হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ধর্মজাত ফেতনা-ফাসাদ থেকে মুক্তির উপায় কী?

মোহাম্মদ আসাদ আলী

ইদানীং এই জাতির সমাজচিন্তক ও জ্ঞানী-গুণী মানুষের মধ্যে হতাশা ও আবেগের প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। একদল মানুষ হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে বাস্তব জীবন থেকে কার্যত ইস্তফাই নিয়ে নিয়েছেন, তাদের ধারণা- তাদের আর কিছু করার নেই। জাতির ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। নিয়তির খেলা উপভোগ করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। ওদিকে অন্যদল ভেসেছেন আবেগের সাগরে। তারা বাস্তবতাকেই অপাংক্তেয় করে রাখতে চান। কেননা বাস্তবতাকে দাম দিতে গেলে পথ হারিয়ে ফেলতে হয়। উচিত-অনুচিত, সফলতা-ব্যর্থতা, সম্ভাবনা-অসম্ভাবনার সুতা মাপতে মাপতেই দিন ফুরিয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতাকে এড়িয়ে কতদূর যাওয়া সম্ভব? দেখা যায় স্রোতের প্রতিকূলে দাঁড়াতে গিয়ে বারবার তারা খেই হারিয়ে ফেলেন। অবশেষে ব্যর্থতার স্রোত এসে তাদেরও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
ধর্মীয় ইস্যুতেও এ জাতির জ্ঞানী-গুণী, সুশীল শ্রেণির অবস্থান বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। এখানেও রয়েছে দু’টি ভাগ। একভাগের বক্তব্য হলো- ধর্ম নিয়ে যত নাড়াচাড়া করা হবে ততই নাকি তার প্রচারণা বাড়বে, মানুষ আরও ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে যাবে। অর্থাৎ সেটা ধর্ম সম্বন্ধীয় অশান্তির আগুনে ঘি ঢালার ন্যায় বোকামী হবে। তাই ধর্ম সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকাই শ্রেয়। অন্যদিকে আরেক ভাগের বক্তব্য হলো- ধর্মকে যে করেই হোক মানুষের মন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। কেননা ধর্মবিশ্বাস আছে বলেই ধর্মকেন্দ্রিক ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হচ্ছে, ধর্মবিশ্বাস না থাকলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরাই হলো পূর্বে বর্ণিত ওই ভাগটি যারা বাস্তবতাকে স্বীকার করেন না। যুক্তিকে ব্যবহার করেন না পরাজিত হবার পূর্বেই পরাজিত হয়ে যাবার ভয়ে। এই উভয় ভাগের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য হলো-
১. ধর্মকে মিসইউজ করতে দেওয়ার পরিণতি হবে খুবই খারাপ। ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ও জঙ্গিবাদের যে ভয়াল থাবা সমস্ত পৃথিবীকে তটস্থ করে রেখেছে তা আরও ভয়ংকররূপে বিকাশিত হবে। হাতে ধরে তেমন অশান্তির সাগরে মানবজাতিকে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
২. অন্যদিকে খোদ ধর্মকেই বিদায় করে দেওয়ার ব্যাপারটা বাস্তবতার সাথে একেবারেই যায় না। এটা সম্ভবই না। ধর্মবিশ্বাস ইচ্ছে করলেই নির্মূল করে ফেলা যায় না। গেলে অনেক আগেই সেটা করা হতো। প্রচেষ্টা তো কম হয় নি। ধর্মহীন জীবন-ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে বহু শতাব্দী আগে। কিন্তু এখনও মানবজাতির মধ্য থেকে ধর্মের আবেদন কমে নি, বলা যায় অপরিবর্তনীয় আছে। এমতাবস্থায় ধর্মকে বিদায় করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালালে তার পরিণতিও খুব সুখকর হবে না। আমাদের দেশে নাস্তিক-আস্তিক ইস্যুটি নিশ্চয়ই সকলের মাথায় আছে। বিভিন্ন পরিস্থিতির সাপেক্ষে বাংলাদেশের ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকরা কতটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তাকে অভিজ্ঞতার পাল্লায় স্থান দিয়েই বাস্তবতাকে পরিমাপ করা উচিত।
এমতাবস্থায় সমাধান মাত্র একটাই হতে পারে- মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে ব্যবহার করা। ধর্মব্যবসায়ীদের পেছন থেকে মানুষকে সরানো এবং এতদিন তারা ঈমানের ভুল প্রয়োগের কারণে যেভাবে অশান্তি সৃষ্টি করত, ঈমানের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে তার ঠিক উল্টোটা অর্থাৎ ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করা। এ ছাড়া অন্য কোনো পথে সমাধানের প্রচেষ্টা নিশ্চিত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এমন তো নয় যে, ধর্মে মানবতার কল্যাণে কাজ করার কোনো বার্তা নেই। বস্তুত প্রত্যেক ধর্মেরই মূল বা মর্মবাণী হচ্ছে মানবতার কল্যাণ। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীরা সেই মর্মবাণীকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছতে দেয় না। ধর্মকে যদি তার অনাবীল রূপে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া যায় এবং ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপারে তাদেরকে সজাগ ও সচেতন করে তেলা যায় তাহলে ধর্মবিশ্বাসই এই জাতির প্রধান শক্তিতে পরিণত হতে পারে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...