হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

গণতন্ত্রে নেতা নির্বাচন পদ্ধতির ব্যর্থতা

অনেকে বলেন ইসলামই গণতন্ত্র আবার অনেকে বলেন সমাজতন্ত্রের ধারণা ইসলামই দিয়েছে, ইসলামের নামে রাজতন্ত্র চোলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী, এখনও কোথাও কোথাও টিকে আছে ইসলামী রাজতন্ত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবটাই ভুল। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ধরুন আপনার একটা গাধা আছে, আপনার এক বন্ধু আপনার বাড়িতে বেড়াতে এসে গাধাটি দেখে বললো, “বন্ধু, গাধাটি তো ভারি সুন্দর। এটি দেখতে যেন তোমার মতোই।” তার কথার পেছনে যুক্তি হিসাবে সে বললো, “দেখ বন্ধু, তোমার জীবন আছে, গাধারও জীবন আছে, দেখার জন্য তোমার দু’টি চোখ আছে ঠিক একইভাবে গাধারও দু’টি চোখ আছে, গাধা তোমার মতোই হাঁটতে জানে, খেতে জানে; এমনই আরও অনেক মিল দেখানো যাবে।” এই যুক্তিতেই কি আপনি আপনার বন্ধুর কথা মেনে নিবেন? দু’টি প্রাণীর মধ্যে এতটুকু মিল থাকা স্বাভাবিক কিন্তু গাধা এবং মানুষ এক নয় বরং আসমান জমিন পার্থক্য, ঠিক একইভাবে দু’টি জীবনব্যবস্থার মধ্যে ঐটুকু মিল থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু ইসলাম নিখুঁত, পরিপূর্ণ, শাশ্বত, চিরন্তন, স্রষ্টাপ্রদত্ত একটি জীবনব্যবস্থা। আর গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্র-মন্ত্রগুলি মানবরচিত ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্র“টিযুক্ত, ব্যর্থ, বস্তুবাদী ব্যবস্থা অর্থাৎ দু’টি ব্যবস্থার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হোচ্ছে এর সৃষ্টিকর্তা ও সার্বভৌমত্বে। ইসলাম তৈরি কোরেছেন স্বয়ং আল্লাহ, সুতরাং এটি তাঁর মতোই নিখুঁত এবং অপরিবর্তনীয়। পক্ষান্তরে অন্যান্য তন্ত্র-মন্ত্রগুলি মানুষের তৈরি। এগুলির সার্বভৌমত্বও মানুষের। সুতরাং মানুষের তৈরি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র ইত্যাদির কোনটার সঙ্গে ইসলামের তুলনা করা আল্লাহর সঙ্গে চরম ধৃষ্টতা এবং মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। সারা দুনিয়াতে এখন গণতন্ত্রের জয়জয়কার। কথায় বলে, Might is right- শক্তিমানের কথাই ঠিক। তাই মোসলেম জনসংখ্যাও এখন হাসিমুখে গণতন্ত্রের জয়গান কোরে যাচ্ছে। আল্লাহর দীনের বিপরীত সবকিছুই কুফর, তাই ইসলামের আলেম ওলামারা ইসলামের সঙ্গে গণতন্ত্রের যোগসূত্র খুঁজে পেতে মহাব্যস্ত। এর মধ্যে যে দলগুলি ইসলামের ব্যানার নিয়ে গণতন্ত্রের জোয়ারে গা ভাসিয়েছে তাদের মুখে কিছু বুলি আমরা প্রায়ই শুনতে পাই যেমন, ‘নির্বাচনই এ সময়ের জেহাদ,’ ‘ব্যালটই হোচ্ছে বুলেট’ ইত্যাদি। হীনমন্যতাবশত এবং নিজেদের পক্ষে সাফাই হিসাবে তারা ইসলামের সঙ্গে গণতন্ত্রের মিল অন্বেষণ কোরলেও প্রকৃতপক্ষে ইসলামের নেতা নির্বাচন পদ্ধতির সঙ্গে অন্য কোন তন্ত্রের নেতা নির্বাচন পদ্ধতির কোন মিল নেই। প্রতিটি জীবনব্যবস্থায়, দীনে (System of life) নেতা নির্বাচনের পৃথক পদ্ধতি রোয়েছে। ইসলামেও স্বভাবতই নেতা নির্বাচনের একটি ব্যবস্থা রোয়েছে। কালক্রমে ইসলাম বিকৃত হয়ে যাওয়ায় সেই ব্যবস্থাটিও বিকৃত হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা দেখি কেবল ধর্মনিরপেক্ষ দলই নয়, অনেক ইসলামপন্থী দলও প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নেতা নির্বাচন কোরে থাকে। বর্তমানের এই পদ্ধতির ফলে কি ধরনের নেতৃত্ব কিভাবে নির্বাচিত হন সে বিষয়টি পর্যালোচনা করা যাক।
