হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্ম নিয়ে অপ-রাজনীতি এবং আমাদের নারী সমাজ

Aporajnityরিয়াদুল হাসান

আমাদের সমাজে নারীরা পদে পদে হচ্ছেন নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। এই সমাজ যেন ১৪০০ বছর আগের আরবের সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। নারীর চরম অবমাননার সেই যুগে ইসলাম এসেছিল মুক্তির বার্তা নিয়ে। নারীকে দিয়েছিল পূর্ণ মর্যাদা, অধিকার আর স্বাধীনতা। অথচ আমাদের সমাজের ধর্মব্যবসায়ী আলেম সমাজ যে ইলাম নিয়ে আছেন সেটা সমাজকে শান্তিপূর্ণ করার চেয়ে আরও বেশি অশান্তিময় করে তুলেছে।
আমাদের সমাজে যে শ্রেণিটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে নিজেদেরকে আলেম বলে মনে করেন তারাই পদে পদে ধর্মকে অপব্যাখ্যা করে নারীকে পিছন থেকে টেনে ধরছেন। তারা বলছেন, নারী নেতৃত্ব হারাম। কিন্তু আমরা যামানার এমামের অনুসারীরা কোর’আন হাদীস থেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছি যে এটা সঠিক নয়। সমাজের যে কোন অঙ্গনেই একজন নারীর যোগ্যতা, তার জ্ঞান, বুদ্ধি, দক্ষতা যদি পুরুষের তুলনায় বেশি থাকে তবে সেই কাজ ভালোভাবে করার জন্য নারী অবশ্যই নেতৃত্ব দেবে। এভাবে একটি দেশের প্রধান নারী হতে পারেন, সেনা প্রধানও নারী হতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা আরও প্রমাণ করেছি যে নারীদেরকে যেভাবে আপাদমস্তক ঢেকে বোরকা পরিয়ে পর্দা করাতে চায় সেই নির্যাতনমূলক প্রথা ইসলামে নেই।
রসুলাল্লাহর আহ্বানে সর্বপ্রথম যিনি ইসলাম গ্রহণ কোরলেন তিনি একজন নারী, আম্মা খাদিজা (রা:)। সর্বোচ্চ ত্যাগের পরিচয় তিনি দিয়ে গেছেন। ইসলামের জন্য সর্বপ্রথম যিনি জীবন দিলেন, শহীদ হলেন তিনি একজন নারী, সুমাইয়া (রা:)। রসুলাল্লাহর সাথে থেকে নারী আসহাবগণ যুদ্ধ কোরেছেন। যুদ্ধাহতদের সেবা কোরেছেন, নিহতদের দাফনে সহায়তা কোরেছেন। এমনকি অস্ত্র হাতে শত্র“ সেনাদের উপর বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের পরাজিত কোরেছেন। রসুলাল্লাহর সামনে বসে নারী-পুরুষ উভয়ই শিক্ষা গ্রহণ কোরতেন, তাঁর কথা শুনতেন, একই সাথে একই নিয়মে নামাজ পড়তেন, জুমায় যেতেন, ঈদের জামাতেও যেতেন। অথচ আজকের আলেম সাহেবরা মেয়েদেরকে মসজিদে ঢুকতে দেন না।
আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করছে, জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর করছে তারা তালিম করে নারীদেরকে শেখায় যে অমুক মার্কায় ভোট দিলে জাহান্নামে যেতে হবে, কারণ তাদের প্রধান একজন নারী। আর অমুক মার্কায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। মসজিদের ইমাম সাহেবরা পর্যন্ত এসব মিথ্যা কথা প্রচার করেন। আসলে তারা সবাই একজোট যে, দেশটাকে তারা একটি মোল্লাতান্ত্রিক দেশ বানাবে, তালেবানরা যেটা আফগানিস্তানে করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশকে আমরা আফগানিস্তানে ইরাকে সিরিয়ায় পরিণত হতে দিতে পারি না। আমাদের দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ নারীদেরকেও ধর্মব্যবসায়ীদের ভণ্ডামির ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে, যেন কেউ তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার না কোরতে পারে।
ধর্ম নিয়ে অপরাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় চলে আসতে পারে তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ ভারত। ভারতের হিন্দুত্ববাদী, মৌলবাদ যতগুলি সংগঠন আছে সবাই মিলে বিজেপি’র অধীনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে। তাদের সামনে তুলোর মত উড়ে গেছে ভারতের ১২৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের দল জাতীয় কংগ্রেস। পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক দলগুলিরও চূড়ান্ত ভরাডুবি হোয়েছে। ধর্মীয় উন্মাদনা এসে সকল ধর্মনিরপেক্ষ দলকে একেবারে হাওয়ায় মিশিয়ে দিল। এটা কিভাবে সম্ভব হল? এর কারণ অনেক গভীরে। ভারতবর্ষের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে ধর্ম অতপ্রোতভাবে জড়িত, ধর্মানুভূতি তাদের রক্ত মাংসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র বাংলাদেশ ও ভারতের হিন্দু বা মুসলিম কোন সম্প্রদায়ই নিখাঁদভাবে মেনে নেয় নি, নেবেও না। এই নির্বাচন আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে যে ধর্মীয় ইস্যুই এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ফ্যাক্টর। কাজেই আমাদের দেশেও একে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
আসলে ধর্মীয় উন্মাদনা এমন একটি যা জোর করে দমন করলে আরও বৃদ্ধি পেয়ে মানুষকে সহিংসতা ঘটাতে অনুপ্রাণিত করে, এমন কি সেটা জাতিকে গৃহযুদ্ধের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। শক্তি প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত আফগানিস্তানে আজও তালেবানদের সঙ্গে পেরে ওঠে নি। উপরন্তু শক্তিপ্রয়োগ কোরলে প্রকাশ্য আন্দোলনকারীরা গোপন জঙ্গী দলে রূপান্তরিত হয়, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আরম্ভ করে। তাদের কারও ফাঁসি হলে বা কেউ নাশকতা কোরতে গিয়ে মারা গেলে তাকে শহীদ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, সে নায়কে পরিণত হয়। জঙ্গিবাদ মোকাবেলার সঠিক পথটি হচ্ছে প্রথমে মানুষের সামনে এটা খোলাসা করে দিতে হবে যে, এই ধর্মব্যবসায়ীরা ইসলামের লেবাসধারী ভণ্ড, ধর্মকে তারা কীভাবে বিকৃত করে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে চলেছে। এটাই হচ্ছে মাননীয় এমামুযযামানের প্রস্তাবনা অর্থাৎ ধর্মের মাধ্যমেই জঙ্গিবাদ নামক অধর্মকে রুখতে হবে, শক্তি দিয়ে রোখা যাবে না। এটা করা গেলে ধর্মব্যবসায়ীরা আর মানুষকে উত্তেজিত করে দেশে একটি দাঙ্গা বাধাতে পারবে না, তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
আমাদের এই জাতি কেন পিছিয়ে আছে তার প্রকৃত কারণ আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের সর্বত্র জনসভা, সেমিনার, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণের সামনে ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোস মানুষের সামনে খুলে দিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের চাওয়া, যুগের পর যুগ হতাশা আর ব্যর্থতার আবর্তে না ঘুরে ষোলো কোটি বাঙালী সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোক। তাহলে তারাই পৃথিবীর বুকে একটি শক্তিশালী জাতিরূপে আবির্ভূত হতে পারবে এনশা’আল্লাহ।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...