হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর কয়েকটি বাণী

আল্লাহর রসুলও তাঁর জাতির মধ্যে যেন ধর্মব্যবসায়ী পুরোহিত শ্রেণি গজিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য তিনি তাঁর আসহাবদেরকে বার বার সতর্ক কোরে গেছেন। উবায়দা বিন সামেত (রা:) ছিলেন আসহাবে সুফফার অন্তর্ভুক্ত এক সাহাবী। তাঁকে রসুলাল্লাহ কোনো এক গোত্রের লোকদেরকে কোর’আন শিক্ষা দিতে প্রেরণ কোরেছিলেন। সেই গোত্রের একজন ব্যক্তি উবায়দাকে (রা:) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার উদ্দেশ্যে একটি ধনুক ও তীর উপহার দিয়েছিলেন। উবায়দা (রা:) রসুলাল্লাহর দরবারে ফিরে এসে যখন সেই তীর ও ধনুক তাঁকে দেখালেন তখন রসুলাল্লাহ বোললেন, “যদি তুমি আগুনের তীর গলায় জড়িত হওয়া পছন্দ করো তাহোলে তুমি এটা গ্রহণ করো” (আবু দাউদ)।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সন্দেহ নেই। উবায়দাহ (রা:)-কে কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে যে উপহারটি দেওয়া হোয়েছিল সেটা কোনো অর্থকড়ি নয়, ব্যক্তি ব্যবহার্য কোনো বস্তুও নয়। সেটা হোচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে ব্যবহারের জন্য একটি অস্ত্র। অথচ সেই অস্ত্রটি গ্রহণ করাও নিষিদ্ধ হোয়ে গেলো, কেবল নিষিদ্ধই না, সেটা আখেরাতে আগুনের তীর হোয়ে গ্রহণকারীর বুকে বিঁধবে এই কারণে যে, তিনি সেটা গ্রহণ কোরেছিলেন কোর’আন শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে। এমন ঘটনা আরও আছে। রসুলাল্লাহর এই কথার পর দীনের জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে অর্থ উপার্জনের কোনো পথ খোলা রোইল কি? তা সত্ত্বেও বর্তমানের বিকৃত ইসলামে পয়সা ছাড়া কিছুই হয় না, মুর্দা দাফনেও পয়সা দিতে হয়। মোল্লাদের শিষ্য অর্থাৎ তালবে-এলেম থেকে শুরু করে পীরে কামেল, গাউস কুতুব, মুফতি, শায়খ, আল্লামাগণ পয়সা ব্যতীত কেউই ধর্ম-কর্ম করেন না। শুধু তাই নয়, তারা যে মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখতে চায় এবং ধর্মকে পুঁজি কোরে সম্পদের মালিক হোতে চায় সেটাও আল্লাহও জানিয়ে দিয়েছেন সুস্পষ্টভাষায়। তিনি বোলেছেন, “হে মো’মেনগণ! আলেম ও সুফিদের (আহবার ও রোহবান) মধ্যে বহুসংখ্যক তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কোরে চোলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে মানবজাতিকে ফিরিয়ে রাখছে (সুরা তওবা ৩৪)।
কিভাবে ফিরিয়ে রাখছে? উদাহরণস্বরূপ একটি হাদিস উল্লেখ কোরছি। নবী করীম (সা) তাবুকের যুদ্ধের বৎসরে একটি খেজুর বৃক্ষে হেলান দিয়ে লোকদিগকে সম্বোধন কোরে বোললেন- ‘আমি কি তোমাদেরকে সর্বোত্তম ব্যক্তি ও নিকৃষ্টতম ব্যক্তির পরিচয় প্রদান কোরব? সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে স্বীয় অশ্ব অথবা উষ্ট্রে আরোহণ কোরে অথবা পদব্রজে গমনাগমন কোরে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর পথে কাজ কোরে যায় ও জেহাদ কোরতে থাকে। আর নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হোল সেই পাপাসক্ত ব্যক্তি যে কোর’আন মাজীদ তেলাওয়াত করে কিন্তু এর কোনো আদেশ-নিষেধের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না ও তা পালন করে না।’ (আবু সাঈদ খুদরী থেকে আহমদ)। ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার আল্লাহ রেখেছেন যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে শহীদ হন তাদের জন্য। অথচ এই আলেম ওলামারা ইসলামের যে আমলগুলির সাথে বৃহৎ কোরবানি জড়িত যেমন জেহাদ, কেতাল ইত্যাদি সেই কাজগুলি তারা নিজেরাও করেন না, এগুলি নিয়ে ওয়াজও করেন না, এগুলির প্রসঙ্গ তারা স্বযতেœ এড়িয়ে যান। তারা সুর কোরে কোর’আন তেলাওয়াত করেন বটে, কিন্তু এর আদেশ নিষেধ মানার কোনো প্রয়োজন বোধ করেন না। কারণ তারা তেলাওয়াত করেন আল্লাহর তরফ থেকে প্রতি অক্ষরে অক্ষরে দশ নেকী এবং মানুষের তরফ থেকে চাহিদা মাফিক অর্থ লাভের আশায়। এদের আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী রসুলাল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই কোরে গেছেন। তিনি বোলেছেনÑ ‘ষাট বৎসর পরে একদল লোক আবির্ভূত হবে যারা সালাহ্ পরিত্যাগ কোরবে এবং স্বীয় কৃপ্রবৃত্তিসমূহ চরিতার্থ করার জন্য ব্যস্ত থাকবে। তারা ধ্বংস ও গোমরাহীতে নিপতিত হবে। অতঃপর একদল লোকের আর্বিভাব ঘোটবে যারা কোর’আন মজীদ তেলোওয়াত কোরবে (ক্বারী) কিন্তু কোর’আন তাদের কণ্ঠদেশ অতিক্রম কোরবে না (আবু সাঈদ খুদরী থেকে আহমদ)। ইতোপূর্বে আমরা দেখিয়ে এসেছি যে, সত্যিই রসুলাল্লাহর বিদায় গ্রহণের ৬০/৭০ বছর পরে এই জাতির উদ্দেশ্যচ্যুতি ঘটে এবং এমন একদল লোক উম্মাহর মধ্যে সৃষ্টি হয় যারা দীনকে পার্থিব স্বার্থে ব্যবহার কোরতে আরম্ভ করে। কোর’আন তাদের কণ্ঠদেশ অতিক্রম কোরবে না অর্থ কোর’আন তারা পাঠ কোরবে প্রচুর কিন্তু এর আদেশ নিষেধ মর্মার্থ তাদের হৃদয়ে প্রবেশ কোরবে না।
এখানেই শেষ নয়। সারা পৃথিবীর হাজার হাজার মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র কোর’আন হেফ্জ অর্থাৎ মুখস্ত কোরে থাকেন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে এর বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করা এবং বাস্তবেও তারা এটাই কোরে থাকেন। রমাদান মাসে তারাবীর সালাহ কায়েম করানোর সময় রীতিমত ইন্টারভিউ নিয়ে একমাসের জন্য আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশেও কোর’আনের হাফেজদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা অতি দ্রুত কোর’আন তেলাওয়াত কোরে থাকেন। এদের প্রসঙ্গে রসুলাল্লাহর একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী হাদিস গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়, এখানে একটি উল্লেখ কোরছি। আনাস (রা) বলেনÑএকদা আমরা একদল লোক একস্থানে সমবেত ছিলাম। আমাদের মধ্যে আরব, অনারব, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেণির লোকই ছিলো। এই অবস্থায় নবী করীম (সা) আমাদের নিকট আগমন কোরে বোললেন, ‘তোমরা সৌভাগ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত রোয়েছ। তোমরা আল্লাহর কেতাব তেলাওয়াত কোরে থাকো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসুল বর্তমান রোয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের নিকট এইরূপ এক যামানা আসবে, যখন তীরের ফলক কিংবা দণ্ড যেরূপ সরল ও সোজা করা হয়, লোকেরা তা (কোর’আন তেলাওয়াতকে) ঠিক সেইরূপ সরল ও সোজা কোরবে। তারা দ্রুত তেলোওয়াত কোরে নিজেদের পারিশ্রমিক আদায় কোরবে এবং যেহেতু তারা পারিশ্রমিক আদায় কোরবে তাই তাদের তাদের বিলম্ব সহ্য হবে না।’ (আনাস এবনে মালিক (রা) থেকে আহমদ)।
