হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মানবজাতির মুক্তির বার্তা নিয়ে এলো হেযবুত তওহীদ

আজ পৃথিবীর চারদিক থেকে আর্ত মানুষের হাহাকার উঠছে-শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের উপর শাসকের অবিচারে, ন্যায়ের উপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের উপর ধুর্তের বঞ্চনায় পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। যখন মানবজাতি এমন কোনো জটিল সঙ্কটে পতিত হয় যে হাজার চেষ্টা করেও তা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথ তারা খুঁজে পায় না তখন মহান আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদের মুক্তির পথ প্রদান করেন। পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার করাল থাবায় যখন আজ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু, একের পর এক দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রান্তসীমায় যখন তারা উপনীত, এমনি সময় আল্লাহ তাদের মুক্তির পথ দান করেছেন। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যে পরিবারের নাম অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ সেই ঐহিত্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী (১৯২৫ খ্রি. – ২০১২ খ্রি.) সেই পথটি মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবজাতিকে ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা এবং মানবজাতির মধ্যে বিরাজিত যাবতীয় অশান্তিকে নির্মূল করে সমগ্র পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে মাননীয় এমামুয্যামান ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সনে নিজ পিত্রালয় টাঙ্গাইল করটিয়া জমিদার বাড়ির দাউদ মহলে হেযবুত তওহীদ আন্দোলন গঠন করেন।

কর্মসূচি:
আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকেই আল্লাহ তাঁর অপরিসীম সাহায্য হেযবুত তওহীদের উপরে ঢেলে দিয়েছেন। হেযবুত তওহীদের কর্মসূচি কী হবে তা আন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রথম দিনেই আল্লাহ একটি সহীহ হাদিস থেকে মাননীয় এমামুয্যামানকে বুঝিয়ে দেন। মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মহান আল্লাহ যে কর্মসূচি তাঁর শেষ রসুলকে দান করেছিলেন, যে কর্মসূচি স্বয়ং আল্লাহর রসুল এবং তাঁর হাতে গড়া উম্মতে মোহাম্মদী অনুসরণ করেছিলেন সেই পাঁচ দফা কর্মসূচি অনুসরণ করেই হেযবুত তওহীদ সত্যদীন, দীনুল হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই ৫ দফা কর্মসূচি তিনি তাঁর উম্মাহর উপর অর্পণ করার সময় বলছেনÑ এই কর্মসূচি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, এখন এটা তোমাদের হাতে অর্পণ করে আমি চলে যাচ্ছি। সেগুলো হলো :
(সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে) ঐক্যবদ্ধ হও।
(যিনি নেতা হবেন তার আদেশ) শোন।
(নেতার ঐ আদেশ) পালন করো।
হেযরত (অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ) করো।
(এই দীনুল হক কে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করো। এখানে জেহাদ অর্থ: সর্বাত্মক চেষ্টা, প্রচেষ্টা।
যে ব্যক্তি এই ঐক্যবন্ধনী থেকে এক বিঘত পরিমাণও বহির্গত হলো, সে নিশ্চয় তার গলা থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেললো- যদি না সে আবার ফিরে আসে (তওবা করে) এবং যে ব্যক্তি অজ্ঞানতার যুগের দিকে আহ্বান করল, সে নিজেকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করলেও, নামায পড়লেও এবং রোজা রাখলেও নিশ্চয়ই সে জাহান্নামের জ্বালানী পাথর হবে [আল হারিস আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে আহমদ, তিরমিযি, বাব উল এমারাত, মেশকাত]।

