Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

স্বর্ণযুগের শিক্ষক বর্তমানে মূর্খ


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

bishesh-kolamরিয়াদুল হাসান:

জ্ঞান বনী আদমের সম্পদ:
স্রষ্টা আদমকে সৃষ্টি কোরে সব জিনিসের নাম শেখালেন (কোর’আন- আল বাকারা ৩১)। এর অর্থ হোল তিনি যা সৃষ্টি কোরেছেন সেই সব জিনিসের ধর্ম, কোন জিনিসের কি কাজ, কেমন কোরে সে জিনিস কাজ কোরে ইত্যাদি, এক কথায় বিজ্ঞান, যে বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি কোরে তিনি তাঁর বিশাল সৃষ্টি কোরেছেন, মানুষকে সেই বিজ্ঞান শেখালেন। এই কথা বোলে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষ জাতি সৃষ্টির প্রত্যেক জিনিস সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কোরবে। আজ থেকে হাজার বছর আগে মানুষ যে সব জিনিসের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ কোরেছিল অর্থাৎ নাম জেনেছিলো, আজ তার চেয়ে বহু বেশি জিনিসের সম্বন্ধে জানে- আজ থেকে বহু বছর পর সে আরো বহু জিনিস সম্বন্ধে জানবে। এই জ্ঞান আল্লাহই মানুষকে দান কোরবেন, তবে সেজন্য মানবজাতিকে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা কোরতে হবে। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে তাই জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হোচ্ছে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডার। জ্ঞানের এই বিপুল সঞ্চয় এক দিনে সৃষ্টি হয় নি। ধাপে ধাপে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জ্ঞানপিপাসু মনীষীগণের গবেষণার উপর ভিত্তি করেই মানবজাতি আজকের এই অবস্থানে এসেছে। জ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কোরেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার কোরে আছে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী। পাঠাগারের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হোয়ে আছে মোসলেম জাতির জ্ঞানসাধনার ইতিহাস। সে সময় মোসলেম নামক এই জনসংখ্যাটি আজকের মতো সকল জাতির গোলাম ছিলো না, তারা ছিলো শিক্ষকের জাতি, যে জাতির নির্মাণ করা ভিত্তির উপর আজকের প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে। মোসলেম জাতির এই পদস্খলন কেন হোল তা বক্ষ্যমান নিবন্ধের আলোচ্য না হোলেও প্রাসঙ্গিকতার স্বার্থে কিছুটা স্পর্শ কোরে যাচ্ছি।

শিক্ষায় সমৃদ্ধির নেপথ্যে:

যে সময়টার কথা বোলছি তখন শেষ নবীর (দ:) উম্মাহর অবস্থা কি রকম তা মনে রাখা দরকার। নবী (দ:) তাঁর উম্মাহর উপর সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার যে দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ কোরে চলে গিয়েছিলেন, যে কর্তব্যের কথা মনে রেখে তা সম্পন্ন করার সংগ্রাম ষাট-সত্তর বছর পর্যন্ত চালিয়ে যাবার পর, পৃথিবীর একটা বিরাট অংশের উপর আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থা, দীন প্রতিষ্ঠা কোরে সেখানে শান্তি স্থাপন করার পর হঠাৎ তারা ভুলে গেলেন তাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী? তখন যদি তারা উদ্দেশ্য ভুলে না যেতেন, সংগ্রাম চালিয়ে যেতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাকি পৃথিবীও এই জীবন-বিধানের মধ্যে চলে আসতো ও সমস্ত পৃথিবীতে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠিত হতো, নবীর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ইতিহাস এই যে, তা হয় নি। উদ্দেশ্য তারা ভুলে গিয়েছিলেন এবং সংগ্রাম, নবীর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ তারা ত্যাগ কোরেছিলেন এবং পৃথিবীর অন্যান্য রাজা-বাদশা, সম্রাটদের মতো রাজত্ব কোরতে শুরু কোরেছিলেন। আল্লাহ যে এ অপরাধের ক্ষমা করেন নি তা পরবর্তী ইতিহাস। কিন্তু সর্বপ্রধান কর্তব্য ভুলে গেলেও তারা তাদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে যথাসাধ্য কোর’আন ও নবীর (দ:) অন্যান্য সুন্নাহ মোতাবেক চালাতে চেষ্টা করতেন এবং ওর ফল হিসাবে জীবনের নানা দিকে সমৃদ্ধ হোয়ে উঠেছিলেন। ঐ প্রক্রিয়ায় আল্লাহ ও নবীর (দ:) নির্দেশে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণে নিজেদের নিয়োজিত কোরেছিলেন এবং ফলে জ্ঞানে সর্বপ্রকার শাখায় তারা বিপুল উন্নতি কোরেছিলেন এবং এত উন্নতি কোরেছিলেন যে, পৃথিবীর শিক্ষকের আসন দখল কোরে নিয়েছিলেন। তখন ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতো এই উম্মাহর বিদ্যালয়গুলিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য। ইউরোপীয়ানরা এদের কাছ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষা কোরে দেশে ফিরে যেয়ে সেগুলোর চর্চা কোরে উন্নত হোতে আরম্ভ কোরল আর এদিকে এই উম্মাহর ধর্মীয় পণ্ডিতরা ফকিহ মোফাস্সের মোহাদ্দেসরা এই জীবন-বিধানটার বিভিন্ন আদেশ-নিষেধগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে জাতিটাকে বহু মাজহাবে (দলে) ফেরকায় বিভক্ত কোরে শুধু যে এর ঐক্য বিনষ্ট কোরে দুর্বল কোরে দিলেন তাই নয়, সবচেয়ে মারাত্মক, সর্বনাশা মতবাদ প্রচার কোরলেন এই যে, ‘ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান অর্জন আবশ্যকীয় নয়, ফরদ নয়’। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অতি বিশ্লেষণের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে তাদের দৃষ্টি এত অন্ধ হোয়ে গিয়েছিলো যে, ‘ধর্মীয়’ বোলতে যে কোর’আন-হাদিস বোঝায় সেই কোর’আন-হাদিসেই সর্বরকম জ্ঞানকেই-জ্ঞান বোঝান হোয়েছে এবং কোর’আন-হাদিস নিয়ে অতি বিশ্লেষণ, মতান্তর, তর্কাতর্কি, বাহাসকে শুধু নিষেধ নয় একেবারে কুফরী বলা হোয়েছে তা তারা দেখতে পান নি [হাদিস- আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে মোসলেম, মেশকাত]। উম্মাহর সর্বনাশের যেটুকু বাকি ছিলো, এই মতবাদে সেটুকু সম্পূর্ণ হোয়ে গেলো- অল্প দিনের মধ্যে পৃথিবীর শিক্ষক জাতিটি পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানহীন ও আরও কিছু পরে একেবারে নিরক্ষরে পর্যবসিত হোল।

মানবজাতির জ্ঞানতীর্থ:

