হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রসুলাল্লাহর (দ:) ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক জান্নাতি ফেরকা কারা? (পর্ব-১)

এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী:

একদিন মহানবী (দ:) বোললেন, ইহুদি জাতি একাত্তর ভাগে বিভক্ত হোয়েছিল যার একটি ভাগ জান্নাতি আর সত্তরভাগ জাহান্নামী। খ্রিস্টান জাতি বাহাত্তর ভাগে বিভক্ত হোয়েছিল যার মধ্যে একাত্তর ভাগই জাহান্নামী একভাগ জান্নাতি। তাঁর শপথ যার হাতে মোহাম্মদদের (দ:) প্রাণ, আমার উম্মাহ তেহাত্তর ভাগে বিভক্ত হবে যার মধ্যে একটি মাত্র ভাগ জান্নাতে যাবে, বাকি বাহাত্তর ভাগই জাহান্নামে যাবে।” রসুলাল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হোল, “তারা (জান্নাতি) কারা?” তিনি জবাব দিলেন, “যারা আমাদের (অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবীগণ) পথে আছে”। [আবু হোরায়রা (রা.) থেকে আবু দাউদ, আউফ বিন মালেক (রা:) থেকে ইবনে মাজাহ]
অতি সাংঘাতিক ও ভয়ঙ্কর কথা! ইহুদি ও খ্রিস্টানরা দীন নিয়ে মতভেদ কোরে যত ভাগে বিভক্ত হোয়েছিল আর উম্মতে মোহাম্মদী নামক এই জাতি আরও একধাপ বেশি হবে। এখানে ৭৩ ফেরকা বোলতে অগনিত, অসংখ্যও বোঝায়। রসুলাল্লাহ বহু হাদিসে সত্তর সংখ্যাটি ব্যবহার কোরেছেন। যেমন দাজ্জাল সংক্রান্ত একটি হাদিসে বোলেছেন, ‘আমার উম্মাহর ৭০ হাজার লোক দাজ্জালের অনুসরণ কোরবে’ [আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে- শারহে সুন্নাহ]।আরবি ভাষায় সত্তর বোলতে সাতের পিঠে শূন্য দিলে যেমন ৭০ বোঝায় তেমনি এর আরও একটা ব্যবহার আছে। সেটা হোল কোন সংখ্যাকে বহু বা অসংখ্য বোঝাবার জন্যও ঐ সত্তর সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। এটা শুধু ঐ সত্তর সংখ্যা দিয়েই করা হয়, অন্য কোন সংখ্যা, যেমন পঞ্চাশ বা একশ’ দিয়ে করা হয় না। আরবিতে সাত হাজার বা সত্তর হাজার বা সত্তর ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা ঐ নির্দিষ্ট সংখ্যাই শুধু বোঝায় না, অসংখ্য, অগণিত সংখ্যা বুঝায়। আজ দুনিয়াময় মোসলেম বোলে পরিচিত যে জাতিটি আছে তারা বহু ভাগে, ফেরকায় বিভক্ত। প্রত্যেক ভাগ অর্থাৎ প্রত্যেক ফেরকা বা মাযহাব বিশ্বাস করে যে, তারাই শুধু প্রকৃত মোসলমান, তাদের মাজহাব বা ফেরকাই ঠিক বাকি সব ফেরকা পথভ্রষ্ট। বিষয়টি যেমন অন্যান্য ধর্মের মত, এক ধর্মের লোক মনে করে তার ধর্মই ঠিক, বাকি অন্যান্য ধর্মের সবাই নরকে যাবে। আসলে পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য যে ধর্মগুলি রোয়েছে সেগুলির অধিকাংশই কোন না কোন নবীর (আ:) অনুসারী, তারা তাদের নবীর দেখানো পথ থেকে বিচ্যুত হোয়ে গেছে। মোসলেম নামধারী এই জাতিও তাদের নবীর দেখানো, রেখে