Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/og/includes/iworks/class-iworks-opengraph.php on line 331

অশুভ শক্তির কবল থেকে মানুষকে উদ্ধার করাই আমার ধর্ম


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

hhhjমোহাম্মদ আসাদ আলী

আমি শাস্ত্র জানি, শ্রুতি জানি, মন্ত্র জানি, কেতাব জানি, বিধান জানি- তাই আমি ধর্মজ্ঞানী আলেম-পুরোহিত; সকলে আমার কাছে ধর্ম শিক্ষা করে। টুপি পরেছি, আলখেল্লা পরেছি, গেরুয়া বসন পরেছি, তিলক-চন্দন লাগিয়েছি, বুকে ডেভিডের স্টার ঝুলিয়েছি, গলায় ক্রুস ঝুলিয়েছি- তাই আমি ধার্মিক; সমাজ আমাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। মন্দিরে ঢুকেছি, মসজিদে ঢুকেছি, গীর্জায় ঢুকেছি, প্যাগোডায় ঢুকেছি, প্রার্থনা-জিকির করেছি, উপাসনা করেছি, ঠাকুরকে দুধ কলা দিয়েছি- তাই আমি ধর্মভীরু, স্রষ্টাভক্ত। আমার প্রার্থনারত নিশ্চঞ্চল বদনে নাকি সকলে স্বর্গের ছাপ দেখতে পায়। আমি মক্কায় গিয়েছি, মদীনায় গিয়েছি, গয়ায় গিয়েছি, কাশিতে গিয়েছি, রোমে গিয়েছি, বেথেলহামে গিয়েছি- তাই আমি নির্মোহ, প্রভুভক্ত, ধার্মিক, সত্যনিষ্ঠ, দুনিয়াত্যাগী, সন্ন্যাসী। আমাকে খুশি করে, সন্তুষ্ট করে অন্যরা পরকালীন মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে ব্যস্ত। ধর্মভীরু মানুষ দলে দলে আমার শরণাপন্ন হয়, মস্তক নত করে সালাম-প্রণাম ঠুকে। মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-মাদ্রাসা-মক্তবে আমি তাদেরকে সকাল সন্ধ্যা কেতাব, শাস্ত্র, শ্রুতি, এক কথায় ধর্ম শিক্ষা দেই। আমার সারাটা দিন কাটে ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান বা গডের উপাসনা-আরাধনায়। উপাসনালয় আমার কাছে স্বর্গসদৃশ। এই স্বর্গের বাইরে বেরিয়ে কোনোরকম দুনিয়াদারীতে জড়ানো আমার শোভা পায় না। দুনিয়ায় কতই না অশান্তি-অধর্ম! চারিদিকে শুধু নির্যাতন, বর্বরতা, গালাগালি, হত্যা, ধর্ষণ, বীভৎসতা, অন্যায়-অবিচার, যুদ্ধ-সংঘাত।এসবে জড়ালে ধর্মরক্ষা হয় না (!) আমি তো ধার্মিক। তাই চারদিকের অশান্তি-অধর্ম থেকে গা বাঁচিয়ে যত দূরে থাকা যায় ততই আমার মঙ্গল।”
এতদিন এই ছিল আমার ধর্ম, এই ছিল আমার বিশ্বাস। এতদিন আমি এরকমই একজন ধার্মিক ছিলাম। কিন্তু আজ আমি অন্য ধার্মিক। আজ আমি শিখেছি- মানুষের ধর্ম হচ্ছে তার মানবতা, মনুষ্যত্ব, পরোপকারিতা, অপরের দুঃখে দুঃখ অনুভব করা, অপরের সুখে আনন্দিত হওয়া, মানবতার কল্যাণে মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নিজেকে নিয়োজিত করা। আমি বুঝেছি- যতক্ষণ আমি ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা ভেদ করে মানবকল্যাণে অবদান রাখতে না পারছি, মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে না পারছি ততদিন নিজেকে ধার্মিক পরিচয় দেওয়ার অধিকার আমার নেই। ততদিন আমার ঐ নামাজ-রোজা, উপাসনা, ইবাদত, প্রার্থনা, বেশ-ভূষা ইত্যাদির কোনোই মূল্য নেই। কী লাভ হচ্ছে ঐ প্রার্থনায়? কী লাভ হচ্ছে ঐ ব্যক্তিগত ধর্ম-কর্মে? এত ইবাদত-উপাসনা কি মানুষকে শান্তি দিতে পেরেছে?