একটি পুকুরে যদি বড় বড় ফাঁকা বিশিষ্ট একটি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়, তাহোলে সেই জালে কোন ছোটমাছ ধরা পড়বে না, ধরা পড়বে কেবল বড় মাছগুলি। ছোট মাছ ধরার বেলায় জালের ফাঁকাগুলি হোতে হয় খুব ছোট, যেমন কারেন্ট জাল। সুতরাং কোন ধরনের মাছ আমি ধোরব তার উপরে নির্ভর কোরবে আমার জাল কেমন হবে, অর্থাৎ এই জাল হোচ্ছে মাছ ধরার একটি System বর্তমানে গণতন্ত্রে যে পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন করা হয় সেটি হোচ্ছে বড় ফাঁকাবিশিষ্ট একটি জালের মতো, অর্থাৎ বড় বড় রুই কাতলারাই এতে উঠে আসবে। সমাজে যারা প্রভাবশালী, বিত্তবান, পেশীশক্তিতে বলীয়ান তারাই এখন সমাজের রুই কাতলা। পক্ষান্তরে যারা চরিত্রবান, ভালো মানুষ, ওয়াদা রক্ষাকারী, ভদ্র, কারও ক্ষতি করে না তারা বর্তমানের সমাজে বোকা হিসাবে চিহ্নিত, তারা গুরুত্বহীন, সর্বত্র অবদমিত। এই দুই ধরনের মানুষের সমন্বয়েই সমাজ। এই সমাজে প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে কেমন লোক নির্বাচিত হবে সেটা দেখা যাক।
প্রচলিত পদ্ধতির নির্বাচনে প্রথমে একজন টাকা দিয়ে মনোনয়ন পত্র কিনে প্রার্থী হয়, নিজের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপায়, নিজের গুণগান নিজেই প্রচার করে, মিছিল করে, ব্যানার টানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়, মানুষকে তার পক্ষে নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়, প্রয়োজনে বহু হিংসাত্মক কাজে জড়িত হয় যেমন প্রতিপক্ষকে খুন করা, বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। গ্রাম্য মেম্বার থেকে শুরু কোরে যে কোন পর্যায়ের নির্বাচনেই এসব ঘটনা ঘোটে থাকে। এটাই নেতা নির্বাচনের বর্তমান সিস্টেম বা জাল, সারা দুনিয়াতে এই সিস্টেম প্রায় একই রকম, শুধু কোথাও সহিংসতা কম, কোথাও বেশি। এখন ধরুন একজন সৎ মানুষ আছেন যিনি বিত্তবান নন, নিজস্ব কোন লাঠিয়াল বাহিনী নেই, পেছনে প্রভাবশালী গোষ্ঠির মদদ নেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়ালেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বড়ই দুঃশ্চরিত্রের অধিকারী, নীতিহীন এবং অনেক টাকার মালিক। এখন এই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কার? সহজ উত্তর: এই দ্বিতীয় লোকটাই বিজয়ী হবে। এভাবে প্রতিটি পর্যায় থেকে খারাপ লোকগুলি বিজয়ী হোতে হোতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসে। সুতরাং বড় ফাঁক বিশিষ্ট জাল দিয়ে যেমন সব ছোট মাছ বেরিয়ে যায় এবং বড় মাছগুলি রোয়ে যায়, তেমনি নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতিতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ, অসৎ চরিত্রের মানুষটিই বিজয়ী হয়ে নেতার আসনে উপবিষ্ট হন। আমরা বোলি না যে, যারা এই পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচিত হন তাদের ১০০% ই খারাপ লোক, কিছু কিছু সচ্চরিত্র লোকও এ পদ্ধতির জালে উঠে আসেন তবে তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। আর আসলেও তারা বেশিদিন তাদের চরিত্র বজায় রাখতে পারেন না; System টাই এমনভাবে তৈরি যে, কেউ ভালো থাকতে চাইলেও ভালো থাকতে পারেন না, বিরুদ্ধ স্রোতে বেশিদিন নৌকা বাইতে পারেন না।
