হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

প্রশ্ন তুললেই কেন তারা রেগে যান?

রিয়াদুল হাসান

হেযবুত তওহীদ আন্দোলন একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন যা নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবন ও সম্পদকে উৎসর্গ করে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানবজাতির সামনে তুলে ধরে জঙ্গিবাদ মাদক অপরাজনীতি ধর্মব্যবসা ইত্যাদিসহ যাবতীয় অন্যায় অবিচার অশান্তির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত সকল স্তরের কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারে ও অনুমোদনসাপেক্ষে আমরা এই কাজগুলো করছি। ইতোমধ্যেই দেশের শিক্ষিত সমাজ, সত্যনিষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজ, কৃষক-শ্রমিক জনতা আমাদেরকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু গোড়া থেকেই এই আন্দোলনের প্রবল বিরোধিতা করে যাচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি, যারা আল্লাহর নাযেল করা ইসলামকে বিক্রি করে জীবিকা হাসিল করছে, বিভিন্ন উপায়ে স্বার্থ উদ্ধার করছে, অপরাজনীতি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ইসলামের নামে চালিয়ে দিচ্ছে, ধর্মের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তারা স্বার্থ উদ্ধার করছে। তাদের বিরোধিতার কারণ হলো, তারা দেখল যে হেযবুত তওহীদ যে মহাসত্য তুলে ধরছে সেটা তাদের ধর্মব্যবসার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা দেখল যে এই সত্যটা যদি মানুষ জানে তবে তাদের স্বার্থ হাসিল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তারা একযোগে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। তারা এমন এমন জঘন্য মিথ্যাচার প্রচার করেছে যেটা আমাদের জ্ঞান তো বটেই আমাদের চিন্তারও বাইরে, যেসব কথা আমাদের আত্মাও কোনোদিন শোনেনি। আমরা যা করি না, যা বলি না, যেটা আমাদের বিশ্বাস নয়, যেটা আমাদের আকিদা নয় এমন এমন আজগুবি কথা বানিয়ে বানিয়ে তারা জনগণের মধ্যে প্রচার করছে। যে কথাগুলো মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানে সেগুলোই তারা অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। যেমন তারা গুজব প্রচার করে হেযবুত তওহীদ নাকি খ্রিষ্টান, ইহুদি খ্রিষ্টানদের দালাল ইত্যাদি।

শত শত ওয়াজ মাহফিলে তারা বিগত ২৫ বছর ধরে এটা করেছেন। সাম্প্রতিককালে সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাদের বহু ওয়াজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যেখানে তারা হেযবুত তওহীদকে খ্রিষ্টান ইত্যাদি বলে বিপুল গর্জন সহকারে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর ঘর মসজিদকে আর মাদ্রাসাকে তারা ব্যবহার করছেন নিজেদের হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নের ঘাঁটি হিসাবে। তারা এমনও বলছে যে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী নাকি নিজেকে নবী বলে দাবি করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। যে কাউকে সহজে ঘায়েল করার জন্য এর চেয়ে মোক্ষম কোনো অস্ত্র আর নেই। অথচ আমাদের এমামুয্যামান তাঁর বইয়ে, বক্তব্যে শত শতবার বলেছেন মোহাম্মদ (সা.) শেষনবী, আখেরি নবী। এমন একাধিক ভিডিও ও অডিও ভাষণ আমাদের কাছে আছে যেখানে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি নবী নই, রসুল নই, পীর ফকির নই, জ্যোতিষি নই, ভবিষ্যদ্বক্তাও নই।”

তারা এমন কথাও প্রচার করে যে, হেযবুত তওহীদ নাকি নামাজ পড়ে না, কেউ বলে আমরা দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, কেউ বলে তিন ওয়াক্ত পড়ি, কেউ বলে পূর্ব দিকে ফিরে নামাজ পড়ি, কেউ বলে শুধু রোববারে নামাজ পড়ি ইত্যাদি। অথচ হেযবুত তওহীদ সালাতের যথাযথ নিয়ম-শৃঙ্খলা অনুসরণ করে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাহ আদায় করে থাকে।

আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হতো যে, আমাদের কেউ মারা গেলে আমরা তাকে জানাজা ছাড়াই দাফন করি। কোথাও বলা হয়েছে আমরা কালো কাপড় দিয়ে, বা লাল কাপড় দিয়ে মুর্দা দাফন করি। কোথাও বলেছে আমরা নাকি মৃতদেরকে বসিয়ে কবর দেই। এই বিকৃত মিথ্যাচারগুলো সাধারণ মানুষের মনে ভীষণরকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কথাগুলো বিশ্বাসও করে। এগুলো যে সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা যা বিগত ২৫ বছরে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে।

হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই যখন ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তখন বেছে নেওয়া হয়েছে আরেকটি জঘন্যতর প্রক্রিয়া। ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের ছবি, পর্ন সাইটের ছবি, অপরাধীদের গ্রেফতারের ছবি ডাউনলোড করে কম্পিউটারে এডিট করে সেগুলোর উপর লিখে দেওয়া হচ্ছে যে, ‘হেযবুত তওহীদের এমাম বা হেযবুত তওহীদের অমুক শাখার সদস্যরা অমুক কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ল।’

ধর্মব্যবসায়ীরা যখন এসব ছবি তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে তখন তাদের অন্ধ অনুসারীরা সেগুলোকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি তারা অশ্লীল ভিডিও ও ছবি হেযবুত তওহীদের ইমামের নামে প্রচার করে একদম ভাইরাল করে ফেলেছে। অথচ ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখা গেল ছবিটি একটি দক্ষিণ ভারতীয় পর্ন সাইট থেকে নেওয়া হয়েছে।

এমমুয্যামান তাঁর বইগুলোতে ইসলামের বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে বহু ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন, বহু গবেষণামূলক তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেই বইগুলোর কোনো একটি থেকে কোনো বিষয়ের মাঝখানের একটা লাইন বা লাইনের টুকরো তুলে এনে আরেক লাইনের সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে সেটার বিকৃত ব্যাখ্যা জনগণের সামনে হ্যান্ডবিল পোস্টার বানিয়ে প্রচার করছে এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি। একটা বই অর্ধেক পড়েও অনেক সময় সেটা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না, একজন লেখকের অভিপ্রায় কী তা জানতে হলে সম্পূর্ণ বইটি পড়তে হয়, সেখানে এক লাইন আধ লাইন বলে যদি প্রচার করে দেওয়া হয় তাহলে মানুষ এর মর্ম বা লেখকের অভিপ্রায় কী করে বুঝবে? কিচ্ছু বুঝবে না। আর তারা তো উদ্দেশ্যমূলকভাবে লাইনটিকে ব্যবহার করে যেন ধর্মপ্রাণ মানুষ উত্তেজিত হয়ে যায়।

এর বাইরেও প্রতিনিয়ত শত শত অপপ্রচার আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা এদেশে খুব সহজ কাজ। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কাফের বলে ফতোয়া দিলেই তার বিরুদ্ধে জনগণ হৈ হৈ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সত্য-মিথ্যা, ন্যায় অন্যায় বিচার করারও যুক্তিবোধ তাদের নেই। এভাবে তারা প্রায়ই কোনো দলের বা ব্যক্তির বিরাট ক্ষতি করে ফেলে। আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ী ও তাদের দোসর অপপ্রচারকারীরা বে-আইনি সমাবেশ করে হুমকি দিচ্ছে, ওয়াজে হত্যার হুমকি দিচ্ছে, অনলাইনে অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে। দেশের আইন মান্যকারী নাগরিক হিসাবে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা যখনই আইনের শরণাপন্ন হচ্ছি তখন প্রশাসন কোথাও কোথাও সেগুলো আমলে নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ থেকে তারা বুঝতে পারছে যে এখন তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে, অপকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তারা মানববন্ধন, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, গণমাধ্যমকে উসকে দিতে চাচ্ছে। এগুলো তারা করছে তাদের অপকর্মগুলোকে আড়াল করার জন্য।

