Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

পশ্চিমে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা গৃহীত হলো, প্রাচ্যে কেন হচ্ছে না? পর্ব-২


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

পর্ব-২

Untitled-3রিয়াদুল হাসান
৩. ঔপনিবেশিক যুগে ধর্ম নির্মূলের চেষ্টা নয়, রাজনৈতিক অপব্যবহার করা হয়েছে:

ধর্মকে ব্রিটিশরাজ কিন্তু ভারতবর্ষ থেকে একেবারে নির্মূল করতে চায় নি, তারা কেবল ধর্মকে তাদের শাসননীতির হাতিয়ারে পরিণত করেছিল। তারা মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে মুসলিমদেরকে চরম মূর্খতা ও অন্ধত্বের মধ্যে নিপতিত করে রাখতে চেয়েছিল এবং হিন্দুদেরকে পাশ্চাত্য ইংরেজি শিক্ষা দিয়ে নিজেদের অনুগত কেরানি, আর্দালি, দফতরি তথা চাকরিজীবী চাকরে পরিণত করতে চেয়েছিল। তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নানা ফন্দিতে পূর্বতন শাসক মুসলিমদেরকে হিন্দুদের (সনাতন) থেকে একশত বছর পিছিয়ে দেয়। ১৮১৭ সনে হিন্দুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য হিন্দু কলেজ (প্রেসিডেন্সি কলেজ) প্রতিষ্ঠা করা হয়, ১৮২৪ সনে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় কিন্তু সেগুলোতে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার ছিল না। বহু রক্তের বিনিময়ে, বহু সংগ্রামের পরে ব্রিটিশ যুগে মুসলিমরা নিজেদের শিক্ষালাভের অধিকার প্রাপ্ত হয়। সিপাহী বিদ্রোহেরও ১৮ বছর পর ১৮৭৫ সনে মুসলিমদের জন্য প্রথম কলেজটি স্থাপিত হয় উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে। কলকাতায় নারীদের জন্য প্রথম শিক্ষালয়টি নির্মিত হয় ১৮৫০ সনে বেথুন স্কুল কিন্তু সেখানে মুসলিম নারীদের শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল অপ্রতুল। এর ৮৯ বছর পর দেশবিভাগের কিছুদিন আগে ১৯৩৯ সানে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে মুসলিম নারীরা শিক্ষালাভের মোটামুটি সুযোগ লাভ করেন। ধর্মান্ধতার দরুন হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজ নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় উপমহাদেশের নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল দারুণভাবে।

৪. খ্রিষ্টধর্মের ব্যর্থতা বনাম সনাতন-ইসলাম ধর্মের সফলতার ইতিহাস:

