হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হজ কেন মুসলিম উম্মাহর ভাগ্য বদলাতে পারছে না?

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
আমরা সবাই জানি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হজ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হাজী মক্কায় যান হজ করতে। সেখানে হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন তারা। যেমন, কাবা তাওয়াফ করা, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া, আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়া, সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা, মাথা মুণ্ডণ করা, কুরবানি করা ইত্যাদি। কিন্তু পাঠক, আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি- হজের সময় এসব আনুষ্ঠানিকতা কেন করা হয়? কোনো কারণ ছাড়াই তো এসব আনুষ্ঠানিকতার নির্দেশ দেয়া হয়নি। নিশ্চয়ই যৌক্তিক ও কল্যাণকর কোনো কারণ আছে, উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যগুলোর কথাই জানার চেষ্টা থাকবে আজকের লেখায়। আশা করি লেখাটি সত্যান্বেষী মুসলিমরা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন ও উপলব্ধি করার চেষ্টা করবেন ইনশা’আল্লাহ।

হজের উদ্দেশ্য কী?
পাঠক, বর্তমানে মনে করা হয়- হজ্ব হলো আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর কাবাঘরে গিয়ে সমবেত হওয়া এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এখানে প্রথম কথা হচ্ছে- হজ যেহেতু আল্লাহর দেওয়া বিধান, কাজেই মো’মেনরা এই বিধান পালন করলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু হজের এই বিধান আল্লাহ কেন দিলেন সেটাও তো জানতে হবে। হজের উদ্দেশ্য কি শুধুমাত্র আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে একত্রিত হওয়া? শুধু এতটুকুই? দেখুন আল্লাহ কিন্তু আমাদের নিকটেই রয়েছেন। পবিত্র কোর’আনে তিনি বলেছেন- আমাদের ঘাড়ের রগের চাইতেও তিনি নিকটে আছেন। (সুরা কাফ: ১৬) সুতরাং, আমরা যেখান থেকেই তাঁকে ডাকি, তিনি আমাদের কথা শুনবেন। তাহলে তাঁকে ডাকতে হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মক্কায় যেতে হবে কেন? তারপর নির্দিষ্ট একটা ময়দানে সমবেত হতে হবে কেন? তাছাড়া হজে প্রচুর নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, রীতি-নীতি অনুসরণ করতে হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়ে, শত শত নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণ করে কি আল্লাহকে ভালোভাবে ডাকা যায়, নাকি একাকী নিভৃতে মনোযোগ দিয়ে ডাকা যায়? অবশ্যই একা একা ভালোভাবে ডাকা যায়। কিন্তু হজের নিয়ম হচ্ছে বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে উপস্থিত হওয়া। এ থেকেই বোঝা যায়- হজ অন্যান্য ধর্মের তীর্থযাত্রার মতো শুধুই একটি আধ্যাত্মিক বিষয় নয়, এটি ভিন্নকিছু। প্রশ্ন হলো- হজ্ব তাহলে কী?

পাঠক- প্রকৃতপক্ষে হজ্ব হলো মুসলিম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন। এই মহাসম্মেলনের দুইটি দিক আছে- একটি জাগতিক, অন্যটি আধ্যাত্মিক। এই লেখাটি পরিপূর্ণভাবে পড়ার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন মহান আল্লাহ কতই না নিখুঁতভাবে হজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সমন্বয় সাধন করেছেন। দেখুন ইসলামের সিস্টেম হল- পুরো মুসলিম উম্মাহ হবে একজাতি এবং তাদের ইমাম বা কেন্দ্রীয় নেতা হবেন একজন। ঐ কেন্দ্রীয় ইমামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় আমির নিযুক্ত থাকবেন এবং আমিরগণ বিভিন্ন এলাকার প্রশাসনিক কাযক্রম পরিচালনা করবেন। আর এই কাজে মসজিদগুলো হবে রাষ্ট্রীয় কার্যালয়ের মতো। ফলে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মুসলমানরা যখন মসজিদে একত্রিত হবে, তখনই তাদের ছোটখাটো স্থানীয় সমস্যার সমাধান আমিরের কাছে পেয়ে যাবে। যদি ওখানে সমাধান না হয়, তাহলে সপ্তাহে একদিন জুমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, সেখানে জুমার নামাজ শেষে ওই এলাকার যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ধরুন, সমস্যাটা আরও বড় কোনো জাতীয় সমস্যা। তাহলে সেটার সমাধান কীভাবে হবে? সেজন্য আল্লাহ রেখেছেন আরাফাতের ময়দান। বছরে একদিন সারা বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মুসলিমরা হজ্বের ময়দানে সমবেত হবেন, সেখানে মুসলিম বিশ্বের খলিফার সাথে রাজনৈতিক কূটনৈতিক সামরিক ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে, পরামর্শ হবে, পরিকল্পনা হবে, সিদ্ধান্ত হবে। এরপর খলিফা তার হজের খুতবায় মুসলমানদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে দিবেন। আর এভাবেই হজ্ব হয়ে উঠবে জীবন্ত, প্রাণবন্ত; মুসলিম উম্মাহর জাগতিক সঙ্কটের সমাধানস্থল।

