মোখলেসুর রহমান
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ১৯ বছরের মধ্যে বর্তমানে উদ্বাস্তু শিবিরে শরণার্থীসংখ্যা সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য ২০০৮ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে জাতিসংঘের সহযোগিতাপ্রাপ্ত উদ্বাস্তুর সংখ্যাই বেড়ে যায় ১০ লাখ। এই আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকাংশই আসে আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে। সম্প্রতি প্রকাশিত আরেকটি খবরে জানা যায়, জর্ডানের ‘আয যাতারি’ নামক শরণার্থী শিবিরে পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুর সংখ্যা বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক এবং প্রতিদিন তা বাড়ছে এক হাজার করে। পৃথিবীব্যাপি উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের ৯০ ভাগের উপরে যে মুসলিম তা পরিসংখ্যানের অপেক্ষা রাখে না। যুদ্ধাবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে অনিশ্চিত জীবনের সন্ধানে বের হওয়া এই মানুষদের জাতিসংঘ আশ্রয় দিচ্ছে ও ন্যূনতম ভরণপোষণ করছে এই বিষয়টি প্রচার করাই মূল উদ্দেশ্য হলেও শরণার্থী শিবিরগুলো জাতিসংঘের ব্যর্থতারই ফসল তা অনস্বীকার্য। কারণ জাতিসংঘের সৃষ্টিই হয়েছিল যুদ্ধমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এবং পরবর্তীতে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা দূরীকরণ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ সংরক্ষণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শরণার্থীদের আশ্রয় প্রভৃতি উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থা গড়ে তোলা হয়। কিন্তু জাতিসংঘ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। যে কোন পরিসংখ্যান বলে দেবে জাতিসংঘ সৃষ্টির পর থেকে যুদ্ধ কমেনি বরং আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা, শরণার্থী সংখ্যা।
কোথাও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর আক্রমণে বিদ্ধস্ত হয়ে, কোথাও তাদের মদদে ও প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে গৃহযুদ্ধ করে, কোথাও তাদের সাম্রাজ্যবাদের ফসল হিসেবে বিধ্বস্ত মুসলিম দেশগুলোর মানুষ আজ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, আশ্রয়হীনতার অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছে। আজ সারাবিশ্বে অশান্তির বীজ বপন করে রেখেছে যেসব দেশ জাতিসংঘের নীতি নির্ধারক তারাই। তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে সম্প্রীতি বজায় রেখেছে। এটা সমস্ত পৃথিবীতে তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখার অন্যতম প্রধান অবলম্বন। আর বাকি পৃথিবীতে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছে। নিজেদের চরিত্রকে ঢাকতে, মানুষকে ধোঁকা দিতে তাদের যত আশ্রয়কেন্দ্র, ক্ষুধা, দারিদ্র্য বিমোচনের যত কার্যক্রম। তাদের চাতুরি উপলব্ধি করতে না পেরে মুসলিমরাও আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা পরিত্যাগ করে তাদের দেওয়া জীবনব্যস্থা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বিভিন্ন ইজম মেনে নিয়েছে। তাদেরকে নির্দ্বিধায় প্রভুর মতো ভক্তি করে যাচ্ছে। তাদের এ কাজে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেই চলছে আগ্রাসন, যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত মুসলিম জনতার আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে উঠছে শরণার্থীশিবির। তাই জাতিসংঘের মায়াকান্নায় গলে না গিয়ে মুসলিমদের আজ জেগে ওঠার সময় এসেছে। আজ বুঝে নেওয়ার সময় এসেছেÑ তাদের এই নিদারুণ পরিণতি জাতীয় জীবন থেকে আল্লাহর হুকুম পরিত্যাগের ফল, তাদের দু’হাতেরই কামাই। যতদিন তারা মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ না করবে ততদিন তাদের এই জিল্লতির জীবন বয়ে বেড়াতেই হবে।