হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রসুলাল্লাহর (সা.) যুগে নারী

আয়মান বিন মসীহ

আজ থেকে ১৪ শ’ বছর আগে সেই আরবের জাহেলিয়াতের যুগে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। মেয়ে শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। নারী মানেই ছিল পরিবারের জন্য একটি বোঝা। যারা দেখতে খারাপ ছিল তাদেরকে মেরে ফেলা হত। আর যারা দেখতে শুনতে একটু ভালো ছিল তাদেরকে নর্তকী হিসাবে ব্যবহার করা হত, তারা কেবল মনোরঞ্জনের উপাদান, বিনোদনের সামগ্রী ছিল। স্বীকারই করা হত না যে নারীদেরও প্রতিভা আছে, জ্ঞান-বুদ্ধি আছে, সমাজে কার্যকরী অবদান রাখার যোগ্যতা আছে।

রসুলাল্লাহ জাহেলি যুগের নারীদেরকে শালীনতার পোশাক পরিয়ে দিলেন। নারীরা সম্মানিতা হলো, শ্রদ্ধার পাত্রী হলো। তাদেরকে আগে শালীনতা শিখালেন। শালীনতা শিখিয়ে তিনি কি নারীদেরকে বলছেন যে, তোমরা ঘরের ভিতর থেকে বের হবে না, পরপুরুষ তোমাদের দেখলে তোমরা জাহান্নামে চলে যাবে, তোমাদের ঈমান চলে যাবে?

না, তিনি এই কথা বলেন নি। তিনি তাদেরকে গৃহকোণ থেকে বের করে আনলেন। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। তিনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার গুণাবলী শিক্ষা দিলেন, তাদেরকে যুদ্ধ করতে শেখালেন, তলোয়ার চালনা, বল্লম চালনা, ঘোড়া ছোটানো শেখালেন। নারী প্রগতির এক বিস্ময়কর অধ্যায় তিনি রচনা করলেন। সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের অবজ্ঞাত অবহেলিত উপেক্ষিত অত্যাচারিত নারীরা বোমার মত বিস্ফোরিত হয়ে একটি ঝড়ের সৃষ্টি করে দিল। নারীরা চলে গেলেন জেহাদের ময়দানে। কোনো কোনো যুদ্ধে তারা শত্রুপক্ষের বাহিনীর মধ্যে তাণ্ডব ঘটিয়ে দিলেন। পুরুষেরা যেখানে কুলিয়ে উঠতে পারেন নি, সেখানে পর্যন্ত নারীরা অসম সাহসিকতার সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনলেন। এমন কী তারা রসুলাল্লাহকেও পর্যন্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। ওহুদের মাঠে রসুলাল্লাহ যখন কাফেরদের তীরের আঘাতে জর্জরিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, অনেক সাহাবী যখন শহীদ হয়ে যান। তখন উম্মে আম্মারা (রা.) তলোয়ার হাতে এমনভাবে রসুলের চারপাশে লড়াই চালিয়েছিলেন যে রসুলাল্লাহ বলেছিলেন, সেদিন যেদিকেই তাকাই শুধু উম্মে আম্মরাকেই দেখেছি। ডানে-বামে উম্মে আম্মারা, সামনে-পিছনে উম্মে আম্মারা।

সেই নারীদেরকে রসুলাল্লাহ বাজার ব্যবস্থাপনার কাজে লাগিয়ে দিলেন। তলোয়ার নিয়ে নারীরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দেখতো কেউ দ্রব্যে ভেজাল দেয় কিনা। আহতদেরকে চিকিৎসা, সেবা করা, শহীদদের দাফন করা, সকল কাজই করতেন নারীরা। হাসপাতালের প্রধানও ছিলেন একজন নারী। জুম্মার নামাজে নারীরা অংশগ্রহণ করত, রাত্রে বেলার নামাজেও তারা মসজিদে যেত। এভাবে জীবনের প্রত্যেকটা কাজে নারীর অংশগ্রহণ আল্লাহর রসূল নিশ্চিত করেছিলেন। রসুলাল্লাহ যখন নিজ বাড়িতে বা মসজিদে বসে আলোচনা করতেন তখন তাঁর ও নারীদের মধ্যে কোনো পর্দা টাঙানো থাকতো না, নারীরা সামনা সামনি বসে বসে আলোচনা শুনতেন। প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে নিতেন। এমন এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতেন রসুলাল্লাহর স্ত্রীরাও লজ্জা পেয়ে যেতেন। কিন্তু শিক্ষার জন্য তাদেরকে করতেই হয়েছে। শরিয়ত শিখতে হবে রসুলের কাছ থেকেই।

সেই ইসলাম আজ এমন হলো কীভাবে? নারীরা আর মসজিদে যেতে পারবে না, তারা পর্দার আড়ালে থাকবে। তারা সেনাবাহিনীতে যাবে না। নারীকে অবরুদ্ধ রাখার জন্য বর্তমানে অসংখ্য জাল হাদিস চালু আছে। নারীকে পর্দাপ্রথার জালে বন্দী করে রাখার জন্য অতিরঞ্জিত হাদিস, জাল হাদিস বেশি বেশি ওয়াজ মাহফিল করে, তালিম করে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

একটা হাদিসে বলা হয়েছে অন্ধ উম্মে মাকতুমকে দেখে পর্দা করার জন্য। মেয়েরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘উনি তো অন্ধ?’ রসুলাল্লাহ বললেন, ‘তোমরা তো অন্ধ না।’ এটা যদি হাদিস হয় তাহলে রসুল স্বয়ং কী করে নারীদের নিয়ে আলোচনা সভা করলেন, তাদেরকে যুদ্ধে নিয়ে গেলেন আর কী করেই বা এক জামাতে নামাজ পড়ালেন। যুদ্ধরত সৈন্যরা তো অন্ধ ছিল না বা মো’মেন নারীরাও অন্ধ ছিলেন না। রসুলের সমগ্র কর্মজীবন এই হাদিসগুলোর পক্ষে যায় না। রসুলাল্লাহর স্ত্রী আম্মা আয়েশাও (রা.) বহু যুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অধিকাংশ যুদ্ধে রসুলাল্লাহর সঙ্গে যোগদান করছেন। উটের যুদ্ধে দশ হাজার সৈন্যকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নারীদের এই সব কীর্তির কথা ইতিহাসে নেই, সব ইতিহাসে কেবল পুরুষের জয়জয়কার। এ কথাই কবি নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন- কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি কত বোন দিল সেবা/বীরের স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?/কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...