পাঠক, বর্তমানে জাতিসংঘের সম্মেলনে কী হয়? সারা বিশ্ব থেকে শাসকরা জাতিসংঘে মিলিত হয়ে বৈশ্বিক সঙ্কট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন ও সিদ্ধান্ত নেন। ইসলামও সারা বিশ্বের জন্য এসেছে কাজেই সারা বিশ্বের মুসলিমরা যাতে বছরে একবার একত্রিত হয়ে আলোচনা-পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেজন্য আল্লাহ দিয়েছেন হজের বিধান। তবে শুধু সম্মেলনই নয়, হজের প্রত্যেকটা রীতি-নীতি ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর জন্য রেখেছেন জাগতিক ও আধ্যাত্মিকতার দারুন এক প্রশিক্ষণ। এ বিষয়ে সংক্ষেপে কিছুটা জানা যাক।

হজের সময় কাবা তাওয়াফ করতে হয় কেন?
আমরা সবাই জানি হজ্বের অন্যতম একটা নিয়ম হলো কাবাঘর তাওয়াফ করা। এই যে কাবাকে তাওয়াফ করা- এর মানে কী? এটা কি কখনও ভেবে দেখেছি আমরা? প্রকৃতপক্ষে, কাবাঘর হলো মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। আর এই কাবাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব থেকে আগত মুসলিম প্রতিনিধিগণকে তাওয়াফ করতে হয়, যার অর্থ হলো- সারা বিশ্বের মুসলিমদের মনে মগজে চিন্তায় চেতনায় গেঁথে দেওয়া যে- তোমরা যেখানেই থাকো, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো, তোমরা কিন্তু এক উম্মাহ। তোমাদের কেবলা এক। লক্ষ্য এক। উদ্দেশ্য এক (সেটা হলো- সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর হুকুম বিধান প্রতিষ্ঠা করে সমগ্র মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা)। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তোমাদেরকে নিরন্তর ছুটে চলতে হবে, থেমে যাওয়া যাবে না, স্থবির হয়ে যাওয়া যাবে না এবং এই লক্ষ্যকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া যাবে না।

শয়তানকে পাথর মারা কেন?
পাঠক! হজ্বের আরেকটা আনুষ্ঠানিকতা হলো শয়তানকে পাথর মারা। শয়তান পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোনো একটা জায়গায় বসে থাকে না যে, আপনি সেদিকে পাথর মারলেন আর সেই পাথরের আঘাতে সে মারা পড়ল। তারপরও হাজ্বীদেরকে শয়তানকে লক্ষ করে পাথর মারতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা একটা প্রতীকী বিষয়। যা হাজীদেরকে অন্যায়, অসত্য ও ইবলিশের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকা ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার শিক্ষা দিয়ে থাকে। এই আনুষ্ঠানিকতা হাজীদেরকে প্রতিবাদের চেতনা শিক্ষা দেয়, অন্যায়কে রুখে দেওয়ার প্রেরণা যোগায়। হজের এই ময়দান থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে হাজীরা যাতে এভাবেই অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে, জেহাদ বা সংগ্রাম করে তাগুতকে নির্মূল করে সেটাই এই আনুষ্ঠানিকতার মূল শিক্ষা।

