হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

১৬ কোটি’র বাংলাদেশ হতে পারে পৃথিবীর অন্যতম ‘মাইট’

মোহাম্মদ আসাদ আলী:
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘মাইট ইজ রাইট’ অর্থাৎ শক্তিমানের কথাই ঠিক। বর্তমান পৃথিবীতে চলছে এই ‘মাইট ইজ রাইট’ এর শাসন। এ যুগে সামরিক শক্তিতে যারা অপ্রতিরোধ্য তারাই ঠিক করে দেয় কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়। আর সামরিক শক্তি যাদের নেই, তাদের অন্য যা কিছু আছে সব অনিশ্চিত ও অনিরাপদ। যে কোনো সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তি যে কোনো অজুহাতে তাদের দেশ দখল করতে পারে, তাদেরকে কচুকাটা করতে পারে, তাদের সম্পদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
একাত্তরে আমরা প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছিলাম বলে স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দরিদ্রতা নির্ম‚ল করতে যতটা আন্তরিকতার সাথে সচেষ্ট থেকেছি, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে যতটা গুরুত্ব প্রদান করেছি, সামরিক শক্তি অর্জনকে ততটা গুরুত্ব দেই নি। ফলে আজকের এই ‘মাইট ইজ রাইট’ এর যুগে ন্যায্য দাবি আদায় করতে আমাদেরকে
পৃথিবীর মাইটগুলোর দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে। পরাশক্তিগুলো অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তাদের সুবিধা অনুযায়ী রাতকে দিন করছে, অন্যায়কে ন্যায় বলছে, আর আমরা বাস্তবতাকে দোষ দিয়ে সেটা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি।  দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটটি আর রোহিঙ্গাদের একার সঙ্কট নেই। এটা এখন বাংলাদেশেরও সঙ্কট। বার্মার ভাষায় রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি’। তাদের সেনাপ্রধান জাতিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের ডাক দিয়েছে। তার মানে তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধেই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আবার বাংলাদেশকে সামরিক ভাষায় উস্কানিও দিচ্ছে। তাদের একজন বৌদ্ধ নেতা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে বার্মার হাতে ছেড়ে দিতে বলেছেন, কারণ এগুলোকে তারা ঐতিহাসিকভাবে বার্মার ভূ-খণ্ড মনে করে। তাদের মগ স¤প্রদায় বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে এক সময় কী পরিমাণ অত্যাচার-লুণ্ঠন-গণহত্যা চালিয়েছিল তা ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানেন। আবারও তাদের শ্যোনদৃষ্টি পড়েছে বাংলার মাটিতে।
আরও চিন্তার বিষয় হচ্ছে তারা আর আগের মত পৃথিবীবিচ্যুত, একঘরে অবস্থায় নেই। চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইজরাইলের সমর্থন ও সহযোগিতা তাদের পাশে রয়েছে। অন্যদিকে আমাদের পাশে কে রয়েছে? আমাদের জাতিকে কে ঐক্যবদ্ধ করছে? অদূর ভবিষ্যতে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঈমানী দায়িত্ব মনে করে কয়টা লোক জান দিতে প্রস্তুত থাকবে? সন্তোষজনক জবাব নেই।
এই আশা করা বোকামী হবে যে, কোটি কোটি মানুষ ঘরের কপাট লাগিয়ে খাটের নিচে সিধিয়ে থাকবে, আর কয়েক লক্ষ মিলিটারি যুদ্ধ করে তাদের জানমাল রক্ষা করে দিবে। অতীতে তেমনটা ঘটে নাই। পুরো জাতি যদি মাতৃভ‚মির সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারে তাহলে কোনো বাহিনীর একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। আর যদি পুরো জাতি সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তাহলে তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। বড় বড় পরাশক্তিকেও কুপোকাত করার দৃষ্টান্ত আছে জাতির ঐক্য ও সাধারণ জনগণের সামরিক চরিত্রের কারণে। যেমন ভিয়েতনামে আমেরিকার মার খাওয়া, আফগানিস্তানে রাশিয়ার মার খাওয়া ইত্যাদি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও তেমনটা হয়েছে। এই দৃষ্টান্তগুলোর কারণে বর্তমানে যে কোনো পরাশক্তি যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগে জাতিটাকে আগাগোড়া দেখে নেয়। মানুষগুলো যোদ্ধা চরিত্রের কিনা। ঐক্যবদ্ধ কিনা। তাদের নেতৃত্ব অবিসংবাদিত কিনা। নিশ্চিন্ত হতে পারলেই কেবল আগ্রাসন চালায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা আসলে দেউলিয়া।
আমাদের না আছে যোদ্ধা চরিত্র, না আছে অবিসংবাদিত কোনো নেতৃত্ব, আর না আছে শক্তিশালী ঐক্য। ফলে কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালাতে চায় তবে এক মুহূর্তের জন্যও পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। কয়েকটি ঘটনা ঘটবে তা নিশ্চিত। দেখা যাবে ধান্দাবাজ নেতারা সবার আগে দেশ ছেড়ে পালাবেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা বিদেশে পালাতে পারবেন না তারা চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকবেন। উপাসনালয়ে দোয়া করা হবে যেন আল্লাহ আসমানি বালা নাজেল করে শত্রæকে ধ্বংস করে ফেলেন, কিন্তু নিজেরা কেউ এগিয়ে যাবে না। সরকারকে বেকায়দায় পড়তে দেখে বিরোধী দলগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। যুবসমাজ ঘরে বসে বসে ‘ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস’ খেলবে। শত্রæর বোমায় ঘরবাড়ি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘর ছাড়বে না, লড়াই তো করবেই না। তারপর উদ্বাস্তু হয়ে সমুদ্রে নৌকা ভাসাবে, আর নৌকাডুবি হলে সমুদ্রের লোনা পানি খেতে খেতে ভাববে এর চেয়ে তো যুদ্ধ করে মরাই ভালো হত!
কিন্তু না, উদ্বাস্তু হবার পরে হুঁশ ফিরলে লাভ নেই। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আমরা অবশ্যই যুদ্ধ-রক্তপাত চাইব না। তবে কোনো প্রকার আগ্রাসনকে ভয়ও পাব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত থাকব। কেউ অন্যায়ভাবে জাতির ক্ষতি করতে চাইলে পুরো জাতি একদেহ একপ্রাণ হয়ে লড়াই করব। আমাদের মধ্যে এই চেতনা জাগ্রত হলে, ১৬ কোটি মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকলে আমরা হব একটি ‘মাইট’। পৃথিবীর বুকে এমন শক্তি নেই তখন বাংলাকে চোখ রাঙানোর সাহস পাবে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...