বলা হোয়ে থাকে, পৃথিবীর বুকে সভ্যতার আলোকবর্তিকার মূল হোচ্ছে ‘কলম’, তার পরের ধাপ হোচ্ছে গ্রন্থ প্রণয়ন, গ্রন্থাগার নির্মাণ, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতি। কোর’আনের প্রথম বাক্যটি হোচ্ছে ‘পড় তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। …যিনি তোমাকে কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।’ আর রসুলাল্লাহ বোলেছেন, ‘যে জ্ঞানার্জন করে তার মৃত্যু নেই’, ‘চীনে গিয়ে হলেও জ্ঞান অনুসন্ধান কর’, ‘প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা অবশ্য কর্তব্য’, ‘সমগ্র রাত্রি এবাদত অপেক্ষা এক ঘণ্টা জ্ঞান চর্চা করা উত্তম’, ‘যে জ্ঞানীকে সম্মান করে সে আমাকে সম্মান করে’, ‘জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র’ প্রভৃতি। নবী (দ:) এর কথার ফলাফল হিসেবে তাঁর জীবদ্দশাতেই আরম্ভ হোয়ে পরবর্তীতেকালে বাগদাদ, মিশরের কায়রো সালেনা ও কর্ডোভায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল।
মহানবীর সাহাবী আলী (রা:) প্রশাসন, বিদ্রোহ দমন প্রভৃতি প্রয়োজনে কর্মব্যস্ত থাকলেও তার চেষ্টায় কুফার জামে মসজিদ জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত হোয়েছিল। দেশ-বিদেশের ছাত্ররা সেখানে ছুটে যেত জ্ঞানার্জনের জন্য। আলী (রা:) স্বয়ং সেখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন (মুজীবর রহমানের লেখা আলী পুস্তকের ৩৬০ পৃষ্ঠা, ছাপা ১৯৬৮)। রসুলাল্লাহর সাহাবী আব্দুল্লাহ এবনে আব্বাস (রা:) যখন পরলোকগমন করেন তখন এক বড় উট বোঝাই বই রেখে গিয়েছিলেন। গবেষকদের চিন্তা কোরতে হবে তখন বই সংগ্রহ করা এ যুগের মতো সহজ ছিলো না, কারণ সবই ছিল হাতের লিখা। (মাওঃ নূর মুহাম্মদ আজমীর ‘হাদিসের তত্ত্ব ও ইতিহাস’ পুস্তকের ৮১ পৃষ্ঠা, ১৯৬৬)। আরবের বিখ্যাত বক্তাদের সারা জীবনের সমস্ত বক্তৃতাগুলো লিখে নেয়ার মতো লেখক ও প্রেমিকের অভাব ছিলো না। লিখতে লিখতে কাগজ ফুরিয়ে গেলে জুতার চামড়াতে লেখা হোত। তাতেও সঙ্কুলান না হোলে তালুতে লিখতেও ভ্রুক্ষেপ ছিলো না (দ্র: ঐ গ্রন্থ পৃষ্ঠা ৮৫)। সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বক্তার মুখ এবং মস্তিষ্ক নিঃসৃত বাণী লিখে সংগ্রহ কোরেছিলেন আবু আমর ইবনুল আ’লা যা একটি ঘরের ছাদ পর্যন্ত ঠেকে গিয়েছিল। (প্রমাণঃ Encyclopaedia of Islam vol-1, p-127) । খলিফা মামুনের বিরাট গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন মুহাম্মদ এবনে মুসা আল খারেজমি। ইনিই পৃথিবীতে বীজগণিতের জন্মদাতা। তৎকালীন যুগে গ্রন্থাগারিক পদটি পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য ছিলো। তাঁকে অনেক পাণ্ডিত্য এবং স্মরণশক্তির অধিকারী, চরিত্রবান, মিষ্টভাষী ও পরিশ্রমী হোতে হোত। সে সময় পৃথিবীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ। গণিতের শূন্যের (০) জন্মদাতাও তিনি। ‘হিসাব আল জাবাব ওয়াল মুকাবেলা’ গ্রন্থ তাঁর বিরাট অবদান। তিনি বিখ্যাত জ্যোতির্বিদও ছিলেন। (সমরেন্দ্র সেনের লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬, ১৩৬৪)।
