হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মো’মেনের সম্মান কাবার ঊর্ধ্বে: তারা কীভাবে অন্য জাতির গোলাম হতে পারে!

এম আর হাসান:
আল্লাহ বলেছেন, মো’মেনের সম্মান কাবার ঊর্ধ্বে। কোর’আনে সব খানে শুধু মো’মেনের জন্য পুরস্কার, মো’মেনের জন্য জান্নাত, মো’মেনের জন্য অনাবিল ও চিরশান্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে। মহান আল্লাহ মো’মেনকে পৃথিবীর নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব দেবার ওয়াদা করেছেন (সুরা নুর- ৫৫), মো’মেন কখনো পরাজিত হবে না। সব জায়গায় জয়ী হবে (সুরা ইমরান-১৩৯), এবং স্বয়ং আল্লাহ মো’মেনের অভিভাবক (সুরা বাকারা- ২৫৭)।

এবার একটা প্রশ্ন সবার কাছে বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বে তথাকথিত মুসলিম জাতির কাছে- এই যদি হয় আল্লাহর ওয়াদা, তাহলে বর্তমান বিশ্বের মুসলিম জাতি যারা অন্য জাতির গোলামী করছে, যাদের দুনিয়াময় অপমান, লাঞ্ছনা, অবহেলা, অত্যাচারের সীমা নেই তারা কিভাবে মোমেন হতে পারে? তাহলে কি আল্লাহর ওয়াদা মিথ্যা?? নাউজুবিল্লাহ।

যে মো’মেনকে আল্লাহ কাবার ঊর্ধ্বে সম্মান দিয়েছেন তারা কিভাবে ইহুদী খ্রিস্টানের পায়ের তলার গোলাম হতে পারে?? রসুল কি কখনো এই গোলাম জাতির নেতা হতে পারেন? অবশ্যই নয়। আল্লাহর ওয়াদা মিথ্যা হতে পারেনা। আল্লাহর রসুলও কখনো গোলাম জাতির নেতা হতে পারেন না। তাহলে একটাই কারণ থাকতে পারে। সেটা হলো এই জাতি মো’মেন নয়। তৃতীয় কোনো কারণ নেই।

রসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের বয়স মাত্র ৬০/৭০ বছর। এর মানে কি? রসুলের উম্মতের হায়াত ৬০/৭০ বছর? অন্যান্য সব ধর্মের মানুষও তো ৬০/৭০ বছর বাঁচে। তাহলে রসুল তাঁর উম্মতের ব্যাপারে এই সামান্য কথা বললেন কেন? রসুলের ইন্তেকালের ৬০/৭০ বছর পর তাঁর নিজ হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদী তাঁর প্রকৃত শিক্ষা ও উদ্দেশ্য (দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম) ভুলে গিয়ে সাম্রাজ্য দখল ও ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়ল। তখন থেকে উম্মতে মোহম্মদীর মৃত্যু হলো। তাই রসুলের উম্মতের বয়স ৬০/৭০ বছর। সাহাবীদের বুকের তাজা রক্তে, তাদের ধন-সম্পদের বিনিময়ে যে জীবনব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা করে গেলেন সেটার উপর লুটে পুটে খেতে বসল এই জাতি।

দীন প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম ত্যাগ করার ফলে আল্লাহর দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী এই জাতি হয়ে গেল অন্য জাতির পায়ের তলার গোলাম। দুনিয়াময় তাদের জন্য রয়েছে অপরিণাম দুঃখ, দুর্দশা, অত্যাচার, নির্যাতন আর আখিরাতে আযাবুন আলিমা অর্থাৎ মহাশাস্তি। আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর রাস্তায় অভিযানে বের না হও তাহলে তিনি তোমাদের কঠিন শাস্তি দিবেন, তোমাদের উপর অন্য জাতি চাপিয়ে দিবেন। তোমরা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (সুরা তওবা ৩৯)। সত্য প্রতিষ্ঠার এই সর্বাত্মক সংগ্রাম ত্যাগ করার ফলে আল্লাহর গজবের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা জেহাদের মাঠ থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তারা আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরবে (সুরা আনফাল ১৬)। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ আর কোনো কাজের শাস্তি এত কঠোর করেননি। আবার সবচেয়ে বড় পুরস্কারও এই দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যারা শহীদ হবেন তাদের জন্য রয়েছে। শহীদের চাইতে বড় পুরস্কার ইসলামে কোনো কাজের জন্য দেয়া হয়নি। বিনা হিসাবে সর্বোচ্চ জান্নাত।

তাহলে আমাদের কি করণীয় তা আপনারাই বিবেচনা করুন। যে কাজের পুরস্কার সবচেয়ে বড় এবং যে কাজ ত্যাগ করার শাস্তিও সবচেয়ে বড় সেই কাজটাই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়?

আল্লাহর রসুল বলেছেন যে বা যারা আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে অথবা শুধু মুখ ফিরিয়ে নেবে সে বা তারা আমার কেউ নয়, আমিও তাদের কেউ নই। সেই সুন্নাহ কি? শুধু দাড়ি, টুপি, জোব্বা, তসবিহ তাহলীল? কখনোই নয়। ব্যক্তিগত এসব কাজের জন্য রসুল (সা.) কখনো তাঁর উম্মাহকে বাধ্য করবেন না এবং উম্মাহকে দল থেকে বাদও দিবেন না। রসুলের প্রকৃত সুন্নাহ হচ্ছে তাঁর কর্মপদ্ধতি অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই সুন্নাহ ত্যাগ করলে জাতি আর উম্মতে মোহাম্মদী থাকে না।
পবিত্র কোর’আনে আর কোনো আমল করলে এত বড় পুরস্কার দেয়ার কথা কোথাও নেই। আবার একই সাথে আর কোনো কাজ ত্যাগ করলেও এত বড় শাস্তির কথা নেই।

দুনিয়াময় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদীর একমাত্র লক্ষ্য। মানবজাতির জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেই তবে রসুলের অসমাপ্ত কাজ পূর্ণ হবে। এই কাজ না করে যত আমল করা হোক না কেন সব বৃথা। ময়লা আবর্জনার মতো আল্লাহ তা হাশরের ময়দানে উড়িয়ে দেবেন। এটা আমার কথা নয় স্বয়ং আল্লাহর কথা। (সুরা ফোরকান ২৩)।
এই জন্যই রসুল (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এমন সময় আসবে যখন আমার উম্মতের তাহাজ্জুদ হবে ঘুম নষ্ট করা আর রোজা রাখা হবে, না খেয়ে থাকা। এখনই সেই সময়। যেখানে রোজা ও তাহাজ্জুদের মতো এত বড় দুইটা আমল বৃথা সেখানে অন্য সব আমল কিভাবে কবুল হতে পারে? বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রেরই তা বোধগম্য হবার কথা। এই জাতির লানত এই পর্যায়ে গেছে যে এই বোধশক্তিটুকু পর্যন্ত লোপ পেয়েছে। তারা আসল কাজ বাদ দিয়ে নফল নিয়ে নিজেরা নিজেরা হানাহানি করে মরছে।

এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। প্রকৃত মো’মেন এবং প্রকৃত উম্মতে মোহম্মদী হবার ইচ্ছেও আপনাদের একান্ত নিজেদের। সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রহণ করে সর্বোচ্চ শাাস্তির হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর দায়িত্বও একান্তই আপনাদের।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...