মসজিদের এমামগণ আযান দিতে ও মসজিদ পরিস্কার রাখতে অনাগ্রহ বোধ করেন, তাই মোয়ায্যেন আছেন। তিনি মসজিদ দেখা-শুনা, পয়-পরিস্কার রাখেন, আযান দেন; অতঃপর এমাম সাহেব হুজরা থেকে বেরিয়ে এসে ৫/১০ মিনিটের জন্য নামাজ পড়ান! এই মোয়ায্যেনদের বেলাতেও রসুলের হুকুম রোয়েছে। ওসমান বিন আবুল আস (রা:) বলেন, আমাকে রসুল আমার গোত্রের আমীর নিযুক্ত কোরে বোললেন, “তুমি তাদের নেতা। তুমি তাদের মধ্যে দুর্বলতম ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য রেখো যেন সে তোমার আনুগত্য কোরতে পারে এবং এমন একজন মোয়ায্যেন নিযুক্ত কোরো, যে আযানের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ কোরবে না। (আবু দাউদ, নেসায়ী শরীফ) আযানের বিনিময়ে যদি মজুরি নেওয়া নিষিদ্ধ হয়, নামাজের এমামতির বিনিময় কিভাবে সিদ্ধ হোতে পারে?
হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী আল্লাহর দয়ায় আল্লাহর সত্যদীনের প্রকৃত রূপকে নিজ হৃদয়ে উপলব্ধি কোরেছেন এবং নবীর উম্মত হিসাবে সেটিকে মানবজাতির সামনে প্রকাশ কোরেছেন। তাই হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদেরকেও এই বিকৃত ধর্মের আলেম ওলামার প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হোতে হোয়েছে। এটা বিশ্বনবীর সুন্নাহ। বিশ্বনবী (দ:) বোলে গেছেন যে, এই দীনের ভবিষ্যতে যখন বিকৃত হবে তখন যে ভয় না কোরে দাঁড়িয়ে দীনের প্রকৃত রূপ প্রচার কোরবে তার স্থান (দরজা) নবীদের স্থানের চেয়ে মাত্র এক দরজা নিচু হবে। অন্য হাদিসে বলা আছে তার সওয়াব (পুণ্য) একশ’ শহীদের সমান হবে। শোকর আল হামদুলেল্লাহ। তবে আমরা চাই এ জাতির সত্যনিষ্ঠ আলেম ওলামাদের কালঘুম ভাঙুক। তারাও আল্লাহর প্রকৃত তওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। তাদের প্রতি আমাদের কথা হোচ্ছে:
আজ এই হতভাগ্য জাতিসহ সমস্ত মানবজাতি শেরক ও কুফরে ডুবে আছে, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে তাগুতের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ এই উম্মাহকে শ্রেষ্ঠতম উম্মাহ বোলেছেন (সুরা এমরান ১১০)। আপনারা সামান্য কিছু অর্থ লাভের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হোয়ে ছোট হোয়ে থাকবেন না। এই হতভাগ্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ কোরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরও আছে। তাগুতের পূজারীরা মনে করে আপনাদেরকে অর্থের বিনিময়ে তাদের পছন্দমত ফতোয়া দেওয়ানো যায়। পরমুখাপেক্ষী যারা হয় তাদের আর মেরুদণ্ড বোলতে কিছু থাকে না। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা বেশিদূর এগুতে পারে না। বড় কোনো কোরবানি করার আত্মিক শক্তি তারা হারিয়ে ফেলে। তাই আপনারা এই জাতির কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে ধর্মব্যবসা পরিত্যাগ কোরুন এবং ক্ষুদ্রস্বার্থ ভুলে, মতবিরোধ ত্যাগ কোরে তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ হোন। এই কাজ কোরতে গিয়ে আপনাদেরকে হয়তো কিছু অর্থকষ্ট সহ্য কোরতে হোতে পারে, তবু ভয় পাবেন না। আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কাল রেখে হারাম উপার্জন বন্ধ কোরুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম রেযেকের বন্দোবস্ত কোরে দেবেন এবং আপনাদের দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর কোরে দেবেন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...