মূলনীতি:
হেযবুত তওহীদ চেষ্টা করবে আল্লাহর রসুলের প্রতিটি পদক্ষেপকে অনুসরণ করতে।
হেযবুত তওহীদের কোনো গোপন কার্যক্রম থাকবে না, সবকিছু হবে প্রকাশ্য এবং দিনের আলোর মত পরিষ্কার।
হেযবুত তওহীদের কেউ কোনো আইনভঙ্গ করবে না, অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না, গেলে তাকে এমাম নিজেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেবেন।
যারা হেযবুত তওহীদের সদস্য নয় বা সমর্থনও করে না এমন কারো থেকে কোনোরূপ অর্থ গ্রহণ করা হবে না।
হেযবুত তওহীদের কোনো সদস্য কোনো প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হতে পারবে না।
কর্মক্ষম কেউ বেকার থাকতে পারবে না, বৈধ উপায়ে রেযেক হাসিলের চেষ্টা করবে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য:
মানবজাতির বর্তমান সঙ্কট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা। মুসলিম বলে পরিচিত এই জনসংখ্যাটিসহ সমস্ত মানবজাতি আজ ঐ জীবনব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে তাদের জীবন পরিচালনা করছে। ফলে সমস্ত পৃথিবীতে কোথাও শান্তি নেই, মানুষের জীবন সংঘর্ষ, রক্তপাত, অন্যায়, অবিচারে পূর্ণ হয়ে আছে। হেযবুত তওহীদের বক্তব্য এই যে, শান্তি, ন্যায়, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থাকে সমষ্টিগত জীবনে কার্যকর করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহর রসুলের রেখে যাওয়া ইসলামের রূপ গত কয়েক শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে বিকৃত হয়ে আজ একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গেছে। সেই আকিদা আর আজকে আকিদা এক নয়।
ধর্মব্যবসায়ী একটি শ্রেণি ইসলামের উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিয়ে স্বার্থ হাসিল করছে। অথচ ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণে। দীনের কোনো বিনিময় চলে না, বাড়াবাড়িও চলে না। দীনের বিনিময় নিলে এবং বাড়াবাড়ি করলে দীনের আসল চরিত্র হারিয়ে বিকৃত হয়ে যায়। আজকে সেটাই হয়েছে। এজন্যই আল্লাহ সর্বপ্রকার ধর্মব্যবসাকে হারাম করেছেন। কাজেই দীনের কাজ সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে করতে হবে এবং বিনিময় নিতে হবে কেবল আল্লাহর কাছ থেকে।
ব্রিটিশরা এই জাতিকে পদানত করার পর এরা যেন কোনদিন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে এজন্য একটি শয়তানি ফন্দি আঁটে। তারা এ জাতির মানুষের মন ও মগজকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য দু’টি সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করে, যথা: মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা। তাদের অধিকৃত সকল উপনিবেশেই তারা মুসলমানদেরকে ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার নাম করে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে তারা নিজেদের মনগড়া একটি বিকৃত-বিপরীতমুখী ইসলাম শিক্ষা দেয়। মাদ্রাসাগুলির অধ্যক্ষপদ তারা নিজেদের হাতে রেখে দীর্ঘ ১৪৬ বছর এই উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে তাদের তৈরি ‘ইসলাম’ শিক্ষা দিয়েছে। এখানে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদির কোন কিছুই রাখা হলো না, যেন মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে আলেমদের রুজি-রোজগার করে খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই দীন, ধর্ম বিক্রী করে রোজগার করা ছাড়া আর কোনো পথ না থাকে। খ্রিস্টানরা এটা এই উদ্দেশ্যে করল যে তাদের মাদ্রাসায় শিক্ষিত এই মানুষগুলো যাতে বাধ্য হয় দীন বিক্রি করে উপার্জন করতে এবং তাদের ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে বিকৃত ইসলামটা এই জনগোষ্ঠীর মন-মগজে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়; এ উপমহাদেশসহ খ্রিস্টানরা তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দেশগুলিতে এই একই নীতি কার্যকর করেছে এবং সর্বত্র তারা একশ’ ভাগ সফল হয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থাটি তারা চালু করল স্কুল কলেজের মাধ্যমে। এ ভাগটা তারা করল এই জন্য যে, এ বিরাট এলাকা শাসন করতে যে জনশক্তি প্রয়োজন তা এদেশের মানুষ ছাড়া সম্ভব ছিল না; সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের কেরাণীর কাজে অংশ নিতে যে শিক্ষা প্রয়োজন তা দেওয়ার জন্য তারা এতে ইংরেজি ভাষা, সুদভিত্তিক অংক, বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক, ইতিহাস (প্রধানতঃ ইংল্যান্ড ও ইউরোপের রাজা-রাণীদের ইতিহাস), ভূগোল, প্রযুক্তিবিদ্যা অর্থাৎ পার্থিব জীবনে যা যা প্রয়োজন হয় তা শেখানোর বন্দোবস্ত রাখল; সেখানে আল্লাহ, রসুল, আখেরাত ও দীন সম্বন্ধে প্রায় কিছুই রাখা হলো না, সেই সঙ্গে নৈতিকতা, মানবতা, আদর্শ, দেশপ্রেম ইত্যাদি শিক্ষাও সম্পূর্ণ বাদ রাখা হলো। তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দেওয়া হলো যাতে তাদের মন শাসকদের প্রতি হীনম্মন্যতায় আপ্লুত থাকে এবং পাশাপাশি তাদের মন-মগজে, আল্লাহ, রসুল, দীন সম্বন্ধে অপরিসীম অজ্ঞতাপ্রসূত বিদ্বেষ (A hostile attitude) সৃষ্টি হয়। বিশ্ব-রাজনৈতিক কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের খ্রিষ্টান শক্তিগুলি তাদের উপনিবেশগুলিকে বাহ্যিক স্বাধীনতা দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় তারা ক্ষমতা দিয়ে যায় এই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শ্রেণিটির উপর যারা চরিত্রে ও আত্মায় ব্রিটিশদের দাস। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া সেই শিক্ষাব্যবস্থা আজও চালু আছে। এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী নামে খ্রিষ্টান হলেও তারা প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আ.) এর অনুসারী ছিলো না। ঈসা (আ.) এর শিক্ষাকে বহু পূর্বেই তারা বাদ দিয়ে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
আল্লাহর শেষ রসুল আখেরি যামানায় যে এক চক্ষুবিশিষ্ট দানব দাজ্জালের আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যাকে ঈসা (আ.) এন্টি ক্রাইস্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন, মাননীয় এমামুয্যামান সেই দাজ্জালকে হাদিস, বাইবেল, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে সন্দেহাতীতভাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ধর্মহীন সভ্যতাই হচ্ছে সেই দাজ্জাল। বর্তমানে সমগ্র মানবজাতি সেই দাজ্জালের তৈরি জীবনবিধান মেনে নিয়ে তার পায়ে সেজদায় পড়ে আছে। পরিণামে তারা একদিকে যান্ত্রিক প্রগতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করলেও মানুষ হিসাবে তারা পশুর পর্যায়ে নেমে গেছে। সমগ্র মানবজাতি ঘোর অশান্তি, অন্যায়, অবিচারের মধ্যে ডুবে আছে। দাজ্জালের হাত থেকে পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে নিয়ে আল্লাহর হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।

