হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ফেরকাবাজি বন্ধ হোক, ঈমানী চেতনা ব্যয় হোক মানুষের কল্যাণে

মো. মশিউর রহমান
আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা সচরাচর দেখে থাকি বাংলাদেশে হিন্দুদের পাড়াতে এভাবে অগ্নিসংযোগ করে, প্রতিমা ভেঙে মানুষকে সর্বশান্ত করা হয়। এভাবে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্ট দাঙ্গায় হতাহত হয় বহু মানুষ। ভারতে করা হয় সেখানকার সংখ্যালঘুদেরকে, বার্মায় রোহিঙ্গাদেরকে। গোটা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন তো আছেই, সেটা অবশ্য সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে। সেখানে হতাহত, আক্রান্ত ও উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা হিসাব হয় লাখ ও কোটির ঘরে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে এক শ্রেণির ওলামায়ে কেরাম যারা বিভিন্ন অজুহাতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করে থাকেন, তারা চিন্তার সংকীর্ণতায় এমনই তুলনাহীন যে মুসলিমদের উপর নেমে আসা বৈশ্বিক সংকট, অস্তিত্বের সংকট স¤পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, সেটা যে একটা চিন্তার বিষয় এটাও তাদের মাথায় ধরে না। তারা একবার চোখ তুলে দেখেন না যে রোহিঙ্গা পল্লীতে এখনও আগুন জ্বলছে, এখনও নো ম্যানস ল্যাণ্ডে মুসলিম দাবিদার রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দিবানিশি ক্রন্দন করছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকটা নারী ধর্ষিতা। আজ বাদে কাল আমাদের দেশের মুসলমানদেরও সিরিয়া-ইরাক-লিবিয়া-ফিলিস্তিন-কাশ্মীর-রাখাইন-আফগানিস্তান-বসনিয়া-চেচনিয়া-রুয়ান্ডা-জিংজিয়াং-সোমালিয়ার মতো হয়ে যাওয়ার বিরাট আশঙ্কা রয়েছে। সেই বিরাট শত্রুর বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রস্তুতি নেই, কোনো প্রতিবাদ নেই, কোনো কর্মসূচি নেই। তাদের চোখ নিবদ্ধ ফতোয়ার পাতায়।

তাদের একমাত্র শত্রু হচ্ছে মুসলিমদের মধ্যেই বিরাজ করা ভিন্ন মতাবলম্বীরা। মধ্যপ্রাচ্যে সহস্রবর্ষব্যাপী শিয়া-সুন্নী যুদ্ধ ও দাঙ্গা দেখে পশ্চিমারা হাততালি দেয় আর দুই পক্ষের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দেয় আর বলে, তোরা নিজেরা নিজেরা কামড়া কামড়ি করতে করতে মর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে এই শিয়া-সুন্নী যুদ্ধ থেকেই হবে।

আর আমাদের এখানেও বিকৃত মস্তিষ্ক ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী ব্যস্ত আছেন কারা ফেরকায়ে বাতেলা সেই ফতোয়া নিয়ে। “ওহাবিরা মাহফিল করবে, গায়ে একবিন্দু রক্ত থাকতে সেটা হতে দেব না” – এই বলে গর্জন করেন সুন্নী আলেমরা। তারা সংখ্যায় বেশি। এভাবে এক পীর আরেক পীরকে ভণ্ড বলে ওয়াজ করেন। তাদের ওয়াজের বিষয়ই হচ্ছে ইসলামেরই অন্য কোনো গোষ্ঠীর পিণ্ডি চটকানো। এভাবে তারা সারাদেশে ওয়াজ করে এক আলেম আরেক আলেমের দাঁত ভাঙ্গেন, এক পীর আরেক পীরকে জাহান্নামে পাঠান, এক মাদ্রাসা আরেক মাদ্রাসার উপর বিষোদগার করেন। এর পর জনতাকে ক্ষিপ্ত করে তুলে হামলা চালান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। উভয় পক্ষই “নারায়ে তাকবির – আল্লাহু আকবার” বলে একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তেরশ বছর ধরে ফেরকা-দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে ফতোয়াবাজি করার এই হলো শেষ পরিণতি।

যেভাবে আজকে এক ফেরকা আরেক ফেরকাকে নির্ম‚ল করার জন্য কোমর বেঁধে নামেন সেই প্রাণশক্তি আর উদ্যমটা যদি তারা মানুষের কল্যাণে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যয় করতেন তাহলে মুসলিম জাতির চেহারা আজ অন্য হতো। কে তাদেরকে বলে দেবে তোমরা যারা “এক জাতিকে একশখান” করেছ তোমরা কেউ মো’মেন না, মুসলিম না, উম্মতে মোহাম্মদী না। জান্নাত তোমাদের সবার জন্য নিষিদ্ধ, হারাম। জান্নাতে যেতে হলে, দুনিয়াতে বাঁচতে হলে আগে এসব ফেরকা-মাজহাব ত্যাগ করো, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় আর মাসলা মাসায়েল নিয়ে এই জাতিবিনাশী মতোবিরোধ ত্যাগ করো আগে সাধারণ অঙ্গীকার – আল্লাহ ছাড়া কোনো এলাহ (বিধানদাতা, হুকুমদাতা) নেই, এ কথার ভিত্তিতে এক জাতি, এক উম্মাহ হও। তাহলে তোমরা আর হাসির পাত্র হবে না, আক্রান্ত হবে না। তাহলে তোমাদের দেশ বাঁচবে। নতুবা তোমাদের অবস্থাও হবে সিরিয়ার মতো। সেখানে এখন গোরস্তান, মৃত্যুপুরি। গোরস্তানে ওয়াজ চলে না, ধর্মব্যবসায়ীদের টাকা পয়সা দেওয়ারও কেউ থাকে না। তোমাদের কারণে আল্লাহ-রসুলের বদনাম হচ্ছে, তোমাদের কারণে মানুষ আতঙ্কিত, মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারো তাহলে আগামীকাল মানুষ ঠিকই তোমাদের মুখোস টেনে ছিড়বে, তোমাদের প্রত্যাখ্যান করবে, তোমাদের অস্বীকার করবে, তোমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। সেদিন আর পালানোর জায়গা পাবে না।

এটাই রসুলাল্লাহ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন- আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব। তারা ফেতনা সৃষ্টি করবে। সেই ফেতনা তাদের পানেই ধাবিত হবে (বায়হাকি, মেশকাত)। ফেতনাসৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে রসুলাল্লাহর এত সাংঘাতিক ভবিষ্যদ্বাণী বৃথা যাবে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...