Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

ইসলামের ছায়াতলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ইতিহাস


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Eslamer-cayatoleওয়ালিউল আউয়াল:

মোসলেমদের উপরে কালিমা লেপন করার উদ্দেশ্যে পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষী মহল এবং তাদের মদদপুষ্ট সুবিধাভোগী এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবি প্রায়ই ইসলামের প্রাথমিক যুগের জেহাদের ইতিহাসকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। উম্মতে মোহাম্মদীর জেহাদের মাধ্যমে অর্ধপৃথিবীতে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠাকে তারা মূল্যায়ন করেন তলোয়ারের জোরে ইসলাম প্রচার হিসেবে। শুধু তাই নয়, জেহাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং প্রকৃত ইসলামের আকীদা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় মোসলেম নামধারী এই জাতিটিরও একটি বড় অংশ অনুরূপ মনোভাব পোষণ করে। ইসলামবিদ্বেষীদের এমন অহেতুক অভিযোগের প্রকৃত জবাব দেওয়া আজকের এই জাতির পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ ইসলাম সম্পর্কে এই জাতির আকীদা বিকৃত এবং বিপরীতমুখী। যে উম্মতে মোহাম্মদী ঘর-বাড়ি, স্ত্রী-পুত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি স্বদেশকে চিরতরে ত্যাগ কোরে অর্ধাহারে ও অনাহারে থেকে সংগ্রাম কোরে অর্ধপৃথিবীতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরেছিলো তাদের আকিদা আর আজকের এই জাতির আকিদার মাঝে দূরতম মিলও নেই। আর তাই ঐ জাতির কর্মকাণ্ডকে অনুধাবন করা স্বাভাবিকভাবেই এদের দ্বারা সম্ভব হোচ্ছে না।
এটা কেউ অস্বীকার কোরতে পারবেন না যে, মোসলেমদের প্রকৃত ইতিহাস এখন আর ইতিহাসের জায়গায় নেই। মোসলেম নামধারী জাতিটির সীমাহীন অজ্ঞতা ও সংকীর্ণতার কারণে তারা তাদের অতীত ইতিহাস বোলতে জানে প্রকৃত ইসলামের আদর্শবিরোধী রাজা-বাদশাহ, সুলতানদের সাম্রাজ্য বিস্তার ও ভোগবিলাসের ইতিহাস আর ধর্মব্যবসায়ী আলেম-মাওলানাদের ধর্মের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাস ও মতভেদের ইতিহাস। উম্মতে মোহাম্মদীর সংগ্রামী জীবনের দিকটি এই জাতির কাছে বরাবরই উপেক্ষিত হোয়ে আছে। সে দিককে নিয়ে কেউ গবেষণাও করে না, সে ইতিহাস পর্যালোচনাও করে না। এখানে ওখানে যে দু-একজন সে ইতিহাসকে আলোচনায় আনার চেষ্টা কোরেছেন সেখানে স্থান পেয়েছে এমন একটি উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতির যারা শেষ নবীর আদর্শকে জাতীয়ভাবে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার সংগ্রামে ছিলেন আপসহীন অথচ ব্যক্তিগতভাবে কোন মানুষকে সেই আদর্শ গ্রহণ করার জন্য সামান্য পরিমাণ জোর করেন নি।
ইতিহাসকে সত্যান্বেষী মন দিয়ে পড়লে ঐ ইসলামবিদ্বেষী ঐতিহাসিকরা দেখতে পেতেন যে, যারা আল্লাহর দেয়া দীন, জীবন-ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা কোরতে সশস্ত্র বাধা দেয়নি তাদের কোনো সম্পদ মোসলেম বাহিনী হস্তগত করে নি, তাদের কোন শোষণ করে নি। প্রত্যেক মোসলেমের উপর যে কর ধরা হোত অ-মোসলেমের উপরও সেই কর ধরা হোত। কেবলমাত্র যারা শত্র“ দ্বারা আক্রান্ত হোলে অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো না তাদের রক্ষার জন্য তাদের উপর একটা সামান্য অতিরিক্ত কর ধরা হোত। তাও দুর্বল, বৃদ্ধ, স্ত্রীলোক, শিশু