Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

জাতীয় কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণ ইসলামের কাম্য


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

শাকিলা আলম

আল্লাহর রসুল (সা.) বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পর ইসলামের প্রকৃত আকিদা এ জাতির সামনে থেকে হারিয়ে যায়। এর কয়েকশ বছর পর পর্যন্ত জাতির মধ্যে জন্ম নিতে থাকে শত শত ফকিহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস যাদের কাজই ছিল দীনের বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে মাসলা-মাসায়েল আবিষ্কার করা। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন (সুরা মায়েদা ৭৭, ৮৭, সুরা নিসা ১৭১) এবং আল্লাহর রসুলও বিদায় হজের ভাষণে দীন, জীবনব্যবস্থা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। বাড়াবাড়ি অর্থ হচ্ছে অতি বিশ্লেষণ এবং যতটুকু বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বেশি করা, আধিক্য (তাশাদ্দুদ) করা। এমন কোনো কাজ দেখলে রসুলাল্লাহ রেগে লাল হয়ে যেতেন এবং যারা তা করত তাদেরকে কঠিনভাবে তিরস্কার করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস হচ্ছে, গত কয়েক শতাব্দী থেকে সেটাই সবচেয়ে বেশি করা হয়েছে। তাঁর অত ক্রোধেও, অত নিষেধেও কোনো কাজ হয় নি। তাঁর জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের (আ.) জাতিগুলির মতো দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে অতি মুসলিম হয়ে মাসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে বিভেদ সৃষ্টি করেছ। অতি-বিশ্লেষণকারী আলেম, প-িত, ফকিহগণ দীনের প্রায় প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছেন। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে, দাড়ি, টুপি, লেবাস, আঞ্চলিক সংস্কৃতির চর্চা, গান-বাজনা, টাখনু, কুলুখ, অজু-গোসল, দোয়া-কালাম, জিকির-আজকার, নামাজ, রোজার ইত্যাদির মাসলা মাসায়েল নিয়ে ব্যাখ্যা, অতি ব্যাখ্যা, আরো ব্যাখ্যা করে করে দীনটাকে ভীতিকর, জটিল, দুর্বহ ও দুর্বোধ্য বানিয়ে ফেলেছেন।
সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে সম্ভবত নারীর পর্দা, পুরুষের দাড়ি-টুপি, লেবাস, সঙ্গীত-সংস্কৃতির বিরোধিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পর্দা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে জাতির নারীরা ধীরে ধীরে গৃহবন্দি হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাটি আজ আর নেই। সেই শিক্ষা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে কোর’আনের শিক্ষার দিকে এবং পাশাপাশি রসুলাল্লাহ যে সমাজ নির্মাণ করেছেন সেখানে তাদেরকে কী অবস্থানে রেখেছেন সেটাকেই আদর্শ হিসাবে নিতে হবে। আমরা রসুলাল্লাহর নির্মিত সমাজের দিকে তাকালে দেখতে পাই নারীদের অবস্থান ছিল সর্বব্যাপী। যুদ্ধে নারী, মসজিদে নারী, বাজার ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, কৃষি, শিল্প, পরামর্শ সভা, আলোচনা সভা সর্বত্রই পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবাধ অংশগ্রহণ রসুলাল্লাহ নিশ্চিত করেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন তাঁর উম্মাহকে মানবজাতির নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যেতে আর সেটা করতে গেলে জাতির অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ করে রাখা যাবে না। একপায়ে মানুষ চলতে পারে না। এখন আমরা দেখব রসুল যে সমাজটি গঠন করেছিলেন সেই সমাজে নারীর অবস্থান কেমন ছিল।

যুদ্ধক্ষেত্রে নারী:

নারী সাহাবিগণ রসুলাল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে যেতেন। তাঁদের মূল কাজই ছিল আহতদের চিকিৎসা করা, তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে আনা, পিপাসার্ত যোদ্ধাদের পানি পান করানো, শহীদদের দাফন করা ইত্যাদি। আনাস (রা.) বলেন, রসুল যখন কোনো যুদ্ধাভিযানে বের হতেন তখন উম্মে সুলাইম ও কতিপয় আনসার মহিলাকে সাথে নিয়ে যেতেন। তারা আহতদেরকে চিকিৎসা করত (মুসলিম)।” রসুলের স্ত্রীগণও যুদ্ধে যেতেন।
উমরের (রা.) খেলাফতকালে একদিন যুদ্ধলব্ধ মালামাল বণ্টনের কালে কিছু সংখ্যক চাদর মদিনার মাহিলাদের মধ্যে বণ্টন করলেন। একটি উত্তর চাদর অবশিষ্ট রইল। এক ব্যক্তি বলল, হে আমিরুল মোমেনীন! রসুলাল্লাহ (সা.) এর দৌহিত্রী- আপনার স্ত্রী উম্মে কুলসুমকে এই চাদরটি দিন। ওমর (রা.) বললেন, মদিনাবাসিনী উম্মে সালিত এটি পাওয়ার অগ্রাধিকারিনী। তিনি ওহুদ যুদ্ধের দিন আমাদের জন্য মশক ভরে পানি এনে খাইয়েছেন। (বোখারি, হাদিস নং ১৩২৮) আর উত্তম দোপাট্টাটি উম্মে আম্মারাকে দেওয়া হোক, কারণ আমি ওহুদ যুদ্ধের দিন রসুলাল্লাহকে বলতে শুনেছি, আমি ডানে ও বায়ে যেদিকে দৃষ্টিপাত করেছি সেদিকেই আমাকে রক্ষার জন্য উম্মে আম্মারাহকে লড়াই করতে দেখেছি (আত তবকাতুল কুবরা)।”
আনাস (রা.) বলেন, ওহুদ যুদ্ধের দিন আয়েশা ও উম্মে সুলাইম দ্রুতপদে মশক বহন করে আনছিলেন এবং লোকদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন (বোখারী ও মুসলিম)।” উম্মে আতিয়া (রা.) বলেন, আমি রসুলাল্লাহর সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাদের জিনিসপত্রের তত্ত্বাবধান করার জন্য তাঁবুতে থেকে যেতাম এবং খাদ্য প্রস্তুত করতাম (মুসলিম)।”
এরকম শত শত ঘটনা প্রমাণ করে মহানবীর নারী সাহাবিরা সেনাবাহিনীর বিপদসংকুল, চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোতে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষ যোদ্ধাদের পাশাপাশি দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তা-ই নয় বহুক্ষেত্রে পুরুষ যোদ্ধারা যখন পিছপা হয়েছে তখন নারী যোদ্ধারা তলোয়ার, তীর, বল্লম নিয়ে লড়াই করে শত্রুকে পরাস্ত করেছেন। অনেক সময় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলিম বাহিনীর পিছু হটে যাওয়া পুরুষ যোদ্ধাদেরকে তাবুর খুঁটি দিয়ে পিটিয়ে ফের যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি তারা রণসঙ্গীত গেয়ে গেয়ে যোদ্ধাদেরকে উজ্জীবিত করতেন।
উহুদের যুদ্ধে বিশৃঙ্খলাজনিত কারণে যখন মুসলিম যোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছাতে শুরু করলো তখন মদিনা থেকে সাফিয়া (রা.) এগিয়ে এসেছিলেন এবং লাঠি হাতে দৌড়ে দৌড়ে পলায়নপর যোদ্ধাদের তীব্র ভাষায় তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করছিলেন, এমন কি আঘাতও করছিলেন যেন তারা আবার যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যান।
খন্দকের যুদ্ধের সময় আল্লাহর রসুল নারী ও শিশুদেরকে একটি নিরাপদ অবস্থানে রেখে গিয়েছিলেন। জায়গাটি দুর্গের মতো। সেখানে নারী ও শিশুদের নিয়ে হাসান বিন সাবিত (রা.) অবস্থান করছিলেন। একজন ইহুদি এসে দুর্গের চারদিকে কুমতলবে ঘোরাফেরা করছিল। সাফিয়া (রা.) হাসান বিন সাবিতকে (রা.) অনুরোধ করলেন গুপ্তচর ইহুদিকে খতম করে ফেলার জন্য। তখন হাসান বললেন, “আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন, তুমি ভালো করেই জানো আমার দ্বারা এসব কাজ হয় না। আর আমি যদি এই কাজ করতে পারতাম তাহলে কি আমাকে তোমাদের সঙ্গে রেখে যেত?” তখন সাফিয়া (রা.) নিজেই একটি লাঠি নিয়ে দুর্গের নিচে নেমে যান এবং তার মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। দুর্গে ফিরে হাসানকে (রা.) বলেন নিচে গিয়ে তার পোশাক, বর্ম ইত্যাদি খুলে নিয়ে আসার জন্য। হাসান (রা.) বললেন, “ওর পোশাক খোলার কোনো প্রয়োজন আমার নেই।” তখন সাফিয়া (রা.) নিজে গিয়েই কার্য সমাধা করেন। এ ঘটনায় তার সাহসিকতার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠে। (ইবনে ইসহাক)।
নারীর এই চরিত্র একদিনে হয় নি। রসুলাল্লাহ ধীরে ধীরে তাদেরকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে যুদ্ধ করার উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছিলেন। উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রা.) অল্প বয়সে রসুলাল্লাহর সংসারে আসেন। তখন থেকেই রসুলাল্লাহ তাঁকে সর্ববিষয়ে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে থাকেন। একদিন তিনি আয়েশার (রা.) সঙ্গে তিনি দৌড় প্রতিযোগিতাও করেছিলেন বলে হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি ইচ্ছা করে নিজের গতি কমিয়ে আয়েশাকে (রা.) বিজয়ী হওয়ার সুযোগ দেন, যাতে করে আয়েশা (রা.) অনুপ্রাণিত হন, আনন্দিত হন।

