হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মব্যবসায়ী ও পাশ্চাত্যদের ষড়যন্ত্র: ধর্মীয় বিদ্বেষ

হুমায়ূন কবির:
মানবজাতির বর্তমান অবস্থা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। হিন্দুরা যেমন বহু আগেই মনু-কৃষ্ণ-যুধিষ্ঠিরদের (আ.) শিক্ষা পরিত্যাগ করেছে, ইহুদিরা মুসা (আ.) এর শিক্ষাকে পরিত্যাগ করেছে, খ্রিস্টানরা ঈসা (আ.) এর শিক্ষাকে পরিত্যাগ করেছে তেমনি মুসলমানরাও কোর’আনের শিক্ষা, রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করেছে। তারা সবাই মিলে আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করে এখন পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’র বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন, নৈতিকতাহীন জীবনব্যবস্থা আইন-কানুন, অর্থনীতি, দণ্ডবিধি ইত্যাদি দিয়ে তাদের জীবন পরিচালনা করছে। যার পরিণামে গোটা দুনিয়া একটি নরকে পরিণত হয়েছে। এক দিক দিয়ে মানুষ যেমন বিজ্ঞানের শিখরে উঠছে অন্য দিক দিয়ে ঠিক তেমনিভাবে সে সব রকমের অন্যায়ের চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছুচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বাঁচার একটি মাত্র পথ স্রষ্টার দেওয়া জীবনব্যবস্থার দিকে ফিরে আসতে হবে। সেই জীবনব্যবস্থা কোথায় পাওয়া যাবে?
ইসলামসহ পূর্বের সকল ধর্মকেই বিকৃত করে ফেলেছে ধর্মব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে ইসলাম চলছে সেটি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ রসুলের ইসলাম তো নয়ই, সেটি প্রকৃত ইসলামের ঠিক বিপরীত একটি ধর্মবিশ্বাস মাত্র। প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে ১৩০০ বছর আগে। বিকৃত হয়ে যাওয়ার কারণেই এই প্রচলিত ইসলাম মানুষকে শান্তি দিতে পারছে না। অথচ ইসলাম শব্দের অর্থই শান্তি।
ইসলামকে আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন দীনুল কাইয়্যেমাহ (সুরা ইউসুফ ৪০, সুরা বাইয়্যেনাহ ৫, সুরা রুম ৩০, ৪৩)। যার অর্থ হচ্ছে সনাতন ধর্ম, যে ধর্ম অপরিবর্তনীয়, আদি, শাশ্বত, চিরন্তন। মানবসৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন তার মৌলিক বিষয়গুলি কোনোদিন পরিবর্তিত হয় নি। এ জন্য এই ধর্মের নাম স্রষ্টা দিয়েছেন সনাতন ধর্ম যার শেষ সংস্করণ ইসলাম। কিন্তু আজ ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মভিত্তিক জাতিগুলির মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের প্রাচীর দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এই বিদ্বেষকে কাজে লাগাচ্ছে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলি এবং তাদের ভাবাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলি। তারা ক্ষমতা ও ভোটের স্বার্থে আমাদের মারামারি লাগিয়ে রাখে। ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষ শাসন করেছে তাদের শাসন নীতিই ছিল ডিভাইড এন্ড রুল অর্থাৎ ঐক্যহীন করে শাসন করো।
এ লক্ষ্যে তারা শিক্ষাব্যবস্থা, পত্র-পত্রিকা, ইতিহাস বিকৃতি, ইতিহাস রচনা, দেশি-বিদেশি দালালদের সৃষ্ট সাহিত্যের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে এমন বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে যে ব্রিটিশ আমলেই লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমান একে অপরের রক্তে হাত রাঙিয়েছে। সাতশত বছর মুসলিমরা এই ভারতবর্ষ শাসন করেছে, এই দীর্ঘ সময়ে এ অঞ্চলে সিংহাসন নিয়ে যুদ্ধ অনেক হয়েছে কিন্তু হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার একটি উদাহরণও নেই। বরং মুসলিম শাসনামলেই ভারতবর্ষ উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছিল। এই দীর্ঘ সময়ে যারা এই ভারতবাসীকে শাসন করেছেন তারা যে প্রকৃত মুসলিম ছিলেন তা নয়, প্রকৃত ইসলাম হারিয়ে গেছে রসুলাল্লাহর বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পরেই। এরপর ইসলামের বিধান চালু থাকলেও তার আত্মা হারিয়ে যেতে আরম্ভ করে। তবু অর্ধ-পৃথিবীতে স্রষ্টার দেওয়া বিধানের ও রসুলাল্লাহর শিক্ষার সামান্য যেটুকুই অবশিষ্ট ছিল তার প্রভাবে ঐ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছিল অনাবিল শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি। ভারত শাসনকারী মুসলিম বংশোদ্ভূত সুলতানরা প্রকৃত ইসলামের খলিফাদের মতো ন্যায়নিষ্ঠ না থাকলেও নিজেদের মেধা, শ্রম সবকিছুকে উজাড় করে তারা ভারতীয় সভ্যতাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সভ্যতায় পরিণত করেছিলেন, ভারতবর্ষকে ইংরেজদের পদানত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য তারা শতাব্দব্যাপী যুদ্ধ করে সবংশে এদেশের বুকেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারা কোনোদিন এদেশের সম্পদ অন্য দেশে পাচার করেন নি। পক্ষান্তরে ইংরেজ দস্যুরা ভারতবর্ষের সেই প্রাচুর্যের লোভে পড়েই এসেছিল। তারা দুই’শ বছর ধরে ভারতের সকল সম্পদ নিংড়ে নিয়ে চলে গেছে নিজেদের দেশে। তাদের সময় তিন কোটি ভারতবাসী না খেয়ে করুণ মৃত্যুবরণ করেছিল। অথচ আমরা ভুলেই গেছি যে, আমাদেরই পূর্বপুরুষের রক্তে তাদের পতাকা হয়েছে রক্তরাঙা, আমাদেরই অস্থি-পিঞ্জরের শুভ্রতা তাদের পতাকায় এঁকেছে আল্পনার রেখা।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...