হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

‘জাতির নিরাপত্তা রক্ষায় তওহীদের উপর ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’

শাহাদৎ হোসেন:
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী করটিয়া জমিদার পন্নী পরিবারের উত্তরসূরী এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর স্মৃতিবিজড়িত জেলা টাঙ্গাইলে সংগঠনটির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপি টাঙ্গাইল জেলা থেকে আগত শতশত নেতাকর্মী নারী-পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় এই সমাবেশ। সকাল থেকেই হেযবুত তওহীদের টাঙ্গাইল জেলার সদস্য ও শুভাকাঙ্খীদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমি চত্বর।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সমাবেশে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সমগ্র জাতিকে তওহীদের উপর ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। তিনি বলেন, “বিশ্ব আজ এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিভাজন, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতে গোটা মানবজাতি আজ বিপর্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় দিন দিন বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা। অস্ত্র ব্যবসায় মত্ত প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। মায়ানমারে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তানের টানাপোড়েন এবং বাংলাদেশকে ঘিরে চলমান গভীর ষড়যন্ত্র -এসব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে অশনি সংকেত ঘনিয়ে এসেছে।”

তিনি মুসলিম উম্মাহর ওপর চলমান সীমাহীন নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত আশি বছর ধরে ফিলিস্তিনে ধারাবাহিকভাবে মুসলমানদের উপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজা উপত্যকায় বর্বরতা আরও চরমে পৌঁছেছে- সেখানে নিরস্ত্র মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে গাজায় অন্তত ১৪,০০০ শিশু খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, একই রকম ভয়াবহ দৃশ্য আমরা দেখেছি প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে। সেখান থেকে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাইশ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানকে উৎখাত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি অন্ধকার সময় যা পুরো মুসলিম জাহানকে গ্রাস করছে। এই ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধ্বংসযজ্ঞের একমাত্র কারণ—মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের অভাব। আজ মুসলমানরা ৫৫টি ভিন্ন ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত। প্রতিটি দেশ কেবল নিজের সীমানা, নিজের সমস্যা আর নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। ফলে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ওপর যখন গণহত্যা চলছে, তখন আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশেও যদি যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের পরিণতিও গাজার নিরীহ মুসলমানদের মতো ভয়াবহ হতে পারে। এই সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের একমাত্র পথ হচ্ছে- ঐক্য। ফেরকা, মাজহাব, দলাদলি ভুলে, হানাহানি ও বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে, কেবলমাত্র আল্লাহর হুকুমের ওপর ভিত্তি করে একটি ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তা গড়ে তুলতে হবে। এক নেতা, এক আদর্শের নেতৃত্বে সংগঠিত জাতিই দেশকে নিরাপদ রাখতে পারবে।”

বিশ্ব মানবতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছ। সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে, যেটা কেউ থামাতে পারবে না। কারণ, তোমরা আল্লাহর খেলাফত পরিত্যাগ করে ইবলিসের খেলাফত বেছে নিয়েছ। এই ধ্বংসের পথ থেকে ফিরে আসার একমাত্র উপায়- আবার আল্লাহর খেলাফতে ফিরে যাওয়া। যদি তোমরা ঘোষণা করো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানব না -তাহলেই তোমরা এই ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা পাবে।”

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে অনেকেই হেযবুত তওহীদ আন্দোলনে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলনে যোগ দেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি হেযবুত তওহীদের পাঁচ দফা কর্মসূচির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এবং ঈমান ও দেশ রক্ষার স্বার্থে জেহাদে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আপনারা এমন একটি জেলার মোজাহেদ মোজাহেদা, যে জেলার পবিত্র মাটিতে এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মতো একজন মহামানব জন্মগ্রহণ করেছেন। এখানেই সূচনা হয়েছে হেযবুত তওহীদের মতো একটি সুমহান আন্দোলনের। তাই আপনারা গর্বের সাথে, মাথা উঁচু করে কাজ চালিয়ে যাবেন। আমরা এমন এক নেতার অনুসারী, যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এবং মানবতার মহাশত্রু দাজ্জালের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। কোনোদিন কোনো অন্যায়ের কাছে তিনি মাথা নত করেননি।”

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি এনামুল হক বাপ্পার সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলদ্রিম মিডিয়ার চেয়ারম্যান খাদিজা খাতুন, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক প্রচার সম্পাদক মশিউর রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, কেন্দ্রীয় নারী সম্পাদক রূফায়দাহ পন্নী, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় নারী সম্পাদক রোজিনা আক্তার এবং টাঙ্গাইল জেলা রাজনৈতিক সম্পাদক উমর খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টাঙ্গাইল জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত হেযবুত তওহীদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। সমাপনী পর্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর অধিবেশন, যেখানে হেযবুত তওহীদের এমাম সরাসরি শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...