হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

নবনির্মাণের সূচনাকারীদের সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে

রিয়াদুল হাসান:

আজ সমস্ত পৃথিবী অন্যায়, অবিচার আর অশান্তিতে পরিপূর্ণ। পৃথিবীর চারদিক থেকে আর্ত-মানুষের হাহাকার উঠছে- শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের উপর শাসকের অবিচারে, ন্যায়ের উপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের উপর ধুর্তের বঞ্চনায়, পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। সমস্ত দিক দিয়ে মানুষ অপরাধের সীমা অতিক্রম করেছে, ফলে পৃথিবী অশান্তির অগ্নিগোলকে পরিণত হয়েছে। সুতরাং যে সিস্টেম, যে জীবনব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেই পাশ্চাত্য, বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন দাজ্জালীয় ‘সভ্যতা’ ও এই সভ্যতা ধারণকারী সকল মনুষ্য সমাজের ধ্বংস প্রাকৃতিক কারণেই অত্যাসন্ন। মেকদাদ বিন আসওয়াদ (রা.) বলেন, তিনি রসূল (সা.) কে বলতে শুনেছেন যে, ভূপৃষ্ঠে এমন কোনো মাটির ঘর বা তাবু থাকবে না যেখানে আল্লাহ ইসলাম পৌঁছে দিবেন না- সম্মানীর ঘরে সম্মানীর সাথে এবং অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে সম্মানিত করবেন, তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণের যোগ্য করে দিবেন। আর যাদেরকে তিনি অসম্মানিত করবেন তারা জিযিয়া দিয়ে এ দ্বীনের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হবে। আমি বললাম, তাহলে তো দ্বীন পূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। [মুসনাদ ইবনে আহমাদ, মেশকাত শরীফ]
সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও পৃথিবী থেকে সমস্ত মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়া, স্রষ্টাহীন বস্তুবাদী প্রচলিত এই দাজ্জালীয় সভ্যতার ধ্বংস হওয়া তো একই বিষয়। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) এসে এই কাজটিই করবেন। অনেক হাদীসেই এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরাও বিশ্বাস করে যে যিশু খ্রিষ্ট তথা ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আসবেন এবং সমস্ত পৃথিবীতে সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন ও পৃথিবীকে ‘কিংডম অব হ্যাভেন’ তথা স্বর্গরাজ্য বানাবেন। বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে- “এর পরে মসীহ যখন সমস্ত শাসন-ব্যবস্থা, অধিকার আর ক্ষমতা ধ্বংস করে আল্লাহর হাতে রাজ্য দিয়ে দেবেন (পূর্ণরূপে আল্লাহর সার্বভৌত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে) তখনই শেষ সময় আসবে।” [সপ্তম সিপারা (১ করিন্থীয়)- ১৫:২৪] অর্থাৎ কিংডম অব হ্যাভেনের পূর্বে এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থার ধ্বংস অনিবার্য।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কোনো স্থানে যখন মাত্রাতিরিক্তভাবে জনসংখ্যা বেড়ে যায় তখন প্রাকৃতিকভাবেই অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করাও দূরুহ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি যে কোনো উপায়ে পৃথিবী নিজেকে শুদ্ধ করার জন্য বিধ্বংস ঘটায়। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী নিকোলাস ম্যাকিয়েভেলি বলেন, “When every province of the world so teems with inhabitants that they can neither subsist where they are nor remove themselves elsewhere… the world will purge itself in one or another of these three ways (floods, plague and famine).”
মহাভারতে বর্ণিত আছে, “সমাজে যখন করুণার নাশ হয় তখন সমাজ স্বয়ং নিজের জন্য যুদ্ধ প্রস্তুত করে থাকে”। আজ সমাজ থেকে সমস্ত করুণা উঠে গেছে। ভাই ভাইকে হত্যা করছে, সন্তান পিতা-মাতাকে কষ্ট দিচ্ছে, পিতা-মাতা সন্তানের ধ্বংস কামনা করছে, পুরুষ স্ত্রীলোকের সম্মানহানি করছে, করুণার অভাবে পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, আলগা হয়ে যাচ্ছে রক্তের বন্ধন- এভাবে সামাজ চলতে পারে না। অবশ্যই প্রকৃতি নিজের জন্য মহাবিধ্বংস ডেকে আনছে। এখন সেই বিধ্বংসের পশ্চাতে কে সফল হবে আর কে বিধ্বংসের বলি হবে সেটা নির্ভর করছে প্রতিটা মানুষের নিজ নিজ কর্মের উপর আর সিদ্ধান্তের উপর। বিধ্বংসের পর নবনির্মাণের আরম্ভ হবে, সত্যযুগ ফিরে আসবে, কিংডম অব হ্যাভেন প্রতিষ্ঠিত হবে, ইসলামের স্বর্ণযুগের পুনরাবির্ভাব হবে।
মহাবিধ্বংসের পর যারা নবনির্মাণের সূচনাকারী হবে তাদের অবশ্যই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সেই সত্য মহান আল্লাহ অতীব দয়া করে, করুণা করে মাননীয় এমামুযযামানের মাধ্যমে হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। সেই সত্যগুলি আমরা গত ২০ বছর ধরে নিরলসভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমাদের প্রকাশনাসমূহ সেই সত্য প্রচারেরই হাতিয়ার।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...