চিকিৎসাক্ষেত্রে নারী:

রসুলাল্লাহর নারী আসহাব রুফায়দাহ আসলামিয়াহ ছিলেন একজন দক্ষ চিকিৎসক। মসজিদে নববীর মধ্যে যুদ্ধাহত সাহাবিদের চিকিৎসা ও সেবার জন্য একটি হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন সেই হাসপাতালের পরিচালক। খন্দকের যুদ্ধে আহত সা’দ বিন মা’আজ (রা.) দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় তাঁর অধীনেই চিকিৎসাধীন ছিলেন (সিরাত ইবনে ইসহাক)।
রুবাইয়া বিনতে মুয়ায়েজ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমরা রসুলাল্লাহর (সা.) সঙ্গে জেহাদে অংশগ্রহণ করতাম। লোকদেরকে পানি পান করাতাম, তাদের আবশ্যকীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করতাম, আহতদের ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করতাম এবং নিহতদের লাশ ও আহতগণকে মদিনায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতাম (বোখারি, হাদিস নং ১৩২৯)।
দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রকৃত ইসলামের আকিদা বিকৃত হয়ে যাওয়ার পর শরিয়তের মাসলা-মাসায়েলকে নিজেদের মনমতো ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবর্তিত করে নেন শরিয়াহ বিশেষজ্ঞরা। তারা পর্দাপ্রথা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে নারীকে যে কোনো অসিলায় বহির্মুখী জীবন থেকে ফিরিয়ে ঘরমুখী ও বাক্সবন্দী করার পক্ষে রায় দেন যা রসুলাল্লাহর সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা বোখারির হাদিসে সরাসরি দেখি- নারী সাহাবিরা আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে সকল আহত মুজাহিদদের চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে যাদের সাথে বিয়ে হারাম, তাদের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাসেবা প্রদান যায়েজ, অন্যদের ক্ষেত্রে যায়েজ নাই। সেই ফতোয়া আবার বোখারি শরিফের হাদিসগুলোর ব্যাখ্যার মধ্যে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাদিস গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছ এবং তার বিপরীতমুখী ফতোয়া শরিয়ত হিসাবে গৃহীত হয়ে গেছে।

