর কাছেই নিবেন। দ্বীনের কাজে বা ধর্মের প্রশ্নে এই যে স্বার্থচিন্তামুক্ত থাকা- এই শিক্ষাটা তারা যেমন নিজেদের চরিত্রে কায়েম রেখেছেন তেমনি জাতিকেও শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং সতর্ক করে গেছেন কেউ যেন ধর্মের কাজ করে কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা না করে। কিন্তু ইতিহাসে পাই নবী-রসুলরা চলে যাবার পর প্রায় সব ধর্মেই একটি পরোজীবী শ্রেণির জন্ম হয়েছে যারা ধর্মের কাজ করে বিনিময় তো নিয়েছেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মই তাদের প্রধান রুজি-রোজগারের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে সমাজপতি, রাজা-বাদশাহ তথা রাষ্ট্র পরিচালকরাও ধর্মকে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কাজে। অন্যায়ভাবে বহু যুদ্ধ-রক্তপাতের জন্ম দেওয়া হয়েছে ধর্মের নামে। ফলে দেখা গেল যে ধর্ম এসেছিল নিপীড়ত মানুষের মুক্তির দিশা নিয়ে সেই ধর্মই হয়ে উঠল শোষণ-নিপীড়নের কল। এর পরিণতিস্বরূপ প্রধানত দুইটি ঘটনা ঘটেছে।
প্রথমত, যখনই ধর্মের সাথে স্বার্থ জড়িয়ে পড়েছে তখন সমাজকে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাদের ঈমানী দায়িত্ব ছিল তারা নৈতিকভাবে এতখানি দুর্বল হয়ে গেছে যে, বলিষ্ঠ কণ্ঠে ন্যায়কে ন্যায় ও অন্যায়কে অন্যায় বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, অথচ ধর্মের আগমনই হয়েছিল ন্যায়-অন্যায় সুস্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য।
দ্বিতীয়ত, ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থ ও সুবিধা বুঝে আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন এনেছে, অনেক সত্য গোপন করেছে এবং অনেক মনগড়া বিধান আল্লাহর নাম দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে, ফলে দ্বীন বিকৃত হয়ে গেছে। তা আর মানুষকে শান্তি দিতে পারে নি। তখন আবার নতুন নবী পাঠিয়ে দ্বীনের বিকৃতি শোধরাতে হয়েছে।
এই কারণে সকল ধর্মেই ধর্মব্যবসা নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে নীতিমালা হলো ধর্মের কাজ করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, সেখানে কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারবে না, রাজনৈতিক অভিসন্ধী থাকতে পারবে না বা গোষ্ঠীগত সুযোগ-সুবিধা আদায়ের ব্যাপারও থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে নবী-রসুলদের পরিষ্কার সাবধানবাণী রয়েছে কিন্তু সঙ্গত কারণেই সেগুলো ধর্মব্যবসায়ীরা কখনই উচ্চারণ করেন না। তারা আল্লাহর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ও নবী-রসুলদের সোচ্চার কণ্ঠ গোপন করে হলেও তাদের অর্থনৈতিকসহ যাবতীয় স্বার্থ হাসিলে ধর্মের অপব্যবহার জারি রাখেন। অথচ প্রত্যেক নবী-রসুল ধর্ম থেকে স্বার্থ হাসিলের প্রশ্নে কতখানি সতর্ক ছিলেন তা নিচের আয়াতগুলো দেখলে বোঝা যায়।
নূহের (আ:) ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট। [সুরা হুদ-২৯, সুরা শুআরা ১০৯, সুরা ইউনুস ৭২]
হুদের (আ:) ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুঝতে চেষ্টা করবে না? [হুদ-৫১, সুরা শুআরা ১২৭]
সালেহ (আ:) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [শুয়ারা-১৪৫]
লুতের (আ:) ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাইনা। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [শুয়ারা-১৬৪]
শোয়েবের (আ:) ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [শুয়ারা-১৮০]
মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি আল্লাহর হুকুম:
এবং তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি কর না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র। [ইউসুফ – ১০৪]
বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই। [সাদ- ৮৬]
তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ করো; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। [আনআম – ৯০]
বল! আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না। [শুরা, ২৩]
আমি তাদেরকে দিয়েছি উপদেশ, কিন্তু তারা উপদেশে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অথবা তুমি কি তাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা। [২৩: সুরা মো’মেনুন: ৭১-৭২]
আল্লাহর এই হুকুম মোতাবেক আখেরী নবী তাঁর আসহাবদেরকেও বার বার সতর্ক করে গেছেন যেন তাঁর জাতির মধ্যে কোনোভাবেই ধর্মকে কেউ স্বার্থের মাধ্যম বানিয়ে নিতে না পারে। উবায়দা বিন সামেত (রা:) ছিলেন আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত এক সাহাবী। তাঁকে রসুলাল্লাহ কোনো এক গোত্রের লোকদেরকে কোর’আন শিক্ষা দিতে প্রেরণ করেছিলেন। সেই গোত্রের একজন ব্যক্তি উবায়দাকে (রা:) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার উদ্দেশ্যে একটি ধনুক ও তীর উপহার দিয়েছিলেন। উবায়দা (রা:) রসুলাল্লাহর দরবারে ফিরে এসে যখন সেই তীর ও ধনুক তাঁকে দেখালেন তখন রসুলাল্লাহ বললেন, “যদি তুমি আগুনের তীর গলায় জড়িত হওয়া পছন্দ করো তাহলে তুমি এটা গ্রহণ করো” (আবু দাউদ)।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, উবায়দাহ (রা.)-কে কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে যে উপহারটি দেওয়া হয়েছিল সেটা কিন্তু কোন অর্থকড়ি নয়, ব্যক্তি ব্যবহার্য কোন বস্তুও নয়। সেটা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে ব্যবহারের জন্য একটি অস্ত্র। অথচ সেই অস্ত্রটি গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ হয়ে গেল। কেবল নিষিদ্ধই না, সেটা আখেরাতে আগুনের তীর হয়ে গ্রহণকারীর বুকে বিঁধবে এই কারণে যে, তিনি সেটা গ্রহণ করেছিলেন কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে। এমন ঘটনা আরও আছে। রসুলাল্লাহর এই কথার পর দীনের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের কোনো পথ খোলা রইল কি?
