হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আল্লাহ পোশাক দেখেন না, দেখেন অন্তর

রিয়াদুল হাসান:
ধর্ম আর ধর্মব্যবসাকে গুলিয়ে ফেলার কারণে অধিকাংশ মানুষ ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে ভাবে- ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছি না তো? ধর্মব্যবসায়ীদেরকে ত্যাগ করতে গিয়ে ভাবে ধর্মকে ত্যাগ করছি না তো? ধার্মিক ও ধর্মব্যবসায়ীর মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সীমারেখা তাই আমাদের টানতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধর্ম মানুষকে মুক্তি দেয়। এটা যেমন ব্যক্তিকে তেমনি সমাজকেও যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে মুক্তি দেয়; যাবতীয় সমস্যার সমাধান দেয়, উন্নতি ঘটায়। অপরপক্ষে ধর্মব্যবসা ধর্মকেই ধ্বংস করে দেয়, ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়।
ধর্ম এবং ধর্মব্যবসা আলাদা করার অন্যতম কষ্টিপাথর হলো- কর্মটিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে কি না তা পরখ করে দেখা। ধর্মের কাজ হয় নিঃস্বার্থভাবে। ধর্মের কাজ করতে গেলে স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় এবং বিনিময় কেবল আল্লাহর নিকট থেকে আশা করতে হয়। যখনই দেখবেন কেউ ধর্মের নাম দিয়ে ব্যক্তিগত বৈষয়িক স্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধার করছে তখনই বুঝবেন এটা ধর্মব্যবসা।
ধর্মব্যবসায়ীরা হয় ভোগী আর ধার্মিকরা হয় ত্যাগী। ধর্মব্যবসায়ীরা দান গ্রহণ করে আর ধার্মিকেরা দান করে। ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকে ব্যবহার করে আর ধার্মিকরা ধর্মকে ধারণ করে। ধর্মব্যবসায়ীরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হয় নিরব, কাপুরুষ আর ধার্মিকরা হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। ধর্মব্যবসায়ীরা যেটুকু ধর্ম পালন করে তা কেবল মানুষকে দেখানোর জন্য আর ধার্মিকরা ধর্ম পালন করে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
অর্থাৎ ধার্মিক আর ধর্মব্যবসায়ীর প্রভেদ তাদের বেশ-ভ‚ষা, ভাবমূর্তির মধ্যে খুঁজলে হবে না। খুঁজতে হবে তাদের চরিত্রে এবং তাদের কাজে। আল্লাহর রসুল বলেছেন, “কেয়ামতের দিন মিজানের পাল্লায় সবচেয়ে ভারি বস্তু হবে মো’মেনের উত্তম চরিত্র (হাদিস- তিরমিযি)। প্রতারণা করার জন্য বেশভ‚ষা গুরুত্বপূর্ণ ছদ্মবেশ। তাই যারা ধার্মিক সেজে ধর্মব্যবসা করে তারা বেশভ‚ষায় একেবারে নিখুঁত থাকার চেষ্টা করে যেন কেউ তাদের বাহ্যিক অবয়বে, চালচলনে ভুল ধরতে না পারে। যারা ধর্মব্যবসা করে তাদেরকে বেশভূষা আর লোক দেখানো আমল বিচার করে দীনের ধারক-বাহক মনে করা মস্ত বড় পথভ্রষ্টতা। কারণ এ বিষয়ে আল্লাহর রসুল (সা.) জাতিকে সাবধান করে গেছেন এই বলে যে, “যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, কোনো মানুষের ঈমান সঠিক হতে পারবে না যতক্ষণ না সে সৎ ও বিশ্বাসী হয়। আমি তোমাদেরকে হেদায়েত করছি যে তোমরা কোনো ব্যক্তির অধিক সালাহ আদায় ও অধিক সিয়াম পালন করা দেখে ভুল করো না, বরং লক্ষ্য করো সে যখন কথা বলে সত্য বলে কি না এবং তার কাছে রাখা আমানত বিশ্বস্ততার সাথে ফিরিয়ে দেয় কিনা। এবং নিজের পরিবার পরিজনের জন্য হালাল উপায়ে রোজগার করে কিনা। যদি সে আমানতদার ও সত্যবাদী হয় এবং হালাল উপায়ে রেযেক হাসিল করে তাহলে নিশ্চয়ই সে কামেল মো’মেন (রসুলাল্লাহর ভাষণ, সিরাত বিশ্বকোষ ১২ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
বর্তমানে মুসলিম চেনার জন্য চারিত্রিক মাহাত্ম্য নয় বরং দাড়ি, টুপি, বেশভ‚ষাকেই মানদণ্ড হিসাবে ধরা হয়। কারণ এটাই প্রচার করা হয়েছে, শেখানো হয়েছে। দাড়ি, টুপি নেই এমন কেউ যদি আজ প্রকৃত ইসলামের সত্যগুলো এবং প্রচলিত ইসলামের বিকৃতিগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে যান, তখন প্রথম যে প্রশ্নটির মোকাবেলা তাকে করতে হবে সেটা হচ্ছে, “আপনি ইসলামের কথা বলছেন, কিন্তু আপনার সাড়ে তিন হাত শরীরেই তো ইসলাম নাই? আগে তো নিজেদের শরীরে ইসলাম কায়েম করতে হবে?” খুব দৃঢ় ভঙ্গিতে এই সম্পূর্ণ যুক্তিহীন ও হাস্যকর প্রশ্নটি করা হয়।
এখন যদি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে, দাড়ি, টুপি, পাগড়ি ধারণ না করলে ইসলামের কথা বলা যাবে না এমন কোনো কথা পবিত্র কোর’আন-বা হাদিসে উল্লেখ আছে কি? এমন কোনো শর্ত তো আল্লাহ বা রসুল (স.) দেননি। তাহলে এমন প্রশ্ন কেন উঠল?
