Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

জোয়ান অব আর্ক যাকে তিনবার ভষ্মীভূত করা হয়


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

zoan-aob-ark-195x300[ইউরোপে ধর্মীয় উল্লাসে জুডিশিয়াল কিলিং]

স্বামী বিবেকানন্দ ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ পুস্তকের ১১৮ পৃষ্ঠায় ভারতবর্ষে হিন্দু জাতির উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা কোরেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান।” এর তুলনায় ইউরোপিয়ানদের রেড ইন্ডিয়ানদের উপর গণহত্যা চালিয়ে আমেরিকা দখলের ইতিহাস, ইনকা সভ্যতা ধ্বংস করে পেরু দখলের ইতিহাস তুলনা করলে বোঝা যাবে খ্রিস্টানরাই তাদের ধর্মকে কিভাবে নির্যাতনের কলে পরিণত করেছিল। অথচ তারাই তাদের রচিত বিকৃত ইতিহাসগুলিতে ইসলামকে তলোয়ারের ধর্ম হিসাবে তুলে ধরার অপপ্রয়াস পেয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মেও প্রথমে এ নীতিই প্রকাশ হয় যে, ‘ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।’ কিন্তু ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কনস্টানটাইন দ্যা গ্রেটের হাত ধোরে ধর্মের সাথে যেদিন রাজশক্তি যোগ হোল সেদিনই এই সহিষ্ণুতার পরিসমাপ্তি ঘটলো। তখন থেকে অ-খ্রিস্টানরা সাধারণ অপরাধীদের চেয়েও বড় অপরাধী বলে গণ্য হোতে আরম্ভ করল, তাদের উপর চালাতে আরম্ভ করল বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা। এই গণহত্যার একটি উপায় জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড। অবশ্য চার্চ বা যাজকরা নির্যাতন বা হত্যাটা স্বহস্তে করত না, কে খ্রিস্টান সেটা বিচারের পরে অপরাধীকে তুলে দেয়া হোত রাষ্ট্রীয় বা পৌর কর্তৃপক্ষের হাতে। যীশুখ্রিস্ট মানুষের রক্তপাত ঘটাতে নিষেধ কোরে গেছেন, তাই নর-রক্তপাত খ্রিস্টান ধর্মে নিষেধ। সেই জন্য বিশাল কড়াই-এ হত্যা আগুনে পুড়িয়ে করা হোত তাতে মানুষ মারাও হোত অথচ রক্তপাত হোত না।
১৪৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে ফ্রান্সের রোয়েনে ফরাসি বীরকন্যা জোয়ান অব আর্ককে ডাইনি অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৯। ৩০ শে মে ফরাসি বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের (১৪১২-১৪৩১) হত্যার ৫৮৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। জোয়ানের পিতা জ্যাক ডি আর্ক ও মাতা ইসাবেল রোমিই। জন্মস্থান ডোমাঁয়েই ।
জোয়ানের জন্মের সময়কালে ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ চার্লস উন্মাদ হয়ে যান ও রাজ্য পরিচালনায় অক্ষম হয়ে পড়েন। তখন রাজার ভাই ডিউক লুইস অব অর্ল্যান্স এবং রাজার চাচাতো ভাই জন দ্যা ফিয়ারলেস, বার্গুন্ডির ডিউক রাজক্ষমতার জন্য কলহে লিপ্ত হন এবং রাজবংশ ও রাজকীয় পরিবারের উত্তরাধিকার নিয়ে ব্যাপক বিরোধ জন্ম নেয়। এই দ্বিধা বিভক্ত রাজ্যের অনুসারীরা আরমাগনাস ও বার্গুনডিয়ানস নামে বিভক্ত হয়ে পরে। ইংলিশ রাজা পঞ্চম হেনরী এর পুরো সুযোগ নিয়ে ১৪১৫ সালে ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের শহরগুলো দখল করে নেন। এদিকে সপ্তম চার্লসের চার ভাই মারা গেলে, তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন। আর বার্গুন্ডিয়ানরা ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলায়।
