হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মো’মেনরাই হবে বিশ্বশক্তির অধিকারী! কিন্তু কিভাবে?

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী জাতিগোষ্ঠীই যুগে যুগে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে। মিলিটারি মাইট ও ইকোনোমিক পাওয়ার অবলম্বন করে সমৃদ্ধ হয়েছে প্রযুক্তি, সমৃদ্ধ হয়েছে সভ্যতা। আজ পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো সারা দুনিয়ার উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে তার কারণ আর কিছু নয়, তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে বলেই করতে পারছে। যাদের হাতে শক্তি তাদের প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব সবাই মেনে নেয়- এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই শক্তিকে কোনদিকে প্রবাহিত করা হবে? ন্যায়ের দিকে নাকি অন্যায়ের দিকে, শান্তি স্থাপনের দিকে নাকি অশান্তি সৃষ্টির দিকে। যদি ন্যায়ের পথে চালিত হয় তাহলে সত্যযুগ আসবে, আর যদি অন্যায়ের দিকে চালিত হয় তাহলে মিথ্যার যুগ আসবে। বর্তমানে চলছে ‘মাইট ইজ রাইট’ এর শাসন। অর্থাৎ শক্তিকে চালিত করা হয়েছে অন্যায়ের দিকে। আজকে পৃথিবীজোড়া মার খাচ্ছে দুর্বলেরা। সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, উত্তর আফ্রিকা, কাশ্মীর, চীন, মিয়ানমার, ফিলিস্তিন, লিবিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডে দুর্বল মুসলমানদের উপর চলছে অকথ্য নির্যাতন নিপীড়ন বৈষম্য গণহত্যা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো দেখল মুসলমানদের হাতে কোনো শক্তি নেই। সমষ্টিগতভাবে তাদের মিলিটারি মাইট নেই এবং ইকোনোমিক পাওয়ার যা আছে তা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিচ্ছিন্ন। তাদের সমূলে উৎখাত করে দিলেও কেউ নেই প্রতিরোধ করার। যা ইচ্ছা বলা যায়, যা ইচ্ছা করা যায়। ফলে কোনো দেশ দখল করতে, কোনো ভূখণ্ড অধিকার করে নির্যাতন চালাতে, সার্বভৌমত্ব হরণ করতে দুইবার ভাবতে হয় না। কিন্তু যদি আজকে এই জাতি সামরিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিধর জাতি হত তাহলে কারো সাধ্য ছিল না এদের চোখ রাঙায়।
মুসলমানরা একসময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়েছিল যেটাকে বলা হয় ইসলামের স্বর্ণযুগ। সেই স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের পেছনেও মূলত এই দুইটি বিষয়ই কাজ করেছিল। সহায়-সম্পদ ও সামরিক শক্তি উভয়দিক দিয়েই মুসলমানরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। তাই পৃথিবীর কর্তৃত্ব উঠে এসেছিল এই জাতির হাতে। এদের সভ্যতা ছিল শাসকের সভ্যতা। এদের সংস্কৃতি ছিল শাসকের সংস্কৃতি। এদের ভাষা ছিল শাসকের ভাষা। কিন্তু আজ তার উল্টো চিত্র, গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই জাতি অন্যান্য জাতিগুলোর গোলামী করে যাচ্ছে। এদের এত নামাজ, এত রোজা, এত মসজিদ, এত মাদ্রাসা, এত আলেম-ওলামা, এত আইনজ্ঞ-বিশেষজ্ঞ থাকা সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে তারা পরিণত হয়েছে সবচাইতে নির্যাতিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত জাতিতে। এখন যদি এই জাতি পুনরায় তাদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে ফিরে যেতে চায় তাহলে সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায় তাদেরকে ঐ অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সামরিক শক্তি অর্জন করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে- কীভাবে?
