Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

কালা আদমীকে গুলি মারা


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36
kazi-nazrul-islam_1436779885কাজী নজরুল ইসলাম

একটা কুকুরকে গুলি মারিবার সময়ও এক আধটু ভয় হয়, যদিই কুকুরটা আসিয়া কোন গতিকে গাঁক করিয়া কামড়াইয়া দেয়! কিন্তু আমাদের এই কালা আদমীকে গুলি করিবার সময় সাদা বাবাজীদের সে-ভয় আদৌ পাইতে হয় না। কেননা তাহারা জানে যে আমরা পশুর চেয়েও অধম। একবার এক সাহেবের গুলির চোটে আমাদের স্বগোত্রে এক কালা আদমী মারা যায়, তাহাতে সাহেব জিজ্ঞাসা করেন, “কৌন্ মারা গিয়া?” একজন আসিয়া বলিল, “এক দেহাতি আদমি হুজুর!” সাহেব দিব্যি পা ফাঁক করিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, “ওঃ হাম সমঝা ঠা, কোই আড্মি!” অর্থাৎ ঐ গ্রাম্য বেচারা সাহেবের বিড়াল-চোখে মানুষই নয়। মনুষ্যকে এত বড় ঘৃণা আর কেহ কোথাও প্রদর্শন করিতে পারে কি-না, জানি না। ইহার পরাকাষ্ঠা দেখানো হইয়াছে জালিয়ান-ওয়ালাবাগেও অন্যান্য স্থানে। আবার এই সেদিনও তাহারই পুনরভিনয় হইল কালীকটে। নিরস্ত্র জনসঙঘ যাহাদের হাতে একটু বে-মানানসই বংশখণ্ড দেখিলেও অস্ত্র-আইনের কব্জায় আসে, তাহাদিগের প্রতি গুলি চালাইয়া কি ঘৃণ্য কাপুরুষতাই না দেখাইতেছে এই গোরার দল! কিন্তু এ-সব বর্বরতার জন্য দায়ী কে?
খোদ কর্তাই নন কি? এই “মাকড় মারলে ধোকড় হয়” নীতিকে কি গবর্নমেন্টই প্রশ্রয় দিতেছে না? এইসব মনুষ্যত্ব-বিবর্জিত খুন খারাবী যে যত করিতে পারিবে, তার তত পদোন্নতি, তত চাপরাস বৃদ্ধি সরকারের দরবারে। অথচ সাধারণকে বলা যাইতেছে, দোষ আমাদের নয় ইত্যাদি। যদি তাই হয় তবে এই অবাধ হত্যা নিরস্ত্র নির্দোষ জনসঙেঘর উপর হাসিতে খেলিতে গুলি চালানো ব্যাপারটাকে নিবারণ করিবার জন্য চেষ্টা করিলে গবর্নমেন্ট তাহাতে বাধা দেয় কেন? বা সাধারণের কথায় কর্ণপাতই বা করে না কেন? এই একগুঁয়েমির জন্যই ত আজ এমন করিয়া হিমালয় হইতে কুমারিকা পর্যন্ত একা বিপুল কম্পন শুরু হইয়া গিয়াছে। এই ভূমিকম্পনকে চাপা দিয়া রাখিবার ক্ষমতা আর স্বেচ্ছাতন্ত্রের নাই। তেত্রিশ কোটি মানুষকে অবহেলা করিয়া, ঘৃণা করিয়া তিন শত লোক তাহাদিগকে চাবুক মারিবে এবং তাহারা তাহা সহিয়া থাকিবে, সে দিন আর নাই। নেহাৎ অসহ্য না হইয়া পড়িলে মানুষ বিদ্রোহী হয় না। শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ যে কত কষ্ট, কত যন্ত্রণায় তবে অশান্তিকে বরণ করিয়া লয়, তাহা ভুক্তভোগী ব্যতীত কেহ বুঝিবে না। এখন মনুষ্যত্ব না জাগুক, অন্ততঃ এই পশুত্বটুকুও আমাদের মনে জাগিয়াছে যে, মনুষ্যত্বের অপমান সহার মত পাপ আর নাই। এ-শিক্ষাও আমাদের ঠেঁকিয়া শিখিতে হইতেছে।
