হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ভারসাম্যহীন এই জীবনব্যবস্থার বিষফলের উর্ধ্বে কেউ নয়

মোখলেসুর রহমান

আল্লাহর দেয়া সহজ-সরল পথ প্রত্যাখ্যান করে পাশ্চাত্যের প্রভুদের চিন্তাপ্রসূত যে জীবনব্যবস্থাটি আমরা গ্রহণ করে যাচ্ছি তার সবচেয়ে বড় শিকার দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিুবিত্তরা। মানবরচিত এই ভারসাম্যহীন জীবনব্যবস্থাটি কিছু মানুষকে ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়ে তা অপব্যবহারের একটি অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে, আর বাকি মানুষকে তার ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। উদার গণতান্ত্রিকতার নামে বঞ্চিত মানুষগুলোকে শুধু ভোটার হিসাবেই দেখা হয়, মানুষ হিসাবে নয়। সকল ক্ষমতার উৎস হিসাবে আখ্যায়িত করলেও বাস্তবে একটি ব্যালট পেপারের চেয়ে তাদের মূল্য বেশী নয়। তা সম্প্রতি দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানদের কথাবর্তায়, কর্মকাণ্ডে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে।
দুই নেত্রীর রাজনৈতিক ফোনালাপ অতঃপর ৬০ ঘণ্টার হরতাল। যে গণতান্ত্রিক বৈধতায় যে হরতালে অন্তত ২০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে। তাছাড়া দেশের অর্থনীতি, পরিবহন মাধ্যম আর শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসেব ভূক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ করেনা। হরতালের এই নিয়মিত চিত্রের পাশাপাশি একটু নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে, সংবাদকর্মী, মিডিয়া অফিস, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সরকারের মন্ত্রী, বিরোধী দলের পদস্থ নেতা, প্রধান বিচারপতির বাসা এমনকি আদালত প্রাঙ্গণ ইত্যাদি ব্যক্তি ও স্থান বিশেষকে লক্ষ্য করে যে পরিমাণ ককটেল এই ৩ দিনে নিক্ষেপ করা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। একদিকে সাধারণ মানুষের প্রাণনাশ, অন্যদিকে ব্যক্তিবিশেষে পরিকল্পিত হামলা। এটা সবাইকে এই ব্যাপারেই সচেতন করে যে, এই ভারসাম্যহীন জীবনব্যবস্থাতে আমরা কেউ নিরাপদ নই। সারাদিন সিএনজি চালিয়ে সংসারের খরচ জোটানো মানুষটা যেমন ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা দিয়ে বাইরে যেতে পারে না, প্রধান বিচারপতির মত একজন ব্যক্তিও ঘরের ভেতরে তার পরিবারের সার্থে সাথে থাকা অবস্থায়ও নিরাপত্তা বোধ করেন না। আর এই নিরাপত্তাহীনতা কখনোই ক্ষমতার পালাবদল তথা ব্যক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত আমেরিকাও এই নিরাপত্তাহীনতার উর্ধ্বে নয়। তা যদি হতো, তাহোলে বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকে তাদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় প্রেসিডেন্টকে কেঁদে বলতে হবে হতো না, আমার সন্তানদের আমি বাঁচাতে পারলাম না, তাদের নিরাপত্তা আমি নিশ্চিত করতে পারলাম না। গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্রসহ মানবচিন্তাপ্রসূত কোন জীবনব্যবস্থাই মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে পারেনি, এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ও প্রমাণিত। পৃথিবীর যোগ্যতম ব্যক্তি ঐ জীবনব্যবস্থা পরিচালনার ভার নিলেও পারবেন না। এটা ইতিহাস, সকল শ্রেণি ও ধর্মের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা কেবল আল্লাহর তৈরি জীবনব্যবস্থাই দিতে পেরেছে। যারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন তারা তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্য তা করবেন। ইতিহাস সুপরিকল্পিতভাবে বিকৃত করে ফেলা হলেও ইসলাম সকল ধর্মের মানুষের অধিকারের কতটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল তার দলিল আজও রয়ে গেছে। এখন আমাদের সকলের উচিৎ পাশ্চাত্যের প্রভুদের অন্ধ অনুকরণ ত্যাগ করে, নিজেদের প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার স্বার্থে মহামহীম প্রভুর দেওয়া জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নেওয়া। স্রষ্টার পক্ষ থেকে যখন সত্যের আহ্বান আসে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের জন্য শোভা পায় না। মূর্খ আর অহংকারীরাই এই স্পর্ধা দেখায়।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...