কালো পাথরে চুমু খাওয়া কেন?
হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরে চুমু খাওয়ার পেছনেও কারণ আছে, উদ্দেশ্য আছে। এই পাথরের কি আলাদা কোনো ক্ষমতা আছে যে, এই পাথরে চুমু খেলে তা আপনার কোনো উপকার করবে? কিংবা চুমু না খেলে কোনো ক্ষতি হবে? তারপরও সাহাবীরা কেন এই পাথরে চুমু খেতেন তা জানতে হবে। মনে রাখতে হবে মহানবী (সা.) অনর্থক ও অহেতুক কোনো কাজ করেননি। তাঁর প্রত্যেকটি আমলের পেছনে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক এক মহান উদ্দেশ্য রয়েছে। আসল ঘটনা হলো- সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলমান যখন একত্রিত হয়ে একই পাথরে চুমু খায়, তখন এই পাথরটাও হয়ে ওঠে মুসলিমদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন। দুজন ব্যক্তি যদি এক প্লেটে খাবার খায়- আমরা সেটা দেখেই বুঝে নিই তাদের বন্ধুত্ব কতটা গভীর। একইভাবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে- মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য ও সংহতির জন্য একটা পাথরকে পর্যন্ত আল্লাহ কাজে লাগিয়েছেন যাতে একই পাথরে চুমু খাওয়া মুসলিমরা বুঝতে পারে তারা একে অপরের কতটা আপন, কতটা ঘনিষ্ঠ। সুতরাং এই উম্মাহর ভেতরে কোনো শত্রুতা-বিদ্বেষের প্রশ্নই আসে না।

অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ কেন?
সাহাবীদের যুগে যখন হজ হতো, কাবাঘরের চতুর্দিকে মক্কার নির্দিষ্ট একটা এলাকায় কোনো অমুসলিম ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারত না। আজকের যুগেও দেখবেন মক্কার নির্দিষ্ট একটা এলাকা অমুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু এর কারণ কী? অমুসলিমরা মুসলিমদের হজের দৃশ্য, নামাজের দৃশ্য, এসব দেখলে অসুবিধা কী? আসলে এই নিষেধাজ্ঞার কারণ ভিন্ন। আগেই বলেছি হজ্ব ছিল মুসলিম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন। যেহেতু হজ্বের সম্মেলনে মুসলমানদের অনেক অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকবে, যেমন প্রতিরক্ষা বা ডিফেন্স বিষয়ে আলোচনা সিদ্ধান্ত হবে, সুতরাং এসব তথ্য যদি অন্যদের কাছে পৌঁছে যায় তাহলে তো মুশকিল। সেজন্যই- হজ্বের ময়দানে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। অনেকটা আধুনিক যুগের ক্যান্টনমেন্টগুলোতে যেমন সবার প্রবেশাধিকার থাকে না, একমাত্র ডিফেন্সের লোকেরাই প্রবেশ করতে পারেন। ঠিক তেমনি হজের ময়দানও সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।

সেলাইবিহীন সাদা কাপড়ের কারণ কী?
পাঠক, এখানেই হজের আধ্যাত্মিক দিক সম্পর্কিত। দেখুন ইসলামের সকল আমলেরই দুইটা দিক আছে। একটা জাগতিক, আরেকটা আধ্যাত্মিক। হজেরও তাই। হজের ময়দান একদিক থেকে মুসলিম উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন, যা থেকে তাদের জাগতিক বিভিন্ন সঙ্কটের সমাধান আসবে, একইভাবে কিন্তু এটা আধ্যাত্মিকতারও নিখুঁত একটা মহড়া। হজের ময়দানে দুনিয়াবী ভোগ বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। এখানে সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, আরব-অনারব, লম্বা-খাটো নির্বিশেষে সবাই যার যার দুনিয়াবী শান শওকত, আত্মীয় স্বজন, ক্ষেত-খামার, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে দুই পিস সেলাইবিহীন কাপড় পরে আল্লাহর সামনে হাজিরা দিয়ে বলছেন- লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। এ যেন এক খণ্ড হাশরের ময়দান। যেন সবাই সবকিছু পেছনে ছেড়ে শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, ভিক্ষুকের বেশে উপস্থিত হয়েছেন মহান প্রভু আল্লাহর ডাকে। হজের সময় এই মানুষগুলোর আত্মার ফরিয়াদ হবে এমন যে, হে আল্লাহ! আজকে যেভাবে আমি আমার সর্বস্ব পার্থিব সম্পদ, স্ত্রী পুত্র পরিজন ঘরবাড়ি ছেড়ে তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে এই ময়দানে এসে দাঁড়িয়েছি, এমনইভাবে যেন তোমার দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমার সমস্ত জীবন সম্পদ কোরবান করে হাশরের দিন তোমার সামনে মো’মেনের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারি তুমি আমাকে সেই তওফিক দিও।

পাঠক, খেয়াল করেছেন কি? একদিকে জাতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাগতিক বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় শরিক হওয়া, জাতির ইমামের দিক-নির্দেশনা ভালোমতো বুঝে নেওয়া, আরেকদিকে ব্যক্তিগতভাবে এই সমাবেশকে হাশরের মহড়া হিসেবে বিবেচনা করে দুনিয়াবী লোভ লালসা থেকে বেরিয়ে আসার শিক্ষা, এর চাইতে উত্তম, ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা আর কী হতে পারে?