কথিত আছে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাঠে ভেড়ার পাল চরানোর সময় কৃষককন্যা জোয়ান দৈববাণী শুনতে পান যে, তাকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও ফ্রান্সের প্রকৃত রাজাকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। এর আগে প্রায় শতবর্ষ ধরে ধরে চলা যুদ্ধে (১৩৩৭-১৪৫৩) ফরাসিদের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। ব্রিটিশদের রণকৌশলের কাছে একের পর এক ফরাসিরা পরাস্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে ব্রিটিশরা প্রায় দু’টি রাজতন্ত্রের অধিকারী হতে চলে পাশাপাশি ফরাসিরা কয়েক প্রজন্ম ধরে কোন ধরনের যুদ্ধজয়ের মুখই দেখলো না। জোয়ানের শোনা সেই দৈববাণীর সংবাদ জানতে পেরে একজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি তাকে মুকুটবিহিন সম্রাট সপ্তম চার্লসের কাছে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পথে শত্র“ভূমি বার্গুন্ডিয়ানদের অধিকৃত অঞ্চলের উপর দিয়ে যেতে হয়। সেখান দিয়ে জোয়ান পুরুষ ছদ্মবেশে গমন করেন। রাজা তার কথা শুনে হেসেই অস্থির হয়ে যান। প্রথমে অবজ্ঞা প্রদর্শন করলেও ধর্মব্যবসায়ী যাজক সম্প্রদায়ের পরামর্শে পরবর্তীতে তিনি জোয়ানকে সৈন্য সাহায্য দিতে সম্মত হন। এর পরে জোয়ান পুরুষ নাইটদের পোশাক পরিধান করে একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে পঞ্চক্রুশধারী তরবারি হাতে ৪০০০ সৈন্য নিয়ে ১৪২৯ সালের ২৮শে এপ্রিল অবরুদ্ধ নগরী অর্ল্যান্ডে প্রবেশ করেন। তিনি তৎকালীন ফ্রেঞ্চ নেতৃত্বের রক্ষণাত্মক রণকৌশল পরিহার করে আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে অর্ল্যান্ডকে মুক্ত করেন।
এরপর তাদের একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ইংরেজ সৈন্যদের কবল থেকে তুরেলবুরুজ শহর উদ্ধার করেন। এর পর পাতে’র যুদ্ধেও ইংরেজরা পরাজিত হয়। জুন মাসে জোয়ান তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে শত্র“দের ব্যূহ ভেদ করে রীমস নগরী অধিকার করেন। এরপর ১৬ই জুলাই সপ্তম চার্লস ফ্রান্সের রাজা হিসেবে আবার সিংহাসনে অভিষিক্ত হন এবং জোয়ানকে তার অসামান্য সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য ফ্রান্সের রাজসভায় একটি বিশেষ সম্মানিত পদ দেয়া হয়। যদিও জোয়ান শিক্ষিত ছিলেন না তদুপরি তার মেধা এবং অসম্ভব বীরত্বের জন্য ফ্রান্স রাজসভার অন্যান্য পুরুষ সদস্যগণ তাকে মনে মনে হিংসা ও অপছন্দ করতে শুরু করলো। তারা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভয় পেয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো কেননা রাজা সপ্তম চার্লস জোয়ানকে ভীষণ পছন্দ এবং বিশ্বাস করতেন।
ধর্মব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র:
জোয়ান অব আর্কের সকল যুদ্ধের পেছনেই ধর্মীয় চেতনা ছিল। এরপর জোয়ান ইংরেজদের সাথে একটি যুদ্ধে লিপ্ত হলে রাজসভার ধর্মব্যবসায়ী যাজকরা রাজাকে বোঝান যে জোয়ানের এই ধর্মযুদ্ধ রাজাকে ফরাসিদের কাছে ‘ডেভিল’ এ পরিণত করবে। তৎক্ষনাৎ রাজা জোয়ানকে ডেকে যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং ইংরেজদের সাথে সমঝোতায় আসতে বলেন। কিন্তু একরোখা এবং জেদী জোয়ান রাজার আদেশ অমান্য করেই যুদ্ধ চালিয়ে যান। ইংরেজরা যখন জানতে পারে রাজার কথা অমান্য করে জোয়ান যুদ্ধ করছে তখন রাজসভার অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে তারা জোয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। কঁপিএন শহরের বহির্ভাগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ডিউক অব বেডফোর্ডের নেতৃত্বে লড়াই করছিল, ১৫ অগাস্ট তারা ফরাসি বাহিনীর মুখোমুখি হয়। প্যারিসে উভয়পক্ষের লড়াই হয়। জোয়ান এক পায়ে আঘাত পান। আঘাত নিয়েই তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান।

