হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিড়ম্বনা

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
আমরা প্রায়ই কিছু পরিসংখ্যানের মুখোমুখি হয়ে থাকি যেখানে দাবি করা হয়, অমুক দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কিংবা অমুক দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমরা সরকারি চাকরি-বাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া শোনা হচ্ছে না, তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছে না, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে ইত্যাদি। অনেক সময় এমনও দেখা যায়- পাশ্ববর্তী দেশের সংখ্যালঘুদের চাকরিতে সুযোগ-সুবিধার দৃষ্টান্ত টেনে তার সাথে আমাদের দেশের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয় এবং করে থাকেন এমন একটি শ্রেণি যারা নিজেদেরকে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেন।
অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে তাদের এই সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর ধারণাকে আমি তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ মনে করি। তারা আদতে অসাম্প্রদায়িক নন, ঘোর সাম্প্রদায়িক। প্রকৃতপক্ষে যদি তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনাই লালন করতেন, যদি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে ন্যায় ও সুবিচারকে স্থান দিতে পারতেন, তাহলে ধর্মবিশ্বাসের সংকীর্ণ মাপকাঠি ছেড়ে মানুষ ও মানবতার পক্ষে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করতেন। এ দেশে যেমন কেবল হিন্দুরাই সরকারি চাকরি-বাকরি ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় না, মুসলমানরাও হয়, তেমন ভারতেও কেবল মুসলমানরাই যে বৈষম্যের শিকার হয় তা নয়, সেখানেও হিন্দুরাও বৈষম্যের শিকার হয়।
বস্তুত দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার সব সমাজেই আছে। যে সমাজের সমাজপতিরা, যে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়করা ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করবে না, নিজের বিপক্ষে গেলেও সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করতে পারবে না, সেই সমাজে সেই রাষ্ট্রে দুর্বলমাত্রই নির্যাতিত হবে, নিপীড়িত হবে, বঞ্চিত হবে ও শোষিত হবে। সেই দুর্বল মুসলমান হোক, হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক বা খ্রিস্টান হোক। কাজেই যারা প্রকৃতপক্ষেই সত্যের পক্ষে অবস্থান নিতে চান, যারা প্রকৃতপক্ষেই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে ধারণ করেন এবং ধর্ম-বর্ণ-বিশ্বাসের ভিত্তিতে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্যকে দূরীভূত করতে চান তাদের উচিত সমাজে ন্যায় স্থাপনের জন্য সংগ্রাম করা। সমষ্টিগত জীবনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে কোনো ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষই বৈষম্যের শিকার হবে না। রাষ্ট্র সংখ্যালঘুও দেখবে না, সংখ্যাগুরুও দেখবে না, ন্যায়’ই হবে রাষ্ট্রের ধর্ম। সেটা কি পারবেন আমাদের কথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা?
যে কোনো চাকরি প্রদানের পূর্বে কর্তৃপক্ষ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে দেখবে দুইটি বিষয়। দক্ষতা ও সততা। যদি একজন ব্যক্তি ওই দায়িত্ব পালনের মত দক্ষ হয় এবং ব্যক্তিজীবনে সৎ হয় তবে সে ওই চাকরি পাওয়ার হক্বদার। সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিস্টান হোক, বৌদ্ধ হোক, আস্তিক হোক, নাস্তিক হোক, নামাজী হোক, বেনামাজী হোক, সেটা ওখানে দেখার বিষয় নয়। এই দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে যদি নব্বইভাগ চাকরিজীবীই হিন্দু হয়, অথবা নব্বইভাগ হিন্দুর দেশে যদি নব্বইভাগ চাকরিজীবী মুসলমান হয় তবে সেটাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। আমার দেশে মুসলমানরা সংখ্যায় অধিক, তাই কেবল মুসলমানদেরকেই চাকরি দিতে হবে যদিও তারা অদক্ষ ও অসৎ হয়- এটা যেমন অগ্রহণযোগ্য, একইভাবে এ দেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, তাই তাদের জন্য নির্দিষ্ট চাকরির কোটা রাখতেই হবে, চাকরি তাদেরকে দিতেই হবে যদিও তারা অযোগ্য, অদক্ষ ও অসৎ হয় সেটাও সমান অগ্রহণযোগ্য। যার হৃদয়ে দেশপ্রেম বলে কিছু নাই, যে ব্যক্তি দুর্নীতি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, দেশের উন্নতিতে যার অবদান নাই, সেই আত্মকেন্দ্রিক-স্বার্থপর লোক যে ধর্মেরই হোক সে ঘৃণার যোগ্য। ধর্মবিশ্বাস নয়, যে কোনো ক্ষেত্রে অধিকারের মানদণ্ড হোক দক্ষতা ও সততা।

লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...