Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

অধঃপতিত জাতির মুক্তির পথ দেখিয়েছেন- এমামুযযামান


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

কাজী আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ:

Photography -Manun Barisal (151)-1
দুনিয়াময় এই যে মুসলিম নামক ১৬০ কোটির জনসংখ্যা, যাদেরকে আল্লাহ কোর’আনে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলেছেন, যাদেরকে আল্লাহ মনোনীত করেছেন দুনিয়াময় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আজ তারা নিজেরাই অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ, হানাহানি, রক্তপাত, দারিদ্র্য, অশিক্ষা অর্থাৎ চরম অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সর্বদিক থেকে সর্বনিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ তাদের আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে, কোর’আনের প্রতি বিশ্বাস আছে, নামাজ পড়ে, হজ্ব করে, দাড়ি, টুপি, পাগড়ী সবই আছে শুধুমাত্র ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত আকিদা (Comprehensive Concept) অর্থাৎ শেষ ইসলামের উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া-প্রশিক্ষণ সম্বন্ধে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এই মহান জাতি আজ আটলান্টিকের তীর থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধ পৃথিবীতে মৃত লাশের মতো পড়ে আছে। তারা এমন কালঘুমে ঘুমিয়েছে যে একে জাগাবার জন্য শক্ত আঘাত ছাড়া উপায় নেই। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তাঁর লিখিত এ ইসলাম ইসলামই নয়, ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা, ইসলামের প্রকৃত সালাহ, দাজ্জাল?-ইহুদি-খ্রিষ্টান-সভ্যতা! সহ সকল বইয়ে, বক্তব্যে, আলোচনায় জাতির এই কালঘুম ভাঙ্গানোর জন্য শক্ত আঘাত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জানি না, কয়জনের ঘুম ভাঙ্গবে, কয়জনের অন্ধত্ব ঘুচবে। হেদায়াত, পথ-প্রদর্শন নিশ্চয়ই আমার হাতে নয়, আল্লাহ বলেছেন- তা তাঁর হাতে। কাকে তিনি হেদায়াত করবেন, অন্ধত্ব ঘুচাবেন, কাকে নয়, আমি জানি না। আমি শুধু জানি- আল্লাহর শেষ প্রেরিত, শেষ রসুল মোহাম্মদ (সা.) বিন আবদাল্লাহ যে জীবন-ব্যবস্থা, যে দীন আল্লাহর কাছ থেকে এনে মানব জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন, আজকের ইসলাম সেই দীন নয়, যে জাতি তিনি সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন, আজকের মুসলিম নামধারী উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার এই বিরাট জাতিটি সেই জাতিও নয়।
সংস্কৃতিতে একটা কথা আছে- ফলেন পরিচয়তে! গাছের ফল থেকেই তার পরিচয়, শত যুক্তি তর্কে তা বদলানো যাবে না। কাজেই চার পাঁচ লাখ মানুষের সেই ছোট্ট জাতিটির কাজের ফল, আর গত কয়েক শতাব্দী ধরে যে বিরাট জাতিটি শত্রুর গোলামী-দাসত্ব করল, এবং দাসত্ব থেকে আংশিক মুক্তি পাওয়ার পরও যে জাতি স্বেচ্ছায় দাসত্ব করছে, গায়রুল্লাহর এবাদত করছে, এই দু’টোকেই সেই একই জাতি বলে বিশ্বাস করা, একটি সুমিষ্ট আম গাছ আর একটি তিক্ত মাকাল ফলের গাছ, দু’টোকেই একই গাছ বলে বিশ্বাস করা বা যুক্তি-তর্ক দিয়ে তা প্রমাণ করার চেষ্টার মতই নির্বুদ্ধিতা ও নিষ্ফল।’