এমন কি রোগাক্রান্ত লোকদের বাদ দিয়ে শুধু যুদ্ধক্ষম, কিন্তু অস্ত্র ধোরতে রাজি নয়, – এমন লোকদের উপর ঐ কর ধরা হোত- যার নাম জিজিয়া। অ-মোসলেমদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হোলে মোসলেমদের সাথে নিজেদের রক্ষার জন্য অস্ত্র ধোরতে রাজী ছিলো তাদের উপর ঐ জিজিয়া ধরা হোত না। এর চেয়ে ন্যায্য নীতি আর কী হোতে পারে? এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে যারা সাম্রাজ্যবাদ বোলে নাম দিয়েছে তারাই অস্ত্রের বলে সমস্ত প্রাচ্য অধিকার কোরে তাকে নিঃশেষে শোষণ কোরেছে, তা আজ ইতিহাস। এমনকি এখনও তারা অস্ত্রের বলে মধ্যপ্রাচ্য দখল কোরে সেখানকার খনিজ সম্পদ লুট কোরছে।
উম্মতে মোহাম্মদী যতো যুদ্ধ কোরেছিল সেগুলির উদ্দেশ্য ছিলো রাষ্ট্রশক্তি অধিকার কোরে সেখানে আল্লাহর বিধান জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা ব্যক্তিগতভাবে একটি মানুষকেও তার ধর্ম ত্যাগ কোরে এই দীন গ্রহণে বাধ্য করেন নি। শুধু তাই নয়, যেখানেই তারা আল্লাহর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কোরেছেন সেখানেই অন্য ধর্মের চার্চ, সিনাগগ, মন্দির ও প্যাগোডা রক্ষার দায়িত্ব তো নিয়েছেনই তার উপর ঐ সব ধর্মের লোকজনের যার যার ধর্ম পালনে কেউ যেন কোন অসুবিধা পর্যন্ত না কোরতে পারে সে দায়িত্বও তারা নিয়েছেন। অন্যান্য ধর্মের লোকজনের নিরাপত্তার যে ইতিহাস এই জাতি সৃষ্টি কোরেছে তা মানবজাতির ইতিহাসে অনন্য, একক, পৃথিবীর কোনো জাতি তা কোরতে পারে নি। কোর’আন-হাদিসের কোথাও কিন্তু অপর ধর্মকে হেয় কোরে কিছু বলা হয় নি। কোরআনে স্পষ্ট এসেছে- ‘এক আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য দেব-দেবীর উপাসনা যারা করে, তাদের উপাস্যদের তোমরা গালি দিও না (সুরা আন’আম, আয়াত : ১০৮)। এবং রসুলাল্লাহ ঘোষণা কোরেছেন, ‘কোনো মোসলেম যদি কোনো অ-মোসলেমের প্রতি অবিচার করে তাহোলে আমি কেয়ামতের ময়দানে সেই মোসলেমের বিরুদ্ধে অ-মোসলেমের পক্ষে আল্লাহর আদালতে মামলা দায়ের কোরব (আবু দাউদ শরিফ)। আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশের বাস্তবায়ন উম্মতে মোহাম্মদী কিভাবে কোরেছিল তা সর্বজনবিদিত ইতিহাস, তবু দু’একটি উদাহরণ দিতেই হয়।
আমর ইবনুল আস (রা:) এর মিসর বিজয়ের পর আলেকজান্দ্রিয়ায় কে একজন একদিন রাত্রে যীশু খ্রিস্টের প্রস্তর নির্মিত প্রতিমূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলেছে। খ্রিস্টানরা উত্তেজিত হোয়ে উঠেছে। তারা ধরে নিলো যে, এটা একজন মোসলেমেরই কাজ। আমর (রা:) সব শুনে ক্ষতিপূরণ-স্বরূপ তিনি প্রতিমূর্তিটি সম্পুর্ণ নতুন কোরে তৈরি কোরে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রিস্টান নেতাদের প্রতিশোধ নেবার বাসনা ছিলো অন্যরূপ। তারা বোলল, “আমরা চাই আপনাদের নবী মোহাম্মদের (দ:) প্রতিমূর্তি তৈরি কোরে ঠিক অমনিভাবে তাঁর নাক ভেঙ্গে দেব।”
এ কথা শুনে বারুদের মতো জ্বলে উঠলেন আমর (রা:)। প্রাণপ্রিয় নবীজির প্রতি এত বড় ধৃষ্টতা ও বেয়াদবি দেখে তাঁর ডান হাত তলোয়ার বাটের উপর মুষ্ঠিবদ্ধ হয়। ভীষণ ক্রোধে তাঁর মুখমণ্ডল উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে সংবরণ কোরে নিয়ে বোললেন, “আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোনো প্রস্তাব কোরুন আমি তাতে রাজি আছি।” পরদিন খ্রিস্টানরা ও মোসলেমরা বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হোল। আমর (রা:) সবার সামনে হাজির হোয়ে বিশপকে বোললেন, “এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের ধর্মের হোয়েছে, তাতে আমার শাসন দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারি গ্রহণ কোরুন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।” এই কথা বোলেই তিনি বিশপকে একখানি তীক্ষèধার তরবারি হাতে দিলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিস্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সহসা সেই নীরবতা ভঙ্গ কোরে একজন মোসলেম সৈন্য এলো। চিৎকার কোরে বোলল, “থামুন! আমি ঐ মূর্তির নাক ভেঙ্গেছি। অতএব আমার নাক কাটুন।” বর্তমান বিকৃত ইসলামের ধারণায় অন্যধর্মের উপাসনালয়ের মূর্তি ভাঙ্গা আর প্রকৃত ইসলামের সৈনিকদের দ্বারা অন্যজাতির পূজার জন্য মূর্তি বানিয়ে দেওয়ার মধ্যে রোয়েছে প্রকৃত ইসলাম আর বিকৃত ইসলামের ধারণাগত বিস্তর ফারাক। যাক সে কথা। বিজিতদের উপরে বিজয়ীদের এই উদারতায় ও ন্যায়বিচারে মুগ্ধ হোয়ে সেদিন শত শত খ্রিস্টান ইসলাম কবুল কোরেছিলেন। এভাবে ইসলামের সৌন্দর্য্য দেখেই ব্যক্তিগতভাবে মানুষ ইসলাম কবুল কোরেছে।
ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা মোসলেমের বহুগুণেরও বেশি। আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে উমাইয়া খেলাফতের যুগে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ বিন কাসেম যখন সিন্ধু বিজয় করেন, তখন স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে মাত্র অল্পসংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করে, কিন্তু তবুও বিনা দ্বিধায় মোহাম্মদ বিন-কাসেম বিধর্মীদের হাতে প্রায় সমস্ত শাসনভার ছেড়ে দেন। শুধু একটাই শর্ত, জীবনব্যবস্থা হবে আল্লাহর প্রদত্ত সত্যদীন। তিনি অধিকৃত অঞ্চলের হিন্দু ও বৌদ্ধ অধিবাসীগণকে আহলে-কেতাবরূপে গণ্য করেন এবং তাদেরকে জিম্মির মর্যাদা দান করেন। অধিকৃত দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী মোহাম্মদ-বিন-কাসেম ব্রাহ্মণদেরকে সাধারণের চেয়ে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দান করেন। পূর্বকাল থেকে ব্রাহ্মণরা যেইসব পদে চাকুরি কোরতেন, সেইসব পদে তাদেরকেই বহাল করা হয়, এমন কি যেইসব উচ্চপদস্থ কর্মচারী ভয়ে আত্মগোপন কোরেছিলেন, মোহাম্মদ-বিন-কাসেম তাদেরকে খুঁজে এনে, ডেকে এনে স্ব-স্ব পদে বহাল করেন। তিনি ইচ্ছাপূর্বক কারও পদমর্যাদা ক্ষুন্ন করেন নি।
পরাজিত রাজা দাহিরের মন্ত্রী সিসাকরের প্রতি তাঁর ব্যবহার ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রোয়েছে। জীবন-ভিক্ষার বিনিময়ে সিসাকর নিজেই আত্মসমর্পণ কোরতে রাজি হন, কিন্তু মোহাম্মদ-বিন-কাসেম শুধু যে তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন তাই নয়, তাকে রাষ্ট্রের উজিরের পদে বহাল করেন। সিসাকর কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠেন এবং মোসলেমদের একান্ত বিশ্বস্ত অনুচর হিসাবে কাজ করেন। মোহাম্মদ বিন কাসেম যেমন বিজিতদের স্থানীয় জনগণের গুণ, বংশমর্যাদা, ধর্ম ইত্যাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন কোরেছিলেন, বিজিতেরাও তাঁকে নিখুঁতভাবে ভালোবেসেছিলেন এবং তাঁর সাহায্যার্থে প্রাণপণে এগিয়ে আসেন (ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন-আব্দুল করিম, বাংলা একাডেমি)। ঐতিহাসিক আল-বালাজুরি বলেন যে, “মোহাম্মদ-বিন-কাসেমের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ডের