গ্রেফতার এবং প্রহসনের
বিচারে মৃত্যুদণ্ড

২৩শে মে ১৪৩০ তারিখে সেনাবাহিনীর একটি অংশ তাকে আটক করে ফেলে, বার্গুন্ডিয়ানরা তাকে ঘিরে ঘোড়া থেকে নামতে বাধ্য করে। প্রাথমিকভাবে তিনি আত্মসমর্পণ করেন নি। আটক অবস্থায় জোয়ান কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেন। একবার তিনি ৭০ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে নীচের মাটিতে লাফিয়ে পড়ে বার্গুন্ডিয়ান শহর আরাসে পালিয়ে যান। ব্রিটিশ সরকার তাকে বার্গুন্ডিয়ান ডিউক ফিলিপের কাছ থেকে কিনে নেয়।
এক ইংরেজ ধর্মজীবী পাদ্রির অধীনে ১৪৩১ সালের ৯ই জানুয়ারী তার বিচার কার্যক্রম আরম্ভ হয়। প্রহসনের এ বিচারে তাকে কোন আইনজীবী দেয়া হয় নি। বিচারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ‘তার উপর ঈশ্বরের বিশেষ দয়া আছে’ তিনি এমন বিশ্বাস পোষণ করেন কিনা। জবাবে জোয়ান বলেছিলেন “যদি আমি তা বিশ্বাস না করি তবে ঈশ্বর যেন আমাকে যেখানে আছি সেখানেই রেখে দেন, আর যদি বিশ্বাস করি তবে ঈশ্বর যেন আমাকে রক্ষা করেন।” আসলে এই প্রশ্নটিই ছিল সাংঘাতিক চালাকিপূর্ণ। যদি জোয়ান বলতেন ‘হ্যাঁ করি’, তবে তাকে ধর্মের বিরুদ্ধে যাবার অভিযোগ আনতেন আর যদি জোয়ান বলতেন ‘না’ তবে বলা হতো তিনি নিজের অভিযোগ নিজেই স্বীকার করেছেন।
ছলচাতুরি বিচারে আদালত তাকে ১২ নম্বর আর্টিকেল অনুযায়ী দোষি সাব্যস্ত করে। বিচারে তার কার্যকলাপকে প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাকে ‘ডাইনি’ সাব্যস্ত করা হয়। তার কোন আইনজীবি না থাকাতে জোয়ানকে রায় বিস্তারিত পড়ে শোনানো হয় নি। জোয়ান তখন বুঝতেও পারেন নি, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কারাগারে জোয়ানকে মেয়েদের পোশাক পরতে হয়। ক’দিন পর তাকে কারাগারের ভেতরেই লর্ড উপাধিধারী এক ‘সম্ভ্রান্ত’ ইংরেজ ধর্ষণ করা হয়। জোয়ান আবার পুরুষদের পোশাক পরিধান শুরু করেন। এর পেছনে মূল কারণ ছিল ছেলেদের পোষাকে নিরাপত্তা বেশি পাওয়া যেতে পারে, তাছাড়া তার পরার জন্য অন্য কোন বস্ত্র ও অবশিষ্ট ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় মৃত্যুদণ্ডের দৃশ্য
তাকে একটি পিলারের সাথে বেঁধে ফেলা হয়। জোয়ান গীর্জার যাজকদের কাছে একটি ক্রুশ চান। জনৈক চাষী একটি ছোট ক্রুস তৈরি করে জোয়ানের পোষাকের সামনে ঝুলিয়ে দেন। জোয়ানের মৃত্যুর পর ইংরেজরা তার কয়লা হয়ে যাওয়া শরীরকে প্রদর্শন করে যাতে কেউ কোনদিন দাবি না করতে পারে জোয়ান বেঁচে পালিয়ে গেছে। এরপর তার শরীর আরো দু’বার পোড়ানো হয় যাতে তার ছাইগুলো এতো মিহি হয়ে যায় যে কেউ তা সংগ্রহ করতে না পারে।
তার মৃত্যুর ২৫ বছর পর পোপ ক্যালিক্সটাস-৩ তার এই হত্যাকান্ডের বিচারকাজ নতুন করে শুরু করেন এবং সেই বিচারে জোয়ান নিস্পাপ ও সন্ত (Saint) এবং শহীদ প্রমাণিত হয়। মৃত্যুপরবর্তী বিচারে জোয়ান নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে সন্ত বা সেইন্ট ঘোষণার সাথে সাথে তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে ফরাসিরা ফ্রান্স থেকে চিরতরে ইংরেজদের সকল অধিকার ও চিহ্ন মুছে দেয়ার প্রয়াস পায়। তার স্মরণে পরে ফ্রান্সে অনেক স্মৃতিসৌধও নির্মিত হয়েছে।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