বুদ্ধি হবার পর থেকেই মাননীয় এমামুযযামানের মনে একটি প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছিল, তখন ঐ সময়ে এই উপমহাদেশসহ প্রায় সমস্ত মুসলিম দুনিয়া কোন না কোন ইউরোপীয়ান জাতির শাসনাধীন অর্থাৎ পাশ্চাত্য খ্রিষ্টান শক্তির দাস ছিল। এই বিশাল জাতিটাকে ইউরোপের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি টুকরো টুকরো করে ভাগ করে এক এক রাষ্ট্র এক এক টুকরো চুষে খাচ্ছিল। তিনি সবার কাছে শুনতেন, বিশেষ করে ওয়াজে মাওলানা মৌলভীদের কাছ থেকে শুনতেন যে ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম, এই জাতিই আল্লাহর কাছে গৃহীত, আর সব দোযখে যাবে। এই জাতিটি, বিশেষ করে এই আলেম মৌলভীরা আল্লাহর অতি প্রিয়, তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তাঁর মনে খটকা লাগতো, তাই যদি হবে, শুধু আমরাই যদি সত্য পথের পথিক হই, তবে আমাদের এই ঘৃণার দাসত্ব কেন? তিনি মৌলভীদের কাছে প্রশ্ন করলে তারা বুঝিয়ে দিতেন- আল্লাহ অন্যদের অর্থাৎ আমাদের খ্রিষ্টান প্রভুদের এই দুনিয়া ভোগ করতে দিয়েছেন এ জন্য যে তাদের পরকালে জাহান্নামে দেবেন আর আমাদের দারিদ্র, অশিক্ষা, আর গোলামীর মধ্যে রেখেছেন এই জন্য যে আমাদের আখেরাত অর্থাৎ পরকালে সুখ দেয়া হবে। কোরআন-হাদীস উল্লেখ করে বুঝিয়ে দিতেন- এই দুনিয়াটা কত খারাপ জায়গা। এর কোন কাজে লিপ্ত না হয়ে, চোখ-কান বুঁজে নামায, রোযা, ইত্যাদি করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলেই পরকালে একেবারে জান্নাতুল ফেরদৌসে জায়গা পাওয়া যাবে। ঐ বয়সে তিনি তাই বুঝলেন। কিন্তু পরে যখন ইতিহাস পড়লেন, তখন দেখলেন যে মহানবীর পর তাঁর সৃষ্ট জাতি পৃথিবীতে ঠিক সেই স্থান দখল করেছিল যে স্থানে আজ আমাদের প্রভু ঐ ইউরোপীয় জাতিগুলি দখল করে আছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক, পার্থিব সম্পদ, শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, নতুন বিষয় অনুসন্ধানে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার গবেষণায়, পৃথিবীর অজানা জায়গায় দুঃসাহসিক অভিযানে তারা যা ছিলেন আজ পাশ্চাত্য জগত তাই হয়েছে। মওলানা- মৌলভী সাহেবেরা যে জবাব দিয়েছিলেন তার মানে এই হয় যে- ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঐ মুসলিমদের আল্লাহ ইহজগত দিয়ে দিয়েছিলেন আখেরাতে জাহান্নাম দেবেন বলে এবং তখনকার ইউরোপীয়ানদের এবং বর্তমানের আমাদের জান্নাত দেবেন বলে।
কিন্তু কোনভাবেই তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না। বার বার কেবলই মনে হচ্ছিল কোথায় যেন কী একটা ভয়ংকর গোলমাল আছে, কোথাও এক বিরাট শুভংকরের ফাঁকি আছে। তাঁর অবচেতন মন থেকে বোধহয় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা পৌঁছে গিয়েছিল- ‘আমাকে বুঝিয়ে দাও! আমাকে বুঝিয়ে দাও! তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির আদর্শ করে যাকে তুমি তৈরি করেছ (কোর’আন- সুরা আল-আহযাব ২১), যার নামে স্বয়ং তুমি আল্লাহ তোমার মালায়েকদের নিয়ে দরুদ ও সালাম পাঠাও (কোরআন- সুরা আল-আহযাব ৫৬), তার জাতি আজ ঘৃণিত দাস কেন? দেখতে পাচ্ছি এরা তোমায় বিশ্বাস করে। তা না করলে তো আর নামায পড়ত না, রোযা রাখত না, যাকাত দিতো না, হজ্ব করত না, দাড়ি রাখত না, মোছ কাটত না, এত নফল এবাদত করত না, কোরবানী দিত না, খাতনা করত না, পাড়া মহল্লা কাঁপিয়ে জিকির করত না। এরা তো এ সবই করে, শুধু তাই নয় এদের মধ্যে অনেকে তো খানকায় বসে কঠিন আধ্যাত্মিক সাধনাও করে, আধ্যাত্মিকতার বহু স্তর অনেকে অতিক্রম করেছেন। তবু কেন আমরা বিধর্মীদের পদদলিত দাস? কোথায় গলদ, কোথায় ফাঁকি?’