কার্যক্রমসমূহ:
আমরা রাষ্ট্রীয় আইনকে পূর্ণরূপে মান্য করে প্রায় দুই যুগ ধরে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছি। মানবজাতিকে স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের দিকে, সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহ্বান করার জন্য হেযবুত তওহীদ মাননীয় এমামুয্যামানের বক্তব্য ও লেখা সম্বলিত হ্যান্ডবিল, বই, পত্রিকা, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদি সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে। এরই অংশ হিসাবে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, রাস্তাঘাটে এই প্রকাশনা সামগ্রীগুলি বিক্রয়, বই মেলায় স্টল গ্রহণ, শিল্পকলা একাডেমী, পৌর মিলনায়তন, জাতীয় প্রেসক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হল, জাতীয় যাদুঘরের সেমিনার কক্ষ, ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটিসহ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতিতে, প্রায় সকল ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তি ও ধর্মগুরুদের নিয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সাথে দেখা করে আমাদের সকল কার্যক্রম সম্পর্কে নিয়মিতভাবে অবহিত করে থাকি এবং প্রকাশনাসমূহ দিয়ে আমাদের বক্তব্য সম্পর্কে জানিয়ে থাকি। হেযবুত তওহীদের প্রকাশনাগুলি আন্দোলন ও পত্রিকার ওয়েবসাইটগুলিতেও প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম ও কার্যালয় রয়েছে।
সম্পাদনা: আতাহার হোসাইন

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...