হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আদম থেকে বনি আদম (পর্ব: ০১)

যুগে যুগে পৃথিবীতে আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা তাঁর নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তার ভিত্তি সব সময় থেকেছে একত্ববাদ, তওহীদ যা চিরস্থায়ী। এই তওহীদের মূল দাবি হোল- জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে যেখানে আল্লাহর কোন হুকুম আছে সেখানে অন্য কারো হুকুম না মানা অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। অন্যভাগ আদেশ-নিষেধ, হুকুম-আহকাম, যেগুলি মেনে চোললে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমষ্টিগতভাবে মানুষ পরিপূর্ণ শান্তিতে, প্রগতিতে বাস কোরতে পারে। এই দ্বিতীয় ভাগটি চিরস্থায়ী, সনাতন নয়, এটি স্থান ও কালের উপর নির্ভরশীল। অতীতের দিকে ফিরে চাইলে আমরা দেখি যে- মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ব ও প্রভুত্ব ঠিক রেখে যুগে যুগে যে ইসলাম পৃথিবীতে এসেছে তার রূপ কিছু বিভিন্ন হোয়েছে- এবং যে সব ব্যাপারে বিভিন্ন হোয়েছে তা সবই স্থান, কাল ও পাত্রের অধীন। একটি জাতির উপর যা হালাল ছিল, পরবর্তীতে অন্য আরেকটি জাতির উপর তা হারাম হোয়েছে। যেমন, আদমের (আ:) উপর যে ইসলাম দেয়া হোয়েছিলো তাতে বিধান ছিলো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ে। স্বভাবতঃই, কারণ তখন তারা ছাড়া পৃথিবীতে আর মানুষ ছিলো না। কিন্তু পরে যখন মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেলো, তারা নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়লো, তখন আর সে প্রয়োজন রোইল না এবং পরবর্তী যে সব নবীরা এলেন তাদের উপর বিধানগুলিতে ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ কোরে দেয়া হলো। অনুরূপভাবে ক্রমেই যেমন মানুষ নতুন নতুর ব্যাপারে জ্ঞান লাভ কোরতে লাগলো, নতুন নতুন আবিষ্কার কোরতে লাগলো, এক কথায় মানুষের যুক্তি, বুদ্ধি উন্নতি কোরতে লাগলো- তেমনি আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থাতেও সেগুলির প্রতি লক্ষ্য রেখেই বিধান দেয়া হোতে লাগলো। কিন্তু উদ্দেশ্য সব সময়ই একই থেকেছে-শান্তিতে সুবিচারে বসবাস।

যুগে যুগে প্রভু আল্লাহ পৃথিবীবাসীর জন্য যে জীবন-বিধান পাঠিয়েছেন তা তিনি পাঠিয়েছেন তাঁর নবীদের মাধ্যমে- যারা ছিলেন আমাদেরই মত মানুষ। এখানে একটা সমস্যা এসে দাঁড়ায়। যেহেতু ঐ প্রেরিতরা আমাদেরই মত মানুষ কাজেই যখন তারা ঘোষণা কোরেছেন যে তাঁকে জীবন-বিধান দিয়ে পাঠানো হোয়েছে তখন তাঁর কথা সত্য কি মিথ্যা তা স্বভাবতঃই প্রশ্নের ব্যাপার হোয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ যদি এই প্রশ্ন করে যে, এই লোকটি তার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের জন্য, নেতৃত্ব লাভের জন্য বা তার মনগড়া কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য স্রষ্টার দোহাই দিচ্ছে না তার প্রমাণ কী? এ প্রশ্ন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ নেই। কাজেই আল্লাহ এ ব্যাপারেও তাঁর নিজের সম্বন্ধে