হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বহুল উত্থাপিত প্রশ্ন: এত ধর্ম-কর্ম! তবু কেন অশান্তিতে সমাজ?

মোহাম্মদ আসাদ আলী
এ বিষয়টি বুঝতে পণ্ডিত হবার দরকার নেই যে, রাষ্ট্র অরাজক হলে অশান্তি পোহাতে হয় জনগণকে। তাই সবার আগে রাষ্ট্রকে ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করতে হয়, তবেই জনগণ শান্তিপূর্ণ সমাজ পায়। কোনো আদর্শ যদি এমন হয় যে, তাতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালক নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই, তাহলে ঐ আদর্শ আর যাই হোক সমাজে শান্তি আনার জন্য যথেষ্ট নয়। ঐ আদর্শ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ নয়। এজন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত মতাদর্শই কিন্তু রাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলে, রাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে ফেলে সমাজে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করে। কোনো মতাদর্শই রাষ্ট্রকে এড়িয়ে সমাজে শান্তি আনার অলীক কল্পনা করে না।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র না হয়ে যখনই ইসলামের প্রসঙ্গ আসে, আমাদের মধ্যে একটি শ্রেণি সেই অযৌক্তিক কল্পনাটিই করে থাকেন। তারা চান ইসলাম মানুষকে শান্তি এনে দিক, সমাজে ন্যায়, সাম্য প্রতিষ্ঠা করুক, কিন্তু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা না বলুক। এই স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক দাবি তারা কীভাবে করেন? আজ যদি কোনো সমাজতন্ত্রীকে নসিহত করা হয়, ভাই, তোমরা আর্তপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছো কর, কেবল একটাই অনুরোধ- রাষ্ট্র নিয়ে, রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বল না, এ বাদে অন্য যে কোনো বিষয়ে বলতে পারো আপত্তি নাই। তাহলে ঐ সমাজতন্ত্রী কি তা মেনে নিবেন? যদি কোনো গণতান্ত্রিক মতাদর্শীকে নসিহত করা হয়, তোমরা সমাজ, পরিবার, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে কথা বলো, শুধু রাষ্ট্র নিয়ে কোনো কথা বলো না, তাহলে কথাটি কেমন শোনাবে?
শিকারীকে বাঘ শিকার করতে হয় বনে গিয়ে। যদি আপনি তাকে বনেই যেতে না দেন, বনে না গিয়ে অন্য যে কোনো স্থান থেকে বাঘ শিকার করে আনতে বলেন সেটা শিকারীর পক্ষে সম্ভব হবে কি? জেলে কি পারবেন জলাধারে না গিয়ে মাছ ধরে আনতে? না। কিন্তু আমরা ওটাই চাচ্ছি ইসলামের বেলায়। তারপর যখন সমাজে খুব ধর্মকর্ম থাকার পরও, লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা থাকার পরও, লক্ষ মানুষের ইজতেমা হবার পরও, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর হজ্ব করতে যাওয়ার পরও এবং রমজান মাসে ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে রোজা পালনের পরও সমাজ অন্যায়, অবিচার, খুনোখুনি, ধর্ষণ, রক্তারক্তি, দুর্নীতি ইত্যাদিতে ভরপুর হয়ে থাকে, তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বলা হয়- এই কি তবে ইসলামের শান্তির নমুনা? কী হাস্যকর মূল্যায়ন!
আমাদের কথা হচ্ছে, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই ইসলামের শান্তির নমুনা দেখতে চান তবে বলতে হয়, সে সময় এখনও আসে নি। যে এখনও পরীক্ষাতেই বসল না, তার পাস বা ফেল হবার প্রসঙ্গ আসে কি? তাকে আগে পরীক্ষায় বসতে দিন, জেলেকে জলাধারে যেতে দিন, শিকারীকে বনে যেতে দিন, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় আসবে। আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামকে সর্বপ্রথম একটি জনগোষ্ঠী তাদের সামষ্টিক জীবনে গ্রহণ ও কার্যকর করেছিল। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন নয় কেবল, ঐ ইসলামকে অধিকার দেওয়া হয়েছিল তাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কথা বলার, পরিবর্তন ও সংস্কারসাধন করার। তবেই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে বড় রেনেসাঁটি সংঘটিত হয়েছিল।
যদি আরবরা আল্লাহর রসুলকে শর্ত জুড়ে দিতেন যে, ‘আপনি আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবন নিয়ে কথা বলুন, কীভাবে ভালো হয়ে চলা যায়, কীভাবে সত্য কথা বলা যায়, কীভাবে হালাল কাজ করা যায়- এসব বলুন, কিন্তু আমাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। ওটা আমরা যেভাবে রেখেছি সেভাবেই থাকবে। জাতীয় জীবনে আমাদের গোত্রপতিরা যা বলবেন আমরা তাই করব, তবে চিন্তা করবেন না, ব্যক্তিজীবনে আমরা খুব ভালো মুসলিম হব, আপনার আনিত ইসলামের সমস্ত হুকুম আহকাম মেনে চলব।’ এই শর্ত মেনে সেই ইসলাম কি পারত আরবদের দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ণ অনিরাপদ সমাজকে পাল্টিয়ে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে?

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...