আমার মতো কোটি কোটি মানুষ নিয়মিত উপাসনালয়ে যাচ্ছে, প্রার্থনা করছে, উপাসনা করছে, পূজা-যজ্ঞ অনুষ্ঠান করছে। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও মানবতা মনুষ্যত্ব হারিয়ে আজ মানুষ জন্তু জানোয়ারে পরিণত হয়েছে। স্বার্থের প্রয়োজনে এরা করছে না এমন কোনো কাজ নেই। পাশবিকতায়, অমানবিকতায় এরা পশুকেও হার মানিয়েছে। আজ বাতাসে শুধুই নির্যাতিত, অত্যাচারিত, অতিষ্ঠ, বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষের করুণ আর্তি প্রকম্পিত হচ্ছে। এমন কোনো শব্দ, কোনো বাক্য, কোনো ভাষা নেই যার দ্বারা মানবজাতির এই বীভৎস, পাশবিক চিত্র বর্ণনা করা যায়। যেখানে দুই বছরের শিশুকন্যা ধর্ষিত হচ্ছে, দুধের শিশুকে মেরে মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে, ভাই ভাইকে, পিতা-পুত্রকে, পুত্র পিতাকে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করছে, স্ত্রী স্বামীর গলায় ছুরি চালাচ্ছে, স্বামী স্ত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করছে, মা তার পেটের সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে; অন্যায়ভাবে মিথ্যা-বানোয়াট গল্প-কাহিনী বানিয়ে একটার পর একটা দেশ, জনপদ, নগর-বন্দর বোমা মেরে ধ্বংস করে বিরানভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে, মাটি-পানি-বাতাস দূষিত হচ্ছে, যখন কোটি কোটি বনী আদম সন্তান বোমার আঘাতে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, ক্ষুধার তাড়নায় আফ্রিকার কোটি কোটি মানুষ জীবন্ত কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে, কচুরিপাতার নিচে জন্মপরিচয়হীন নবজাতকের নিষ্প্রাণ দেহ পঁচে গন্ধ ছড়াচ্ছে, বস্তাবন্দী লাশ ডাস্টবিনে পড়ে থাকছে, তখন আমার নামাজ-রোজা-পূজা-উপাসনার কী মূল্য থাকতে পারে? বস্তুত এই অরাজক পরিস্থিতিই প্রমাণ করছে যে, আমার ধর্ম শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে, এ ধর্ম প্রকৃত ধর্ম নয়, এটা মানবতাহীন লেবাসসর্বস্ব মেকি ধর্ম। এমতাবস্থায় আমার সর্বাপেক্ষা বড় ধর্ম হয়ে দাঁড়ায় এই বীভৎসতা থেকে সকলকে রক্ষা করা। এটা না করে আমি যতই উপাসনা-ইবাদত করি, পূজা-প্রার্থনা করি, হজ্বে বা তীর্থে গমন করি, উপবাস বা রোজা রেখে শরীর শুকিয়ে ফেলি- স্রষ্টার সন্তুষ্টি আসবে না। সবই বৃথা যাবে। স্রষ্টা আমার উপাসনা-ইবাদতের কাঙাল নন যে উপাসনা না করলে তাঁর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বরং তিনি অমুখাপেক্ষী। আমি পূজা-উপাসনা করি বা না করি তাতে তাঁর কিছুই যায় আসে না। পূজার বেদিতে অর্পিত প্রসাদ তিনি ভক্ষণ করেন না। যজ্ঞে দেওয়া আহুতি তাঁর কোনো কাজে লাগে না। তিনি তো আনুষ্ঠানিকতার নির্দেশ দিয়েছেন আমারই কল্যাণের জন্য, আমার মধ্যে ত্যাগ স্প্রীহা, পরোপকারিতা, সহিষ্ণুতা ও মানবতাবোধ জাগ্রত রাখার জন্য। কাজেই আজ যখন মানুষের মধ্য থেকে ঐ মানবতাবোধ হারিয়ে গেছে, মানবজাতির ঐক্য ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে, মানুষরূপী নরপশুরা হীন থেকে হীনতর কর্মকাণ্ড করে চলেছে, স্বার্থের কাছে বিবেক পরাজিত হয়েছে তখন আমার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, মানবকল্যাণে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে নিয়োজিত করা। এখন উপাসনালয়ের চার দেওয়ালের অভ্যন্তরে নিজেকে বন্দী করে রাখার সময় নয়। এখন সময় সকল প্রকার অন্তর্মুখিতা, স্থবিরতা, ভীরুতাকে পরাজিত করে সামনে এগিয়ে চলার, সমাজ পরিবর্তনে স্বীয় অবদান রাখার, নব বিপ্লবের মন্ত্রে মানুষকে উজ্জীবিত করার। এই তো ধর্ম! আমার প্রকৃত ধর্ম!

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