যাদের অতীত আছে তাদের ভবিষ্যৎও আছে। খ্রিষ্টানদের অতীত বলে কিছু ছিল না কারণ ঈসা (আ.) এর দ্বারা কোনো স্বর্ণযুগ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইহুদি ধর্মব্যবসায়ীদের প্রবল বাধার কারণে তাঁর শিক্ষা বিকশিত হতে পারে নি, ফলে তাঁর মিশন অসমাপ্ত থেকে যায়। তিনি তিনবছর তওহীদ প্রচারের পর আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন। তাঁর অনুসারীরাও ব্যর্থ হন স্বভাবতই। সুতরাং খ্রিষ্টান ধর্মের কোনো অতীত গৌরব নেই, তাই তারা সহজেই জাতীয় জীবন থেকে ধর্মকে পরিত্যাগ করতে পেরেছে। ধর্মের সংস্কার করে, জাতির মধ্যে পুনর্জাগরণ সৃষ্টি করে ধর্মের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার কোনো প্রয়াস তারা করতে পারে নি, কেননা অতীত থেকে কোনো উদাহরণ তাদেরকে সেই প্রেরণা যোগায় নি। তবে ভবিষ্যতে ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার এসে বিশ্বময় শান্তি (The Kingdom of Heaven) প্রতিষ্ঠা করবেন এমন বিশ্বাস খ্রিষ্টানরা যেমন পোষণ করে, মুসলিমরাও পোষণ করে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও বিশ্বাস করে যে আবার সত্যযুগ প্রতিষ্ঠিত হবে, রামরাজত্বের শান্তি আবার ফিরে আসবে এবং তারাই বিশ্বের উপরে কর্তৃত্বশীল হবে। কিন্তু বিশ্বাস করলে কী হবে, ভবিষ্যতের একটি বিষয়কে নিয়ে যত রাজনীতিই করা হোক, যত ক্রুসেডই বাঁধানো হোক, সেটার ভিত্তিতে রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু মুসলিমদের একটি মহান সুখকর স্বর্ণোজ্জ্বল, শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ অতীতকাল আছে। জীবনের প্রতিটি শাখায় তারাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ছিল এ কথা মুসলিমরা ভুলবে কী করে? তাই তাদের ধর্মবিশ্বাস যতদিন থাকবে, আবার সেই সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার জন্য আকুলতা তাদের কিছু অংশের মধ্যে হলেও ক্রিয়াশীল থাকবে। তারা বিদ্রোহ করবেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থেও আছে সত্য-ত্রেতা-দ্বাপর যুগে শাস্ত্রের শাসনে সৃষ্টি হওয়া সুবিচার, নিরাপত্তা, প্রাচুর্য আর শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থার হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। কিন্তু সেটা ছিল সুদূর অতীত, আর মুসলিমদের স্বর্ণময় ইতিহাসটা তখনও তরতাজা, হারানোর শোকটাও অমলিন।

৫. ব্রিটিশ রাষ্ট্রনীতি প্রযুক্ত ধর্মান্ধতা, সংশয়বাদ ও সাম্প্রদায়িকতার আবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা চর্চার প্রতিবন্ধক:

