হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মিয়ানমারের সংকট দু’ভাবে মোকাবেলা করা যায়

মসীহ উর রহমান:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে হাতে গোনা কিছু বাদে সবাই মুসলিম। মুসলিমদেরকে এটা বুঝতে হবে যে এটা তাদের উপর গত কয়েক শতাব্দী থেকে চলা নির্যাতন নিপীড়নের অংশ। যারা দুনিয়ার কিছুমাত্র খবরও রাখেন তাদের বলতে হবে না যে, এই পৃথিবীতে মুসলিম বলে পরিচিত ১৫০ কোটির এই জনসংখ্যাটির কী করুণ অবস্থা। পৃথিবীর অন্য সব জাতিগুলি এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে পরাজিত করছে, হত্যা করছে, অপমানিত করছে, লাঞ্ছিত করছে, তাদের মসজিদগুলি ভেংগে চুরমার করে দিচ্ছে বা সেগুলিকে অফিস বা ক্লাবে পরিণত করছে। এই জাতির মা-বোনদের তারা ধর্ষণ করে হত্যা করছে।
অথচ আমরা এক সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি ছিলাম। পৃথিবীর অন্যান্য সব জাতি সভয় সম্ভ্রমসহ আমাদের পানে তাকিয়ে থাকত। এই পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশী জায়গায় শাসন ক্ষমতা এই মুসলিম বলে পরিচিত জাতির হাতে ছিল। তারা ঐ ক্ষমতাবলে ঐ বিশাল এলাকায় আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন পৃথিবীতে সামরিক শক্তিতে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সভ্যতায়, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে, আর্থিক শক্তিতে এই জাতি সমস্ত পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ ছিল; তাদের সামনে দাঁড়াবার, তাদের প্রতিরোধ করার মত কোন শক্তি পৃথিবীতে ছিল না।
এরপর তাদের ওপর নেমে এলো আল্লাহর গযব। কয়েক শতাব্দী আগে আল্লাহ ইউরোপের খ্রীস্টান রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম, দাস বানিয়ে দিলেন। এই সামরিক পরাজয়ের সময় তারা লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে ট্যাংকের তলায় পিষে, জীবন্ত কবর দিয়ে, পুড়িয়ে, গুলি করে, বেয়নেট, তলোয়ার দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম মা-বোনদের ধরে নিয়ে ইউরোপের, আফ্রিকার বেশ্যালয়ে বিক্রী করেছে। আল্লাহর ঐ গযব আজ পর্যন্ত চলছে। বর্তমানে খ্রীস্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, ইউরোপের বসনিয়া-হারযেগোভিনায়, আলবেনিয়া, কসভো, চেকোশ্লাভাকিয়া, চেচনিয়ায়, ইউরোপের বাইরে ইরাকে, আফগানিস্তানে, সুদানে, ইরিত্রিয়ায়, ফিলিপাইনে, ইহুদীরা প্যালেস্টাইন, লেবাননে; হিন্দুরা ভারতের সর্বত্র, বিশেষ করে কাশ্মীরে; বৌদ্ধরা আরাকানে, থাইল্যান্ডে, ভিয়েতনামে, কামপুচিয়ায়, চীনের জিংজিয়াং-এ (সিংকিয়াং) মুসলিম নামধারী এই জাতিটাকে যে যেভাবে পারে পদদলিত, পরাজিত, লান্ছিত, অপমানিত করছে। মুসলিম হিসাবে মাথা তুলতে গেলেই তাদের গ্রেফতার, কারাবদ্ধ করছে, পাশবিক নির্যাতন করছে, ফাঁসি দিচ্ছে। বসনিয়ায় খ্রীস্টান হাজার হাজার মুসলিম গণহত্যার পর দুই লক্ষ মুসলিম মেয়েকে ধর্ষণ করে গর্ভবতী করে এবং ঐ গর্ভবতী মেয়েরা খ্রীস্টানদের ঔরসজাত ঐ ভ্রুণ যাতে গর্ভপাত না করতে পারে সেজন্য ঐ মেয়েদের তারা আটকিয়ে রাখে। পরে ঐ দুই লক্ষ মুসলিম মেয়ে খ্রীস্টানদের ঔরশজাত সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়। মানব জাতির ইতিহাসে কোন জাতি এমনভাবে অপমানিত হয় নাই। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে পরাজিত, অপমানিত, লান্ছিত জাতি হয়েও মুসলিম নামে পরিচিত এই জাতির অপমানবোধ নেই, তারা নির্বিকারভাবে খাচ্ছে, দাচ্ছে, চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, যেন কিছুই হয় নাই, সব স্বাভাবিক আছে; ঐ পরাজয়, অপমান, লান্ছনাই যেন তাদের জন্য স্বাভাবিক।