এই মহাবিশ্বের সর্বশক্তিমান স্রষ্টা তাঁর এই বান্দার মনের আকূল জিজ্ঞাসা শুনলেন। এরপর ধীরে ধীরে একটু একটু করে তাঁর মনের এই প্রশ্নের উত্তর আসতে লাগল- সারা জীবন ধরে। এখানে একটু, ওখানে একটু, বইয়ের পাতায়, ছোটখাট ঘটনায়, নিজের চিন্তার মধ্যে দিয়ে এমন কি চিন্তা না করেও হঠাৎ নিজে নিজেই জবাব মনের মধ্যে এসে যাওয়া, এমনি করে পেঁয়াজের খোসা ছাড়াবার মত একটি একটি করে সমস্ত আবরণ ঝরে পড়তে লাগল। এভাবেই তাঁর সেই ‘কেন’র জবাব তিনি পেয়েছেন জীবনের একটি পর্যায়ে এসে, তাঁর পরিণত বয়সে। তিনি জানতে পারলেন কোথায় গলদ, কোথায় সেই শুভংকরের ফাঁকি, যে ফাঁকিতে পড়ে আজ যে জাতির পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবার কথা- সেই জাতি পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের, তওহীদের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দীন অবতীর্ণ হয়েছিল, সেই সার্বভৌমত্ব, তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত ‘মুসলিম’ জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতখানি বহুত্ববাদের, শিরক, কুফরে ও নাস্তিক্যে ডুবে আছে এই জাতিও ততখানিই ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মত এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছে না, কেমন করে আজ আর তারা মুসলিম নেই। আকিদার (Concept) বিকৃতিতে তওহীদ এদের কাছে শুধু মাটির, পাথরের তৈরি মূর্তিকে সাজদা না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তওহীদের মূল কথা হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রসুল্লাল্লাহ (সা.) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা, নির্দেশদাতা নাই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রসুল। এই কলেমা হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের একটি অঙ্গীকার বা চুক্তি যাতে বলা হয়েছে, জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, বিচারিক, শিক্ষা অর্থাৎ যে স্তরেই হোক, যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোন কথা আছে, হুকুম আছে সেখানে অন্য করো কথা বা হুকুম মানা যাবে না। যে বা যারা অন্য কোন হুকুম মানবে তারা এই কলেমার চুক্তি ভঙ্গ করবে, ফলে কাফের ও মোশরেক হয়ে যাবে। আল্লাহর শেষ রসুলের মাধ্যমে প্রেরিত ইসলামের শেষ সংস্করণ আর বর্তমানের “ইসলাম ধর্ম” যে দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী জিনিস তা পরম করুণাময় আল্লাহর রহমে তাঁর কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে ধরা দিল।
তিনি প্রভুর কাছে বুঝতে চেয়েছিলেন কোন অপরাধে, কোন গলদে তার শ্রেষ্ঠ রসুলের জাতি দারিদ্র্যে, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায়, প্রায় পশু পর্যায়ের জীবে পরিণত হয়ে মোশরেক ও কাফেরদের গোলামে পরিণত হলো। রহমানুর রহীমের অনুগ্রহে এই মহাসত্যগুলি বুঝার পরে তিনি মহাবিপদে পড়ে গেলেন, ঘাড়ে এসে পড়লো ভয়াবহ দায়িত্ব। তিনি জানতেন মহানবীর বাণী- যে লোক জ্ঞান পেয়েও তা মানুষকে জানায় না, দেয় না, কেয়ামতে তার পেটে আগুন পুরে দেওয়া হবে। মহানবী এও বলেছেন- যে হাশরের দিনে তার মুখে আগুনের লাগাম পরানো হবে। এর অর্থ এ দায়িত্ব যেমন করেই হোক ঘাড় থেকে নামাতেই হবে। ভেবে দেখলেন তার সামনে দু’টো পথ। প্রথমটা, যে সত্য তাঁকে বোঝানো হয়েছে তা প্রকাশ্যে প্রচার করা। দ্বিতীয়টা-লিখে মানুষকে জানানো। প্রথমটার কথা চিন্তা করতেই বিশ্বনবীর