এই প্রশ্ন ওঠার কারণ ইসলামের বিষয়গুলোর মধ্যে গুরুত্বের ওলোটপালট। ইসলামের মূল বিষয়বস্তুকে বাদ দিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয় ইসলামের উদ্দেশ্য কী? তাহলে ১৬০ কোটি মুসলিমের কাছে অন্ততঃ ভিন্ন ধরনের কয়েক কোটি উত্তর পাওয়া যাবে। তাই পোশাক আশাকের বিষয়টি সম্যকভাবে বুঝতে হলে আগে আমাদেরকে ইসলামের উদ্দেশ্য কী সেটা উপলব্ধি করতে হবে।
মানবসৃষ্টির সূচনালগ্নে মহান আল্লাহর সঙ্গে ইবলিসের একটি চ্যালেঞ্জ হয়। সেই চ্যালেঞ্জটি বিষয়বস্তু ছিল মানবজাতি পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করবে, নাকি মারামারি কাটাকাটি হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তপাতে লিপ্ত থাকবে? মানুষ যদি শান্তিতে থাকে তাহলে চ্যালেঞ্জে আল্লাহ বিজয়ী হবেন, আর যদি অশান্তি অরাজকতার মধ্যে বাস করে তাহলে ইবলিস বিজয়ী হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ নবী-রসুলদের মাধ্যমে জীবনবিধান পাঠালেন। সেটা মানুষের সামগ্রিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করলে সমাজে শান্তি আসবে। আর অন্য জীবনব্যবস্থা দিয়ে জীবন চালালে অশান্তি বিরাজ করবে। নবী-রসুলগণ এভাবে আল্লাহকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন।
সত্য দীনের ফল হচ্ছে শান্তি, এ কারণে ইসলামের শাব্দিক অর্থই হচ্ছে শান্তি। আজ ধর্মের নামে বহু বাহ্যিক আড়ম্বর করা হয়, উপাসনা, আনুষ্ঠানিকতার কোনো শেষ নেই, অথচ আমরা আমাদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করছি আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে। আজ সর্বত্র ঘোর অশান্তি, যার অর্থ আজ ইবলিস বিজয়ী হয়ে আছে। আর আল্লাহর দীন, জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে আর কোনো কিছু দিয়েই আল্লাহকে বিজয়ী করা সম্ভব না। ফলে যে কাজের দ্বারা আল্লাহ বিজয়ী হন না, সমাজে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয় না, সে কাজের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
এখন চিন্তা করুন, ইসলামের সাথে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জুব্বার সম্পর্ক কোথায়? ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবার, যুদ্ধনীতি, বাণিজ্যনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি সব কিছুই ইসলাম নামক জীবন-ব্যবস্থার এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং যারা আমাদের শরীরে ইসলাম নাই এই প্রশ্ন করেন তাদের কাছে এই প্রশ্নটি করা দরকার যে, একটি দেশের সব মানুষ যদি দাড়ি রাখে, টুপি পরে, জোব্বা গায়ে দেয় কিন্তু তাদের সামষ্টিক জীবনের ঐ বিষয়গুলো যদি ইসলামের না হয় তাহলে কি সেই দেশে শান্তি এসে যাবে? আসবে না। কারণ রসুলের (স.) আগমনের পূর্বেও আরবের মানুষগুলো দাড়ি রাখত, টুপি, পাগড়ি, জোব্বা পরত। এটা প্রাচীন যুগ থেকেই আরবীয় সংস্কৃতি।
প্রকৃতপক্ষে এই শেষ দীনে কোনো নির্দিষ্ট পোশাক হতে পারে না, কারণ এটা এসেছে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য। পৃথিবীর মানুষ প্রচণ্ড গরমের দেশে, প্রচণ্ড শীতের দেশে, নাতিশীতোষ্ণ দেশে, অর্থাৎ সর্বরকম আবহাওয়ায় বাস করে, এদের সবার জন্য এক রকম পোশাক নির্দেশ করা অসম্ভব। বিশ্বনবীর (সা.) সময়ে তাঁর নিজের এবং সাহাবাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও তখনকার আরবের মোশরেক ও কাফেরদের পরিচ্ছদ যেমন একই