এই শোচনীয় পতনের কারণ কি? অনেক চিন্তাশীল লোকই অনেক রকম কারণের কথা বলেছেন; আমাদের ঈমান দুর্বল হয়ে গেছে, আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই, শিক্ষা নেই ইত্যাদি নানা প্রকার কারণ তারা পেশ করেছেন। আমাদের হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী বলেছেন – ওগুলো আসল কারণ নয়, ওগুলো ফল মাত্র। আসল কারণ হলো মুসলিম বলে পরিচিত জাতিটি কলেমা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
এখন এই মুহূর্তে সাড়ে ছয় কোটি উদ্বাস্তু মুসলমান। জাতিগত নিধনের পাশাপাশি যে ভৌগোলিক রাষ্ট্রগুলোতে তারা বিভক্ত হয়েছিল সেগুলোকেও এখন একটা একটা করে আগ্রাসন চালিয়ে পরাশক্তিধর সাম্রাজ্যবাদীরা দখল করে নিচ্ছে। স্বাধীন রাষ্ট্র বলে কিছুই কার্যত থাকছে না। যেমন ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ইত্যাদি আমাদের মতই স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল, এখন সেগুলো মৃত্যুকূপ। নগর থেকে গোরস্তান বেশি। সুতরাং এটা বোঝার বাকি থাকে না যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসাবে আমরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঝুঁকিটা দৃশ্যমান হয়েছে।
এই ঝুঁকিটি আমরা ইসলাম দিয়েই মোকাবেলা করতে পারি। কীভাবে? সেটা হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। প্রকৃত ইসলাম ১৪শ’ বছর আগে আরবের আইয়ামে জাহেলিয়াতের জাতিটিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। তারা হানাহানি, অন্ধত্ব, কলহ-বিবাদ, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ফলে তারা হয়েছিল শক্তিশালী শ্রেষ্ঠ জাতি। যে জাতি ঐক্যের শক্তিতে শক্তিশালী, তারা যে কোনো সংকটই মোকাবেলা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দেশপ্রেম। মদিনাকে রক্ষা করার জন্য রসুল ও তাঁর সাহাবীরা কীভাবে না খেয়ে, পেটে পাথর বেঁধে খন্দক খুড়েছিলেন, পাহারা দিয়েছিলেন সে ইতিহাস আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। আমরা এই দেশের কাছে আজন্ম ঋণী। এই ঋণ শোধ করার এখন সময় এসেছে। আমরা বাংলায় কথা বলি, এখনে আমাদের পূর্বপুরুষের অস্থিমজ্জা মিশে আছে। এই স্বাধীন ভূ-খণ্ড আছে বিধায় আমরা নিজেদের পরিচয় নিয়ে বাস করি, চাকরি বাকরি করি, ধর্মপালন করি। ভূ-খণ্ড না থাকলে আমাদের পরিচয় থাকবে না, আমরা হবো উদ্বাস্তু। উদ্বাস্তুর কোনো অধিকার থাকে না, সম্মান থাকে না, ধর্মও থাকে না। এসব থাকার জন্য ভূ-খণ্ড থাকা জরুরি। এজন্য আল্লাহ তাকে ভূ-খণ্ডের উপর সৃষ্টিগত অধিকার দিয়েছেন। আমাদের পূর্বপুরুষগণ একাত্তর সালে লড়াই করে আমাদের জন্য একটি ভূ-খণ্ড দিয়ে গেছেন, এখন আমাদের দায়িত্ব সেটা রক্ষা করা। এক্ষেত্রে তার ধর্মপরিচয়, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় মুখ্য নয়, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে।
আমরা যেমন মানুষ, তেমনি আমরা মুসলিম এবং বাঙালিও বটে। আমাদের কোনো পরিচয়ই অস্বীকার করার দরকার নেই, অস্বীকার করে লাভও নেই। কারণ পাশ্চাত্য পরাশক্তিগুলো আমাদেরকে দিনশেষে মুসলিম হিসাবেই বিবেচনা করে। আমাদের জাতি ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে এখন দেশরক্ষার কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...