এবার ইসলামে নেতৃত্ব মনোনয়নের পদ্ধতিটি দেখা যাক। রসুলাল্লাহ বোলেছেন, তোমরা যখন কারো ভিতর নেতৃত্ব পাবার বাসনা, আকাক্সক্ষা দেখ- সে যেন কখনও তোমাদের মধ্যে নেতা না হোতে পারে [আবু বুরাদা (রা:) থেকে বোখারী]। সুতরাং এটা হোচ্ছে প্রথম নীতি। ইসলামের সভ্যতার সাথে বর্তমানের সিস্টেমের আসমান জমিন পার্থক্য, বলা যায় বিপরীত। ইসলামের কথা হোল, কর্তৃপক্ষ যদি কোন প্রকারে বোঝে যে কোনো এলাকার আমীর (নেতা) হবার জন্য একজন লোকের মনে অভিপ্রায় আছে তাহোলে শুরুতেই সে অযোগ্য বোলে পরিগণিত হবে, তাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতোই যোগ্য মনে হোক না কেন। বর্তমানের পদ্ধতিতে অযোগ্যতা হোল কেউ আদালতে শাস্তি পেলে, ব্যাংকের ঋণখেলাপি হোলে, বয়স কম হলে ইত্যাদি বিষয়। কিন্তু ইসলামে নেতৃত্ব পাবার অন্যান্য অযোগ্যতার পূর্বে প্রাথমিক অযোগ্যতা হোল নেতৃত্ব পাবার লোভ, বাসনা। আল্লাহর রসুল তাঁর অন্তিম সময়ে মুতার প্রান্তরে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন যে বাহিনীর প্রধান হিসাবে তিনি মনোনীত করেন ১৭ বছর বয়সী ওসামা বিন যায়েদকে (রা:)। মোহাম্মদ বিন কাসেম ছিলেন সিন্ধু অভিযানের সেনাপতি। তখন তারও বয়স ছিলো মাত্র ১৭ বছর। সুতরাং ইসলামে অল্প বয়সী হওয়াটা নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র অযোগ্যতা নয়। প্রথম অযোগ্যতা হোল, “নেতা হবার কামনা”। এটা হোল উর্ধ্বতন নেতা কর্তৃক অধস্তন নেতা নিযুক্তির বেলায় নিয়ম।
কিন্তু সাধারণ ক্ষেত্রে নেতা নির্বাচন পদ্ধতি হোল- একটা গ্রামের আমীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুঁজে বের কোরতে হবে এমন ব্যক্তিকে যিনি সবচেয়ে আল্লাহ ভীরু, মুত্তাকি, আমানতদার, সৎ, আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্ভীক, স্বজনপ্রীতি করেন না। যাঁর সামনে পাহাড় নড়বে কিন্তু তার ওয়াদা নড়বে না, কোটি টাকা তার ঘরে আমানত রাখলে তিনি ধরেও দেখেন না টাকাগুলি নতুন না পুরানো- এমন লোকের খোঁজ নিতে হবে। বিস্তারিত খবর নেয়ার পরে তার নাম ঘোষণা কোরতে হবে। যার নাম ঘোষণা করা হবে সে হয়তো নিজেও জানবে না একটু পরে সে এই এলাকার আমীর হবে। এই আমীররা আবার সবাই মিলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকী ও উপরোক্ত সদগুণাবলী বিশিষ্ট লোকটিকে তাদের নেতা নির্বাচিত কোরবেন। এইভাবে পর্যায়ক্রমে আমীর নির্বাচিত হোতে হোতে একেবারে রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ ইমাম পর্যন্ত নেতা নির্বাচিত হবে। এ হোল ইসলামী সভ্যতা। বর্তমানে যে নিয়মটি প্রচলিত আছে সেটা এর সম্পূর্ণ বিপরীত, কারণ বর্তমানে নেতা হোতে শুরুতেই প্রার্র্থী হোতে হয়। জমিতে আগাছার প্রাদুর্ভাবে যেমন ফসল বিনষ্ট হয়, তেমনি আজ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র দুঃশ্চরিত্র, মিথ্যাবাদি, ষড়যন্ত্রকারী, পরসম্পদলোভী, দুর্নীতিগ্রস্ত লোকগুলি নেতার আসনে