আমাদের সব কথাই ভুয়ো কর্তাদের নিমক-হালাল ছেলেগুলির কাছে। এই সেদিন মিঃ শাস্ত্রী একটা সোজা কথা লাট-দরবারে পেশ করিয়াছিলেন যে, লোকগুলোকে মারিবার সময় একটু বুঝিয়া-শুঝিয়া মারিও। কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী! বলা বাহুল্য, তাঁহার এ আরজী বাতিল ও না-মঞ্জুর হইয়া গেল। কালা আদমীকে মারিবে, তাহার আবার বুঝিয়া শুঝিয়া কি? ইচ্ছা হইল, না, বাস্, চালাও গুলি! মিঃ শাস্ত্রী সাতটি কথা পেশ করিয়াছিলেন এবং তাহার যে-কোনটি সম্বন্ধে সরকারের অতি বড় নিমক-হালালেরও কোন কিছু বলিবার ছিল না। অন্ততঃ আমরা তাহাই মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু “লোক-দিগকে আগে সাবধান করিয়া দিয়া তবে গুলি ছুঁড়িবে” উপদেশটি ব্যতীত আর প্রায় সব ক’টিই নাকচ হইয়া গিয়াছে। মিঃ শাস্ত্রীর পাণ্ডুলিপিতে মোটা- মুটি এই কথা ক’টি ছিলঃ প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হইতে লিখিত হুকুম লইতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট না থাকিলে পুলিশ সুপারিন্টেণ্ডেন্ট হুকুম দিবেন, কিন্তু সকল দায়িত্ব তাঁহার এবং তাঁহাকে প্রমাণ করিতে হইবে যে, গুলি না চালাইলে বহু প্রাণহানি বা ক্ষতি হইত ইত্যাদি। আরো কয়েকটি এই রকম সহজ কথা। কিন্তু কালা আদমী মারিতে এত সব বাঁধাবাঁধি নিয়ম-কানুন! বাপ! বলে কি? অতএব মিঃ শাস্ত্রীর কথা এক ফুঁয়ে উড়িয়া গেল!
আর, শুধু এ সাদাকেই দোষ দেওয়া বৃথা। দোষ আমাদেরই। কিন্তু সে সব বলিতে গেলে সাদা দাদারা ভয়ানক রকমের চটিতং হইয়া যাইবেন এবং ক্রমান্বয়ে আমাদের মুখ বন্ধ, (হাত বন্ধ ত আছেই!) পা বন্ধ শেষকালে কাঁচা মুণ্ডটাও খণ্ডবিখণ্ড করিয়া ফেলিবেন। “হক কথায় আহম্মক রুষ্ট” তাই আমাদের অতি সোজা কথাটাও আইন বাঁচাইয়া বাঁকা-টেরা করিয়া বলিতে হয়। আজো সাদাদের এই গুলি মারা লইয়া কিছু বলিবার দরকার নাই। তবে, আমাদের ক্রন্দন ব্যর্থ হইতেছে না। এই যে মানুষের ব্যথিত মনের অভিশাপ ইহা অন্তরে অন্তরে তোমাদিগকে পিষিয়া মারিতেছে। তোমাদের বিবেককে, মনুষ্যত্বকে বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিতেছে। এই গুলির সমস্ত গুলিই তোমাদেরই হৃৎপিণ্ডে ঢুকিয়া তোমাদিগকে পচাইয়া মারিবে! আমরা জাগিতেছি আমরা বাঁচিতেছি, তোমরা মরিতেছ, তোমরাই ধ্বংসের পথে চলিয়াছ!

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