আল মুকাদ্দাসি একজন ঐতিহাসিক এবং পর্যটক। তিনি বলেন- আদাদ্ উল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরি কোরেছিলেন, যে অট্টালিকাটির তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিলো না। যা দেখলে নিরক্ষর শিক্ষিত যে কোনো জন মুগ্ধ না হোয়ে পারতো না। ভবনটির ভেতরে অগভীর জলের নহর দিয়ে সাজানো ছিলো, উপরে ছিলো গম্বুজ আর অট্টালিকাটি উদ্যান দিয়ে ঘেরা ছিলো, তৎসংলগ্ন একটি হ্রদ ছিলো। পাঠকদের সুবিধার জন্য একটি কাঠের মাচান বা কাঠের তাক একেবারে নীচে থেকে উপর পর্যন্ত সাজান ছিলো। মেঝেতে কার্পেট সাদৃশ্য বিছানা বিছানো থাকতো। আলোর ব্যবস্থাও ছিলো। সমস্ত পুস্তকের ক্যাটালগ ছিলো। সেটা ছাড়াও সেখানে আরও গ্রন্থাগার ছিলো। (Pinto Ogla প্রণীত The Libraries of the Arabs During the Time of the Abbasids, Islamic Culture, April 1929.) । গ্রন্থ বা পুস্তক সংগ্রহ মোসলেমদের জাতীয় স্বভাবে পরিণত হোয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকতো, কোনো বিদেশী এলেই তাঁর কাছে যে বইপত্রগুলো আছে সেগুলো নিয়ে অজানা তথ্যের বইগুলো সাথে সাথে অনুবাদ কোরে তার কপি তৈরি কোরে তাঁর বই ফেরত দেয়া হতো আর তাঁদের অনিচ্ছা না থাকলে তা কিনে নেয়া হোত।[ দ্র: Guide to the Use of Books and Libraries (Megrow Hill, 1962), c„ôv 12]  ।
এগুলি মোসলেমদের জ্ঞানচর্চার কিছু নমুনা মাত্র। কালের পরিক্রমায় এবং আগ্রাসনকারীদের হস্তক্ষেপে ইতিহাসের যে বিকৃতি হোয়েছে তার কোনো সীমারেখা নেই। কিন্তু তবুও এই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার তথ্যগুলোকে বিলুপ্ত করা যায় নি। আজও এই ইতিহাসগুলো মোসলেমদের প্রকৃত অতীতের নিদর্শন হোয়ে মাথা উঁচু কোরে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে মোসলেমরা ছিলো শিক্ষকের জাতি। আজ যেমন নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে হীনমন্যতায় ডুবে থাকা এই মোসলেম নামধারী জাতির ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষা অর্জনের আশায় পাশ্চাত্যে পাড়ি জমায়, তেমনি তৎকালীন সময়ে শুধু ইউরোপ-আমেরিকা নয় বরং সমস্ত পৃথিবীর ছেলেমেয়েরা মোসলেমদের কাছে যেত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। তখন শিক্ষা কোন পণ্য ছিলো না। অধ্যাপকগণ কোন পার্থিব স্বার্থের বশবর্তী না হয়ে মানবতার সেবা করার অভিপ্রায়ে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে মানবজাতির কাছে উপস্থাপন করতেন, তারা বিশ্বাস কোরতেন, তাদের লব্ধ জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের উপর আমানতস্বরূপ। ছাত্ররাও তাদেরকে দেবতুল্য জ্ঞান কোরতেন। শিক্ষকের মর্যাদা ছিলো সকলের ঊর্ধ্বে। তাঁরা সুবিশাল শ্রেণিকক্ষের সম্মুখভাগে মিম্বরের মতো উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতেন এবং ছাত্রদের প্রশ্ন কোরে উত্তর শুনতেন। দেশ-বিদেশের ছাত্রসংখ্যা এত বেশি থাকতো যে উচ্চকণ্ঠের ঘোষক চিৎকার কোরে অধ্যাপকদের কথা জানিয়ে দিতেন।

