হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রসুলাল্লাহর দরবারে নারীদের উপস্থিতি

মুস্তাফিজ শিহাব

রসুলাল্লাহর সময় থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে নারী ও পুরুষ উভয়েরই যাতায়াত রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এর বিপরীত ফতোয়াবাজি করে নারীদেরকে মসজিদে যেতে দেওয়া হয় না।

একদিন রসুলাল্লাহ সাহাবিদের সঙ্গে মসজিদে নববীতে বসে আছেন। সেখানে উপস্থিত হলেন ফাতেমা বিনতে উতবা (রা.)! তিনি বিনয়ের সাথে আরয করলেন- “ইয়া রসুলাল্লাহ! একটা সময় ছিল যখন আমি কামনা করতাম দুনিয়ার মধ্যে যদি কেবল আপনার ঘরটাই ধ্বংস হয়ে যেত-আর সবই থাকতো ঠিকঠাক। আর আজ আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা এমন- আমার মন বলে এই পৃথিবীতে আর কারও ঠিকানা থাকুক আর না থাকুক, আপনারটা যেন অটুট থাকে।”

একথা শোনার পর রসুল (সা.) বললেন: “দেখ, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তোমার নিজের সত্তার চাইতেও অধিক ভালো না বাসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি মো’মেনই হতে পারবে না।” ফাতিমা (রা.) বললেন, “হে রসুল (সা.)! আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চাইতেও অধিক প্রিয়!”

এখানে একটি বিষয় দ্রষ্টব্য যে, রসুলাল্লাহ যখন আলোচনা করতেন তখন নারীদের জন্য আলাদা পর্দাঘেরা জায়গার ব্যবস্থা থাকতো না। নারী-পুরুষ একত্রে তাঁর সঙ্গে মসজিদে বা ঈদগাহে বসে কথা শুনতেন, সালাহ কায়েম করতেন। আজও নবীর মসজিদে নারী পুরুষ একত্রেই যাতায়াত করেন।

বর্তমানে নারীদের মসজিদে যাওয়ার কথা শুনলেই এক শ্রেণির মানুষ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। তাদের কথা হলো, নারীরা মসজিদে গেলে তারা নাকি অমনোযোগী হয়ে পড়বেন, ফলে নামাজই পড়তে পারবেন না। তাছাড়া পরবর্তী যুগের আলেমরা নাকি রসুলের সময়ের এই নিয়মকে পাল্টে দিয়েছেন। তাই এখন আমাদের দেশের অধিকাংশ মসজিদে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর যেসব মসজিদে প্রবেশাধিকা দেওয়া হয় সেখানেও তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয় এমনভাবে যেন কেউ তাদের দেখতেও না পায়।

প্রশ্ন হচ্ছে- প্রকৃত ইসলাম তাহলে কোনটি? নিশ্চয়ই রসুলের রেখে যাওয়া সুন্নাহ বা কর্মপদ্ধতিই ইসলাম। এবার আসুন দেখি কোর’আন কী বলে। সুরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “Children of Adam! Wear your beautiful apparel at every time and place of prayer. “হে আদম সন্তানেরা! তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরবে।” (সুরা আরাফ ৩১)।

এখানে আল্লাহ কেবল পুরুষদেরকে মসজিদে যেতে বলেন নি, সম্বোধন করেছেন – ‘হে আদমসন্তান’, যার মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়েই পড়ে। সুতরাং এই হুকুম স্বয়ং আল্লাহর, কোনো মানুষের এ বিষয়ে ভিন্ন হুকুম দেওয়ার কোনো এখতিয়ারই নেই। প্রয়োজনে সমাজব্যবস্থা পাল্টাতে হবে এবং সমাজকাঠামোকে আল্লাহর হুকুম মান্য করার অনুকূলরূপে গড়ে তুলতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা তাহলে কার হুকুম মানবো- আল্লাহর, নাকি ধর্মজীবী মুফতি সাহেবদের? আমাদের জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে, ধর্মের প্রতিটি বিষয়ে এই প্রশ্নটিই আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে তুলবে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে ব্যবধান করার তওফিক দান করবে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...