বসে থাকার কারণে ভালো লোক, নিরপেক্ষ, লোভ লালসার উর্দ্ধে এমন লোক প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে, থাকলেও তারা অস্তিত্বের সংকটে আছেন। অথচ আজ থেকে মাত্র কয়েক দশক আগেও আমাদের এই দেশে সৎ লোকেরা নিজে থেকেই সমাজের নেতৃত্ব ও সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসতেন অথবা মানুষজনই তাদেরকে একরকম জোর কোরে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ কোরত। তারা সাধারণত সৎ, নির্ভীক, লোভ-লালসাহীন, অন্যের উপকার, মানবসেবা ইত্যাদিকে তারা ধর্মীয় কাজ ও নৈতিক দায়িত্ব বোলে মনে কোরতেন। ফলে দেখা যেতো কোন অর্থকড়ি খরচ না কোরেই তারা নির্বাচিত হোতেন। অনেকে নির্বাচনে না জিতলেও নিজের পয়সায় সমাজ সেবা কোরে যেতেন। কিন্তু আজ দিন বদলেছে। এখন সমাজে এমন অর্থশালী মানুষ পাওয়া কঠিন যারা দেশের মানুষের উপকারের জন্য স্কুল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। যারা করেন তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য থাকে কেবলই ব্যবসা। আর নেতারা এইকাজগুলি করেন সরকারের টাকায়, যদিও বরাদ্দ টাকার বেশির ভাগই ভাগ বাটোয়ারা কোরে খায় রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুঁটির লম্বা লাইন।
এখন নেতারা সমাজ সেবার কাজ যা কিছু করে সব প্রশংসার জন্য। আজকে নেতারা জনগণের দেয়া করের টাকায় কোথাও একটা ব্রিজ তৈরি কোরে দেয়, একটা ছেলেকে যদি বৃত্তি, একজন বৃদ্ধকে কিছু টাকা দেয় সেটা নিয়েও তাদের প্রচারণার কোন শেষ থাকে না, সব অবদানের সঙ্গে নিজের নামটি অবধারিতভাবে জুড়ে দেয়। টিভি ক্যামেরা না আসলে ত্রাণ দেওয়া বন্ধ থাকে। ইসলামী সভ্যতায় এটা হবে একেবারে বিপরীত। কোন প্রশংসা কেউ পাবেনা, প্রশংসা হবে শুধু আল্লাহর। যে কাজই হোক নেতা বলবে এটা জনগণের, এটা আল্লাহর। আমি কিছুই করি নাই, সব আল্লাহ কোরেছেন। মানুষের টাকা, মানুষের সম্পদ। আমি শুধু এর রক্ষক। কোথাও কোন কিছুতে কারো নাম খোদাই করা থাকবে না। কারণ নেতা যা কোরেছে তা কোরেছে জনগণের টাকা দিয়ে, মোসলেমদের টাকা দিয়ে। কাজটা কোরেছেন আল্লাহ, সমস্ত তওফীক ও কৃত্বিত্ব আল্লাহর, সমস্ত পাওনা আল্লাহর। এর অসাধারণ নজির স্থাপন কোরেছেন এই জাতির নেতা স্বয়ং রসুলাল্লাহ। তিনি যখন মক্কা বিজয় কোরলেন অর্থাৎ তিনি মক্কার অধিপতি। মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রসুল বোললেন, ‘এই যে আজকে আমাদের বিজয়, অর্জন এটা আল্লাহ একা কোরেছেন।’ এমনকি এও বোললেন না যে, আমরা চেষ্টা কোরেছি, যদিও এটা ইতিহাস যে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা আপ্রাণ সংগ্রাম কোরেছিলেন। ঠিক তেমনি ইসলামে কেউ কোন কিছু নিজে কোরেছে এরকম দাবি কেউ কোরবে না। এ দাবি যদি কেউ করে সাথে সাথে সে তার পদ হারাবে। এটা দাবি করা হোল ঐ পদে বহাল থাকার ক্ষেত্রে তার প্রথম অযোগ্যতা। একজন নেতার পক্ষে তার কোন সফলতার জন্য কৃতিত্ব দাবি করা তো দূরের কথা, অন্যের মনেও এই ধারণা যেন না থাকে সে বিষয়েও ইসলামের দৃষ্টি কত সতর্ক তার জ্বলন্ত উদাহরণ খালেদ বিন ওয়ালীদ (রা:) এর পদচ্যুতির ঘটনাটি। খালেদ (রা:) এর নেতৃত্বে উম্মতে মোহাম্মদী যখন একটির পর একটি যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ী