শরয়ী ওজর থাকলেও জুমা ও ঈদে নারীদেরকে উপস্থিত থাকার আদেশ

জুমা একটি সাপ্তাহিক সম্মেলন যেখানে সালাতের পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, অপরাধীদের দ- দেওয়া হবে এবং জাতির প্রধান (এমাম) এর পক্ষ থেকে নির্দেশ পাঠ করা হবে। এই বক্তব্যই হচ্ছে খোতবা। ঈদও এমনই একটি সম্মেলন। তাই জুমা ও ঈদে জাতির প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম নারী ও পুরুষের উপস্থিত থাকা আবশ্যক। নারীদেরকে ঋতুকালীন সময়ে সালাত থেকে আল্লাহ অব্যাহতি দিয়েছেন কিন্তু জুমা ও ঈদের সমাবেশে থেকে খোতবা শোনা থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয় নি। উমে¥ আতিয়া (রা.) এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদেরকে রসুলাল্লাহ (দ.) আদেশ করতেন আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই। তারা লোকদের পেছনে থাকত। লোকেরা তাকবীর বললে তারাও তাকবীর বলত এবং তাদের সাথে দোয়ায় শরীক হতো। এভাবে সবাই ঐ দিনের কল্যাণ ও পবিত্রতা লাভের আশা করতো। একজন নারী রসুলাল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেন যে, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারি। রসুলাল্লাহ (দ.) বললেন, সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে আল্লাহর রসুল নারীদেরকে জাতীয় জীবনের কার্যক্ষেত্রে স¤পৃক্ত থাকতে নির্দেশ, প্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান করেছেন। বোরকা দূরে থাক ওড়নাও নেই- এমন ওজরও রসুল গ্রহণ করেন নি।

পুরুষের পাশাপাশি আলোচনা সভায় নারী:

“সাদ ইবনে ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) একদিন রসুলের ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। সেই সময় তাঁর কাছে একদল কোরাইশ মহিলা ছিলেন। তারা উচ্চৈঃস্বরে রসুলাল্লাহর সাথে কথা বলছিলেন এবং কোনো বিষয়ে আরো অধিক দাবি করছিলেন। কিন্তু ওমর (রা.) প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলে তারা উঠে দ্রুত ভেতরে চলে গেলেন। রসুলাল্লাহ ওমরকে (রা.) আসার অনুমতি দিলেন। তিনি তখন হাসছিলেন। ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহ আপনার হাসি স্থায়ী করুন। রসুল বললেন, যে সব মেয়েরা আমার কাছে ছিল তাদের কর্মকা- দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। কারণ তারা তোমার কণ্ঠ শুনেই দ্রুত ভিতরে চলে গেল। ওমর বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনাকে বেশি ভয় করা তাদের উচিত। তারপর বললেন, হে নিজেদের দুশমনেরা! তোমরা কি আমাকে ভয় পাও এবং আল্লাহর রসুলকে ভয় পাও না? তারা বললো, হ্যাঁ তাই, আপনি রসুলের চাইতে কর্কশ ও কঠোর। রসুল বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! শয়তানও তোমাকে কোনো পথে চলতে দেখলে সে পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে (বোখারী ও মুসলিম)।”

উপার্জনে নারী:

নারীদেরকে সংসারকার্যের পাশাপাশি উপার্জন করার ক্ষেত্রে ইসলাম কোনো নিষেধজ্ঞা দেয় নি। তবে স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর কোনো অধিকার থাকবে না, সেটা স্ত্রী যেভাবে খুশি ব্যয় করতে পারবে। পবিত্র কোর’আনে আমরা দেখি শোয়াইব (আ.) বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন তাঁর দুই কন্যা ছাগল চরাতেন। তাঁদের একজনকেই মুসা (আ.) বিবাহ করেন। রসুলাল্লাহর নারী সাহাবিদেরও অনেকে বিভিন্ন পন্থায় উপার্জন করতেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী উম্মুল মোমেনীন খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী। তিনি তাঁর সমুদয় সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করে দিয়েছিলেন। নারীদের উপার্জন সংক্রান্ত আরো কিছু ঘটনা হাদিসগ্রন্থ থেকে তুলে ধরছি।
“সাদ ইবনে মুয়ায থেকে বর্ণিত, কাব ইবনে মালেকের এক মেয়ে সালা পর্বতের পাদদেশে বকরি চরাচ্ছিল। একটি বকরি আঘাত প্রাপ্ত হলে সে সেটিকে পাথর দ্বারা জবাই করে। পরে রসুলকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন খাও (বোখারী)।”
“সাদ ইবনে সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী সাহাবি একখানা বুরদা নিয়ে আসলো। বুরদা হচ্ছে প্রান্তভাগে নকশা করা বড় চাদর। সে বললো, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনাকে পরিধান করার জন্য নিজ হাতে এ চাদর বুনেছি। রসুলাল্লাহ সেটি সাগ্রহে তার নিকট থেকে নিলেন ও তা পরিধান করে আমাদের কাছে আসলেন (বোখারী)।” উল্লেখ্য, তিনি বুরদা তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করতেন। মদিনার বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতেন একজন নারী উম্মে শেফা (রা.)।
জাবের থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) উম্মে মুবাশশির আনসারীর খেজুর বাগানে প্রবেশ করে তাকে বললেন, “কে এই খেজুর বাগান তৈরি করেছে- মুসলিম না কাফের?” উম্মে মোবাশশির বললেন, “মুসলিম তৈরি করেছে।” তিনি বললেন, “কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপন করে কিংবা ফসল উৎপন্ন করে আর কোনো মানুষ, পশু বা অন্য কিছু তার ফল খায় তাহলে তাও তার জন্য সাদকা হিসেবে গণ্য হবে (মুসলিম- পানি সেচ অধ্যায়)”।

পরিশিষ্ট:

নারীর প্রতিভা আছে, মেধা আছে, সমাজে অবদান রাখার যোগ্যতা আছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস আছে; কিন্তু আজকের সমাজে তার সেই গুণগুলোর কোনো মূল্যায়ন নেই, কোনো স্বীকৃতি নেই। সে তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে না। তাকে ধর্মের নাম করে, তার উপর সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ করে অবদমিত করে রাখা হচ্ছে। সে এই অন্যায় অবস্থা, এই জাহেলিয়াতের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছে না, কোনো উদ্ধাকারীর সন্ধানও তার জানা নেই। এজন্য নারীরা আজ নীরবে কাঁদে।
চৌদ্দশ বছর আগের আরবে নারীর এই একই অবস্থা ছিল। সেই কান্না থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন আল্লাহর রসুল। নারীরা কান্নাকাটি রেখে বীরাঙ্গনা হয়েছিলেন। যে হাতে নারী রুটি বানাতো, সেই হাতকে রসুলাল্লাহ এত বলিষ্ঠ করে তুললেন যে তারাই বল্লম আর তলোয়ার চালিয়ে শত্রুর মনে ত্রাস সৃষ্টি করে ফেলেছে। রসুল তাদের মুখে ভাষা দিলেন, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিলেন, শক্তি দিলেন। তারা তাদের মেধা যোগ্যতার প্রমাণ রাখল। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অবদান রাখল। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়, উপার্জনে, বাজার ব্যবস্থাপনায়, যুদ্ধে, মসজিদে এক কথায় জাতীয় জীবনের সর্ব অঙ্গনে তাদের অবাধ বিচরণ রসুল নিশ্চিত করলেন।
আজ আবারও নারী নীরবে কাঁদছে। অলিখিত সিস্টেম, আচার-বিচার-কুসংস্কার ও প্রথাগুলো নারীদের অগ্রগতির জন্য বিরাট বাধা। যেমন আজ যদি গ্রামের কোনো নারীকে চিকিৎসক প্রতিদিন সকালে দৌড়ানোর পরামর্শ দেন তাহলে সে সমাজের বিকৃত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তা করতে পারবে না, সুস্থও হতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ-রসুলের ইসলাম তো তাকে এক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয় নি। তাদেরকে এই ফতোয়ার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার জন্য প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাগুলো তাদের সামনে তুলে ধরা এখন জরুরি। কেবল শহরের সুবিধাপ্রাপ্ত নারীদেরকেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামের অশিক্ষিত অর্ধ-শিক্ষিত গৃহবধুকেও সামাজিক ও জাতীয় অঙ্গনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই নারীকে আর নীরবে কাঁদতে হবে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...