রাকীব আল হাসান:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর ইসরাইলের টানা হামলায় গণহত্যার শিকার হয়েছেন সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন প্রায় দশ হাজার। নিহত হওয়া ফিলিস্তিনিদের বিরাট অংশ হচ্ছে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এছাড়া, হাসপাতাল, মসজিদ ও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছেন গাজার এক লক্ষাধিক মানুষ। ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনী প্রায় ৩,০০০ বারেরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। ঈদের দিনও চালিয়েছে বর্বরোচিত এই হত্যাযজ্ঞ। এ ঘটনা নতুন কিছু নয়, এমন মাঝেমধ্যেই ঘোটে চোলেছে। এটা এখন মোসলেম বলে পরিচিত এই জাতির কাছে সাধারণ ঘটনা। এতে আর এ জাতির চোখে যেন অশ্র“ও আসে না।
ব্যক্তিগত তাকওয়া এবং সওয়াব কামাতে এই জাতি এতটাই ব্যস্ত যে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে অগণ্য বনী আদম যারা তাদের মতোই মোসলেম দাবিদার, তাদের মতই এক আল্লাহ, এক রসুল ও এক কোর’আনে বিশ্বাসী, তারা অন্যান্য জাতিগুলির দ্বারা পশুপাখির মতো গুলি খেয়ে মোরছে, মেয়েরা ধর্ষিত হোচ্ছে, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হোচ্ছে, লাখে লাখে বাস্তুহারা হোচ্ছে তাদের প্রতি অন্যান্য মোসলেমরা কোনরূপ সহানুভূতির হাত বাড়ান না, খবরও রাখেন না। এই হতভাগ্য ‘মোসলেম’ জাতিরই একটা অংশ এই ফিলিস্তিনের আজন্ম নির্যাতিত মোসলেমরা। এদের জন্য তাদের প্রাণ কাঁদে না, আফ্রিকায়, সোমালিয়ায় না খেয়ে খেয়ে জীবন্ত কঙ্কাল হোয়ে ঘুরে বেড়ানো হাজার হাজার মোসলেমের ক্ষুধা অনুভব করার মতো আত্মা তাদের নেই। কারণ তারা আর এক উম্মাহ নেই, একটি দেহের মতো তাই এক অঙ্গে আঘাত পেলে সর্বাঙ্গে যন্ত্রণা অনুভব করারও প্রশ্ন ওঠে না। এদের এস্তেঞ্জার পর ঢিলা কুলুখ নেওয়ার অধিকার থাকলেই হোল, চেক রুমাল কাঁধে চাপিয়ে দিনে পাঁচবার মসজিদে যেতে পারলেই হোল, এভাবেই তারা যিকিরে ফিকিরে জীবন কাটিয়ে দিতে চান।
যারা ছিলো শ্রেষ্ঠ জাতি, সমগ্র পৃথিবী যাদের দিকে সভয়-সম্ভ্রমে তাকিয়ে থকতো, আজ কেন তাদের এই পরিণতি? এই নিকৃষ্ট গোলামি, ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার কেন? এ যে নিজেদেরই দু’হাতের কামাই। একটা জাতির সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি, শক্তিমত্বা, সম্মান ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে তাদের অভ্যন্তরিন ঐক্য, শৃঙ্খলা ও নেতার প্রতি আনুগত্যের উপর। উম্মতে মোহাম্মদী নামক যে জাতি রসুলাল্লাহ ১৪০০ বছর পূর্বে গড়েছিলেন তার শক্তির মূল আধারই ছিলো তাদের মধ্যেকার সীসাঢালা প্রচীরসম ঐক্য। তাদের একজনের দুঃখে সকলের প্রাণ কাঁদতো আর একজনের সুখে সকলেই সুখি হতো। তাইতো পাঁচ লাখের ছোট্ট জাতিটির পক্ষে সম্ভব হয়েছিল তদানীন্তন দু দু’টি বিশ্বশক্তিকে একই সাথে চূর্ণ-বিচূর্ণ কোরে দেওয়া। আর আজ ১৬০ কোটি বিশাল জাতি হয়েও মাত্র ১ কোটির ইহুদি জাতির হাতেও অতি শোচনীয়ভাবে মার খেতে হচ্ছে, লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
