হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আবারও অপপ্রচার

মসীহ উর রহমান: বেশ কিছুদিন থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে নানা ধরনের গুজব রটিয়ে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তারা একেক সময় একেক ইস্যু নিয়ে আবির্ভূত হয়। বর্তমানে তারা বরিশালের উজিরপুর পৌর এলাকায় অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে অপপ্রচারমূলক হ্যান্ডবিল বিতরণ করছে। এই একই মিথ্যা, বানোয়াট, নামঠিকানা বিহীন বেনামী হ্যান্ডবিল প্রচার করে তারা গত ১৪ মার্চ ২০১৬ নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়িঘর লুটপাট করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ভস্মীভূত করে, বহু সদস্যের অঙ্গহানি ঘটায়, দুই জনকে নৃশংসভাবে জবাই করে, হাত পায়ের রগ কেটে, চোখ উপড়ে হত্যা করে, পেট্রোল দিয়ে তাদের দেহ জ্বালিয়ে দেয়, উদ্ধারকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর এবং থানাতে পর্যন্ত হামলা চালায়। কাজেই এমন বেনামী, মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব সৃষ্টিকারী প্রচারণা সম্পর্কে আমরা সর্বশ্রেণির জনসাধারণকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান করছি।
হেযবুত তওহীদ আল্লাহর প্রকৃত ইসলাম মানবজাতির সামনে তুলে ধরছে এবং সকল প্রকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মো’মেন মুসলিম হিসাবে এটা একদিকে যেমন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব অন্যদিকে আমাদের নাগরিক কর্তব্য। এ কাজের জন্য আমরা কোনো বিনিময় আশা করি না, আমাদের রাজনৈতিক কোন অভিসন্ধি নেই। আমরা এর বিনিময় আমরা নেব আল্লাহর কাছ থেকে।
কয়েক বছর আগের কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধের বিচ্ছিন্ন অংশকে তুলে এনে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আপনারা এ সকল ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন এবং আমাদের পূর্ণ বক্তব্য জানার চেষ্টা করবেন। আমাদের সুস্পষ্ট কথা হচ্ছে, আমরা চাই ধর্মের নামে যেন আর কোনো জঙ্গিবাদী কর্মকা- না হয়, যেন মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে স্বার্থহাসিল করা না হয় সে লক্ষ্যে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে। তাদের অপপ্রচারের বিষয়গুলো হচ্ছে:
তারা প্রচার করছে যে, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী নাকি নবী হওয়ার দাবি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)! এমন ডাহা মিথ্যা কথা আমরা কোথায় লিখেছি বা বলেছি তার প্রমাণ চাই। এই ব্যাপারে আমরা কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ করছি। এমামুয্যামান শত সহস্রবার বলেছেন এবং লিখেছেন যে, তিনি আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.) এর এক গোনাহগার উম্মত আর আমরা উম্মতে মোহাম্মদী। তাহলে এই মিথ্যা কথাটি কীভাবে তারা প্রচার করল?
তাদের অভিযোগ আমরা নামাজকে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ বলেছি। ডাহা মিথ্যা কথা। প্রকৃতপক্ষে আমরা যেটা বলেছি তা হলো, নামাজ হচ্ছে মো’মেনের চরিত্র তৈরির প্রশিক্ষণ। আল্লাহর রসুল (সা.) ইসলামকে একটি ঘরের সাথে তুলনা করে বলেছেন নামাজ হচ্ছে সেই ঘরের খুঁটি আর জেহাদ হচ্ছে তার ছাদ (হাদীস: মুয়াজ বিন জাবাল রা. থেকে তিরমিযি)। খুঁটির উদ্দেশ্য যেমন ছাদকে ধরে রাখা তেমনি নামাজের উদ্দেশ্য জেহাদের জন্য মো’মেনের চরিত্রে যে ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য তথা আত্মিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলীর আবশ্যকতা রয়েছে সেগুলো সৃষ্টি করা। আমাদের এই কথা শতভাগ সত্য। স্বয়ং আল্লাহই বলেছেন, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে যাবতীয় অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে (সুরা আনকাবুত ৪৫)।
তারা প্রচার করছেন, হজ্বকে আমরা নাকি এবাদতের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সম্মেলন বলে প্রচার করি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হজ্ব এমন একটি এবাদত যা মুসলিম জাতির বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। নবী করিম (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে মুসলিম জাতির যাবতীয় সামাজিক সমস্যার সমাধান করা হতো জুমার দিন মসজিদে। আর সারা দুনিয়ার মুসলমানেরা বছরে একবার আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে তাদের জাতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। এই ঐতিহাসিক সত্যটি আমরা তুলে ধরেছি মাত্র।
আমরা নাকি বলেছি নবী করিম (সা.) পূর্বের কোনো ধর্মকে বাতিল করেন নি। এখানেও সম্পূর্ণ বিকৃতভাবে আমাদের প্রকৃত বক্তব্যকে খ-িতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সকলেই জানেন যে, সকল নবী-রসুল ও তাঁদের উপর অবতীর্ণ কেতাবগুলোর উপর ঈমান রাখা প্রত্যেক মো’মেনের উপর ফরজ। তাছাড়া আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি কেতাব (কোর’আন) অবতীর্ণ করেছেন যা তা পূর্বের কেতাবের সমর্থক। আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন তওরাত ও ইঞ্জিল (সুরা ইমরান ৩)। সুতরাং পূর্বের কেতাব ও ধর্মপ্রবর্তকদেরকে অশ্রদ্ধা না করে শ্রদ্ধা করা উচিত। তাহলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে না। যদিও পূর্বের কেতাবগুলোর মধ্যে কালের বিবর্তনে অনেক বিকৃতি প্রবেশ করেছে। কিন্তু কোর’আনকে আল্লাহ নিজে হেফাজত করবেন।
আমাদের প্রতি অভিযোগ আরোপ করা হয় যে আমরা নাকি আন্তধর্মীয় ঐক্য চাই, আমরা নাকি নতুন ধর্ম সৃষ্টি করছি। এ বিষয়ে আমাদের কথা হচ্ছে, সারা পৃথিবীর সকল মানুষকে এক পরিবারভুক্ত করার জন্যই আল্লাহর শেষ রসুল আবির্ভূত হয়েছিলেন। রসুলাল্লাহকে (সা.) আল্লাহ অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকে এ কথা বলতে আদেশ করছেন যে, ‘হে আহলে-কেতাবগণ! এমন একটি বিষয়ের দিকে এসো- যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান- যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে প্রতিপালক বলে মানবো না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো মুসলিম।’ (সুরা ইমরান ৬৪)। সুতরাং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণের অর্থ নতুন ধর্ম সৃষ্টি করা নয় বরং এটা ফরজ এবং রসুলের সুন্নাহ। মদীনায় তিনি সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে নিয়ে একটি জাতি তৈরি করেছিলেন।
এভাবে বলতে গেলে আরো হাজারো মিথ্যা তারা আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার করছে সেগুলোর জবাব দিতে গেলে একটি বড় বই হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের বিবেক জাগ্রত তাদের জন্য এ কটিই যথেষ্ট বলে মনে করি। এ পর্যন্ত বহু মিথ্যাচার চালিয়ে হেযবুত তওহীদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। অথচ মোমেন, মুসলিম হিসাবে আমরা কেবল ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরছি। অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্য কী সেটা সকলকে বুঝতে হবে। এরা চায় একটা ফেতনা সৃষ্টি করে মানুষের ঈমানকে ভুল পথে প্রবাহিত করে নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করতে এবং দেশে দাঙ্গাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। আমরা সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...