গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে দিনাজপুর কুশদহ এক বিরাট ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে যাতে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। মাহফিলের আয়োজন করে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের দিনাজপুর শাখা। আন্দোলনটি বিগত বাইশ বছর ধরে বাংলাদেশের আপামর জনতাকে জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতিসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করে যাচ্ছে। এই সচেতনতা সৃষ্টিতে তারা নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাদ মাগরেব দিনাজপুর কুশদহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। বিকৃত ধর্মীয় আদর্শ থেকে উদ্ভূত এই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে বিশ্বময় শক্তি প্রয়োগের পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সকলেই স্বীকার করছেন যে, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় দলিল ভিত্তিক নির্ভুল আদর্শ দিয়ে জঙ্গিবাদ যে ভুল পথ তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটাতেই থাকবে। ফলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকেও ইরাক-সিরিয়ার মতো করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন এবং এই সঠিক আদর্শটি হেযবুত তওহীদের কাছে আছে বলেও বক্তৃতায় উঠে আসে।
প্রধান বক্তা হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম কোর’আন-হাদীস ও রসুলাল্লাহ (সা.) এর পবিত্র জীবনী থেকে বিভিন্ন ঘটনা উপস্থাপন করে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে জঙ্গিবাদ আসলে ইসলাম থেকে সৃষ্টি হয় নি, বরং ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য, মুসলিমদেরকে বিনাশ করে দেওয়ার জন্যই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে প্রচলিত ভুল ব্যাখ্যাগুলোকে খ-ন করেন। তিনি ইসলামের প্রকৃত আকীদা, ঈমান ও আমল সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রকৃত মো’মেন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জীবন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেন। সুতরাং স্বার্থপরের নামাজ নেই, স্বার্থপরের সমাজ নেই, স্বার্থপরের জান্নাত নেই। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, মানুষের জীবনে এতবড় সঙ্কট ও বিপদ অতীতে আর আসে নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মানুষের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই। তারা খাচ্ছে-দাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, স্কুল-কলেজে যাচ্ছে, খেত-খামারে কাজ করছে যেন কিছুই হয় নি, যেন কিছু হবেও না। আবার যারা ধর্ম মেনে চলেন অর্থাৎ ধার্মিকরাও দুনিয়াবিমুখ হয়ে মসজিদ-মন্দিরে যাচ্ছেন, নিয়মিত নামাজ পড়ছেন, প্রার্থনা-উপাসনা করছেন, আর তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এই ভেবে যে, মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে চলে যাবেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, মানুষ যখন ত্রাহী সুরে চিৎকার করছে তখন এই মানুষের কষ্ট দূর কারার চেষ্টা না করে যতই নামাজ-রোজা করেন আল্লাহর সন্তুষ্টি মিলবে না। তিনি বলেন, সমস্ত দুনিয়া আজ যুদ্ধ, হানাহানি, রক্তপাত, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দারিদ্র্য, বৈষম্য, যুলুম, নির্যাতন দিয়ে পূর্ণ। এমন কোনো অঞ্চল নাই যেখানে শান্তি আছে। এই মুহূর্তে পৃথিবীর বহু ভূ-খ-ে যুদ্ধ চলছে, অশান্তির আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। কখন কোন দেশ আক্রান্ত হবে, কখন কে ধ্বংস হবে কেউ জানে না। সামরিক বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সবাই আশঙ্কা করছেন, যে কোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। হিরোশিমা-নাগাশাকির এটম বোমের ক্ষত এখনও শুকায় নাই। এরকম একটা বোমও হজম করার ক্ষমতা কি আমাদের আছে? নেই। সুতরাং ভাবতে হবে।
দূর দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার সাধারণ মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত উপস্থিত থেকে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের যাবতীয় অপব্যবহার, সকল প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতিগঠনের প্রত্যয় নিয়ে ধর্মীয় চেতনা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মাহফিলস্থল থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।
Leave A Comment