শুধু তাই নয়, ধর্মব্যবসায়ীরা যে মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখতে চায় এবং ধর্মকে পুঁজি করে সম্পদের মালিক হতে চায় সেটাও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন সুস্পষ্টভাষায়। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই পুরে না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুত তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।’ অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “হে মো’মেনগণ! আলেম ও সুফিদের (আহবার ও রোহবান) মধ্যে বহুসংখ্যক তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানবজাতিকে ফিরিয়ে রাখছে (সুরা তওবা ৩৪)।’
এমতাবস্থায়, আমরা হেযবুত তওহীদ যখন বলি, ধর্মের কাজ করে কোনো বিনিময় গ্রহণ করা হারাম ও নিকৃষ্ট কাজ, ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য আল্লাহ পরকালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন তখন অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, ‘তাহলে তারা (ধর্মব্যবসায়ীরা) কী করে খাবে? তাদেরও তো পরিবার-পরিজনের ভরন-পোষণের একটা ব্যাপার আছে।’
এই প্রশ্নের জবাবে আমরা কেবল এটুকুই বলব কোর’আনে আল্লাহ শুকরের গোস্ত ভক্ষণ করাকে হারাম করলেও একটি সুযোগ তিনি রেখেছেন যে, অনন্যোপায় হলে নিতান্তই বাঁচার জন্য শুকরের গোস্তও ভক্ষণ করা যাবে। কিন্তু যখন ধর্মব্যবসার প্রসঙ্গে বললেন (বাকারা ১৭৪) তিনি কোনো সুযোগই রাখলেন না, বরং সরাসরি বলে দিলেন যারা তা করে তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই পুরে না। এ থেকে বোঝা যায় ধর্মের বিনিময় গ্রহণ শুকরের গোস্ত ভক্ষণের চাইতেও অনেকগুণ বড় হারাম কাজ এবং কোনো অবস্থাতেই, কোনো যুক্তিতেই, কোনো অজুহাতেই আল্লাহ এই অন্যায় বরদাস্ত করবেন না।
যারা ধর্মকে ব্যবহার করে কোনো না কোনোভাবে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছেন, অতঃপর কেউ আল্লাহর সাবধানবাণী স্মরণ করিয়ে দিলে সংশোধিত না হয়ে উল্টো প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে দিচ্ছেন যে, ‘পরিবার চালাবেন কী করে’- তাদের উচিত দরিদ্রতাকে ভয় না করে সবার আগে আল্লাহকে ভয় করা এবং সমাজের দশজন মানুষ যেভাবে বিভিন্ন বৈধ পেশায় উপার্জন করে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন সেইভাবে হালাল উপার্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহ যে জ্ঞান তাদেরকে দান করেছেন সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে সমাজকে ন্যায়-অন্যায় শিক্ষা দেওয়া ও সত্য-মিথ্যা সুস্পষ্ট করে দেওয়াও তাদের ঈমানী দায়িত্ব, যদিও তা নিজের সাময়িক ক্ষতির কারণ হয়।
আজ পৃথিবীজুড়ে হতভাগা মুসলমান জাতির উপর মহাদুর্দিন নেমে এসেছে। তাদের এখন অস্তিত্বের সংকট চলছে। এই দুর্দশা লাঘবের একমাত্র পথ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আখেরী নবী যে আদর্শ নিয়ে এসেছিলেন, সেই মহান আদর্শের ভিত্তিতে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার ও অসত্যের বিরুদ্ধে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। কিন্তু সেটা ততক্ষণ সম্ভব হবে না যতক্ষণ যাবতীয় স্বার্থচিন্তা পরিত্যাগ করা না হবে। তাই আসুন ধর্মকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের জাতিবিনাশী প্রক্রিয়া বন্ধ করি। ধর্মের অপব্যবহার দূরীকরণে নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