আরেকটা হাদীস তাঁর মনে এলো। তা হচ্ছে এই যে- দীন যখন বিকৃত হয়ে যাবে তখন যে ব্যক্তি প্রকৃত দীনকে মানুষের মধ্যে প্রচার করবে, তার দরজা, স্থান নবীদের দরজা থেকে মাত্র এক দরজা (step) নীচু হবে। এ হাদীসের মর্ম বড় ভয়াবহ। প্রত্যেক প্রেরিত, নবী যখন তার পূর্ববর্তী নবীর মাধ্যমে দেয়া দীনের বিকৃতি শোধরাতে চেষ্টা করেছেন, মানুষকে বিপথ থেকে সঠিক পথে আনতে চেষ্টা করেছেন তখন তার ভাগ্যে জুটেছে অপমান, বিদ্রুপ, বিরোধিতা ও সর্বপ্রকার অত্যাচার। আর ঐ অপমান, অত্যাচারের পুরোভাগে সবসময় থেকেছে ঐ বিকৃত ধর্মের পুরোহিত, যাজক শ্রেণি। নবী-রসুলদের কোন পথ ছিল না ঐ অপমান অত্যাচার সহ্য করা ছাড়া, কারণ তাদের পাঠানোই হয়েছিল ঐ কাজ দিয়ে। কিন্তু নবী-রসুল না হয়েও যদি কোন সাধারণ মানুষ ঐ কাজ করতে যায়, তবে তারও ভাগ্যে তাই জুটবে যা প্রত্যেক নবী-রসুলের ভাগ্যে জুটেছে। তাই মহানবী বলেছেন সেই সাধারণ মানুষেরও সম্মান হবে নবীদের চেয়ে মাত্র এক ধাপ কম। এমন কি শেষনবী এ কথাও বলে দিয়েছেন যে মাহদীরও (আ.) প্রবল বিরোধিতা করবে এই বর্তমান ইসলামের হর্তা-কর্তারা। তিনি বলতেন, ‘আমার মত অতি সাধারণ এবং অতি গোনাহগার মানুষ, নবী-রসুলেরা যে পথে হেঁটে গেছেন সে পথের ধুলি স্পর্শ করার যোগ্যতাও যার নেই, সেই চরিত্রও নেই, আমার পক্ষে ঐ কাজ করা সম্ভব নয়।’ স্বভাবতঃই তিনি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিলেন। যার ফল হচ্ছে তার লেখা বইগুলি। এই বই লেখার পথ বেছে নিতেও তাঁর দ্বিধা এসেছে, কারণ তিনি নিজেকে লেখক বলে মনে করতেন না, হয়ত গুছিয়ে বলতে পারবেন না, হয়ত বোঝাতেও পারবেন না; কিন্তু তৃতীয় পথ নেই।
আরও একটা কারণ আছে তাঁর এই কাজে হাত দেবার। নবীদের (আ.) মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে যুগে যুগে পথ দেখিয়ে এসেছেন অন্যায়, অত্যাচার, রক্তপাত না করে শান্তিতে মানুষকে পৃথিবীতে বাস করার। মানুষ কয়েক শতাব্দী আগে পর্যন্ত শুধু তাই অনুসরণ করে এসেছে, কখনো অবিকৃতরূপে, কখনও বিকৃতরূপে। এটা শেষ হলো আজ থেকে কয়েক শতাব্দী আগে। এর নেট ফল হয়েছে একটা ‘সভ্যতা’র সৃষ্টি যেটা মানুষের জীবনের একটি দিকই শুধু দেখতে পায়- দেহের দিক, বস্তুর দিক, এবং শুধু এই দিকটার ওপর ভিত্তি করেই তাদের ঐ ‘সভ্যতা’, তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমস্ত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। যেটাকে বলা হয় ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা (Judio-Christian-Civilization) অর্থাৎ বর্তমান পাশ্চাত্য বস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যহীন ‘সভ্যতা’। এই ‘সভ্য’ সমাজের একটা অতি ছোট অংশ মানুষের আত্মার দিকটার খানিকটা দেখাশোনা করে, নানা রকম সেবামূলক কাজ করে যার কোন শক্তিশালী প্রভাব নেই সমাজের বৃহত্তর জীবনে। ঐ বস্তুতান্ত্রিক ‘সভ্যতা’র সঙ্গে যোগ হয়েছে যান্ত্রিক ও পদ্ধতিগত উন্নতি। যেহেতু ঐ সভ্যতা এক মানব জাতিকে ভৌগোলিক, ভাষা, গায়ের রং ইত্যাদি নানাভাবে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং ঐ বিভক্ত ভাগগুলি ঐ ভারসাম্যহীন বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্বাসী, তাই বিজ্ঞানের ও তার প্রয়োগগত উন্নতির (Technological advancement) প্রধান অংশই কাজে লাগানো হচ্ছে যার যার পার্থিব স্বার্থ সংরক্ষণে এবং অন্যকে বঞ্চিত করে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টায়। অন্যদিকে স্রষ্টার দেয়া পদ্ধতিতে মানব