কুষ্টিয়া, ১ মে: বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় একটি বিশাল জনসভার আয়োজন করেছে হেযবুত তওহীদ। “বিশ্বময় মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নাই” শীর্ষক এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আন্দোলনটির সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশেও যদি কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের অবস্থাও হয়ত গাজার মুসলমানদের মতো হতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে ফেরকা-মাজহাব ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে, বিভাজনের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে এক আল্লাহর হুকুমের উপর ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তা গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক শতাব্দী ধরে বিশ্বময় মুসলিম নিপীড়ন চলছে যা এখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। খণ্ড-বিখণ্ড মুসলিম জাতি এই নিপীড়ন বন্ধে কিছুই করতে পারছে না, কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ নয়। আল্লাহ নির্দেশিত সীসাগলা প্রাচীরের মতো ঐক্য গড়ে তুললেই এই অবস্থা থেকে মুক্তি সম্ভব।”
দক্ষিণ এশিয়ার ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা নিয়ে তিনি বলেন, “পেহেলগাম হামলা, রাখাইন অস্থিরতা ও সাম্প্রতিক আঞ্চলিক উত্তেজনা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে থমথমে পরিবেশ তৈরি করেছে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইসলাম ও মুসলমানদের টার্গেট করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, প্রচার চালানো হচ্ছে।”
হেযবুত তওহীদকে একটি আইন-মান্যকারী অরাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করে ইমাম সেলিম বলেন, “আমরা বিগত ৩০ বছর ধরে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরে মানুষের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। উগ্রবাদীদের ভুল ব্যাখ্যার বিপরীতে সত্য, যুক্তিনির্ভর ও মানবিক আদর্শ তুলে ধরছি। এই কাজ করতে গিয়ে পাঁচ শতাধিক স্থানে হামলার শিকার হয়েছি, আমাদের পাঁচজন সদস্য নিহত হয়েছেন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজ যখন মানুষ উগ্রবাদী হামলা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও ধর্মের অপব্যবহারে দিশেহারা, তখন শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আনীত দ্বীনের ভিত্তিতে হেযবুত তওহীদের যুক্তিনির্ভর আদর্শই পথ দেখাতে পারে।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ, যৌক্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। আমাদের সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও প্রকাশনা সাংবিধানিক এবং মানবাধিকারের আওতায় পড়ে, তবুও বারবার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।”
জাতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনারা হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে জানুন, আমাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শ বিবেচনা করুন। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত মোকাবেলায় কার্যকর প্রমাণিত হবে।”
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি আক্কাস আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন—কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, খুলনা বিভাগীয় সভাপতি মো. তানভীর আহমেদ, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, কুষ্টিয়া অঞ্চলের সভাপতি মো. জসেব উদ্দীন, খুলনা অঞ্চলের সভাপতি শামসুজ্জামান মিলন, কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোতালিব খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পাদক শরিফুল ইসলাম এবং খুলনা বিভাগীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক জেরিন সাইয়ারা।
অনুষ্ঠানে ভেড়ামারা উপজেলার সভাপতি মিজানুর রহমান মজনুও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানস্থলে জনতার ঢল নামে শুরু হওয়ার আগেই। ‘এক জাতি এক দেশ ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’, ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন – জাতিসংঘ জবাব চাই’ সহ নানা স্লোগানে মিছিল নিয়ে জনসাধারণ অংশ নেয়। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো মানুষ বাস-ট্রেনে করে সমাবেশে যোগ দেন। অনুষ্ঠানস্থল এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার ছিল ইলদ্রিম মিডিয়া ও দৈনিক দেশেরপত্র।