কোনো চিন্তাশীল মানুষ প্রশ্ন করতে পারেন যে, সকল ধর্মব্যবসায়ী একজোট হয়ে কেন হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে লেগেছে? এর সরল উত্তর হচ্ছে প্রথমত আমরা ধর্মব্যবসার মুখোশ খুলে দিয়েছি। দ্বিতীয়ত তাদের অহঙ্কারে আঘাত লেগেছে। প্রথম কারণটির ব্যাখ্যা এতক্ষণ দিয়েছি, এবার দ্বিতীয় কারণ। স্রেফ অহঙ্কারবশত হেযবুত তওহীদের প্রত্যেকটি অকাট্য বক্তব্যেরও বিরোধিতা করা হয়। এমনকি কোর’আনের আয়াত ও সহীহ হাদিস উল্লেখ করে কোনো কথা বললেও লাভ নেই, যারা ধর্মব্যবসায়ী তারা এর বিরোধিতা করবেনই। তখন হয়তো বলবেন, কোর’আন-হাদিসের কথা আপনি বলার কে?
প্রশ্ন হলো- কেন এই অন্ধ বিরোধিতা, কেন এই গোঁড়ামি?

কারণ আর কিছুই নয়, তারা নিজেদেরকে মনে মনে আল্লাহর আসনে বসিয়ে রেখেছেন। তারা মনে করেন, জমিনের উপরে তারাই আল্লাহর প্রতিনিধি, কর্তৃপক্ষ, খাস বান্দা তথা ধর্মাবতার। ইসলামের কথা বলার এখতিয়ার একমাত্র তাদেরই আছে। অপর কেউ ইসলামের কথা বললেই তাদের অহঙ্কারে লেগে যায়, তারা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন, একে তারা ধৃষ্টতা, বেয়াদবি বলে মনে করেন। এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে, তাঁকে হাশরের দিন প্রশ্ন করা চলবে না। তাঁর কোনো ভুল নেই। তিনি নিখুঁত, সোবাহান, ত্রুটিহীন। কোর’আনে তিনি বলেছেন, তাঁর নিজের যেমন কোনো খুঁত নেই, তাঁর অসীম সৃষ্টি জগতেও কোনো খুঁত নেই। তিনি মানুষকে আহ্বান করেছেন পারলে তাঁর খুঁত আবিষ্কার করার জন্য। তিনি বলেন, “তুমি করুণাময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। বারবার দৃষ্টি ফিরাও। কোনো খুঁত দেখতে পাও কি? তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ। তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার নিজের দিকেই ফিরে আসবে (সুরা মুলক ৩-৪)”।