জাতিকে এক জাতি বলা হয়েছে এবং একে কোনভাবেই ভাগ-বিভক্ত করার অনুমতি দেয়া হয়নি এবং যেহেতু এতে মানুষের দেহ ও আত্মার সব প্রয়োজনের ভারসাম্যযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে তাই এই দুইয়ের সম্মিলনের অবশ্যম্ভাবী ফল শান্তি ও প্রগতি। স্রষ্টার দেয়া জীবন-বিধানকে অস্বীকার করে, নাস্তিক্যের ওপর ভিত্তি করে পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’ মানব জাতিকে আজ এমন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে আজ সমগ্র মানব জাতিটাই পারমাণবিক আত্মহত্যার দোড়গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ আত্মহত্যাটা শুধু তাদের হবে না, আমরা যারা ঘৃণিত হীনম্মন্যতায় আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে তাদের মত ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করে রেখে, সমষ্টিগত জীবনে তাদের নকল করছি – আমাদেরও হবে। যদিও সময় বেশি নেই, তবু এখনও যদি পাশ্চাত্য তাদের নিজেদের গড়া জীবন-ব্যবস্থা পরিত্যাগ করে স্রষ্টার শেষ বিধান, শেষ ইসলামকে গ্রহণ করে তবে এ বিভৎস আত্মহত্যার হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। আর তারা যদি তা নাও করে তবে এই বিরাট জাতি, যেটা তার অন্তহীন অজ্ঞতায়, আকিদায় অন্ধত্বে নিজেকে মুসলিম ও উম্মতে মোহম্মদী বলে মনে করে আত্মতৃপ্তিতে ডুবে আছে, তাকে ধাক্কা দিয়ে বলা যে- জাগো, দেখো তুমি কোথায় আছো, সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহকে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের, গায়রুল্লাহর এবাদত করতে করতে কোথায় এসেছ। আখেরাত তো বহু আগেই গেছে, আল্লাহ রসুলের চোখে তো জাতি হিসাবে কার্যতঃ মোশরেক ও কাফের হয়েছ কয়েক শতাব্দী আগেই, এখন ওদের সাথে সাথে এই পার্থিব আত্মহত্যারও সম্মুখীন হয়েছ। এখনও সময় আছে তওবা করে শেরক ও কুফরী ত্যাগ করে মুসলিম হবার, উম্মতে মোহম্মদী হওয়াতো অনেক পরের কথা। শুধু মুসলিম হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবেও এ দায়িত্ব পালনও তাঁর এইসব লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য।
বই লিখে টাকা উপার্জন তাঁর উদ্দেশ্য নয়। বই বিক্রি করে একটি টাকাও উপাজর্ন করেন নাই বরং তিনি তাঁর পিতৃসম্পদ বিক্রি করে এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। পরবর্তীতে যখন ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয় তখন শুধু পুনঃমুদ্রনের জন্য একটা নামমাত্র মূল্য রেখেছিলেন। তিনি তাঁর কোন বইয়েরই স্বত্ব রাখেন নাই। তিনি জানতেন তাঁর বইগুলির প্রচ- বিরোধিতা হবে। সেজন্য তিনি বলতেন, বিরোধিতা যদি না হয় তবে বুঝবো আমি সত্য লিখতে পারি নি, শেষ ইসলামকে তার প্রকৃত আলোকে মানুষের সামনে পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছি। এ বিরোধিতা আসবে ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’র পদ্ধতিতে ‘শিক্ষিত’ বর্তমান নেতৃত্বের ও তাদের অনুসারীদের (Agent) কাছ থেকে, বর্তমানের বিকৃত দীনের পুরোহিত, যাজকদের কাছ থেকে, ধর্ম যাদের রুজী-রোজগারের পথ, তাদের কাছ থেকে, ইউরোপীয়ান খ্রিষ্টানরা মুসলিম জগত অধিকার করে মাদ্রাসা স্থাপন করে ইসলাম শিক্ষার ছদ্মবেশে যে ধ্বংসকারি ফতোয়াবাজী শিক্ষা দিয়েছিল সেই শিক্ষায় ‘শিক্ষিত’দের কাছ থেকে, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, রক্তপাত নির্মূল করে পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের হাতে যে তলোয়ার ধরিয়ে দিয়েছিলেন সেই তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ হাতে নিয়ে যারা খানকায় ঢুকেছেন তাদের কাছ থেকে। এক কথায় সর্বদিক থেকে বিরোধিতা আসবে।”
