হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মোন্মাদনার অমানবিক অস্ত্র ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে

মশিউর রহমান:
ধর্মোন্মাদনা হচ্ছে ধর্মের চরমতম অপব্যবহার। ধর্ম মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতে পরিণত করে, আর ধর্মোন্মাদনা মানুষকে সৃষ্টির নিকৃষ্ট প্রাণীতে পরিণত করে। মানুষ উন্মাদ হয়ে যায়, অপর কোনো মানবগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাশবিক নৃশংসতায় তারা মেতে ওঠে। আমাদের সমাজে প্রায়ই যে কোনো একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে, ফেসবুকে কোনো একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়ে, কারো উপর নাস্তিক, কাফের, মুরতাদ ইত্যাদি ফতোয়ার বাণ নিক্ষেপ করে, ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ এনে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মধ্যে ক্ষোভের দাবানল সৃষ্টি করা হয়। ধর্মান্ধ মানুষ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকে, তারা মেতে ওঠে ধ্বংসলীলায়। তাদের সম্মিলিত যুক্তিহীন দানবিক নিষ্ঠুরতার বলি হয় দুর্বল প্রতিপক্ষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
আমাদের দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৯০%। এই সংখ্যাধিক্যকে ব্যবহার করে ইসলামের কর্তৃপক্ষ সেজে থাকা ধর্মব্যবসায়ী একটি গোষ্ঠী এ যাবৎকাল পর্যন্ত ভিন্নমতের বিরুদ্ধে বা ভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের এই ধর্মোন্মাদনার অস্ত্রটি প্রয়োগ করে। হেযবুত তওহীদ আন্দোলন ১৯৯৫ সনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইসলামের নামে চলমান যাবতীয় বিকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মানুষকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় আলোকিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে করে এতদিন যারা ইসলামকে নিজেদের রুটি-রুজির মাধ্যম বানিয়ে ধর্মের কর্তৃপক্ষ সেজে বসেছিল তাদের ধর্মব্যবসার মুখোস জাতির সামনে উন্মোচিত হয়ে যায়। তাদের কায়েমী স্বার্থ ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তারা ধর্মীয় বিধানের ব্যাখ্যা নিয়ে হাজারভাগে বিভক্ত থাকলেও হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে তারা সবাই এক হয়ে ফতোয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারতে থাকে। তারা মানুষের সামনে হেযবুত তওহীদের প্রকৃত বক্তব্যকে আড়াল করে নিজেরা মনগড়াভাবে এমন সব অপবাদ ও গুজব রটনা করে দেয় যেগুলো শুনলে সাধারণ মানুষ অবশ্যই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হবে। তাদের উপর ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ জনতার অগাধ বিশ্বাস। মসজিদের মিম্বরে বসে, ওয়াজ মাহফিলে বক্তার আসনে বসে এই আলেম দাবিদার শ্রেণিটি এমন এমন জঘন্য মিথ্যা কথা হেযবুত তওহীদের নামে বলতে থাকে যে মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস না করে পারে না। তারা মানুষকে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার জন্য যে কথাগুলো বলে থাকেন তার কয়েকটি নমুনা না উল্লেখ করলেই নয়। তারা বলেন:

  • হেযবুত তওহীদ হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নাকি নবী হিসাবে বিশ্বাস করে না।
  • হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী নাকি নিজেকে নবী বলে দাবি করেছেন। কেউ কেউ বলেন তিনি নাকি নিজেকে ইমাম মাহদি (আ.) বলে দাবি করেন।
  • হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নাকি পূর্ব দিকে ফিরে নামাজ পড়ে, তারা মোনাজাতের সময় হাত উল্টো করে ধরে।
  • হেযবুত তওহীদ নাকি ইসলামের শত্রু। এটা প্রমাণ করার জন্য তারা কেউ হেযবুত তওহীদকে কাদিয়ানী, কেউ বলে খ্রিষ্টান, কেউ বলে বাদশাহ আকবরের দীনে এলাহীর অনুসারী।
  • হেযবুত তওহীদ নাকি উরুতে সিল দিয়ে খ্রিষ্টান হয়। হেযবুত তওহীদ নাকি ইহুদি-খ্রিষ্টানের দালাল, তাদের থেকে টাকা পায়।
    হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নাকি নামাজ পড়ে না। কেউ কেউ প্রচার করেন, হেযবুত তওহীদ দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। কেউ কেউ বলেন, তারা রোববারে নামাজ পড়ে।
  • হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে কালো কাপড় দিয়ে তাদেরকে দাফন করা হয়। কেউ বলেন, লাশ বসিয়ে দাফন করা হয়। কেউ বলেন জানাজাই দেয় না।
  • হেযবুত তওহীদ নাকি গোপন জঙ্গি সংগঠন।

