হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞা

মুস্তাফিজ শিহাব:
বর্তমানে আমাদের সমাজ অনেক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকায় আমরা এ সকল সমস্যার কথা পড়ি। দুর্নীতি, অপরাজনীতি, ধর্মব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়ে আমাদের সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বার গোড়ায়। এর সাথে আরো যুক্ত হয়েছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা যার ওসিলা ধরে শুধু একটি নির্দিষ্ট সমাজ নয়, সমগ্র দুনিয়া আজ লণ্ডভণ্ড। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি মুসলিম দেশগুলোকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের তকমা লগিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। যে সকল সমস্যায় সমাজ জর্জরিত সেসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। আমরা আজকে সন্ত্রাসবাদ শব্দটির আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থ নিয়ে কথা বলব।
সন্ত্রাস শব্দটি ‘ত্রাস’ থেকে এসেছে। জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে, আতঙ্কের সৃষ্টি করে, ভয়-ভীতির মাধ্যমে মানুষের জান-মালের ক্ষতি করাই মূলত সন্ত্রাস। ইউ. এস কোড অব ফেডারেল রেগুলেশানস সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, “The unlawful use of force and violence against persons or property to intimidate or coerce a government, the civilian population, or any segment thereof, in furtherance of political or social objectives.” অর্থাৎ “যে কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে সরকার, জনগণ বা কোন গোষ্ঠীর উপর অবৈধভাবে শক্তি প্রয়োগ করা বা তাদের সম্পদের উপর হামলা করে ভীতি সৃষ্টি করা।”
কানাডার আইনে বলা হয়েছে, “জনগণ বা জনগণের কোনো অংশকে ভীতি প্রদর্শনমূলক কোন কর্মকাণ্ড, যা অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ (হরতাল, ধর্মঘট ইত্যাদি) সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, যেসব কাজে সহিংসতার কারণে হত্যা বা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, ব্যক্তিজীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, সম্পদের ক্ষতিসাধন হয় এবং জনগণের জন্য জরুরি সেবা ও সুবিধা ব্যাহত হয়, সে সবই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।”
সংজ্ঞাগুলো থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন? আমাদের দেশের জনগণ এ ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। আইনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসবাদ কী সেটা না জানার ফলে যে কেউ যাকে তাকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করছে আর জনগণও বিভ্রান্ত হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত কোন আইন-বিধানের ব্যাপারে তাদের কোন ধারণা নেই। তাদেরকে এখন সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা জানতে হবে। আইন সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, তাহলে তারা বুঝবে যে এই সংজ্ঞার আওতায় যারা পড়বে তারা সবাই হবে সন্ত্রাসী। এ সংজ্ঞায় ইসলাম, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি কোন আলাদা ভাগ নেই। ইসলামের নামে করুক, গণতন্ত্রের নামে করুক, সমাজতন্ত্রের নামে করুক, সন্ত্রাসের সংজ্ঞার সাথে মিললেই তা সন্ত্রাস হবে এবং যেই করুক সে হবে সন্ত্রাসী।
দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য এর উপর গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। আমাদের এ জন্মভূমি আজ পশ্চিামাদের শ্যেন দৃষ্টির শিকার। তারা আমাদের এ প্রিয় জন্মভূমিতে সাম্রাজ্যবাদী ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ঘটানোর মাধ্যমে আমাদের এ দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি গণসচেতনা সৃষ্টি করতে না পারি তবে আমাদের দেশের অবস্থাও ইরাক সিরিয়ার মতই হবে। আমরা যদি আজ সচেতন না হই, আমরা যদি আইন ও ধর্ম সম্পর্ক অজ্ঞ থেকে যাই তবে একদিকে আমাদের ঈমানকে হাইজ্যাক করে জাতি বিনাশী কর্মকাণ্ড ঘটানো হবে ও অপরদিকে আমাদের সামনে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড ঘটলেও আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সক্ষম হব না।
অতএব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এখনই জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে নয়তো এ প্রাণের চেয়েও প্রিয় জন্মভূমিকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ধর্মের নামে, আইনের নামে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সময় এখনই। হেযবুত তওহীদ ছাড়া আর কেউ এই কাজটি করছে না।
[লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ]

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...