যুগে যুগে মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পুরোহিত শ্রেণি এমনিভাবে নিজেদেরকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন, এভাবে কার্যত তারা নিজেদেরকে স্বয়ং আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে রেখেছেন। তারা নিজেদের উপাধি দিয়েছেন ‘মওলানা’ যার একটি অর্থ আমাদের প্রভু। অথচ মানুষের প্রভু একজন- আল্লাহ, আর কেউ মানুষের প্রভু হতে পারে না। যখন তারা মনে মনে মানুষের প্রভুত্বের আসনে বসে গেল তখন যদি তাদের কোনো অসঙ্গত, অন্যায্য, হারাম কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় – এটা কী-কেন-কীভাবে, তখনই তাদের সেই প্রভুত্বে-ঈশ্বরত্বে-ভগবানত্বে আঘাত লাগে। কী! এত বড় স্পর্ধা! আমাদের এত প্রভাব-প্রতিপত্তি, আমাদের এত জ্ঞান, এত বছরের মাদ্রাসা শিক্ষা, এত অর্জন, এত (অন্ধ) অনুসারী, আমাদের সমস্ত রায়, ফতোয়া, বক্তব্য, কথা-আলোচনা- এগুলো সব প্রশ্নাতীত, তর্কাতীত। কে প্রশ্ন তুললো? কার এত বড় বুকের পাটা? ভাবখানা এমন যে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যেন স্বয়ং আল্লাহ-ঈশ্বর-ভগবানের বিরুদ্ধেই কথা বলা। তখনই শুরু হয় প্রশ্নকারীর বিরুদ্ধে ধর্মের অবমাননার অপবাদ আরোপ। তারা যত অন্যায়ই করুক, পাপ করুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে সে কাফের হয়ে গেছে। এবার তাকে হত্যা করতে হবে, পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ধর্মব্যবসায়ীরা সমাজে তাদের এরকম একটা অবস্থান তৈরি করে রেখেছে। ইহুদি খ্রিষ্টান পুরোহিতরাও তাদের অনুসারীদের রবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল যে কথা আল্লাহ স্বয়ং কোর’আনে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন, “তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের আলেম ওলামা আর পীরদেরকে নিজেদের প্রভু (রব) বানিয়ে নিয়েছে (সুরা তওবা ৩১)”।

কিন্তু সময়ের কোনো একটা বাঁকে এসে সাধারণ মানুষ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রশ্নের আঙুল তোলে। পশুর মনে কোনো প্রশ্নের উদয় না হতে পারে, তবে যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষ যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। তার প্রশ্ন করার এই আল্লাহপ্রদত্ত অধিকারকে কেউ খর্ব করতে পারে না। উপরন্তু এই ধর্মজীবীরা ভুলে যান যে, তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়সঙ্গত, কারণ জনগণের রক্ত পানি করা অর্থেই তাদের সংসার চলে। তারাই তো জনগণের মধ্যে ওয়াজ করেন যে, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, অর্ধ জাহানের অধিপতি হযরত ওমর (রা.) এর পোশাক অন্যদের চাইতে দীর্ঘ হওয়ায় তিনি খোতবা প্রদানকালে জনগণের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখন তিনি উত্তেজিত হন নি, বরং শান্তভাবে সেই প্রশ্নকারীকে সন্তোষজনক জবাব দিয়ে বলেছিলেন যে, এমন সাহসী যুবক যতদিন মুসলিম জাতির মধ্যে থাকবে ততদিন জাতির কোনো ভয় নাই।

প্রশ্নকারী ও উত্তরদাতা উভয়েই ছিলেন রসুলাল্লাহর হাতে গড়া প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী, প্রকৃত ইসলামের ধারক। ভুললে চলবে না, তিনি সেই ওমর (রা.) যিনি দুর্নীতির দায়ে জাহেলি যুগে মক্কার রাজা বলে আখ্যায়িত আবু সুফিয়ানের পিঠ চাবুকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিলেন (সূত্র: এ হলো ইসলাম: ইমামুদ্দিন মুহাম্মদ তোয়াহা বিন হাবীব, www.shiavault.com) যিনি নিজ হাতে নিজ পুত্র আবু শাহামাকে দণ্ড দিয়েছিলেন যার দরুন পুত্র মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি খলিফা মনোনীত হওয়ার পর একটি ভাষণে নিজেই তাকে জবাবদিহি করার জন্য অধিকার ও তাগিদ জনগণকে প্রদান করেন যে বৃত্তান্ত পূর্বে বলে এসেছি (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। ন্যায়ের উপর কতটা প্রখরভাবে দণ্ডায়মান থাকলে এমনভাবে বলা সম্ভব!

