হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্ম ও অধর্মের মানদণ্ড

শ্ন: ধর্ম ও অধর্মের মানদণ্ড কী?

উত্তর: অতি সংক্ষেপে বলছি। ধর্ম হচ্ছে সেটাই যাকে ধারণ করা হয়। যেমন- আগুনের ধর্ম পোড়ানো, পানির ধর্ম ভেজানো। কথা হচ্ছে মানুষের ধর্ম তাহলে কী? মানুষের ধর্ম হলো মানবতা। অন্য মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রনা দেখার পর যখন আপনি হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করবেন এবং সে দুর্দশা দূর করার জন্য চেষ্টা করবেন কেবল তখনই আপনি ধার্মিক হিসেবে বিবেচ্য হবেন। আর যদি অন্যের দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রনা-কাতরতা আপনার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করতে না পারে, আপনি যদি সমাজের দুঃখী মানুষের কষ্ট দেখার পরও নিশ্চুপ থাকেন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম না করেন তাহলে আপনি অধার্মিক। পোড়ানোর ক্ষমতা হারালে অর্থাৎ ধর্ম হারালে ওই আগুনকে যেমন আপনি আগুন বলবেন না তেমনই মানুষের এত দুঃখ-দুর্দশা, অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দেখেও তার প্রতিকারে এগিয়ে না আসলে কেউ ধার্মিক পরিগণিত হবে না। কল্যাণ-অকল্যাণই হচ্ছে ধর্ম-অধর্মের মানদণ্ড।
প্রশ্ন: আপনারা মানুষকে নামাজ-রোজা করতে তো তাগিদ দেন না, তবে কি আমলের দরকার নেই?
উত্তর: আমলের অবশ্যই দরকার আছে কিন্তু তসবীহ-তাহলিল করা, কোর’আন-হাদীস শেখা, নামাজ-রোজা করা, তাবলীগ করা ইত্যাদি আমলের পূর্বশর্ত হচ্ছে মো’মেন হওয়া। যত আমল, নামাজ, রোজা, আদেশ-নিষেধ, ক্ষমা, জান্নাত সব মো’মেনদের জন্য। মো’মেন ছাড়া কারও আমল কবুল করা হবে না। অর্থাৎ আমলের পূর্বশর্ত হচ্ছে মো’মেন হওয়া। মো’মেন কারা? সুরা হুজরাতের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ মো’মেনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তারাই প্রকৃত মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আনা মানে হচ্ছে সত্য ও ন্যায়কে ধারণ করা। আল্লাহ হচ্ছে চূড়ান্ত সত্য, তাঁর হুকুমও সত্য, চূড়ান্ত ন্যায়। এই সত্য ও ন্যায়কে মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন-সম্পদকে যিনি ব্যয় করলেন তিনি হলেন মো’মেন। সহজ কথায়- আগে সত্যকে ধারণ করতে হবে, তারপর কারও সাথে আপস না করে, কারও ভয়ে বিচলিত না হয়ে, লোভ-লালসা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সত্যের প্রতি দৃঢ় থাকা এবং সেই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবন-সম্পদ বিলীন করে দেওয়া। এই কাজ যিনি করবেন তিনিই হলেন মো’মেন। এই যে মো’মেনের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো অর্থাৎ সত্য প্রতিষ্ঠা করে মানবজীবনে শান্তি আনয়নের কাজ, এই কাজ করতে গেলে নিশ্চিতভাবেই কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লাগবে, গুণ লাগবে। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করার জন্য প্রশিক্ষণ হিসেবে একজন মু’মিন নামাজ পড়বে, হজ্ব করবে, রোজা রাখবে, যাকাত দিবে। কিন্তু এগুলো উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য মানবতার কল্যাণে সংগ্রাম। অর্থাৎ আমলের পূর্বশর্ত মো’মেন হওয়া, আর মো’মেন হবার একমাত্র শর্ত হলো মানবতার কল্যাণে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন-সম্পদ ব্যয় করতে হবে। এখন বলুন- সেই অনুযায়ী আজকের নামাজ, রোজা, হজ্ব, তসবীহ-তাহলীল করা এই মানুষগুলো আসলেই মো’মেনের শর্ত পূরণ করছেন কিনা?
প্রশ্ন: বর্তমানে যারা নামাজ-রোজা, হজ্ব-যাকাত, তসবীহ-তাহলীল, তাবলীগ ইত্যাদি আমল করছেন তারা কি এতকিছু করা সত্ত্বেও ধর্মের পথে নেই?
উত্তর: আশা করি দ্বিমত করবেন না যে, বর্তমানে তারা যেসকল আমল করছেন সেগুলো করা হচ্ছে ব্যক্তিগত সওয়াব কামাই করার জন্য। ব্যক্তিগতভাবে জান্নাত লাভ করার উদ্দেশ্যে। মিথ্যা কথা বলেন না, অসৎ কাজ করেন না, আমানত রক্ষা করেন, অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না- এমন বহু ভালো মানুষ দুনিয়াতে আছে। কিন্তু সমাজ নিয়ে, মানুষের শান্তি-অশান্তি নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই। একই অবস্থা আলেমদেরও। অন্যায়, অবিচার, যুলুম, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, দারিদ্র্য, যুদ্ধ-সংঘাত, হানাহানি, অনৈক্য ইত্যাদি দেখেও কথিত আলেমরা নীরব। সমাজের এই অশান্তি দেখেও আবেদদের এই নিস্পৃহতা এবং আলেমদের এই নীরবতা দুস্কৃতকারীর দুস্কৃতির চাইতেও বড় অধর্ম। ব্যক্তিগত স্বার্থে, এমনকি পরিবারের স্বার্থে করা কোনো কাজ ধর্ম বলে বিবেচিত হয় না। সমাজকে শান্তিতে রাখার জন্য, অন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য যিনি ভালো হবেন, কাজ করবেন তাকেই আল্লাহ জান্নাত দিবেন। যারা এ কাজ করবেন তারাই প্রকৃত ধার্মিক। আপনাকে ধন্যবাদ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...