হোচ্ছিল তখন বাহিনী ও জনসাধারণের মনে একটি ধারণা জন্ম নিল যে খালেদ (রা:) এর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই এ বিজয় হোচ্ছে। যদিও খালেদ (রা:) কোনদিন এমন কথা বলেন নাই, তবুও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার এই ঘাটতিটুকুও খলিফা ওমর (রা:) মেনে নিলেন না। তিনি খালেদকে (রা:) সেনাপতির পদ থেকে একজন সাধারণ সৈন্যের কাতারে নামিয়ে দিলেন। পক্ষান্তরে বর্তমান ব্যবস্থায় প্রতিটি দেশের প্রতিটি সরকার ও প্রতিটি নেতার প্রধান একটি কাজই হোল তারা কি কি অবদান রেখেছেন, কি কি জনকল্যাণ ও উন্নয়ন কোরেছেন তা নিয়ে বাগাড়ম্বর করা। বর্তমানের দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’ আর প্রকৃত ইসলামের সভ্যতার সংস্কৃতি সম্পূর্ণ বিপরীত।
হায়! কেমন কোরে আসবে সেই প্রকৃত ইসলাম। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ইসলামের নামে যা চোলছে তার সঙ্গে যে আল্লাহর রসুলের ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। আল্লাহর তওহীদ ভিত্তিক যে সত্যদীন আল্লাহ রসুলাল্লাহকে অর্পণ কোরেছিলেন, যা রসুলাল্লাহ ও তাঁর উম্মাহ অর্ধেক পৃথিবীতে কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা কোরে মানবজাতিকে অতুলনীয় শান্তি ও নিরাপত্তার স্বর্ণযুগ উপহার দিয়েছিলেন, সেই প্রকৃত ইসলাম গত ১৩০০ বছরের কালপরিক্রমায় বিকৃত হোতে হোতে বর্তমানে একেবারে বিপরীতমুখী হোয়ে গেছে। তথাকথিত আলেম শ্রেণি এই বিকৃত ইসলামটিকে তাদের রুটি রুজির মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। অখণ্ড উম্মতে মোহাম্মদী আজ বহু ফেরকা, মাযহাব, মাসলা মাসায়েল ইত্যাদির কূটতর্ক নিয়ে, বহু আধ্যাত্মিক তরিকা, বহু রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত হোয়ে হাজারো ভাগে বিভক্ত হোয়ে আছে; তাদের একটি অংশ ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোরে মানুষকে ইসলামের বিষয়ে বীতশ্রদ্ধ কোরে তুলেছে। জাতির বৃহত্তম অংশটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে ঐ বিকৃত ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা কোরে যাচ্ছে। এর কোনটাই আল্লাহ, রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়, কেননা ইসলাম শব্দের আক্ষরিক অর্থই শান্তি। অর্থাৎ যারা ইসলামের অনুসারী হবে তারা শান্তিতে থাকবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ঠিক এর বিপরীত। যারা এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খোঁজেন তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ হোচ্ছে, সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম মহান আল্লাহ আবার দয়া কোরে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুযযামান, The Leader of the Time জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর পক্ষ থেকে হেযবুত তওহীদ মানবজাতিকে বোলছে, “এই অশান্তিময় অবস্থা ও আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহকে জীবনের একমাত্র এলাহ, হুকুমদাতা হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া আর বিকল্প নাই।”

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...