বাস্তবেও আমরা তাই দেখতে পেয়েছি, এই সব কটি শ্রেণির দ্বারা তিনি প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। যাদের সত্য গ্রহণের মন আছে, যারা বুঝতে চাইবেন, তারা ইনশাল্লাহ বুঝতে পারবেন তিনি কী বলতে চেয়েছেন। তাদের মধ্যে যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, আল্লাহ যাদের রেযেক অন্যের চেয়ে বেশি দিয়েছেন তাদের কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন তারা যেন তাঁর লিখিত এই বইগুলি পুনঃ মুদ্রণ করেন, যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব হয়। তবে এও বলেছেন যে, “আজকের ‘মুসলিম’ জাতি বহু নফল এবাদত করতে রাজী কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় দুই পয়সা খরচ করতে রাজী নয়। অথচ আল্লাহ বলেছেন- আমি মো’মেনের সম্পদ ও প্রাণ জান্নাতের বদলে কিনে নিয়েছি (কোরআন- সুরা আত-তওবা ১১১)। আমরা ঈমানের দাবিদার কিন্তু জানমাল আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করতে রাজী নই।”
তিনি বলেছেন, ‘আমার অক্ষম কলম দিয়ে যা লিখেছি তা আমার কথা নয়- আল্লাহ আর তাঁর রসুল যা বলেছেন তাই বলছি এবং কোথায় বলেছেন তার উদ্ধৃতিও দিয়েছি। মাত্র একটি কি দু’টি বিষয়ে আমি আমার নিজের অভিমত পেশ করেছি এবং ঐ অভিমত গ্রহণ করতে কাউকে জোর করছি না, ঐগুলি সম্বন্ধে কেউ আমার সঙ্গে একমত না হলে আমার কোন আপত্তি নেই।’
আল্লাহ তাঁকে যে মহাসত্য দান করলেন তা বোঝার পর তাঁর দায়িত্ব হয়ে গিয়েছিল মানুষের কাছে এটি পৌঁছে দেওয়া। প্রাথমিকভাবে শুধু বই লিখে এই দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও ১৯৯৫ সনে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি গঠন করতে বাধ্য হন। গত ২০ বছর ধরে এই আন্দোলন শত, বাঁধা, বিঘœ, অপবাদ, অত্যাচার ও জুলুম সত্বেও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মানবজাতিকে আল্লাহর তওহীদের দিকে আহ্বান করে যাচ্ছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত হেযবুত তওহীদ এগিয়ে চলতে থাকলো নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে। এভাবে চললো ১৩ বছর। ১৩ বছর ধরেই তিনি জানতেন তিনি যা বলছেন এটাই সত্য ইসলাম, আর যেটা বর্তমানে চালু আছে সেটা সত্য নয়, অর্থাৎ আল্লাহ রসুলের ইসলাম নয়। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টায় তিনি এটা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন কি না তা তিনি জানতেন না। ২০০৮ সালে মহামহীম আল্লাহ এক মো’জেজার (অলৌকিক ঘটনা) মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন যে তিনি এই দীনের যে আত্মা, আকিদা, ধারণা ও রূপ মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করছেন সেটাই একমাত্র হক, সত্য। অর্থাৎ হেযবুত তওহীদ হক, হেযবুত তওহীদের এমাম হক এবং এই হেযবুত তওহীদ দিয়েই আল্লাহ অন্য সমস্ত জীবনব্যবস্থা লুপ্ত করে তাঁর দীনুল হক, সত্য জীবনব্যবস্থা অর্থাৎ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন এনশা’আল্লাহ। তাই মানবজাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সেই নতুন শান্তিময় বিশ্বব্যবস্থার আগমনের সুসংবাদ মানবজাতিকে জানাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