হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আল কোর’আনের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে?

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
বাংলাদেশের একটি সংবিধান আছে, সেখানে রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়া সুন্দরভাবে বিধিবদ্ধ করা আছে। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কী দরকার? রাষ্ট্রপতির কী দরকার? আমাদের জন্য সংবিধানই তো যথেষ্ট। কেউ যদি এমন প্রশ্ন করে তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই তাকে বেকুব সাব্যস্ত করবেন। কারণ এটা কমন সেন্স যে, কেবল সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র চলতে পারে না, রাষ্ট্র চালাতে হয় ব্যক্তিকে, সংবিধান সেই ব্যক্তিকে করণীয়-বর্জনীয়’র কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
এই সহজ সত্যটিই অনেকে বোঝেন না। তারা কিতাব দিয়ে জীবনের সব সমস্যার সমাধান করতে চান কিন্তু বোঝেন না কীভাবে কিতাব অনুসরণ করতে হয়। তারা বোঝেন না আল্লাহর রসুল যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তিনি ঐ জাতির অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, জাতির সদস্যদের ঘরে ঘরে আজকের মত রেডিমেড কোর’আন ছিল না, হাদীসের বইয়ের কথা তো কেউ চিন্তাও করতে পারত না। তারা যে কোনো বিষয়ে সমাধান জানতে তাদের নেতার শরণাপন্ন হত। তখন আল্লাহর রসুল বাস্তব প্রেক্ষাপট বুঝে সমাধান বা দিক-নির্দেশনা দিতেন। সেগুলোই পরবর্তীতে হাদীস আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে।
আল্লাহর রসুল ইন্তেকাল করলেন, পরোক্ষণেই আবু বকর (রা.) জাতির ইমাম হলেন। জাতির কাছে তখন তিরিশ পারার কোর’আন। অনেকে কোর’আনের হাফেজ ছিলেন। কিন্তু কেউ এ কথা বলল না যে, আমাদের কাছে তো কোর’আন   আছে, আমরা কোর’আন পড়লেই বুঝতে পারি, তাহলে আমরাই তো যথেষ্ট কোর’আন মেনে জীবনযাপন করার জন্য, কেন আমাদেরকে একজন ব্যক্তির হুকুম মানতে হবে?
কেউ তেমন কথা বলল না, কারণ তারা ধর্মান্ধ ছিলেন না। তারা জানতেন কোর’আন পড়ে, হাদীস পড়ে যে যার মত সিদ্ধান্ত নেওয়া এই দ্বীনের নীতিপরিপন্থী। পবিত্র কোর’আন জাতির জন্য। সেই জাতিতে কোর’আনের বাস্তবায়ন কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার থাকে কেবল জাতির অবিসংবাদিত ইমামের। জাতির কর্তব্য একজন সত্যনিষ্ঠ ইমামের অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকা, আর সেই ইমামের কর্তব্য জাতিকে আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে পরিচালিত করা। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর, রসুলের আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তোমাদের আদেশদানের অধিকারীর (নিসা ৫৯)। অন্যত্র বলেন,‘স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেককে তাদের ইমামসহ ডাকব (বনি ইজরাইল ৭১)। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে কোর’আন যতটা দরকারী, জাতির একজন ইমাম থাকাও ততটাই দরকারী।
তাই আল্লাহর রসুলের কাছে থেকে সরাসরি যারা ইসলাম শিখেছিলেন তাদের ইতিহাসে পাই- যখনই একজন খলিফা বা ইমাম ইন্তেকাল করেছেন, তার পরোক্ষণেই জাতি অন্য একজনকে তাদের ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। কোর’আন সংকলন ছাড়াই তারা বহু বছর কাটিয়ে দিয়েছেন কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নি, কিন্তু ইমামহীন অবস্থায় যাতে একটি মুহূর্তও কাটাতে না হয় সেজন্য তারা কতটা সজাগ ও সচেতন থেকেছেন তা ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের আকীদাচ্যুতি এই পর্যন্ত গেছে যে, কোর’আনের আয়াতের উচ্চারণ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও মারামারিতে লিপ্ত হলেও লক্ষ্যহীন ঐক্যহীন নেতৃত্বহীন কর্তৃপক্ষহীন এই জাতির ‘ইমাম’ নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তাই নেই। আমরা ঘরে বসে কোর’আন পড়ি, হাদীস পড়ি, আর নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নেই, একে অপরকে কাফের আখ্যা দেই, এমনকি রক্তপাত পর্যন্ত করি। অথচ জাতি যে বহু পূর্বেই তওহীদ থেকে বহির্গত হয়ে গেছে, ঐক্য নষ্ট করে জাতিসত্ত¡াই হারিয়ে ফেলেছে এবং পৃথিবীময় আল্লাহর অভিশাপের বস্তুতে পরিণত হয়েছে সে খেয়াল নেই।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...