পর সিন্ধুবাসীরা তাঁর জন্য অশ্রু বিসর্জন কোরেছিল।” এমন উদাহরণ কেবলমাত্র ইসলামের ইতিহাসেই পাওয়া যায়। প্রকৃত ইসলামের যুগে একজন হিন্দুকেও জোর কোরে মোসলেম করার ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে না। স্বয়ং খলিফা ওমরের (রা:) একজন খ্রিস্টান দাস ছিলো যাকে ওমর (রা:) নিজে বহুবার ইসলাম গ্রহণের আহ্বান কোরেছেন কিন্তু লোকটি শেষ পর্যন্তও ইসলাম গ্রহণ করেন নি। ওমরের (রা:) আরেকটি ঘটনা এখানে অতি প্রাসঙ্গিক। যুদ্ধ কোরে, জোর কোরে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অধিকার ও ব্যক্তিকে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া- এই দীন বিস্তারের “জেহাদ” ও “ধর্মে শক্তি প্রয়োগ নেই”- এর সীমারেখা ও পার্থক্য। এই সীমারেখা সম্বন্ধে উম্মতে মোহাম্মদীর ধারণা অর্থাৎ আকিদা কত পরিষ্কার ছিলো তা আমরা দেখি খলিফা ওমরের (রা:) কাজে। পবিত্র জেরুজালেম শহর মোজাহেদ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর খলিফা ওমর বিন খাত্তাব (রা:) ঘুরে ঘুরে শহরের দর্শনীয় বস্তুগুলি দেখার সময় যখন খ্রিস্টানদের একটি অতি প্রসিদ্ধ গীর্জা দেখছিলেন তখন সালাতের সময় হওয়ায় তিনি গীর্জার বাইরে যেতে চাইলেন। জেরুজালেম তখন সবেমাত্র মোসলেমদের অধিকারে এসেছে, তখনও কোনো মসজিদ তৈরিই হয় নি, কাজেই সালাহ খোলা ময়দানেই কায়েম করা হোত। জেরুজালেমের প্রধান ধর্মাধ্যক্ষ বিশপ সোফ্রোনিয়াস ওমরকে (রা:) অনুরোধ কোরলেন ঐ গীর্জার মধ্যেই তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নামাজ পড়তে। ভদ্রভাবে ঐ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান কোরে ওমর (রা:) গীর্জার বাইরে যেয়ে সালাহ কায়েম কোরলেন। কারণ কি বোললেন তা লক্ষ্য কোরুন। বোললেন- আমি যদি ঐ গীর্জার মধ্যে নামাজ পড়তাম তবে ভবিষ্যতে মোসলেমরা সম্ভবতঃ একে মসজিদে পরিণত কোরে ফেলতো। একদিকে ইসলামকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠিত কোরতে সর্বস্ব পণ কোরে দেশ থেকে বেরিয়ে সুদূর জেরুজালেমে যেয়ে সেখানে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে খ্রিস্টানদের গীর্জা যেন কোনো অজুহাতে মোসলেমরা মসজিদে পরিণত না করে সে জন্য অমন সাবধানতা।
আমাদের এই বঙ্গভূমির দিকে দৃষ্টি ফেরালেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। মোহাম্মদ বিন কাসেমের সিন্ধু বিজয়ের ৫০০ বছর পরে যখন ইসলাম অনেকাংশেই বিকৃত হোয়ে গেছে, ১২০৪ সনে তুর্কি মোসলেম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি নদীয়া দখল কোরে নেন একেবারে বিনা যুদ্ধে। লক্ষ্মণ সেন জানতেন যে মোসলেমরা আসছে এবং এও জানতেন যে মোসলেমরা অপ্রতিরোধ্য। তাই তিনি অনর্থক যুদ্ধে যান নি, বিনা প্রতিরোধে রাজধানী ছেড়ে যশোর সেনহাটি পালিয়ে যান। ‘নিষ্ঠাবান হিন্দু’ হিসাবে পরিচিত সুলেখক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় তাঁর রচিত গ্রন্থাদির সর্বত্র মোসলেম শাসনের প্রতি তীর্যক বাক্যবাণ বর্ষণপূর্বক হিন্দুত্বের জয়গানে নিয়োজিত থাকলেও কিছু ঐতিহাসিক সত্য উল্লেখ না কোরে পারেন নি। তার ঐতিহাসিক বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ ‘আরোহী’-তে লিখেছেন, “শুরু হোল পাঠান রাজত্ব। এ সময় বঙ্গে যে অদ্ভূত কাণ্ডটি ঘোটল, তা আর এক ইতিহাস – হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি! সব একাকার হোয়ে গেল। হিন্দুর ঘরে মুসলমান জামাই, মুসলমানের ঘরে হিন্দু।…বঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের যে অবাধ মেলামেশা ঘটেছিল ভারতের আর কোন দেশে এমন ঘনিষ্ঠতা হয় নি। জাতীয় জীবনে একটি নতুন দিক খুলে গেলো। কুলীন ব্রাহ্মণদের দাপট, আর শাস্ত্রের ফাঁস আলগা হোয়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। বাংলার গ্রাম জীবন আর সংস্কৃতি নিয়ে জেগে উঠল।”