জাতির ঐক্য এতটাই প্রয়োজনীয় বিষয় যে একটি জাতি একটি সংগঠন যত শক্তিশালীই হোক যত প্রচণ্ড শক্তিশালী অস্ত্র-শস্ত্র, ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক, যদি তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকে তবে তারা কখনই জয়ী হোতে পারবে না। অতি দুর্বল শত্র“র কাছেও তারা পরাজিত হবে। তাই আল্লাহ কোর’আনে বহুবার এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এই ঐক্য যাতে না ভাঙ্গে সে জন্য তার রসুল (দ:) সদা শংকিত ও জাগ্রত থেকেছেন এবং এমন কোনো কাজ যখন কাউকে কোরতে দেখেছেন, যাতে ঐক্য নষ্ট হবার সম্ভাবনা আছে তখন রেগে গেছেন। নিজেদের মধ্যে যে কোন প্রকার অনৈক্যকেই রসুলাল্লাহ (দ:) কুফর বোলেছেন (হাদিস-আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- মোসলেম, মেশকাত)। যে কাজকে রসুলাল্লাহ (দ:) কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন সেই কাজকে মহা সওয়াবের কাজ মনে কোরে করা হোয়েছে এবং হোচ্ছে অতি উৎসাহের সাথে এবং ফলে বিভিন্ন মাযহাব ও ফেরকা সৃষ্টি হোয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হোয়ে গেছে এবং জাতির শত্র“র কাছে শুধু পরাজিতই হয় নি তাদের ক্রীতদাসে পরিণত হোয়েছে।
এক মোসলেম জাতি আজ শরিয়াহগতভাবে শিয়া সুন্নি, হানাফী, শাফেয়ী, হাম্বলী, আহলে হাদিস ইত্যাদি ভাগে, আধ্যাত্মিকভাবে, কাদেরিয়া, নক্শবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, আহলে বাইত ইত্যাদি হাজারো ভাগে, ভৌগোলিকভাবে ৫৫টিরও বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত এবং ইহুদি খ্রিস্টানের নকল কোরে হাজারো রাজনৈতিক দলে কেউ গণতন্ত্রী, কেউ সমাজতন্ত্রী, কেউ সাম্যবাদী, কেউ রাজতন্ত্রী, কেউ পুঁজিবাদী; গণতন্ত্রীদের মধ্যে কেউ সংসদীয় গণতন্ত্রী, কেউ পুঁজিবাদী গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে কেউ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী, কেউ চীনাপন্থী, মাওবাদী, কেউ মার্কসপন্থী, লেলিনবাদী ইত্যাদি মতাদর্শকে ভিত্তি কোরে হাজার হাজার দলে বিভক্ত। আল্লাহ বলেন, “সকল মো’মেন ভাই ভাই (সুরা হুজরাত ১০)”। রসুলাল্লাহ (দ:) বোলেছেন, ‘সমগ্র উম্মতে মোহাম্মদী জাতি যেন একটা শরীর, তার একটা অঙ্গে ব্যথা পেলে সারা শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয়’ (আব্দাল্লাহ এবনে ওমর রা: থেকে বোখারী মোসলেম আবু দাউদ)। সেই উম্মতে মোহাম্মাদীর দাবিদার, এক মোসলেম জাতির দাবিদার হাজারো লক্ষ ভাগে বিভক্ত হোল, বিভক্ত হোয়ে নিজেরা নিজেরা মারামারি, যুদ্ধ, রক্তপাত, দাঙ্গা ইত্যাদি কোরল এতে জাতির যে সংজ্ঞা রসুল দিলেন অর্থাৎ ‘এক দেহ’ তা থাকলো কিনা?
এই বিভক্তির কারণে মোসলেম জাতি আজ অত্যন্ত দুর্বল হোয়ে পোড়েছে। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সকল জাতিই আজ মোসলেমদের উপর নির্যাতন চালাতে সাহস কোরছে, তাদের উপর এই নির্যাতন চালাচ্ছে। এখন পরিত্রাণের একটিই উপায়- আল্লাহর সর্বময় তওহীদের ভিত্তিতে একতাবদ্ধ হওয়া। আর এই একতাবদ্ধ হবার আহ্বানই কোরছে যামানার এমামের পক্ষ থেকে হেযবুত তওহীদ। এখন যারা এই অপমান, লাঞ্ছনা থেকে বাঁচতে চায়, যারা সমাজে অন্যায়, অবিচারের পরিবর্তে শান্তি চায় তারা আমাদের সাথে একতবদ্ধ হোচ্ছে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।