এই হলো হজ্ব। প্রকৃত ইসলামের হজ্ব। কিন্তু হায় দুর্ভাগ্য আমাদের! আজ আমাদের অখণ্ড একটা মুসলিম উম্মাহও নেই, একজন ইমামও নেই। ইমামই যখন নেই, তখন আমাদের সঙ্কটের সমাধান কে দিবে? কার নেতৃত্বে হবে উম্মাহর বার্ষিক মহাসম্মেলন? কে দিবে সিদ্ধান্ত? না কেউ নেই। যারাওবা আছেন, সেই মুসলিম নেতারা এখন আর জাগতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য হজের দিনে আরাফাতের ময়দানে ছুটে যান না, তারা এখন ছুটে যান নিউইয়র্ক, জেনেভা, মস্কো, বেইজিং কিংবা লন্ডনে। পশ্চিমা প্রভুরাই এখন ঠিক করে দেয় কীভাবে চলবে মুসলিম দেশগুলো। ওদের নির্দেশে আমরা এক উম্মাহ ভেঙে ৫৭ টুকরা হই। ওদের সহায়তা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। ওদের চাপিয়ে দেওয়া বিধানে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা চালাই। এক কথায়- ওরাই এখন আমাদের প্রভুর আসনে বসে গেছে। আর ওদের দেশগুলোই হয়ে উঠেছে আমাদের কেবলা।

তবে হ্যা, হজ্ব কিন্তু আমরা বাদ দিই নাই। টাকা-পয়সা জমিয়ে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলমান ছুটে যাচ্ছি মক্কায়। বিশাল বড় জমায়েতে যোগ দিচ্ছি কিন্তু কেন যোগ দিচ্ছি জানি না। কাবা তাওয়াফ করছি কিন্তু কেন করছি জানি না। শয়তানকে পাথর মারছি কিন্তু কেন মারছি জানি না। বেতনভুক্ত মুফতী সাহেবের হজের খুতবা শুনছি কিন্তু কী বলছে বুঝি না। সেলাইবিহীন কাপড় পরে সাফা-মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি করছি, কিন্তু কেন করছি জানি না। শুধু জানি হজ্ব করতে যেতে হবে, গেলে অনেক সওয়াব হবে, দেশে ফিরলে সবাই হাজী সাহেব বলবে ইত্যাদি।

তাহলে কি হজে যাবো না?
বন্ধুরা- হজ্ব ইসলামের অবশ্য পালনীয় একটা ফরজ বিধান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং কাউকে হজে যেতে নিরুৎসাহিত করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি শুধু এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে, রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের যুগে যেভাবে হজ্ব অনুষ্ঠিত হতো, যে লক্ষ্যে হজ্ব অনুষ্ঠিত হতো, ঐ হজ্ব আর বর্তমানের এই হজ্বে আকাশ পাতাল পার্থক্য। বর্তমানে চলছে প্রাণহীন, উদ্দেশ্যহীন, আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব হজ্ব। পক্ষান্তরে প্রকৃত ইসলামের হজ্ব ছিল জীবন্ত, প্রাণবন্ত, গতিশীল ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটা আমল। এই জাতি যেদিন হজের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবে এবং হজের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারবে, সেটা হবে সত্যিকারের মকবুল হজ। প্রশ্ন হলো- সেই মকবুল হজ কীভাবে ফিরে আসবে?

হ্যা, পাঠক- সেই প্রকৃত ইসলামের জীবন্ত হজকে ফিরে পাবার উপায় একটাই, পুরো জাতিকে পুনরায় তওহীদের ভিত্তিতে একজন ইমামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যেদিন মুসলিম জাতি হবে একটা, নেতা হবেন একজন, হুকুম চলবে আল্লাহর- সেদিন এক হজেই পুরো উম্মাহর চেহারা পাল্টে যাবে ইনশা’আল্লাহ। কিন্তু সেই বিরাট লক্ষ্য অর্জনে জান-মাল দিয়ে সংগ্রামে নামতে আমরা কি প্রস্তুত? আমাদের হাজী সাহেবরা কি প্রস্তুত? প্রশ্ন রেখে গেলাম। [যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৬২১৪৩৪২১৩, ০১৭৮৩৫৯৮২২২]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...