বাংলার প্রথম আধুনিক ইতিহাস গ্রন্থ লেখেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অফিসার মেজর-জেনারেল চার্লস স্টুয়ার্ট। এই ইংরেজ লেখকও মোসলেম শাসনামল (পাঠান সুলতানী আমল) সম্পর্কে তার হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল বইতে লিখেন, “দেশের বাণিজ্যাদির উপরও বাদশাহেরা কোনরূপ হাত দিতেন না। পাঠানেরা তরবারি লইয়া এ দেশে প্রবেশ কোরিয়াছিলেন, এদেশে তরবারি তাঁহারা একদিনও পরিত্যাগ করেন নাই, তাঁহারা বাদশাহের বা তৎপ্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রয়োজনের জন্য শরীরে বর্মচর্ম আঁটিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের জন্যই উদ্যত হইয়া থাকিতেন; গৃহসুখ আফগানদের কপালে বড় থাকিত না। প্রায়ই তাঁহাদের নেতাদের আহ্বানে তাঁহাদিগকে গৃহ ছাড়িয়া যুদ্ধক্ষেত্রে যাইতে হোইত। ইহারা কৃষির কোন ধার ধারিতেন না। সুতরাং ধনশালী হিন্দুরাই তখন কৃষিপ্রধান বাঙলার একরূপ মালিক ছিলেন। শুধু কৃষি নহে, ব্যবসা-বাণিজ্য যাহা কিছু তাহা সমস্তই হিন্দুদের হাতে ছিলো। বিশেষ ইহাদের বাণিজ্যাদি কার্যের প্রবৃত্তি আদৌ ছিলো না। এই সকল কারণে বঙ্গদেশে কোন স্বর্ণখনি না থাকলেও মহাসমৃদ্ধির জন্য এদেশ ‘সোনার বাঙ্গলা’ উপাধি পাওয়ার যোগ্য হোয়েছিল।” এখানে ভুলে গেলে চোলবে না যে, স্টুয়ার্ট সাহেব যে বাদশাহদের কথা, যে পাঠান মুসলমানদের কথা তার বইতে লিখেছেন তারা কেউই প্রকৃত ইসলামের সময়ের মানুষ ছিলেন না, তবু প্রকৃত ইসলামের কিছু প্রভাব তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল। আর যারা প্রকৃত ইসলামের যুগের সত্যনিষ্ঠ মো’মেন, তাদের চরিত্র, আচরণ, অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা, তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্তরিকতা তো কল্পনাতীত।
সুতরাং এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, ইসলামের স্বর্ণযুগে এই বঙ্গদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হয়। স্টুয়ার্ট সাহেবের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, মোসলেমরা একদিনের জন্যও তলোয়ার ত্যাগ করেন নি, তবে সেই তলোয়ার তারা বিধর্মীদেরকে জোর কোরে মোসলেম বানাতে ব্যবহার করেন নি, বরং বিধর্মীদের কৃষি, বাণিজ্য, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজেই ব্যবহার কোরেছেন। যারা মোসলেমদের উপরে এ জাতীয় অপবাদ আরোপ কোরেছেন তারা ইতিহাস বিকৃতির জঘন্য অপরাধে অপরাধী।ইসলামের স্বর্ণযুগে মধ্যপ্রাচ্যসহ অর্ধ-পৃথিবী জুড়ে মোসলেম শাসিত এলাকায় ইহুদি-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস ছিল। যদি মোসলেমরা কাউকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বাধ্য কোরত, তবে আজকের ইসরাইলে, সিরিয়া, লেবানন, মিশরে, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতে অন্যধর্মের কোন লোকই থাকতো না। যে কথা একটু আগেই বোলে আসলাম।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