হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আল্লাহর অঙ্গীকার শুধু মো’মেনের সঙ্গে

রিয়াদুল হাসান:
আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে যত কল্যাণের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবই মো’মেনের সঙ্গে। আল্লাহ সুরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আল্লাহর ওয়াদা (ওয়াদাল্লাহ) হচ্ছে যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে তাদেরকে আল্লাহ পৃথিবীর কর্তৃত্ব (খেলাফত, Authority, Power) প্রদান করবেন, যেমনটি তিনি দিয়েছিলেন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি তোমাদের দীনকে প্রতিষ্ঠা করবেন যেটা তিনি তোমাদের জন্য পছন্দ করেছেন। তোমাদের ভয়-ভীতি দূর করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করবেন। সেখানে তোমরা কেবল আমারই এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না। এরপর যারা (এ বিশাল নেয়ামতকে) অস্বীকার করবে, তারাই ফাসেক ও অবাধ্য।”
তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহ মো’মেনদের ওয়ালি (অভিভাবক, বন্ধু, রক্ষক, Protector) (সুরা ইমরান ৬৮)”। বলেছেন, “তোমরা হতাশ হয়ো না, নিরাশ হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে- যদি তোমরা মো’মেন হও (সুরা ইমরান ১৩৯)। বলেছেন, “মো’মেনকে সাহায্য করা আমার হক, কর্তব্য (সুরা রুম ৪৭)”।
এ পৃথিবী জোড়া মুসলিম জাতির করুণ দুর্দশা দেখলে যে কারো মনেই আল্লাহর এ সকল ওয়াদা সম্পর্কে প্রশ্ন আশা স্বাভাবিক, আমরা যারা নিজেদেরকে মো’মেন মুসলিম বলে দাবি করি, পরকালে আমরাই জান্নাতে যাবো বলে বিশ্বাস করি এবং আমরাই আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দা, তাহলে পৃথিবীর সর্বত্র, সকল জাতির হাতে গত কয়েক শতাব্দী থেকে মুসলমানরা মার খাচ্ছে কেন? একে একে মুসলমানদের আবাসভূমিগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, সর্বহারা উদ্বাস্তু হচ্ছে মুসলমান, ধর্ষিতা হচ্ছে মুসলিম নারী। পানিতে ভেসে যাচ্ছে মুসলিম শিশুরা। তবে কি আল্লাহ তাঁর অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছেন, নাকি ভুলে গেছেন, নাকি তিনি দেখছেন না, নাকি তিনি মুসলিমদের উদ্ধার করতে অক্ষম? (নাউযুবিল্লাহ)।
না, সেটা অসম্ভব। তিনিই বলেছেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তাঁর চেয়ে সত্যবাদী আর কে আছে (সুরা তওবা ১১১)। তিনি কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না, পূর্ববর্তী মোমেনদের ইতিহাস তার প্রমাণ। তিনি সব দেখেন, সব শোনেন, সব খবর রাখেন, তিনি প্রতাপশালী সূক্ষ্মহিসাবদর্শী। এজন্য তাঁর নাম সামিউম বাসীর, আলিমুল গায়েব, আজিজুল জাব্বার, জাল্লে জালাল, লতিফুল খাবীর, তিনি শাইয়্যিন কাদির। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাহলে প্রকৃত ব্যাপারটা কী?