মূর্খতার অন্ধকারে প্রত্যাবর্তন:

আজ সারা পৃথিবীতেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তথা জ্ঞান একটি পণ্যবিশেষ, আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হোচ্ছে ব্যবসাকেন্দ্র। আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে যারা উচ্চমূল্যে সার্টিফিকেট বিক্রি কোরে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থে পরিণত করা হোয়েছে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্র সেসব দেশে যায় উচ্চশিক্ষা নিতে। এই দেশগুলি ঔপনিবেশিক যুগে যেমন বহুভাবে পৃথিবীকে শোষণ কোরেছে, আজও তেমনি কোরে যাচ্ছে, সঙ্গে যোগ হোয়েছে কিছু অভিনব পদ্ধতি। ইংল্যান্ড আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া কানাডা ইত্যাদি দেশগুলির জাতীয় আয়ের একটি বিরাট অংশ আসে গরীব দেশগুলির ছাত্রদের পকেট থেকে, পাসপোর্ট, ভিসা, টিউশন ফী ইত্যাদি প্রক্রিয়ার ফাঁদে ফেলে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। সেখানে পড়তে গিয়ে পার্ট টাইমে ছাত্ররা হোটেলে পেঁয়াজ কাটে, থালা বাসন ধোয়, ড্রেন পরিষ্কার করে, ট্যাক্সি চালায় আর নিজেদের জীবন ধন্য মনে করে। তারা পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে ডিগ্রি আর নিজ জাতি সম্বন্ধে সীমাহীন হীনম্মন্যতা নিয়ে দেশে ফেরেন, আর সর্বদিকে পশ্চিমা দেশগুলির উৎকর্ষের দিকে চেয়ে ভক্তিতে গদগদচিত্ত হোয়ে থাকেন। নিজ জাতির অতীত ইতিহাস ও আত্মপরিচয় ভুলে যাওয়ার কী করুণ পরিণাম!
পাঁচটি বিশ্বধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দেশ ও জনসংখ্যার বিচারে ক্ষুদ্রতম হোচ্ছে ইহুদি জাতি। তাদের সঙ্গে মোসলেম জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধোরছি যা দ্বারা মোসলেম জাতির সার্বিক দেউলিয়াত্ম প্রতীয়মান হয়। ২০১৩ সন পর্যন্ত ৮৫৫ জন লোক সারা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তন্মধ্যে ১৯৩ জন ইহুদি, যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২.৬ ভাগ। অথচ ইহুদির সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ০.২ ভাগেরও কম। অর্থাৎ বর্তমান জনসংখ্যার হিসাবে প্রতি ৫০০ জন ইহুদির একজন নোবেল বিজয়ী।
আর মোসলেমদের মধ্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০ জন, যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর মাত্র ১.০ ভাগ। অথচ সারা বিশ্বে মোট মোসলেমের সংখ্যা ১৪০ কোটি। যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ। মোসলেমদের মধ্যে ৬ জন শান্তিতে, ২ জন সাহিত্যে, ১জন পদার্থ বিদ্যায়, ১জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ (১৫৩-তম) বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮০,৫১,২০০ (৯৬-তম) কিন্তু ইসরাইলকে ঘিরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের মোট স্থলভাগ ২২৩,৬০৮,২০৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্ব বিবেচনায় ১.৪ কোটি ইহুদির কাছে ১৪০ কোটি মুসলিম হাতের পুতুলের মতো অসহায়। হিসাব করে দেখুন: ১ জন ইহুদি সমান কতজন মোসলেম। (তথ্য: ড. মোহাম্মদ আমীন)।
আল্লাহ ও তাঁর রসুল জ্ঞানার্জনের উপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন তা উপলব্ধি কোরেই তৎকালীন মোসলেম জাতিটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যা বর্তমানের প্রবল প্রতাপ ইহুদি-খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জাল গোপন করতে সদা সচেষ্ট। শাসক শ্রেণির এই ইতিহাস ভোলানোর ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে মোসলেম জাতির সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকাংশই হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে। যে মোসলেম জাতির গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ওপর ভিত্তি কোরে আধুনিক বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে সেই মোসলেম জাতিকেই আজ বর্বর, অশিক্ষিত, অজ্ঞ, কুসংস্কারচ্ছন্ন, পশ্চাৎপদ জাতি বোলে প্রচার করা হোচ্ছে। শত শত চক্রান্ত, ইতিহাসের বিকৃতি বা বিলুপ্তি সাধন করার পরও আজকে মোসলেম জাতির যেটুকু প্রকৃত ইতিহাস মৃতপ্রায় হোয়ে বেঁচে আছে সেটুকুই মোসলেমদের সোনালী অতীতের প্রতিনিধিত্ব করে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...