আল্লাহ এই প্রশ্নেরই সহজ জবাব দিয়েছেন সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে, যার সারকথা হচ্ছে- ‘জাতিকে মো’মেন হতে হবে।’ ব্যস, মো’মেন হলেই আমরা হব পরাশক্তি, আমরা হব শ্রেষ্ঠ জাতি। যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সামরিক শক্তির ভিত্তিতে একটি জাতি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে সেই দু’টি বিষয়ই আল্লাহ মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘তারাই মো’মেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও ধন-স¤পদ দ্বারা সংগ্রাম করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।’’ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
ধরা যাক এই মুসলিম নামক জাতিটি ঐক্যবদ্ধ হলো। তাদের মধ্যে যত ভেদাভেদ, যত হানাহানি সব মুছে গেল। সবাই একটি বিন্দুতে এক প্লাটফর্মে দাঁড়াল যে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না। অতঃপর তারা মো’মেনের সংজ্ঞা মোতাবেক জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম আরম্ভ করল। যেহেতু তারা ঐক্যবদ্ধ জাতি কাজেই তাদের নেতাও হলেন একজন। জাতির লক্ষ্য হলো একটি, আদর্শ হলো একটি, কর্মসূচি হলো একটি। এরকম একটি জাতি প্রাকৃতিকভাবেই শক্তিধর জাতিতে পরিণত হবে তাতে সন্দেহ নেই। ঐক্যের চাইতে বড় শক্তি আর নেই।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ কেবল ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসে থাকতে বললেন না। কেবল তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসে থাকলেই জাতি প্রকৃত মো’মেন হয়ে যাবে না। তাদেরকে আরও যে দু’টি কাজ করতে হবে তা হচ্ছে, মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে এবং সম্পদকে উৎসর্গ করতে হবে। আর আসল ব্যাপারটা এখানেই।
যখন একটি জাতি একজন নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং তার হাতে নিজেদের ‘জীবনকে’ উৎসর্গ করবে তখন সেই জাতি আর সাধারণ জাতি থাকে না, তারা হয়ে যায় পৃথিবীর সেরা সামরিক শক্তির অধিকারী। আর যখন ‘সম্পদকে’ উৎসর্গ করবে তখন তারা অর্জন করবে বহুল প্রত্যাশিত ‘অর্থনৈতিক সক্ষমতা’। দেখা যাচ্ছে জাতির মো’মেন হবার মধ্যেই নিহিত আছে জাতির সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের মূলসূত্র। সোজা কথায় ‘মো’মেন হলেই পরাশক্তি।’ আর মো’মেন না হলে অন্য যা কিছু আছে সব অর্থহীন, যেমনটা বর্তমানে হয়েছে।
অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করেন- আমরা মুসলমানরা পৃথিবীতে এত নির্যাতিত হচ্ছি, আল্লাহ কেন সাহায্য করছেন না? তাদের বোঝা উচিত যে, আল্লাহ কোর’আনে যতকিছুর ওয়াদা করেছেন সব মো’মেনদের সাথে। জান্নাতের ওয়াদা, গুনাহ মাফ করার ওয়াদা, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করার ওয়াদা, রক্ষা করার ওয়াদা, পৃথিবীর কর্তৃত্ব দেওয়ার ওয়াদা সমস্ত কিছু মো’মেনের সাথে। আমরা যদি মো’মেনই হতাম তাহলে আমাদের তো পরাশক্তি হবার কথা, গোলামী করার কথা নয়। গোলামী করছি মানেই আমরা মো’মেন হতে পারি নি। আমরা নামাজী হয়েছি, রোজাদার হয়েছি, মুসল্লি হয়েছি, মাওলানা-মুফতি হয়েছি, হাজ্বী হয়েছি, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে মো’মেন হতে পারি নি। মো’মেন হবার জন্য যে শর্তগুলো আল্লাহ দিয়েছেন অর্থাৎ আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জান ও মাল দিয়ে মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া- সেটার ধারেকাছেও আমরা নেই। আমরা ঐক্য ভঙ্গ করে তিয়াত্তর ফেরকা হয়েছি এবং নিজেরা নিজেরা রক্তারক্তি করছি। জান মাল দেওয়া তো দূরের কথা, ভোগবাদী স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করে যাচ্ছি। ধর্মকেই আমরা পণ্য বানিয়ে বেচাকেনা করছি। ফলে আমাদের ভয়াবহ সঙ্কটকালে পৃথিবীর কোনো সংস্থা, কোনো দেশ, কোনো পরাশক্তি তো বটেই, আল্লাহ রব্বুল আলামিনও আমাদেরকে সাহায্য করছেন না। এখন আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- আমরা কি এভাবেই ধ্বংস হয়ে যাব, নাকি মো’মেন হয়ে ঘুরে দাঁড়াবার জন্য ঐক্যবদ্ধ হব? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মো’মেন হবার আহ্বান নিয়েই বিগত ২২ বছর যাবৎ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।
যোগাযোগ:
০১৭১১০০৫০২৫, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫
০১৭৮২১৮৮২৩৭, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...