প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে পবিত্র কোর’আনে তিনি সবগুলো কল্যাণকর অঙ্গীকার করেছেন মো’মেনের সাথে। যারা মো’মেন নয় অর্থাৎ কাফের তাদের জন্য কিন্তু ঐ সব ওয়াদা প্রযোজ্য হবে না। তাহলে কি আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে বিশ্বাস করে নামাজ-রোজা করে যাচ্ছি, তারা আর মো’মেন নই? কেন আমরা মো’মেন নই এটা জানতে হলে মো’মেনের যে সংজ্ঞা আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে প্রদান করেছেন সেটা জানতে হবে। সেখানে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন, “মো’মেন শুধু তারা যারা আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাকে কোনোরূপ সন্দেহ না করে দৃঢ়পদ থাকে এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ (সংগ্রাম) করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।” (সুরা হুজরাতের ১৫)।
এই ঈমান কী? কোন ঈমান আল্লাহর দাবি? আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস নয় নিশ্চয়ই। ও বিশ্বাস তো ইবলিসেরও আছে, আবু জাহেলেরও ছিল। আল্লাহ যে ঈমানের কথা বলছেন তা হলো তওহীদের উপর ঈমান, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানবো না, এই অঙ্গীকার করা। এটা হচ্ছে মো’মেন হওয়ার প্রথম শর্ত। সেই হুকুমটাকে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বরকম প্রচেষ্টা করার নামই জেহাদ যা মো’মেন হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। আর জেহাদ করতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন একটি নিখুঁত কর্মসূচি। সেটাও আল্লাহ রসুলকে দান করেছেন যার প্রথম দফাটিই হলো- ঐক্যবদ্ধ হওয়া। দ্বিতীয় হলো- শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া। তৃতীয় হলো- নেতার আনুগত্য করা। চতুর্থ হলো- সকল অন্যায় থেকে হেজরত করা বা পৃথক হওয়া। এই চারটি দফা একত্র করলে মো’মেনরা জেহাদ করতে পারবে। সেই জেহাদ কিন্তু দেশ দখলের জন্য নয়, অন্য ধর্মের লোকদেরকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা নয়। বরং ঐ তওহীদ ও সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য।
রসুলাল্লাহর সমগ্র জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা সন্দেহাতীতভাবে দেখতে পাই, তিনি আরববাসীকে সর্বপ্রথম একটি কথার উপর ঐক্যবদ্ধ করেছেন যে – তারা আল্লাহর হুকুম মানবে, পূর্বের থেকে চলে আসা জাহেলি যুগের ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ পরিহার করবে। তারা বিশৃঙ্খলা পরিহার করে সুশৃঙ্খল হবে। তারা একজন নেতার নেতৃত্বে সমবেত হয়ে তাঁর যাবতীয় সিদ্ধান্ত সত্য বলে বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় মেনে চলবে এবং তারা সমাজের যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করবে। এই চরিত্রটাই আল্লাহর রসুল আরবদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন, যার ফলে যখন তাদের মধ্যে আল্লাহর রসুল প্রতিষ্ঠা করে দিলেন তখন তারা হলো আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন। আল্লাহ যতগুলো ওয়াদা করেছেন মো’মেনদের সাথে যেমন পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান, শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান, সুরক্ষা প্রদান সবই তখন পূর্ণ করেছিলেন।
কিন্তু যখন সেই জাতি নিজেদের মধ্যে ফেরকা মাজহাব বানিয়ে অমূল্য ঐক্য ধ্বংস করল এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করল তখন তারা আর আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক আর মো’মেন রইল না। সুতরাং আল্লাহ কৃত ঐ সকল ওয়াদাও আর তাদের জন্য ক্ষেত্রে প্রযোজ্য রইল না। তারা একের পর এক বহিঃশত্রুর আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেল, পরিশেষে ইউরোপিয়দের পদানত দাসে পরিণত হলো। এটা ছিল আল্লাহর শাস্তি, গজব যা এখন পর্যন্ত চলমান আছে। তাই এখন যদি কেউ মনে করে যে, মুসলিম শ্রেষ্ঠ জাতি তাহলে সেটা যেমন মূর্খতা হবে তেমনি মূর্খতা হবে এমন প্রশ্ন তোলা যে আল্লাহ কেন মুসলিমদেরকে রক্ষা করছেন না।
এখন আমরা যদি এই হীনতা লাঞ্ছনার জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদের একটাই করণীয়- আল্লাহর সংজ্ঞা মোতাবেক মো’মেন হওয়া। আমরা মুসলিম বংশোদ্ভূত, আমরা আল্লাহর অস্তিত্বে, পরকালে বিশ্বাস করি, নামাজ রোজা করি এগুলো মো’মেনের সংজ্ঞা নয়, মানদণ্ড নয়- এ সত্যটি আমাদের অনুধাবন করতে হবে। নিজেদেরকে মো’মেন মনে করে আশার ছলনায় ভুলে থাকলে আর চলবে না। আমরা যদি আবারও মো’মেন হতে পারি তাহলে আল্লাহ তাঁর সবগুলো ওয়াদা পুরন করবেন, আবারও আমরা সম্মানিত, স্বাধীন ও শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হতে পারব। পৃথিবীর কোনো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির চোখ রাঙানিতে আমাদের আর ভয়ে আতঙ্কে ম্রয়িমাণ হয়ে থাকতে হবে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...