যাওয়া পথ থেকে বিচ্যুত হোয়ে গেছে। যতখানি পথভ্রষ্টতা, বিকৃতি আসলে, পূর্বে আল্লাহ নতুন নবী পাঠিয়েছেন, এই জাতিতে ততখানি বিকৃতি বহু পূর্বেই এসে গেছে। এরপরও নতুন নবী আসেন নি, কারণ, নবুয়্যত শেষ হোয়ে গেছে এবং শেষ রসুলের (দ:) প্রতিষ্ঠিত পথে, প্রকৃত ইসলামে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য অবিকৃত কোর’আন ও রসুলের হাদিস আছে যা অন্যান্য ধর্মে নেই। শেষ ইসলামের বিভক্তিগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ ভাগ হোচ্ছে সুন্নী মাযহাব, দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাগ হোচ্ছে শিয়া মাযহাব। এই শিয়া মাযহাবের পণ্ডিতরাও কোর’আন-হাদিসের চুলচেরা বিশ্লেষণে সুন্নী পণ্ডিতদের চেয়ে পেছনে পড়ে নেই এবং তাদের পাণ্ডিত্যের ফলে শিয়া মাযহাবও অগনিত ফেরকায় বিভক্ত হোয়ে গেছে সুন্নীদের মত। ফলে প্রকৃত ইসলামের উদ্দেশ্য থেকে শিয়া-সুন্নী উভয় মাযহাবই বহু দূরে। কে বেশি দূরে কে কম দূরে এ পরিমাপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার সাধ্যও নয়, আমি শুধু এইটুকুই জানি যে মহানবীর (দ:) কথিত একটিমাত্র ফেরকা বাদে শিয়া-সুন্নীসহ আর সমস্ত ফেরকা, মাযহাব আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে, অর্থাৎ মহানবীর (দ:) ইসলামে নেই। সেই একমাত্র ফেরকা কোন্ ফেরকা তা পেছনে দেখিয়ে এসেছি। সুন্নীরা যেমন বিশ্বনবীর (দ:) প্রকৃত সুন্নাত ত্যাগ কোরে আল্লাহ-রসুলের নিষিদ্ধ ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ’ কোরে উম্মাহটাকে টুকরো টুকরো কোরে ভেঙ্গে দিলেন এবং হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ নিয়ে খানকায়, হুজরায় ঢুকে উম্মাহর বর্হিমুখী (Extrovert) গতিকে অন্তর্মুখী কোরে একে স্থবির কোরে দিলেন (Introvert), তেমনি শিয়ারাও তাদের মাযহাবকে চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে বহু ভাগে ভাগ কোরে দিলেন এবং নবীর (দ:) প্রকৃত সুন্নাহ অর্থাৎ দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বাদ দিয়ে বহু পূর্বের এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে নিয়ে মাতম করাটাকেই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম-কর্ম হিসাবে গ্রহণ কোরলেন। তারা বুঝলেন না যে, মাতম করা কোন জীবন্ত জাতির মুখ্য কাজ হোতে পারে না, মৃত জাতির হোতে পারে। উম্মতে মোহাম্মদীর দাবিদার কিন্তু কার্যতঃ শেরক ও কুফরীর মধ্যে নিমজ্জিত এই জাতির এখন উপায় কি? এর একমাত্র আশা আজ তেহাত্তর ফেরকার সেই একমাত্র জান্নাতি ফেরকা। সেই জান্নাতি ফেরকাই পারে ইসলামের সঠিক পথটির উপরে মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ দেখাতে।

সেই জান্নাতি ফেরকার লোক কোথায় আছে?