ধরনের ছিল, বর্তমানেও মুসলিম আরব, খ্রিষ্টান আরব ও ইহুদি আরবরাও একই ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ পরে। নবী এসেছেন আরবে, তাই তিনি আরবীয় পোশাক পরেছেন। আল্লাহ কিন্তু আরবীয় পোশাককে ইসলামে বাধ্যতামূলক করেন নি। করলে মেরু অঞ্চলের মানুষের সেই হুকুম মান্য করা সম্ভব হতো না। এমনকি আমাদের দেশের মতো কৃষিপ্রধান নদীমাতৃক দেশের ধানচাষী ও পাটচাষীদের সারাক্ষণ কাঁদা, হাঁটুপানি-কোমর পানিতে নেমে লুঙ্গি কাছা দিয়ে কাজ করতে হয়। আরবীয় জোব্বা পরে সেটা কি সম্ভব? না। আল্লাহ সেটা জানেন বলেই আরবের পোশাক তিনি সকল এলাকার মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক করেন নি বা উৎসাহিতও করেন নি।
কিন্তু ঘটনা হয়েছে কি, পূর্বের ফকীহ, ইমাম, মুফাসসিরগণ রসুলাল্লাহর সমস্ত আচরণকেই ইসলামের মাসলা মাসায়েলের মধ্যে, বিধি-বিধানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো আল্লাহ রসুলকে অনুসরণ করার হুকুম দিয়েছেন। আলেম ওলামারা এই অনুসরণের মানে করেছেন যে রসুলের দাড়ি ছিল, তিনি খেজুর খেতেন, তিনি পাগড়ি, জোব্বা পরিধান করতেন – তাই এগুলোও সুন্নত। এগুলোকেও তারা শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আরবের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক ইত্যাদি ইসলামের এতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে, ঐ লেবাস না থাকলে এখন কারো ইসলামের কথা বলার অধিকারই থাকে না। এই যে শরিয়ত বা প্রথা প্রচলন করা হলো, এটা কিন্তু কোর’আনের শিক্ষা নয়, ইসলামেরও শিক্ষা নয়, এটা আলেম-ওলামা, বিভিন্ন মাজহাবের ইমামদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি করা শরিয়ত।
টুপি ইহুদি, শিখ বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাড়ি আছে, তারাও জুব্বা পরেন, তাদের অনেকেই পাগড়ি পরেন। আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন, আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ। হয়ত বলতে পারেন তাদের টুপি, জুব্বা, পাগড়ি, দাড়ি মুসলিমদের মত না। হ্যাঁ, তা হয়ত ঠিক, কিন্তু টুপির আকার-আকৃতি (কল্লি) ও রং নিয়ে, জুব্বার আকার-আকৃতি নিয়ে, পাগড়ির রং (সবুজ না সাদা), দাড়ির পরিমাণ ইত্যাদি নিয়ে আলেম ওলামাদের মধ্যেও মতভেদ কম নেই। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধে গিয়ে মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার চেয়ে বড় মূর্খতা আর কিছু নেই, হতে পারে না। গত কয়েক শতাব্দী ধরে এ জাতির দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়ের কারণ এগুলোই। অথচ এটা ইতিহাস যে রসুলের একদল সর্বত্যাগী সাহাবী যাদেরকে আসহাবে সুফফা বলা হতো, তাঁরা বাড়ি-ঘরে যেতেন না, মসজিদে নববীতে থাকতেন আর অপেক্ষা করতেন রসুল (সা.) কখন কী হুকুম দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সে হুকুম বাস্তবায়ন করতেন, সেই সাহাবীদের অনেকেরই গায়ে জোব্বা তো দূরের কথা ঠিকমত লজ্জাস্থান ঢাকার মতো কাপড় সংস্থান করতেও কষ্ট হত।
দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জোব্বা ইত্যাদিকে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিষয় বলছি না বা কোনো রকম অসম্মানও করছি না। আমরা শুধু বলছি এই দীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য আজ যেমন উল্টো হয়ে গিয়েছে তেমনি এর বাহ্যিক দিকটিও বিকৃত দীনের আলেমরা অপরিসীম অজ্ঞতায় উল্টে ফেলেছেন। দাড়ি রাখা, বাহ্যিক পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এই দীনের বুনিয়াদী কোনো ব্যাপার নয় অর্থাৎ ফরদ নয়, সুন্নত। তাও রসুলের একেবারে ব্যক্তিগত সুন্নত যে ব্যাপারে রসুলাল্লাহ তাঁর একটি অন্তিম অসিয়তে বলেছেন, “হে মানবজাতি! আগুনকে প্রজ্বলিত করা হয়েছে এবং অশান্তি অন্ধকার রাত্রির মতো ধেয়ে আসছে। আল্লাহর শপথ, আমি আমার থেকে কোনো কাজ তোমাদের উপর অর্পণ করি নি, আমি শুধু সেটাই বৈধ করেছি যেটা কোরা’আন বৈধ করেছে, আর শুধু সেটাই নিষেধ করেছি যেটা কোর’আন নিষেধ করেছে।” (রসুলাল্লাহর প্রথম জীবনীগ্রন্থ সিরাত ইবনে ইসহাক ও সিরাত ইবনে হিশাম)।
রসুল যতই বলুন আমার ব্যক্তিগত কিছুই তোমাদেরকে মেনে চলতে হচ্ছে না, আমাদের আলেম-ওলামারা রসুলের সুন্নাহ অনুসরণের নামে সেই ব্যক্তিগত দাড়ি-মেসওয়াক, আরবীয় লেবাসকেই মুসলিম জাতির উপর চাপিয়ে দিতে শত শত বছর ধরে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এর কারণ এগুলো অনুকরণ করতে কোনো ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন হয় না। দাড়ি-টুপি (লেবাস) যদি এই দীনের কোনো ফরদ বা বুনিয়াদী বিষয় হতো, তবে কোর’আনে একবার হলেও এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হতো। আল্লাহর রসুল এটা সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে- আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক অবস্থা, পোশাক, চেহারা বা সম্পদ কোনো কিছুর দিকেই দৃষ্টিপাত করেন না, তিনি দেখেন তোমাদের হৃদয় এবং তোমাদের কাজ (হাদিস: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে মুসলিম)।
তাই ‘দাড়ি ইসলামের চিহ্ন’, ‘দাড়ি না রাখলে ইসলামের কথা বলা যাবে না’ এ ধারণা সঠিক নয়। তবে কেউ যদি দাড়ি রাখতে আগ্রহী হয় তাকে এটা বলা যেতে পারে যে, যদি দাড়ি রাখতেই চান তবে, রসুল যেভাবে দাড়ি রাখতে বলেছেন সেভাবে রাখুন যেন সুন্দর, পরিপাটি (ঝসধৎঃ) দেখায়। রসুলাল্লাহর যে কোনো সুন্নাহই কল্যাণকর, তাই ব্যক্তিগত জীবনেও রসুলাল্লাহর যা কিছু অনুসরণ করা হবে তাতে মানুষ কল্যাণ পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আগে কোনটা? আজ সারা পৃথিবীতে কোথাও আল্লাহকে বিধানদাতা (এলাহ) হিসাবে মানা হচ্ছে না। মুসলিম নামের এই জনসংখ্যাও পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতাকে বিধাতার আসনে বসিয়ে রেখেছে। এ কারণে আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা মো’মেন নেই, রসুলের কথা মতে উম্মতে মোহাম্মদীও নেই। কাজেই তারা আগে ফরজ- যা সরাসরি আল্লাহর হুকুম তা পালন করুক। তারা আগে কলেমার দাবি মোতাবেক এক আল্লাহর হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম-বিধান, দীন মানবো না, এই অঙ্গীকারে নিজেদের আবদ্ধ করুক, আগে মো’মেন হোক; তারপরে সামর্থ্য মোতাবেক সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব পালন করুক কোনো আপত্তি নেই। আল্লাহর রসুল বলেছেন, এমন সময় আসবে যখন মানুষ তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু ঘুম কামাই করা হবে, সওম রাখবে কিন্তু না খেয়ে থাকা হবে (হাদিস)। রসুলাল্লাহ বর্ণিত সেই সময়টি এখন। যেখানে তাহাজ্জুদ, সওমের মত একনিষ্ঠ আমলও বৃথা যাবে, সেখানে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জোব্বার মত আমল গৃহীত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...