এমন আরো অসংখ্য ডাহা মিথ্যা কথা তারা এই আন্দোলনটির বিরুদ্ধে দেশময় প্রচার করেছে গত তেইশটি বছর। তারা অপপ্রচার করেই ক্ষান্ত হন নি, তারা হেযবুত তওহীদের উপর জনগণকে উসকে দিয়ে সহিংস হামলা চালিয়েছেন। বলেছেন, হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে হত্যা করো, এটা করলে জান্নাত নিশ্চিত। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘর লুট করে নাও, পুড়িয়ে দাও। একে তারা নাম দিয়েছে ইসলাম রক্ষার আন্দোলন, ঈমান রক্ষার আন্দোলন। তাদের জ্বালাময়ী ওয়াজে প্রভাবিত হয়ে জনগণ দেশের বহুস্থানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িঘরে আক্রমণ করেছে, আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফল-ফসল ধ্বংস করেছে। মারধোর করে মারাত্মকভাবে আহত করেছে, এমন কি নির্মমভাবে পিটিয়ে গলা কেটে জবাই করে হত্যাও করেছে।
২০০১ সনে স্বয়ং এমামুয্যামানের পিতৃনিবাস করটিয়ার ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়ির দাউদমহলে হামলা চালায় স্থানীয় ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মভিত্তিক অপরাজনীতিতে জড়িত একটি বৃহৎ গোষ্ঠী। তারা বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে আক্রমণ করে মারাত্মকভাবে আহত করে।
২০০৩ সনে মাদারীপুরের কালকিনীতে ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোক পিটিয়ে হত্যা করেছিল সাইফুল্লাহকে। মরণাপন্ন অবস্থায় পৌছে আরো নয় সদস্য। একই বছর কুষ্টিয়ার যুগিয়াতে দেশের বৃহত্তম ইসলামিক দলের দাবিদার একটি গোষ্ঠী বাড়িতে আক্রমণ করে পিটিয়ে হত্যা করে হেযবুত তওহীদের অনুসারী পঞ্চাশোর্ধ রাবেয়া খাতুনকে।
২০১২ সনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় হেযবুত তওহীদ কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার বিরুদ্ধে মাদ্রাসা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়, পত্রিকা পোড়ানো হয়। তারা হেযবুত তওহীদের চারজন সদস্যকে পত্রিকা বিক্রির সময় আক্রমণ করে প্রচণ্ড মারধোর করে। এক সময় তাদেরকে চেতনাহীন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়।
২০১৪ সনের ফেব্রুয়ারি মাস। রংপুর শহরের শালবন এলাকায় জুম্মার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে ও মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। আশে পাশে হেযবুত তওহীদের কর্মীদের দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় ও আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে ফেলা হয়। স্বভাবতই দীর্ঘদিন থেকে অপপ্রচার চালিয়ে এই হামলার পটভূমি নির্মাণ করেছিল ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি। উল্লেখ্য, উক্ত ইমাম সাহেব দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন পীরের মুরিদ এবং তার গঠিত রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা।
২০১৬ সনের ১৪ মার্চ। নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়িতে নির্মিয়মান মসজিদকে গির্জা বলে অপবাদ রটিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায় ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তারা হেযবুত তওহীদের দুই জন সদস্যকে পিটিয়ে, হাত পায়ের রগ কেটে, চোখ উপড়ে ফেলে। তাদেরকে গরু জবাই করার মতো করে জবাই করে এবং পরিশেষ তাদের মৃতদেহে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। ১১৪ জন সদস্যকেই তারা হত্যা করার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শেষ মুহূর্তে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে। উল্লেখ্য এই বাড়িটিতে পূর্বেও তিনবার আক্রমণ চালানো হয়েছে। ২০০৯ সনে এই বাড়িটিসহ হেযবুত তওহীদের সদস্যদের আটটি বাড়িতে আগুন দিয়েছিল কথিত আলেম ওলামাগণ। সেখানে সেই ২০০০ সন থেকে হাজারো অপপ্রচারে সেখানকার আকাশ-বাতাস ও মানুষের কান ভারি করে তোলা হয়েছিল।
২০১৭ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে এক মসজিদের ইমাম সাহেব প্রচার করে দেন যে হেযবুত তওহীদের লোকেরা জানাজা ছাড়াই লাশ দাফন করে। এই অদ্ভুত মিথ্যা কথাও মানুষ বিশ্বাস করে কারণ একটি মসজিদের ইমাম মিথ্যা বলবেন এটা তাদের চিন্তারও বাইরে। এই মিথ্যা কথাটি প্রচার করে দিয়ে ঐ সদস্যকে তার নিজ বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করে দেওয়ার জন্য বিরাট আন্দোলন পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়। বানোয়াট ও মিথ্যা অপবাদ সংবলিত পোস্টারিং করে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিল।
এভাবে গত তেইশ বছরে সারা দেশে শত শতবার কেবল মিথ্যা কথার উপর নির্ভর করে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে এই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী। বর্তমানে তাদের এই অপপ্রচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী দেশজুড়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা চালানোর প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। আমরা বাংলাদেশের সকল সচেতন নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাই, এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে, ধর্মকে নির্যাতনের কলে পরিণত করার বিরুদ্ধে আপনারা আওয়াজ তুলুন। যদি আপনারা নীরব থাকেন তাহলে এই লেবাসধারী অপশক্তি সবাইকে গ্রাস করে ফেলবে, কেউ রক্ষা পাবে না। মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে দেশে বহু সহিংতার সৃষ্টি করা হয়েছে, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এসব ঘটনা দেশকে একটি অমোঘ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি তখন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী আমাদের কণ্ঠরোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা তো কোনো ব্যক্তিস্বার্থে দাঁড়াই নি, দেশ ও জাতির কল্যাণ বিবেচনা করে আমরা জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংগ্রামে আপনারা আমাদের পাথে দাঁড়ান। মনে রাখবেন, ধর্মীয় সহিংসতার সূত্র ধরেই আজকে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো অস্ত্র বিক্রির বাজার বসিয়েছে, একটার পর একটা দেশ ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিও সাম্রাজ্যবাদীদের নিশানার বাইরে নয়। দেশের মানুষকে সেই মহাসংকট থেকে বাঁচাতে যে এই সত্যনিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক আন্দোলনটি কাজ করে যাচ্ছে তার পথ যেন কোনো ফতোয়াবাজ, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী রুদ্ধ করতে না পারে সেজন্য দেশ ও মানুষের স্বার্থে, সত্যের স্বার্থে সবাই গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
[লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ, ফোন: ০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৬৭০-১৭৪৬৫১]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...