হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হতাশ করল গণতন্ত্র -মোহাম্মদ আসাদ আলী

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার ও বিরোধীদল উভয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় আছে। ফলে কোন সমাধান ছাড়াই নিজেরা নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন যেমন ব্যাপক হচ্ছে অপরদিকে সরকার এসব আন্দোলন দমন করতেও ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করছে। জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অতীতের আলোকে বিবেচনা করলে সকলেই একমত হবেন যে, এটা আজ নতুন নয়। আমাদের ইতিহাসও মোটামুটিভাবে এই-ই। সরকার আর বিরোধীদের মাঝে বছরের পর বছর টান টান উত্তেজনা বিরাজমান থাকে। সেই সাথে চলে একে অপরকে উপেক্ষা করে কিভাবে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করা যায় তার হীন প্রতিযোগিতা। এই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখে দেখে দেশের আপামর জনতা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষ পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছে, অপদস্থ হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে গণতন্ত্র হল জনগণের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। এটা নাকি গণতন্ত্রের নীতি। আদর্শ বা ঐতিহাসিক সফলতা ইত্যাদি দ্বারা যতটা না গণতন্ত্র বিশ্বপরিচিতি এবং ব্যাপকতা লাভ করেছে তার চেয়ে ঢের বেশি ব্যাপকতা লাভ করেছে এর এই নীতিকথার কারণে। কাজেই এর বাস্তবতা ব্যাখ্যা করা আবশ্যক। আমি এখানে উদাহরণ হিসেবে অন্য কোনো দেশকে তুলে আনতে চাই না। কারণ, সমস্যা যেহেতু আমাদের, কাজেই উদাহরণ হিসেবে ভাবতে হবে আমাদের পরিস্থিতিকেই। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, শুধু আমাদের দেশেই এরকম রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে তা কিন্তু নয়, বরং সমস্ত পৃথিবী জুড়েই চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতার লাগামহীন বাড়বাড়ন্ত।
কথা বলছিলাম গণতন্ত্রের নীতি নিয়ে। আদর্শ আর বাস্তবতা যদি এক না হয় তাহলে ঐ আদর্শের আর কোনো দাম থাকে না। কাজেই হয় ঐ বাস্তবতাকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে হয় নইলে দুটোকেই প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
“আমরা হলাম জনগণ। আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেন সংসদ সদস্যগণ। তারাই আমাদের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী দেশ পরিচালনার শর্তে সরকার গঠন করেন। অর্থাৎ সরকার যা করেন তা জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন। জনগণ যা চায়, সরকার তাই করতে বাধ্য থাকে।” এই হলো গণতন্ত্রের তত্ত্বকথা। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ঠিক উল্টো। বলুন তো, জনগণ কি হরতাল চায়? জনগণ কি গুলি, বোমা, ককটেলের আওয়াজ শুনতে চায়? জনগণ কি রাজনৈতিক কর্মীদের আর পুলিশের মারামারির মাঝে পড়ে জীবন হারাতে চায়? গুলিবিদ্ধ হতে চায়? পঙ্গু হতে চায়? চায় না। তাহলে এটা কিসের গণতন্ত্র? মাসের পর মাস একটি সংলাপের মুলো জাতির সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যারা জনগণের মুখের পানে চেয়ে, দেশের স্বার্থে এক মিনিটের জন্য নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদকে সরিয়ে আলোচনা পর্যন্ত করতে সক্ষম নয়, তারা কি মানুষের জন্য রাজনীতি করেন? তারা কি দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতিনিধি?
হয়তো বলবেন তারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন না বলেই তো দেশের আজ এই অবস্থা। তাহলে এর সমাধান কি? দিশাহারা জনগণের সামনে সমাধান একটাই। তাহলো সরকার পরিবর্তন। সরকার পরিবর্তন করলেই যেন তাদের ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে এবং জনগণ আবারো সেই কাজটিই করতে যাচ্ছে। এটা নিছক আত্মতুষ্টির অনুসন্ধান ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যারা জাতির সম্মানিত চেয়ারগুলোতে বসে সুশীল, বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি বিশেষণ ধারণ করে আছেন তাদের কাছে সমাধান অন্য। তারা আরো একটু গভীরে চিন্তা করে থাকেন। কিন্তু যতটা গভীরে গেলে প্রকৃত মুক্তি আসবে ততটা গভীরে যেতে পারেন না। তাদের ভাষায়- “আমাদের দেশে এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় নি। গণতন্ত্র নাকি এখনো তার শৈশবকাল পার করছে। এর সযতœ পরিচর্যা হলেই নাকি দেশের মানুষ সত্যিকার শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।” আমি বলব, এটা অনেক পুরোনো মত। এটা তারা সেই পাকিস্তান আমল থেকেই বলে আসছেন। যুগের পর যুগ পার হয়ে যাচ্ছে, শত শত মানুষ অন্যায়-অবিচারের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, শত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে, রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে রাজপথ কিন্তু সেই শিশু গণতন্ত্র তো শারীরিক বা মানসিকভাবে বড় হচ্ছে না। বরং বাস্তবতায় মনে হচ্ছে সেটা সব দিক দিয়ে শুধু ক্ষয়ে যাচ্ছে। এর শেষ পরিণতি চিন্তা করার সময় কি এখনও আমাদের আসে নি? এখনও যদি আমরা প্রকৃত মুক্তির পথে, শান্তির পথে ধাবিত না হই তাহলে ভবিষ্যৎ পরিণতি হয়তো আরো ভয়াবহ হবে। আমরা পছন্দ করি বা না করি, বুঝি বা না বোঝার ভান করে থাকি, সমাধান কিন্তু একটাই আর তাহলো স্র্ষ্টা প্রদত্ত সিস্টেমে ফিরে যাওয়া। তাঁর দেওয়া সিস্টেমে যে প্রকৃত শান্তি তা ইতিহাস। মানবরচিত কোন জীবনব্যবস্থাই সেই ইতিহাসের একটি ভগ্নাংশও মানবজাতিকে উপহার দিতে পারে নাই।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...