হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন-আমাদের উত্তর

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

প্রশ্ন: হেযবুত তওহীদ কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাহলে জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোট দিবে কিনা? যদি না দেন তাহলে তারা দেশের নাগরিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেন না, আর যদি দেন তাহলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা জড়িয়েই গেল।

উ: আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা শর্ত হলো এই প্রচলিত রাজনীতিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করব না। কিন্তু আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কাউকেই ভোট দেব না – এই অধিকার অবশ্যই আমার আছে। একবার অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও ‘না-ভোট’ দেওয়ার সুযোগ চালু করা হয়েছিল। তারপর কী কারণে যেন সেটা আবার উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব উৎসাহিত হয়েছিলাম। এমামুয্যামান বলেছিলেন, ‘না-ভোট’ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আমরা দলেবলে গিয়ে ভোট দেব। এখন কেন তারা ‘না – ভোট’ উঠিয়ে দিলেন? কারণ সম্ভবত ভোটে না ভোটের বাক্স ভর্তি হয়ে যাবে।
ভোট দিতে আমাদের অসুবিধা নাই। আমাদের দাবি শুধু একটা- আপনারা এই স্বার্থের রাজনীতি পরিহার করুন। আপনারা যদি এই কথার উপরে আপনাদের এশতেহার দাঁড় করাতে পারেন যে, আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হলাম, আমরা জাতির ক্ষতি হয় এমন কাজ করব না, আমরা ঘরে খাবো, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে জাতির কল্যাণে কাজ করব, নিজের টেলিফোন বিল ব্যবহার করব, নিজের গাড়ির তেল খরচ করব, মানুষের টাকায় রাজনীতি করব না- এই রকম যদি আপনারা অঙ্গীকার করতে পারেন, আপনারা যদি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন তাহলে আমরা আপনাদেরকে ঘোড়া সাজিয়ে, হাতি সাজিয়ে ভোট দিতে যাব। আমার কোনো আপত্তি নাই।
আপনারা বলতে পারেন যে নিজের ঘরে খাব গাড়ির তেল পোড়াব নিজের টেলিফোন ব্যবহার করব আমার কী দায় পড়েছে? আমি সেক্ষেত্রে বলব, আপনার যদি দায় না পড়ে তাহলে রাজনীতির নামে মানুষ খুন করে নেতা হওয়ার এত খায়েসটা কেন? আপনারা সামান্য একটা পদের জন্য নিজের দলের লোক পর্যন্ত খুন করে ফেলেন। এইটাই আমার কথা। স্বার্থ যদি নাই থাকে আপনি সরে যান সামনে থেকে। নিশ্চয়ই সমাজে ভালো মানুষ আছে, তারা এগিয়ে আসবেন। শিক্ষিত, ভদ্র, মানবতাবাদী মানুষ সমাজে আছেন। তারা মানুষের ক্ষতি করবেন না, দেশের ক্ষতি করবেন না, মরে গেলেও ওয়াদা খেলাফ করবেন না, তারা আল্লাহর নাফরমানি করবে না। আমি বিশ্বাস করি এই মানুষ বাংলার মাটিতে আছে। এই স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকদের কারণে তারা উঠে আসতে পারছে না। কাজেই আমাদের দাবি পরিষ্কার। আমাদের চাওয়া জটিল নয়, প্যাঁচালো নয়। নির্বাচনে ভোট দিতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু এই সংস্কৃতি, এই দ্বন্দ্বের রাজনীতি, হানাহানির রাজনীতি পরিহার করুন। আমরা হাতি ঘোড়া সাজিয়ে মহা সমারোহে আপনাদেরকে নির্বাচিত করব। তখন এটা হবে আমাদের জন্য এবাদত। আপনারা হবেন আমাদের আমীর, আমাদের নেতা। আপনাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব। আপনারা আমাদের কল্যাণকামী হবেন। উমরের (রা.) মত পিঠে আটার বস্তা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন। আমার আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু যতক্ষণ আপনাদের মতো স্বার্থান্ধ, ধান্ধাবাজ রাজনীতিকরা আছেন ততক্ষণ আমাদের টেনশন আছে। আমাদের কথা সার্বজনীন কথা, সকলের জন্য কল্যাণকর কথা। জানি না আমার এ কথা কার কর্ণক‚হরে যাবে।

প্রশ্ন: হেযবুত তওহীদের মতো একটি ভুঁইফোঁড় আন্দোলনও আজকে পোস্টারিং করে শহরের সৌন্দর্যহানি করেছেন।