যে রকমের ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁর প্রেরিতদের সম্বন্ধেও সেই একই রকম ব্যবস্থা নিলেন। অর্থাৎ চিহ্ন। তিনি তাঁর প্রেরিতদের মধ্যে, তাদের কাজের মধ্যে এমন সব চিহ্ন দিয়ে দিলেন যা যে কোন যুক্তিসম্পন্ন মানুষের সন্দেহ নিরসন করার জন্য যথেষ্ট। সংগত কারণে তিনি তাঁর প্রতিটি নবীকেই অলৌকিক শক্তি দিলেন যা সাধারণ মানুষের থাকে না। এগুলোর নাম তিনি দিলেন চিহ্ন- আয়াত। আমরা এখন বোলি মো’জেজা, অলৌকিক ঘটনা। যাদের জন্য এই নবীরা জীবন-ব্যবস্থা, দীন নিয়ে এসেছেন তারা তাঁর কথায় সন্দেহ বা অবিশ্বাস কোরলে তিনি ঐ অলৌকিক কাজ কোরে তাদের সন্দেহ অপনোদন কোরেছেন।
এমনি কোরে যুগে যুগে যখনই কোনো জনগোষ্ঠী আল্লাহর দেয়া ব্যবস্থা হয় ত্যাগ কোরেছে না হয় তাকে এমন বিকৃত কোরে ফেলেছে যে তা আর তাদের শান্তি, ইসলাম দিতে পারে নি, তখনই স্রষ্টা তাঁর করুণায় আরেক নবী পাঠিয়েছেন। তিনি এসে বোলেছেন- তোমরা আমার পূর্ববর্তী নবীর আনা জীবন-বিধান বিকৃত কোরে ফেলেছো। তাই আমাকে পাঠানো হোয়েছে তোমাদের জন্য নতুন বিধান দিয়ে। শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই নতুন প্রেরিতের কথায়, কাজে তাঁর জীবন-ধারায় ও তাঁর অলৌকিক কাজ করার শক্তি দেখে তাঁকে বিশ্বাস কোরে এই নতুন জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরেছে। আর কিছু লোক শয়তানের প্ররোচনায় তাঁকে অস্বীকার কোরে আগের বিকৃত দীনকে আঁকড়ে ধোরে রেখেছে। পৃথিবীতে আরেকটি দীন, জীবন-ব্যবস্থার জন্ম হোয়েছে। তারপর কালে এবলিসের-প্ররোচনায় এই নতুন দীনেও বিকৃতি এসেছে এবং এতখানি বিকৃতি এসেছে যে ওটাও আর মানুষকে সেই চির আকাক্সিক্ষত শান্তি দিতে পারে নি। তখন আল্লাহ আবার এক নতুন রসুল পাঠিয়েছেন- আগের মত কোরে আবার এক দীন, ধর্ম পৃথিবীতে সংযোজিত হোয়েছে। এমনি কোরে মানব জাতির শান্তির জন্য আল্লাহ লক্ষাধিক প্রেরিত পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য- সেই এক। মানুষ যাতে নিজেদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি না কোরে, অবিচার না কোরে, যুদ্ধ, রক্তপাত না কোরে পূর্ণ শান্তিতে পৃথিবীতে বসবাস কোরতে পারে। যখনই কোনো জনগোষ্ঠী, জাতি কোনো প্রেরিতকে বিশ্বাস কোরে আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরে তা তাদের জাতীয়, পারিবারিক, ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা কোরেছে তখন তাদের মধ্যকার সমস্ত অশান্তি, অবিচার, মারামারি, রক্তপাত বন্ধ হোয়ে গেছে। তারা অনাবিল সুখ ও শান্তিতে, ইসলামে বাস কোরতে লেগেছে। কিন্তু এই শান্তি চিরস্থায়ী হয় নি, কারণ শয়তানও বোসে ছিলো না এবং বোসে নেই। সে অবিশ্রান্তভাবে মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে চোলেছে ঐ জীবন-ব্যবস্থাকে বিকৃত কোরে, অচল কোরে দিয়ে পরিণতিতে মানুষকে আবার ঐ ফাসাদ আর রক্তপাতে জড়িত কোরতে এবং কোরেছেও। এই দিয়েই রচিত হোয়ে এসেছে মানবজাতির সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের দ্বন্দ্বের ইতিহাস।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...