হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বর্তমানের মানবজাতির ‘রব’ হচ্ছে দাজ্জাল

মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে
বিশ্বনবী মোহাম্মদ (দ.) বলেছেন, আখেরী যামানায় বিরাট বাহনে চড়ে এক চক্ষুবিশিষ্ট মহাশক্তিধর এক দানব পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে; তার নাম দাজ্জাল। বিশ্বনবী বর্ণিত সেই ভয়ঙ্কর একচোখা দানব ‘দাজ্জাল’ এসে গেছে! আল্লাহর অশেষ করুণায় হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী সেই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি রসুলাল্লাহ (দ.) এর হাদিস থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদী খ্রিষ্টান যান্ত্রিক ‘সভ্যতা’ই হচ্ছে বিশ্বনবী বর্ণিত সেই দাজ্জাল, যে দানব ৪৮১ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব, কৈশোর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে; আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভু বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সিজদায় পড়ে আছে। দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের কথা বলার পর আল্লাহর রসুল তার সম্বন্ধে বেশ কতকগুলি চিহ্ন বলে গেছেন যাতে তাঁর উম্মাহ দাজ্জালকে দাজ্জাল বলে চিনতে পারে ও সতর্ক হয়, তাকে গ্রহণ না করে এবং তার বিরোধিতা করে, তাকে প্রতিরোধ করে এবং তাকে ধ্বংসের চেষ্টা করে। এগুলো আমরা একটা একটা করে পেশ করছি।
হাদিসে রসুল (দ.) বলেছেন- “দাজ্জাল নিজেকে মানুষের রব, প্রভু বলে ঘোষণা করবে এবং মানবজাতিকে বলবে তাকে রব বলে স্বীকার করে নিতে। (বোখারী) দাজ্জালের এই দাবি “আমাকে প্রভু বলে স্বীকার কর” এর অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে এই যে দাজ্জাল পৃথিবীর মানুষকে বলবে যে, আমি মানুষের সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থা দিচ্ছি, যে আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, শিক্ষা-ব্যবস্থা দিচ্ছি তা তোমরা গ্রহণ ও প্রয়োগ কর। তোমরা বহু পুরাতন বেদ, মনু-সংহিতা ও কোরান-হাদীস নিঃসৃত যে আইন-কানুন, অর্থনীতি, দন্ডবিধি ইত্যাদি জীবনে প্রয়োগ করছিলে তা পুরান, অচল ও বর্বর; ওগুলো ত্যাগ করে আমি যে অতি আধুনিক আইন-কানুন দিচ্ছি তা গ্রহণ কর ও তোমাদের সমষ্টিগত জীবনে প্রয়োগ কর। তা হলে তোমরা আমাদের মত সভ্য হবে, সমৃদ্ধিশালী, ধনী ও শক্তিশালী হবে। তোমাদের জীবন যাত্রার মান আমাদের মত উন্নত হবে। আমরা যেমন স্বর্গসুখে আছি তোমরাও এমনি স্বর্গসুখ ভোগ করবে। দাজ্জাল রব, প্রভুূ হবার দাবী করছে কিন্তু স্রষ্টা হবার দাবী করছে না। পাশ্চাত্যের ইহুদী-খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা ও শক্তি ঠিক এই প্রভুত্বের, রবুবিয়াতের দাবিই করছে, মানুষের স্রষ্টা হবার দাবি করছে না। সে বলছে ব্যক্তিগত জীবনে তোমরা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদী, জৈন, বৌদ্ধ যা থাকতে চাও থাক এবং যত খুশি তোমাদের আল্লাহকে, ঈশ্বরকে, গডকে, এলীকে ডাক। যত খুশি নামাজ পড়, রোযা কর, হজ কর, প্রার্থনা কর আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু সমষ্টিগত জীবনে আমার রবুবিয়াহ্, প্রভুত্ব মেনে নাও। এখানে তোমাদের স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করে আমি যে জনগণের, একনায়কের, কোন বিশেষ শ্রেণীর, সংখ্যাগরিষ্ঠের অর্থাৎ এক কথায় মানুষের সার্বভৌমত্ব সৃষ্টি করেছি, তার যে কোন একটাকে মেনে নাও।
আজ মানবজাতি দাজ্জালের ঐ দাবি মেনে নিয়েছে এবং মেনে নেয়ায় দাজ্জাল মানবজাতিকে তার কাছে যে জান্নাতের মত জিনিসটি আছে তাতে প্রবেশ করিয়েছে। তাই আজ সমস্ত মানবজাতি জাহান্নামের আগুনে পুড়ছে। সমস্ত পৃথিবীতে কোথাও শান্তি নেই। একটি মাত্র দম্পতি থেকে সৃষ্ট হয়েও, একটিমাত্র জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়েও (কোর’আন সুরা বাকারা ২১৩; সুরা ইউনুস ১৯; সুরা নেসা ১)। মানুষ একে অপরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করছে, আগুনে পুড়িয়ে মারছে, তাদের বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে। দাজ্জালের অর্থনীতি গ্রহণ করার ফলে মানুষের মধ্যে কেউ কোটি কোটি মুদ্রার মালিক হয়ে জঘন্য বিলাস-ব্যাসনের মধ্যে ডুবে আছে আর কেউ না খেতে পেয়ে মরে যাচ্ছে, খেতে পরতে দিতে না পেরে নিজেদের ছোট ছোট বাচ্চা সন্তানদের হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করছে, মা গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করছে, পেটের সন্তান অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে; আল্লাহর দেয়া দণ্ডবিধি প্রত্যাখ্যান করে দাজ্জালের দণ্ডবিধি গ্রহণ করায় সর্বরকম অপরাধ চুরি- ডাকাতি, হাইজ্যাক, অপহরণ, ছিনতাই, খুন-জখম, ধর্ষণ প্রতি দেশে, প্রতি জাতিতে ধাঁই ধাঁই করে বেড়ে চলেছে; আল্লাহর দেয়া শিক্ষা-ব্যবস্থা ত্যাগ করে দাজ্জালের দেয়া আত্মাহীন, আল্লাহহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে মানুষ তার নৈতিক চরিত্র হারিয়ে পশুর পর্যায়ে নেমে যাচ্ছে।
সিজদাহ অর্থ আত্মসমর্পণ, কাউকে সিজদাহ করার অর্থ তার কাছে আত্মসমর্পণ করে তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলা- তাই আল্লাহ তাঁকে ছাড়া আর কাউকে সিজহাদ করা নিষেধ করেছেন। কিন্তু মুসলিমসহ সমস্ত মানবজাতি আজ দাজ্জালের অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার পায়ে আত্মসমর্পণ করেছে, তার পায়ে সিজদায় পড়ে আছে। এক কথায় ইবলিস মানবজাতিকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব থেকে, তওহীদ থেকে বিচ্যুত করে তাকে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমায় পতিত করার যে চ্যালেঞ্জ আল্লাহকে দিয়েছিল আজ তাতে সে সক্ষম হয়েছে, আজ সে জয়ী অবস্থায় আছে।
(সম্পদনায়: মুস্তাফিজ শিহাব, সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি)

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...