উত্তর: আমাদের সমাজে আজ একেকজন মানুষ এমন অহঙ্কারী হয়েছেন যে আমরা যত সত্য কথাই বলি না কেন, তারা বলবেন, এহ!!! হেযবুত তওহীদ। এদের কথা নেওয়া যায় নাকি? একজন মহিলা সাংবাদিক না কে যেন আমাদের পোস্টার দেখে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, আমরা নাকি রাজধানীর সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছি। ভাবে মনে হয় এতদিন এদেশে কেউ পোস্টার লাগায়নি, তাই তার মাথায় এই জাতীয় প্রতিবেদন লেখার বুদ্ধিটাও আসেনি, প্রয়োজনও অনুভ‚ত হয়নি। আর আমিই প্রথম মানুষ যে কিনা ঢাকা শহরে পোস্টারিং করলাম, আমার ছবিওয়ালা পোস্টার লাগানোতেই দেওয়ালগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অথব বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের গ্রাম ও শহরের প্রায় সমস্ত দেওয়ালই সারা বছর কোনো না কোনো পোস্টারে ছাওয়া থাকে। সেটা ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার হোক বা নির্বাচনী প্রচারণা পোস্টারই হোক, অথবা কোনো পণ্যের বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনমূলক পোস্টারই হোক।
আমি চিন্তা করলাম ব্যাপারটা নিয়ে। আমার যেটা মনে হলো এই প্রতিবেদনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিবেদক আমাদের অস্তিত্বকে সহ্য করতে পারছে না। সিনেমার অশ্লীল পোস্টারও তিনি সহ্য করতে পারেন কিন্তু হেযবুত তওহীদ আন্দোলন পোস্টারিং করবে- একজন সাংবাদিক হিসাবে সে এই ঔদ্ধত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তাই সে একটা রিপোর্ট করবে, মোল্লার দৌঁড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত, তারও একটা দৌঁড়ের সীমানা আছে। সেটুকু সে করবে। ঐ দেওয়ালে আরো অনেক রাজনৈতিক দলের পোস্টার ছিল। কিন্তু সে ক্যাপশন দিয়েছে যে হেযবুত তওহীদের মতো ভুঁইফোঁড় সংগঠনও পোস্টার লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্যের হানি ঘটাচ্ছে।
বাংলা ডিকশেনারিতে ভুঁইফোঁড় শব্দটার অর্থ কী? ভুঁইফোঁড় শব্দের অর্থ হচ্ছে মাটি ফুঁড়ে নতুন করে যা গজায়। অপরিচিত, উপেক্ষিত, অনভিজাত। হেযবুত তওহীদ হচ্ছে এগুলো। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। সুলতানী আমলে এই পন্নী পরিবার ছিল বাংলা বিহার উড়িষ্যার সম্ভ্রান্ত পরিবার রাজ পরিবার। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য ১৫৭৬ সনে মোঘল বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছেন। দশটাকার নোটে যে আতিয়া মসজিদের ছবি সেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আতিয়া পরগনার জমিদার সঈদ খান পন্নী। আজকে যারা তাঁর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তাদের বলতে চাই – আপনারা যে মুসলমান হয়েছেন এর পেছনে তাঁদের কোরবানি রয়েছে। আপনারা যে আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতির চর্চা করছেন – এর পেছনে তাঁদের প্রভ‚ত অবদান রয়েছে। যখন মুসলিমদের কোনো কলেজ ছিল না তখন প্রাচ্যের আলিগড় খ্যাত করটিয়ার সাদত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দানবীর ওয়াজেদ আলী খান পন্নী ওরফে চান মিয়া। এই পরিবারের অবদানের শিকড় বাংলার মাটির ভিতরে গ্রথিত, প্রোথিত। আর আজ আপনারা হয়ে গেছেন অভিজাত, আর হেযবুত তওহীদ ভুঁইফোঁড়? আপনারা ইতিহাস জেনে কথা বলবেন। দেশবিভাগের পর যখন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীরা এদেশে আসতেন তারা করটিয়ায় রাত্রি যাপন করতেন। এদেশে যখন গণপরিষদ বসত তখন পন্নী পরিবারের বহু সদস্য সেই গণপরিষদের সদস্য থাকতেন। এ পরিবারের বহু সদস্য ক‚টনীতিক হিসাবে দেশের পক্ষে বিদেশের মাটিতে দায়িত্বপালন করেছেন। ডেপুটি স্পিকার ছিলেন এমামুয্যামানের চাচাতো ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এই পরিবারের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এমামুয্যামানের মায়ের নানা নবাব নওয়াব আলী চৌধুরির স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিনেট ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কত অবদানের কথা বলব? সেই এমামুয্যামানের প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনকে বলে ভুঁইফোঁড় আন্দোলন। আপনারাই বরং ভুঁইফোঁড়। হঠাৎ করে গজিয়েছেন বাংলার মাটিতে। নিজের অজ্ঞতাকে কলমের কালি দিয়ে জাহির করে যাচ্ছেন। নিজেদের অজ্ঞতাকে ঢেকে রাখুন। অবিদ্যা-অজ্ঞতার চেয়ে বড় পাপ নেই।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...