হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

না জেনে ইসলামের সমালোচনা যৌক্তিক নয়

-রিয়াদুল হাসান, সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ

রাজধানীর সবুজবাগে হেযবুত তওহীদের আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় আন্দোলনের সাহিত্য সম্পাদক মো. রিয়াদুল হাসান ইসলামের সমালোচনা করার ধর্মীয় যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বজুড়ে চলমান ইসলামবিদ্বেষী প্রপাগান্ডা ও তার প্রতিবাদে
কতিপয় মুসলিম দাবিদার কর্তৃক প্রতিহিংসাবশত সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রকৃপতক্ষে ইসলাম একটি আদর্শ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা (Ideology ev complete code of life)। কাজেই অন্য কোনো আদর্শের অনুসারীরা এর সমালোচনা করতেই পারেন, তাদের দৃষ্টিতে কোনো অসঙ্গতি তুলে ধরতে পারেন। আল্লাহ নিজেই তাঁর সৃষ্টির এবং কোর’আনের অসঙ্গতি খুঁজে বের করার জন্য বার বার আহ্বান করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন খুঁত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টি ফেরাও, কোন ভুল দেখতে পাও কি? অতপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ, তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে (সুরা মুলক আয়াতঃ ৩-৪)। এখানে আল্লাহ শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন তাফওয়াতিন যার অর্থ Falt, Flaw, অসামঞ্জস্য, বৈপরীত্য, ভুল এবং ফুতুরিন যার অর্থ খুঁত, ফাটল, চিড়, ভাঙ্গন,ত্রুটি, অসঙ্গতি ইত্যাদি (আরবী-বাংলা অভিধান ২য় খণ্ড, পৃ: ৪৫০, ইফাবা)। কাজেই আল্লাহ স্বয়ং যেখানে তাঁর কোর’আন সম্পর্কে, সৃষ্টি সম্পর্কে, আয়াত এমন কি তাঁর নিজের সম্পর্কে ভুল সন্ধান করার জন্য আহ্বান করছেন, সেখানে কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করে, তার দৃষ্টিতে ধরা পড়া কোনো অসঙ্গতি তুলে ধরে তাহলে তার বিরুদ্ধে আক্রোশ প্রদর্শন করা, তাকে আক্রমণ করা, তাকে হত্যা করা ইত্যাদি অবশ্যই অন্যায্য, অপ্রগতিশীল, ক্ষুদ্রতা, অযৌক্তিক ও আল্লাহর অভিপ্রায় বহির্ভূত কাজ। এক্ষেত্রে যেটা করণীয় তা হচ্ছে, যুক্তি-তর্ক দিয়ে নিজেদের মতামতকে সমুন্নত করা এবং মিথ্যা অভিযোগ ব্যর্থ প্রমাণ করা। এ কাজটিই আল্লাহ করেছেন তাঁর সমগ্র কোর’আনময়।”
তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা প্রচারকারীদের মানসিকতাকে একপ্রকার অন্ধত্ব বলে উল্লেখ করেন। তার মতে ইসলাম বিদ্বেষীরা মূলত বিকৃত ইসলামের কূপমণ্ডূক পুরোহিত আলেম সমাজের কর্মকাণ্ড ও প্রগতিবিরোধী, ধ্যানধারণাকে ইসলাম বলে ধরে নিয়ে আল্লাহ-রসুলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তকে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে রিয়াদুল হাসান আরো বলেন, “যারা কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড দেখে আল্লাহ-রসুল, ধর্মগ্রন্থসমূহ, অবতারগণ এবং তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে, ব্যাঙ্গচিত্র এঁকে, অশ্লীল সাহিত্য লিখছেন তাদের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো, সমালোচনা এক জিনিস আর গালিগালাজ আরেক জিনিস। গালাগালি হচ্ছে শত্রুতা বহিঃপ্রকাশ। অন্ধ-ধর্মবিদ্বেষী আচার আচরণ করে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মনে আঘাত করে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই বিজ্ঞানমনস্কতা, মুক্তমনের পরিচায়ক নয়। আপনারা ইসলামের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদি উপস্থাপন করে গঠনমূলক যৌক্তিক সমালোচনা করুন। সে পথ রুদ্ধ নয়।”
তিনি মহানবীর আবির্ভাবের ফলে মানব সভ্যতায় বিপুল ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। তাঁর এই অবদানকে উল্লেখমাত্র না করে তাঁর ব্যক্তিজীবনের বিষয়াদি নিয়ে মুক্তমনা দাবিদারদের অতি-আগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগের শিক্ষা-দীক্ষাহীন, সামরিক শক্তিহীন, ঐক্যহীন, শৃঙ্খলাহীন, লক্ষ্যহীন, সর্ববিষয়ে পশ্চাৎপদ, দারিদ্র্যের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, বংশানুক্রমে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পারস্পরিক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত, এক কথায় আরব গোত্রভিত্তিক অসভ্য বেদুইন জনগোষ্ঠীকে যিনি একটি অর্ধবিশ্বজয়ী পরাশক্তি, সুসংগঠিত, দুর্দান্ত গতিশীল, সুশৃঙ্খল, চারিত্রিক ও পাথির্ব সম্পদে সমৃদ্ধ, ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ ও সুসভ্য একটি জাতিতে রূপান্তরিত করলেন, যাঁর মাধ্যমে ঐ জাতিটি অতি অল্প সময়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিশ্বের সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হলো, যিনি মানব ইতিহাসের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেন, তাঁর এত বিরাট কৃতিত্ব যারা দেখে না, সেই মহাবিপ্লবী নবীর জীবনীতে মানুষ হিসাবে তাঁর সার্বিক সফলতার মহত্তম রূপ যাদের দৃষ্টিতে পড়ে না, বরং সেই মানুষটির ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে যারা দিনরাত বিষোদগার করে বেড়ান, এমন স্থূলমস্তিষ্ক, দৃষ্টিহীনদের ব্যাপারে কী-ই বা বলার আছে? এই ক্ষুদ্রতা শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে কীভাবে এলো সেটা ধর্মপ্রিয় মানুষেরা যদি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতেন তাহলে আর এই দৃষ্টিহীনদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে কীভাবে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে যত্নশীল হতেন।”
পরিশেষে তিনি ধর্মের নামে চলমান সকল বিকৃতি, ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ এবং আদর্শহীন স্বার্থের রাজনীতির বিরুদ্ধে আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে যার যার অবস্থান থেকে সকলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...