ইউরোপিয়ানরা যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ শুরু করল, তখনই তাদের ঝুলি নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হতে লাগল। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রায় সকল উদ্ভাবনের কৃতিত্ব তাই তাদের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু এসব আবিষ্কারের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন স্বর্ণযুগের মুসলিম বিজ্ঞানীরা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় শীর্ষে আরোহণকারী মুসলিমরা পরবর্তীতে যখন ধর্মবেত্তাদের অতি-বিশ্লেষণের ফাঁদে পড়ে এলেমকে কেবলমাত্র ধর্মীয় জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলল, তখনই এ জাতি সর্ববিষয়ে পিছিয়ে পড়তে লাগল। এক সময় তারা পাশ্চাত্য জাতিগুলির গোলামে পরিণত হল। পরাধীন হওয়ায় জাতির মানসিক বিকাশ স্তব্ধ হয়ে গেল।
প্রত্যেক ধর্মেই একটি ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি আছে যারা তাদের সংকীর্ণতা দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে অব্যাহতভাবে জগৎ সংসারের অকল্যাণ করে চলেছে। এরাই সৃষ্টি করছে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা, পরিণামে হচ্ছে দাঙ্গা, জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ। ধর্ম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে বিকৃত করে তারা ধর্মকে বানিয়ে নিয়েছে বাণিজ্যের মূলধন, স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। সাধারণ মানুষ ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য, ধর্মীয় নানা কার্য সম্পাদনের জন্য এই পুরোহিত শ্রেণিটির শরণাপন্ন হয় আর এরা স্বার্থ-রক্ষার্থে নিজেদের মনগড়া কথা ধর্মের নামে চালিয়ে দেয়। নিজেদের প্রভাব ও রোজগার টিকিয়ে রাখার জন্য এরা চায় মানুষের অন্ধত্ব যেন টিকে থাকে, যেন মানুষ কোর’আন, হাদিস না খুঁজে একমাত্র তাদের উপরই নির্ভরশীল থাকে। তারা বলে, ‘আপনারা কেতাব পড়লে বুঝবেন না। এর মধ্যে অনেক কিছু আছে। ইসলাম বুঝতে আমাদের কাছে আসতে হবে।’
তাদের এই ধ্বংসাত্মক বুলি জাতিকে অন্ধত্বের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা যখন তাদের সামনে আল্লাহর প্রকৃত ইসলাম তুলে ধরার চেষ্টা করছি, সাধারণ মানুষ সেটা যাচাই বাছাই করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেরা সেই ধর্মব্যবসায়ীদের কাছেই ছুটে যাচ্ছেন। আর তারা নিজেদের গদি বজায় রাখার জন্য হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা দ্বারা সাধারণ মানুষের কান ভারি করে তুলছে। ঈসা (আ.) ইহুদি আলেমদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘হে মোনাফেক ফরিশি ও আলেমরা! কী ঘৃণ্য আপনারা। আপনারা জান্নাতে নিজেরাও ঢোকেন না, অন্যদেরকেও ঢুকতে দেন না।’
আমরা যখন বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন ধর্মে স্রষ্টা প্রেরিত নবী-রসুল, অবতার, মহামানবদের নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা আমাদের পত্রিকায় তুলে ধরছি তখন এই শ্রেণিটি অপপ্রচার করছে এটা খ্রিস্টানদের পত্রিকা, এটা বিধর্মীদের পত্রিকা, এই পত্রিকা যেন কেউ স্পর্শ না করে, স্পর্শ করলে তার ঈমান চলে যাবে। অথচ আল্লাহ বলেছেন- ‘যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং তার মধ্যে যা উত্তম তা গ্রহণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তারাই বোধশক্তি সম্পন্ন (সুরা যুমার ১৮)।’ আল্লাহ মনোযোগ-সহকারে সব বিষয় শুনতে বলেছেন, অতঃপর যাচাই করে যেটা উত্তম সেটা গ্রহণ করতে বলেছেন। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এটা অত্যন্ত যৌক্তিক যে, কোনো নাগরিক স্বাধীনভাবে, আইনসঙ্গতভাবে তার বক্তব্য, মতামত ইত্যাদি প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে। এই বক্তব্য, মতামত কেউ গ্রহণও করতে পারে আবার প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। এটা শ্রোতা বা পাঠকের স্বাধীনতা। তাই সকল মানুষের প্রতি আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা কিছু মহাসত্য মানুষের সামনে তুলে ধরেছি। কারণ সংবাদ পৌঁছে দেয়া পর্যন্তই আমাদের কাজ। নবী-রসুলদেরও এর চেয়ে বেশি দায়িত্ব ছিল না। আমরা কাউকে আমাদের বক্তব্য মেনে নেওয়ার জন্য জোর করছি না। আল্লাহ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করার জ্ঞান প্রতিটি মানুষকে দিয়েছেন। আমাদের কথাগুলি যদি বর্তমানের জন্য প্রযোজ্য, উত্তম এবং যৌক্তিক মনে হয় তাহলে আপনারা সেটা গ্রহণ করুন। গ্রহণ বা বর্জন করা একান্তই আপনাদের সিদ্ধান্ত। তবে সিদ্ধান্তের আগে আমাদের বক্তব্য সঠিক না ভুল যাচাই করুন, কারণ এটা একদিকে যেমন স্রষ্টার নির্দেশ, অন্যদিকে যুক্তির মানদণ্ডেও করণীয়।’
আর ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের কথা হচ্ছে, ‘আমাদের কোনো বক্তব্য সম্পর্কে যদি আপনার আপত্তি থাকে তবে সেটা আমাদেরকে অবহিত করুন। আমরা চেষ্টা করব আপনাকে সদুত্তর দিতে। আমাদের কোন কাজের অসঙ্গতি যদি আপনাদের দৃষ্টিগোচর হয় সেটা আমাদেরকে জানান, ভুল সংশোধনের মানসিকতা আমাদের আছে। কিন্তু আপনারা সত্যবিমুখ হবেন না, অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবেন না। কারণ আপনার কারণে যে পথভ্রষ্ট হবে তার দায়িত্ব আখেরাতে আপনাকেই নিতে হবে। আর মানুষকে সত্য থেকে ফিরিয়ে রাখার কারণে সমাজ থেকে অন্যায় অশান্তি দূর হবে না, সেটার দায়ও আপনার উপরই বর্তাবে।’
তাছাড়া কাউকে কোনো কিছু পড়তে না দেওয়া, জানতে না দেওয়া, গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা করতে না দেওয়া চরম মূর্খতা, অন্ধত্ব। এটা ধর্মীয় বিধানে যেমন অনৈতিক ও অবৈধ তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও অবৈধ ও তথ্য জানার অধিকার পরিপন্থী।