ব্রিটিশরা মুসলিমদের এই চেতনাটিকে মেরে ফেলার জন্যই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিল। মাদ্রাসার মাধ্যমে তারা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। পাশাপাশি সনাতন ধর্মীদের মধ্যেও বিস্তার ঘটিয়েছিল মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব। ১২০০ বছর ধরে (মুহাম্মদ বিন কাশেম থেকে টিপু সুলতান পর্যন্ত) ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু ব্রিটিশদের কূটনীতির কারণে জন্ম নেয় সাম্প্রদায়িকতার শকুন যা ধর্মীয় দাঙ্গা বাঁধিয়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু-মুসলিমের শব ভক্ষণ করেছে।
ব্রিটিশ আসার আগে ভারতে সাম্প্রদায়িক কোনো দাঙ্গা হয়নি এটা এক ঐতিহাসিক সত্য। এমনকি ব্রিটিশের আগে ভারতবর্ষ ‘হিন্দু-মুসলিমের’ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল না। ইউরোপে যখন জাতিরাষ্ট্রের ধারণা বিকাশমান, তখন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের গোড়াপত্তন করে। ভারতবর্ষ হিন্দু ও মুসলমান, এই দুই বৈরী সত্তায় বিভাজিত, এটা উপনিবেশবাদী ইংরেজের প্রচারিত মত।
ব্রিটিশ এর সূত্র ধরে শেষ দাবার চালটা দিয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে দেশবিভাগ ঘটিয়ে। সেই কুফল আজও আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। যতই ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা করা হোক, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা মোটেও বিদূরিত হয়নি, কেবল আত্মকেন্দ্রিকতার দরুন তা কিছুদিন চাপা পড়ে থাকে, আবার স্বার্থবাজ রাজনীতিবিদরা ভোটের জন্য সেই নিভু নিভু আগুনকে উস্কে দেয়। সাম্প্রদায়িকতার জন্ম ও প্রতিপালন করে যে বিষবৃক্ষটি ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের মাটিতে বড় করে রেখে গেছে, সেই বৃক্ষ থেকে পরধর্মসহিষ্ণুতা, ধর্মনিরপেক্ষতা আশা করা কেবল ব্রিটিশদের যারা পদলেহনকারী চাটুকার তাদের পক্ষেই সম্ভব। যারা নিজেদের স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলে যায়, আজীবন দাস থাকা তাদের পক্ষেই সম্ভব।
যেটা বলছিলাম, ব্রিটিশরা কিন্তু ভারতবাসীকে ধর্ম ভোলাতে চায় নি, চেয়েছে দুটি বিপরীতমুখী শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা জাতিকে দ্বিধাগ্রস্ত, বিভক্ত করে ফেলতে। তারা মাদ্রাসা ও সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করে হিন্দু ও মুসলিম বিভাজন সৃষ্টি করে গেছে। ধর্মের নামে অধর্মের শেকড় এ জাতির চেতনার গভীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে গেছে। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম হয়েছে সেখানেও ধর্মীয় মৌলবাদকে অবলম্বন করেছে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়। এখন গণতন্ত্রের যিকির যতই করা হোক লাভ নেই। ১২৮ বছরের ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেস তাই ব্যর্থ হয়ে ধর্মভিত্তিক বিজেপি এখন ভারতের ক্ষমতায়। ফলে হিন্দু মৌলবাদী দলগুলো হিন্দুত্ববাদের জাগরণের চেষ্টা করছে, যার মূল সুরই হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ। সনাতন ধর্মেরও আছে সোনালি অতীত, সত্যযুগের ইতিহাস, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। অবশ্য সব ধর্মের মতো সেখানেও কুসংস্কারের দূষণ আছে, তথাপি তারা ইউরোপের মতো দেউলিয়া না। তাদের অনেক ধর্মগ্রন্থ আছে যাতে জাতীয় জীবন পরিচালনার জন্য দিক-নির্দেশনা, বিধি বিধান আছে। তাই সনাতনধর্মীরাও দৃঢ় প্রত্যয়ী হচ্ছেন যে অন্তত জীবনব্যবস্থা ও সংস্কৃতির জন্য তাদের পাশ্চাত্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। চূড়ান্ত বিচারে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কেবল বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের কাছে কাম্য হতে পারে কেননা তাদের উভয়েরই ধর্মের সামষ্টিক জীবনবিধান নেই, আছে কেবল আত্মিক উন্নতির দিক-নির্দেশনা। তথাপি তারা রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে এখনো ধর্মকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। উদাহরণ রোহিঙ্গা নির্যাতন ও প্যারিস হামলা। সম্প্রতি প্যারিসে আই.এস-হামলার পর ব্রিটেনে মুসলিম বিদ্বেষ শতকরা ৩০০% বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পত্রিকায় এসেছে। এই বিদ্বেষকেই আরো বৃদ্ধি করে ডানপন্থী দলগুলো জনপ্রিয়তার পারদ ঊর্ধ্বে তোলার চেষ্টা করেছে। শরণার্থী মুসলিমদেরকে দেশে ঢুকতে না দেওয়া, সন্ত্রাসী সন্দেহে অভিবাসী মুসলিমদের জীবনকে সমস্যা-সংকুল করে তোলাই তাদের এখনকার রাজনৈতিক কর্মসূচি। বাইবেলে ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, হাজার বছরের শিরোভাগে ঈসার (আ.) পুনরাগমন হবে এবং তিনি ইবলিসকে বেঁধে রেখে এক হাজার বছর শান্তিতে দুনিয়া শাসন করবেন (রিভিলেশান ২০:১-৫)। এজন্য প্রতি মিলেনিয়ামের প্রারম্ভে তারা যিশুর আবির্ভাবের সম্ভাবনায় ক্রুসেডের সূচনা করে। ইরাক আক্রমণের আগে জর্জ বুশ ক্রুসেডের ঘোষণা দিয়েছিলেন সে কথা সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন। সবার মুখে এখন কেবল ধর্ম-ধর্ম-ধর্ম।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