হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হেযবুত তওহীদের পাবনা জেলা কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা

একজন নিহত, গুরুতর আহত দশ, লাইফ সাপোর্টে আরো একজন, গ্রেফতার সাত

হেযবুত তওহীদের পাবনা জেলা কার্যালয়ে আকস্মিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অতর্কিত ভাবে এ হামলা চালায়। এতে হেযবুত তওহীদের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো দশজন। এরমধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, একজন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। এ ঘটনায় মূল আসামীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় পাবনা শহরের চরঘোষপুর ৮নং ওয়ার্ডের ভাটামোড় এলাকায় অবস্থিত হেযবুত তওহীদের জেলা কার্যালয়ে সভাপতি সেলিম শেখ ১৫/১৬ জন সদস্যকে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করছিলেন। হঠাৎ করে ‘হেযবুত তওহীদের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও, খ্রিষ্টানের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’শ্লোগান দিতে দিতে কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র হামলাকারী। তাদের হাতে ছিল ধারালো চাপাতি, হাঁসুয়া, রাম দা, লাঠিসোটা, জিআই পাইপ, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র। কোনো কথা না বলেই তারা বৈঠকে উপস্থিত সবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে কোপাতে থাকে থাকে। এসময় সেখানে উপস্থিত হেযবুত তহওীদের ১০ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হন। রাতেই দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটায় মো. সুজন (৩৩) নামে এক সদস্য মারা যান এবং গুরুতর আহত আমিনুল ইসলাম (২৭) এখনও সেখানে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বাকীদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন আলামিন শেখ (২৭) ও সেলিম শেখ (৪১)সহ আরো ছয়জন।
প্রত্যক্ষদর্শী আলাউদ্দিন শেখ জানান, আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় আজিম ও আলাল শেখের নেতৃত্বে প্রায় ৪০-৫০ জনের মত একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্রসহ অফিসে প্রবেশ করে। এসময় অফিসের বাইরেও অনেক সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। তারা এলাকাবাসীকে খেপিয়ে তোলার জন্য ‘খ্রিষ্টানের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিল। অতর্কিতভাবে হামলার শিকার হয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের চেষ্টা করেন এবং তৎক্ষণাৎ পাবনা সদর থানায় ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশের দল পৌঁছাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এসময়ের মধ্যে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার পরপরই আসামীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
এ ঘটনায় রাতেই সেলিম শেখ বাদী হয়ে ১৪ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় মামলা করেন। এজাহারে আলাল শেখ ও তার দুই পূত্র আল আমিন-এনামুল শেখ, ইমরান মোল্লা, বাপ্পি, মারুফ শেখ, রাসেল ওরফে ভোলা শেখ, মো. হোসাইন, বকুল শেখ, শান্ত, আজিম শেখ, সুমন শেখ, শিমুল মণ্ডল ও মো. রফিক ডাক্তারকে আসামী করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রধান আসামী আলাল শেখ, আল আমিন শেখ, এনামুল শেখ, ইমরান মোল্লা, মারুফ শেখ, বাপ্পি ও মো. রফিক ডাক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে এ ঘটনার পরপরই মামলার ভয়ে আসামীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
হেযবুত তওহীদের জেলা সভাপতি সেলিম শেখ বলেছেন, ‘হেযবুত তওহীদ যেহেতু জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাই বেশকিছুদিন থেকেই আমরা উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের একটি হামলার ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছিলাম। তারা বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থেকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল এবং অপপ্রচারমূলক মিথ্যা বক্তব্যসংবলিত হ্যান্ডবিল এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছিল। এর প্রেক্ষিতে গত মাসেই আমরা পাবনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। যার নম্বর ৩৯৭, তারিখ: ০৬/০৭/২০২২। প্রশাসন সাধারণ ডায়েরিটিকে আমলে নিয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। যদি অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকের এই ঘটনা ঘটত না।’ তিনি এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন।
এ ঘটনায় পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) আমিনুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়ার পরই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মামলা হওয়ার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান আসামীসহ সাত জনকে আটক করেছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে এ ঘটনার পর সারাদেশের হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই হামলার প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে গতকাল রাজধানীসহ দেশের ১৩টি জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। এসব সমাবেশে সুজন হত্যার বিচার দাবী করা হয়। এবং এর সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় সুজনের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সুজনের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারীতে ভারি হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিবেশ। পরে সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো মানুষের ঢল নামে। জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা সুজন হত্যার বিচার দাবী করেন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...