দুর্ভাগ্য আজ! জাতির মধ্যে ন্যায় স্থাপনকারী মহান খলিফা ওমরও (রা.) নেই, দীনের হেফাজতকারী সেই প্রশ্নকর্তাও নেই। আজ মিম্বরে বসে আছে একদল ধর্মব্যবসায়ী আর তাদের সামনে বসে আছে তাদের একদল অন্ধ অনুসারী। জাতীয় জীবনে আল্লাহর হুকুম বিধান কোথাও চলে না। ফলে মানবসমাজে ইসলামের (শান্তি) ছিটেফোঁটাও নেই।

প্রাচীন ভারতবর্ষে সনাতন ধর্ম ব্রাহ্মণদের এতটাই কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছিল যে, তারা ছাড়া অন্য কারো বেদ স্পর্শ করারও অধিকার ছিল না। নিম্নবর্ণের কেউ বেদ শ্রবণ করলেও তার কানে শাস্তিস্বরূপ গলিত সীসা ঢেলে দেওয়া হতো। এসব বিধান স্বার্থের জন্য ব্রাহ্মণরাই বানিয়ে নিয়েছিল। ফলে একটা সময়ে এসে সনাতনধর্ম ব্রাহ্মণ্যবাদে পর্যবসিত হয়েছিল। এভাবে তারা স্বয়ং ভগবানের আসনে আসীন হয়ে গিয়েছিল। তারা যত জঘন্য অপরাধই করুক না কেন সাধারণ মানুষ সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারত না। প্রশ্ন তুললেই ধর্ম অবমাননার ফতোয়া দিয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেওয়া হতো। একই অবস্থা হয়েছিল মধ্যযুগে খ্রিষ্টান ধর্মের। সেখানে গির্জার বিধানই ছিল ঈশ্বরের বিধান। যাজক-পুরোহিত যা বলবেন সেটাই ঐশিবাণী। কেউ তা অমান্য করলে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে ডাইনী বা জ্বিনগ্রস্ত বলে সাব্যস্ত করা হতো এবং ধর্ম অবমাননার দায়ে নির্মম-নৃশংস পন্থায় তাকে হত্যা করা হতো। এভাবে সকল ধর্মই ধর্মব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে একই প্রকার নির্যাতনের কলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শেষ ইসলামের ক্ষেত্রে একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ এই দীনের যে কেতাব আল কোর’আন সেটা তো কেউ বিকৃত করতে পারে নি। সেটা আল্লাহ স্বয়ং সংরক্ষণ করেছেন এবং করবেন (সুরা হিজর ৯)। এই হিসাবটা ইসলাম ধর্মকে পুঁজি করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীরা করতে ভুলে গেছে। কোর’আন পাঠ করার অধিকার প্রত্যেক মুসলিমের রয়েছে। এমনকি রসুলাল্লাহর জীবনী বা হাদিস গ্রন্থগুলোও সবার সামনে খোলা আছে। সেটা পাঠ করার অধিকার এবং সেটার সঙ্গে বর্তমানের ইসলামকে তুলনা করে দেখার অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে, মুচি, মজুর, মেথরেরও রয়েছে। এই অধিকার আল্লাহ দিয়েছেন, রসুল দিয়েছেন। না হলে বেলালের (রা.) মতো ক্রীতদাসকে কাবার উপরে উঠাতেন না। এই কাজের দ্বারা রসুলাল্লাহ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন এই দীনে কার অবস্থান কী। অন্তত এই শেষ দীনে অন্যান্য ধর্মের মতো দীনকে নিজেদের জোব্বার পকেটে পুরে কুক্ষিগত করে রাখার কোনো সুযোগ নেই, ব্যবসা করে খাওয়ারও সুযোগ নেই, প্রভু বনে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। তারা যত ক্ষমতাধরই হোক, জাতির মধ্যে কেউ না কেউ ধর্মব্যবসাসহ তাদের যে কোনো প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলবেই। যে প্রশ্নটি আজ তুলেছে হেযবুত তওহীদ। এ কারণেই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে তাদের এত রাগ ক্ষোভ প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচার, গালি, ষড়যন্ত্র। তবে হেযবুত তওহীদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। হাসবুনাল্লাহ।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...