মহানবী যেহেতু বোলেছেন কাজেই জান্নাতি ফেরকার লোক অতি অবশ্যই আছে। থাকতেই হবে। তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন কারণ তারা একত্রে এক জায়গায় নেই। তারা ১৬০ কোটি পথভ্রষ্ট জনসংখ্যার মাঝে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। আজ তাদের একত্রিত হোতে হবে। তাদের উপর বিরাট বিশাল দায়িত্ব।
১৬০ কোটির এই জনসংখ্যা আল্লাহ, রসুলের, কোর’আনের বিশ্বাসী হোয়েও আজ আকীদার ভুলে শেরক ও কুফরে ডুবে আছে। আল্লাহর নবীকে কেন পাঠিয়েছেন, নবীর কাজ কি ছিল, পবিত্র কোর’আন কেন নাযেল কোরেছেন এই দীনের উদ্দেশ্য কি, প্রকৃত এবাদত কি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক আকীদা না থাকার কারণে আজ তাদের মোকাম্মেল ঈমান থাকা সত্ত্বেও কাফের মোশরেক হোয়ে আছে। কারণ ঐ যে, ফকীহরা বোলেছেন আকীদা সহীহ না হোলে ঈমানের কোন দাম নেই। কাজেই আকীদা অর্থাৎ এই দীনের সামগ্রিক ধারণার বিকৃতির কারণে তাদের আজ কোন আমলই আল্লাহর দরবারে গৃহীত হোচ্ছে না। এখন আর আল্লাহর রহমত এই জাতির উপরে নেই। তার প্রমাণ হোল যে জাতিকে আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বোলেছেন (সূরা এমরান ১১০) সেই জাতি আজ পৃথিবীময় সর্ব নিকৃষ্ট। অন্য জাতির গোলাম।আজ জান্নাতি ফেরকার প্রধান দায়িত্ব হোল পথভ্রষ্ট এই জাতিকে বিশ্বনবীর ইসলামে, প্রকৃত ইসলামে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। এই কাজ খুবই কঠিন। এই কাজ কোরতে গিয়ে কঠিন বাধার সম্মুখীন হোতে হবে। প্রতিরোধ আসবে চারদিক থেকে। এ বিরোধিতা আসবে ইহুদি-খ্রিস্টান (Judio-Chrtian) ‘সভ্যতার পদ্ধতিতে ‘শিক্ষিত’ বর্তমান নেতৃত্বের ও তাদের অনুসারীদের (Agent) কাছ থেকে। আল্লাহ রসুল ও ইসলাম সম্পর্কে বিদ্বেষ তাদের আত্মার গভীরে প্রোথিত, ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত জ্বলে যায়। বিরোধিতা আসবে বর্তমানের বিকৃত দীনের পুরোহিত, যাজকদের কাছ থেকে, ধর্ম যাদের রুজি-রোজগারের পথ, তাদের কাছ থেকে, ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানরা মোসলেম জগত অধিকার কোরে মাদ্রাসা স্থাপন কোরে ইসলাম শিক্ষার ছদ্মবেশে যে ধ্বংসকারী ফতোয়াবাজী শিক্ষা দিয়েছিলো সেই শিক্ষায় ‘শিক্ষিত’দের কাছ থেকে, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, রক্তপাত নির্মূল কোরে পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য নবী করিম (দ:) তার উম্মতের হাতে যে তলোয়ার ধোরিয়ে দিয়েছিলেন সেই তলোয়ার ফেলে দিয়ে তসবিহ হাতে নিয়ে যারা খানকায় ঢুকেছেন তাদের কাছ থেকে। প্রতিরোধ আসবে অন্যান্য বিকৃত ধর্মের অনুসারীদের কাছ থেকে। তারা মূলত ভুল বুঝেই বাধা দেবে। তারা মনে কোরবে এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হোলে তাদের ধর্মের উপরে আঘাত আসবে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা আসবে না। আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলামের সময় অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা সবচাইতে বেশি নিরাপদে ছিল। তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলিও নিরাপদ ছিল। তাদের জীবন সম্পদ নিরাপদ ছিল, বর্তমানের তথাকথিত গণতন্ত্রের অধীন, তাদের কারও ধর্মীয় উপাসনালয়ও নিরাপদে নেই। তারা প্রায়ই আক্রান্ত হোচ্ছেন। যাই হোক তারা কিন্তু এই জান্নাতি ফেরকার লোকদেরকে বাধা দিবে না বুঝেই। অর্থাৎ বাধা আসবে সর্বদিক থেকে। (চোলবে..)

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...