Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

অন্যরকম গল্প: অচীন দেশের হঠাৎ রাজা


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36
666রোহান বিন মিজান

মুসান্নার শরীরে ময়লা পোশাক, পেটে ক্ষুধা, ক্লান্ত চেহারা। নিজের মনে চিন্তা করতে করতে নদীর পাড়েই একটা গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ তার ঘুম ভাঙ্গে একটি ঝাঁকুনিতে। চেয়ে দেখে একটা হাতি তার শুড় দিয়ে তাকে পেঁচিয়ে পিঠের উপর বসাতে চাচ্ছে। ভয়ে সে চিৎকার করে ওঠে কিন্তু বনের আশেপাশে লোকালয় নেই যে তার চিৎকার শুনে কেউ এগিয়ে আসবে। সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল জীবিকার সন্ধানে। এই বিজন বনে নদীর ধারে সাধারণত কেউ একা আসে না, দল বেঁধে আসে, হই হুল্লোড় করে চলে যায়। কিন্তু মুসান্না না জেনে একাই এসে পড়েছে। এখন হাতির পিঠ থেকে নামতেও পারছে না। আবার চিৎকার দিতেও পারছে না পাছে হাতি কিছু করে বসে এই ভয়ে। হাতিটা শুঁড় দিয়ে মুসান্নাকে পিঠের উপর বসানো সুন্দর গদিটায় বসিয়ে রওনা দেয় বনের দিকে। গহীন এই বনের ভিতর গিয়ে তার কী হবে ভেবে সে আতঙ্কিত। এই হিংস্র জন্তু জানোয়ারে ভরপুর বনের ভিতর হাতির পিঠে সুন্দর একটা গদি দেখে ভাবে নিশ্চয় আশেপাশে কোন মানুষ আছে, তা না হলে এটা এলো কিভাবে? হাতি যাচ্ছে তো যাচ্ছে, থামার কোন লক্ষণ নেই। কয়েক ঘণ্টা চলার পর হাতি একটা লোকালয়ে ঢুকে পড়ল কিন্তু থামলো না। হাতি চলছে তো চলছেই। রাস্তার দুই পাশে ছেলে মেয়ে বৃদ্ধ অনেক লোক। তারা হাত তালি দিচ্ছে, কেউ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তারা বলছে, ‘স্বাগতম! স্বাগতম! হে নতুন নেতা, হে নতুন অতিথি’। এতক্ষণে মুসান্নার ভয় কেটে গেছে, সে ভাবছে এবার হয়তো রক্ষা পাওয়া যাবে। সে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো লোকদের সাথে কথা বলতে চেষ্টা করল। তারা তাকে বলল, ‘আরেকটু এগিয়ে গেলেই সব জানতে পারবে’। এবার সে গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। হাতি যাচ্ছে তো যাচ্ছে। অনেক্ষণ চলার পর দূরে একটা রাজপ্রাসাদ দেখতে পেল মুসান্না। সিংহদুয়ার দিয়ে রাজপ্রাসাদে হাতিটি ঢুকে আস্তে করে বসে পড়লো। বসার সঙ্গে সঙ্গেই সুন্দর পরিপাটি করে পোশাক পরা কয়েকজন লোক এগিয়ে এসে মুসান্নাকে স্বাগতম জানিয়ে প্রাসাদের ভিতরে নিয়ে গেল। প্রথমেই তাকে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরালো। ভালো ভালো খাবার খাওয়ানো হলো। এদিকে মুসান্না তো রীতিমত আশ্চর্য, কী হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না। অতঃপর তাকে সিংহাসনে নিয়ে বসানো হলো। একজন মধ্যবয়স্ক লোক তাকে কুর্ণিশ করে বললেন, ‘আপনি আজ থেকে পাঁচ বছরের জন্য এদেশের রাজা। আপনি আজ থেকে যা বলবেন, আমরা তাই করব। আমরা আপনার একান্ত বাধ্য এবং অনুগত।’ তারপর তিনি রাজদরবারের সবাইকে এক এক করে নতুন রাজার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবার পরিচয় শেষে মন্ত্রী এসে বললেন, ‘রাজা সাহেব, আপনার এখন বিশ্রাম প্রয়োজন। আপনি এখন বিশ্রাম নিন।’ তাকে বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। মুসান্না তখন মন্ত্রীকে বললেন, ‘আপনি আমার পিতার মত, দয়া করে একটু বসুন। আমাকে বলুন আমাকে কেন রাজা বানালেন? আর পাঁচ বছর পরে আমার কী হবে?’ মন্ত্রী বললেন, ‘আমি ত্রিশ বছর এই রাজ্যের মন্ত্রী। এর আগেও ছয়জন রাজা চলে গেছেন। আমাদের এই রাজ্যের নিয়ম হলো প্রতি পাঁচ বছর পর পর একটা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাতি আমরা ছেড়ে দেই। ঐ হাতিটা একজন পুরুষ লোককে ধরে নিয়ে আসে তাকে আমরা পাঁচ বছরের জন্য এই রাজ্যের রাজা বানাই। উনি যা বলেন সে অনুযায়ী রাজ্যে সবকিছু চলে। উনি আমাদের হয়ে সমস্ত চিন্তা ভাবনা করেন, উনার তৈরি করা নিয়ম দিয়েই আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমষ্টিগত জীবনের সবকিছুই পরিচালিত হয়। আমরা কোন চিন্তা করি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রত্যেকটি রাজাই পাঁচবছর ধরে শুধু নিজের সুখ, শান্তি, আরাম আয়েশ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। প্রজাদের সুখ শান্তি কিসে হবে তা নিয়ে তাদের কোন চিন্তা থাকে না। প্রজারা অনেকে না খেয়ে থাকে, অনেকে নির্যাতিত হয়, অনেকে বিচার পায় না, রাজার খামখেয়ালী শাসন তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলে। এভাবে পাঁচ বছর শেষ হলে তাকে আবার ঐ হাতির পিঠে জোর করে উঠিয়ে দেওয়া হয়। হাতি রাজাকে
নিয়ে হিংস্র জন্তু জানোয়ারে পূর্ণ জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসে। ঐ রাজাকে বাঘ ভাল্লুক সিংহ খেয়ে ফেলে। তারপর হাতি পুনরায় আরেকজন লোককে নিয়ে আসে।’ মুসান্না এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলো এবং বললো, ‘আমারও পরিণতি তাহলে তাই হবে?’ মন্ত্রি বললেন, ‘হ্যাঁ তাই তো হবে।’ এখান থেকে বাঁচার উপায় কী মুসান্না জানতে চাইলেন। মন্ত্রী বললেন, ‘বাঁচার কোন উপায় আমার জানা নেই, যদি বাঁচতে চান, উপায় আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।’ এই কথা বলে মুসান্নাকে রেখে মন্ত্রী বিদায় নিলেন।
মুসান্না গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলো। সে ভাবতে লাগলো, শেষ পর্যন্ত আমাকেও বাঘ শেয়ালের পেটে যেতে হবে। এটাই যদি আমার পরিণতি হয় তাহলে রাজা থেকেই কী লাভ? আর আমি না হয় বাঘের পেটে গেলাম, কিন্তু এই এলাকার জনগণের কি কোন মুক্তি নেই? তারা কি এভাবেই পুরুষানুক্রমে স্বেচ্ছাচারী রাজাদের নিপীড়নের শিকার হয়েই থাকবে? এসব ভাবতে ভাবতে তন্দ্রায় মুসান্নার চোখ জড়িয়ে এলো। এমন সময় তার মনে পড়লো মায়ের মুখ। মনে পড়লো মা একদিন তাকে একটি বই দিয়েছিলেন যেটি এখনও তার ঝোলায় আছে। বইটি দিয়ে মা বলেছিলেন, ‘বহুবছর আগে আল্লাহ একজন মহামানবের মাধ্যমে এই বইটি পৃথিবীর মানুষের জন্য পাঠিয়েছিলেন। এই বইতে মানুষের জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান আছে।’ এ কথা মনে পড়তেই মুসান্নার তন্দ্রা টুটে গেল। সে লাফ দিয়ে বিছানার উপরে উঠে বসলো। তারপর ঝোলা থেকে বের করল সেই বইটি। একটার পর একটা পাতা উল্টাতে লাগলো। যতই পড়তে লাগলো, তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকলো অনিন্দ্যসুন্দর একটি দুনিয়া যেখানে থাকবে না কোন অন্যায়, থাকবে না কোন অবিচার, কান্না। এই বইটি তো সেই দুঃখহীন দুনিয়ার চাবি। সে পড়তে লাগলো, “আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা দিয়ে তুমি তাদের বিচার নিষ্পত্তি করবে। যে সত্য তোমার নিকট এসেছে তা ত্যাগ করে তুমি তাদের মনগড়া বিধানের অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আইন-কানুন ও স্পষ্ট পথ নির্দ্ধারণ করেছি।…নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?”
এরপর মুসান্না নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল। পরদিন সকালে শুরু হলো তার নতুন জীবন। সেই গ্রন্থটি দেখে মুসান্না শুরু করল রাজ্যশাসন। ধীরে ধীরে রাজ্য থেকে বিদায় নিল সকল অশান্তি, অবিচার, অন্যায়, ক্ষুধা। ফুলে ফলে ভরে উঠলো দেশ। নতুন রাজাকে নিয়ে সবাই আনন্দে মাতোয়ারা। কিভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গড়িয়ে গেল কেউ খেয়াল করল না। পাঁচ বছর কেটে গেল, দশ বছর কেটে গেল, বিশ বছর কেটে গেল। মুসান্নাকে নিয়ে যে হাতিটি রাজ্যে এসেছিল, সেই হাতিটিও একদিন মরে গেল, মানুষ ভুলে গেল তাদের রাজাবদলের সেই পুরাতন নিয়ম।
(বিদেশী রূপকথার ছায়া অবলম্বনে লিখিত)

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